![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a social worker.
‘ঈদুল আযহা’ মুসলিমদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। ইসলামে রয়েছে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই দিনে আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য পশু কুরবানি দেয়া হয়। এ দিনটি বছরের শ্রেষ্ঠ দিন: হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ স. এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে কুরবানির দিন, এরপর কুরবানির পরবর্তী দিন। (আবুদাউদ) এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও মহিমান্বিত দিবস হচ্ছে কুরবানির দিন। এতে ঈদের সালাতের পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানিও করা হয়ে থাকে।’
ঈদুল আদহার আমল : ঈদ আমাদের জন্য এক বিরাট নিয়ামাত। কিন্তু আমরা এ দিনকে নিয়ামাত হিসাবে গ্রহণ করি না । এ দিনে অনেক কাজ আছে যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী হতে পারি এবং ঈদ উদযাপনও একটি ইবাদতে পরিণত হতে পারে। নিচে তা উল্লেখ করা হলো-
১. ঈদের সালাত আদায় করা : ঈদের দিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঈদের সালাত আদায় করা । প্রকৃতপে একজন ইমানদার বান্দাহ সালাত আদায়ের মাধ্যমে বেশি আনন্দিত হয়ে থাকে। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম স. ঈদুল-ফিতরের দিনে বের হয়ে দু’ রাকাত ঈদের সালাত আদায় করেছেন। এর আগে ও পরে অন্য কোন (নফল) নামাজ আদায় করেননি। (সহীহ বুখারি, ৯৮৯) ঈদের সালাতে মহিলাদেরকে শামিল করানোর বিষয়ে হাদিসে এসেছে, ‘উম্মে আতিয়া রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ স. আদেশ করেছেন আমরা যেন মহিলাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে সালাতের জন্য বের করে দেই; পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনীসহ সকলকেই। কিন্তু ঋতুবতী মেয়েরা (ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে) সালাত আদায় থেকে বিরত থাকবে তবে কল্যাণ ও মুসলিমদের দোয়া প্রত্যক্ষ করতে অংশ নিবে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদের মাঝে কারো কারো ওড়না নেই। (যা পরিধান করে আমরা ঈদের সালাতে যেতে পারে) রাসূলুল্লাহ স.বললেন : সে তার অন্য বোন থেকে ওড়না নিয়ে পরিধান করবে’ (সহীহ মুসলিম, ২০৯৩)।
২. সামর্থ্যবান ব্যক্তির কুরবানি করা : সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে কুরবানি করতে হবে। কেননা কুরআন মাজীদে এসেছে : ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানি কর।’ সূরা আল কাউসার-০৩। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি না করা সুন্নাহর পরিপন্থী কাজ। রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে। (মুসনাদ আহমাদ, ইবন মাজাহ) যারা কুরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদীস একটি সতর্ক-বাণী। রাসূল স. কুরবানি করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে লোক সকল, প্রত্যেক পরিবারের উপর কুরবানি দেয়া অপরিহার্য।’ (সুনান ইবন মাজাহ, ৩১২৫)
৩. ঈদের সালাত আদায়ের পর কুরাবানী করা : কেননা হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ স. খুতবাতে বলেছেন, ‘এ দিনটি আমরা শুরু করব সালাত দিয়ে। অত:পর সালাত থেকে ফিরে আমরা কুরবানি করব। যে এমন আমল করবে সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করল। আর যে এর পূর্বে জবেহ করল সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল। কুরবানির কিছু আদায় হলো না। (সহিহ আল বুখারী, ৯৬৫)
৪ . ঈদের খুতবা শোনা : ঈদের সালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে কুরবানির পশু যবেহ না করে সালাতের খুতবা দুটি শেষ হওয়ার পর যবেহ করা। কেননা রাসূলুল্লাহ স. এ রকম করেছেন। হযরত জুনদুব ইবন সুফিয়ান আল-বাজালী (রা.) বলেছেন, নবী কারীম স. কুরবানির দিন সালাত আদায় করলেন অত:পর খুতবা দিলেন তারপর পশু জবেহ করলেন। (সহিহ আল-বুখারী, ৯৮৫)
