![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a social worker.
৮. পিতা-মাতার আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা : সন্তান তার মা-বাবার আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালোবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে’ (সহীহ ইবন হিববান : ৪৩২)
৯. মা-বাবার ঋণ পরিশোধ করা : মা-বাবার কোনো ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের ওপর বিশেষভাবে কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সা. ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়, যতক্ষণ তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়”। (সুনান ইবন মাজাহ : ৪১৩) ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয় । হাদীসে আরো এসেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (নাসায়ী ৭/৩১৪; তাবরানী ফিল কাবীর ১৯/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/২৯)
১০. কাফফারা আদায় করা : মা-বাবার কোনো শপথের কাফফারা, ভুলকৃত হত্যাসহ কোনো কাফফারা বাকী থাকলে সন্তান তা পূরণ করবে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (মাফ) করে দেয় (তাহলে সেটা ভিন্ন কথা) (সূরা আন-নিসা : ৯২) আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কসম খেয়ে শপথ করার পর তার থেকে উত্তম কিছু করলেও তার কাফফারা অদায় করবে’ (সহীহ মুসলিম : ৪৩৬০) এ বিধান জীবিত ও মৃত সবারক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। দুনিয়ার বুকে কেউ অন্যায় করলে তার কাফফারা দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ অন্যায় করে মারা গেলে তার পরিবার-পরিজন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাফফারা প্রদান করবেন।
১১. ক্ষমা প্রার্থনা করা : মা-বাবার জন্য আল্লাহর নিকট বেশি বেশি মা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সন্তান মা-বাবার জন্য মা প্রার্থনা করায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। হাদীসে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোনো বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কিভাবে এ আমল আসলো? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য মা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো’ (আল-আদাবুল মুফরাদ : ৩৬)।
১২. মান্নত পূরণ করা : মা-বাবা কোনো মান্নত করে গেলে সন্তান তার পক্ষ থেকে পূরণ করবে। ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, ‘কোন মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিল, কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করল। এরপর তার ভাই এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট আসলে তিনি বলরেন, তার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন কর। (সহীহ