৫. সুন্নাহ পদ্ধতিতে পশু কুরবানি করা : জবেহ করার সময় পশুর সাথে সুন্দর আচরণ করা, আল্লাহর নামে যবেহ করা, ভাল মানের পশু জবেহ করা ইত্যাদি। হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী কারীম স. বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা সকল বিষয়ে সকলের সাথে সুন্দর ও কল্যাণকর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব তোমরা যখন হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে করবে আর যখন জবেহ করবে তখনও তা সুন্দরভাবে করবে। তোমাদের একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং যা যবেহ করা হবে তাকে যেন প্রশান্তি দেয়। (সহিহ মুসলিম)
৬. শুধু কুরবানির গোশত খাওয়ার জন্য কুরবানির পশু জবেহ করা নয়, বরং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার কুরবানি করা। এ প্রসঙ্গে রাসুল স. ইরশাদ করেন, ‘সে তার পরিবার বর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল, কুরবানির কিছু আদায় হলনা।’ (সহীহ বুখারী)
৭. বেশি বেশি তাকবীর পাঠ করা : তাকবীর পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা হয়। কুরআনে এসেছে, অল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চান না, আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করতে পারো এবং তিনি তোমাদেরকে যে, হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’ (সূরা বাকারাহ-১৮৫)। তাকবীর হলো ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ বাক্যটি উচ্চস্বরে পড়া।
৮. দোয়া ও ইস্তেগফার করা : ঈদের দিনে আল্লাহ তায়ালা অনেক বান্দাহকে মাফ করে দেন। হযরত মুয়ারিরক আল ঈজলী রা. বর্ণনা করেন, ঈদের এই দিনে আল্লাহ তায়ালা একদল লোককে এভাবে মাফ করে দিবেন, যেমনি তাদের মা তাদের নিষ্পাপ জন্ম দিয়েছিল। রাসুল স. বলেন, তারা যেন এই দিনে মুসলিমদের জামায়াতে দোয়ায় অংশ গ্রহণ করে। (লাতাইফুল মায়ারিফ)
৯. অভাবী ও দুঃস্থদেরকে ঈদের আনন্দে শরিক করা। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে, ‘অত:পর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্থকে আহার করাও’ (সূরা হাজ্ব-২৮)। আবু হুুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল স. অপরের কস্ট দূর করা ও অপরকে সাহায্য করার প্রতি উৎসাহিত করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের কষ্ট দূর করে দেবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতে তার কষ্ট দূর করে দিবেন।’ (সহীহ মুসলিম ৭০২৮)।
১০. বিজাতীয় আচরণ থেকে বিরত থাকা : ঈদকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে বিজাতীয় আচরণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদে, চাল-চলনে, শুভেচ্ছা বিনিময়ে অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে মুসলমানদের অনেকেই, তাই বিজাতীয় আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। হাদিসে এসেছে, ‘আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল স. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ (আবু দাউদ)
কুরবানীর গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও শিক্ষাঃ
পার্থিব জীবনে অহংকার ও পাপ মুক্ত থাকা এবং পরকালীন জীবনে সফলতার জন্য কুরবানী করা অতীব জরুরী। কুরবানীর প্রথম শিক্ষা হলো ‘তাকওয়া’ অর্জন করা। দ্বিতীয় শিক্ষা হলো, ত্যগের মানসিকতা অর্জন কর। মহানবী স. বলেছেন “তোমরা কুরবানী কর, কেননা কুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে রয়েছে একটি করে নেকী”। কেয়ামতের দিন একটি নেকির কী মূল্য তা বিবেচনা করেই আমাদের কুরবানী করতে হবে। সেদিন একটি নেকির জন্য মানুষ দারে দারে ঘুরবে, কিন্তু কেউ কারো সামান্যতম উপকারে আসবে না। তাই আসুন ত্যাগের মহিমায় উজ্জিবিত হয়ে তাকওয়া অর্জনের মাসসে কুরবানী করি। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি। আল্লাহুম্মা আমিন।
©somewhere in net ltd.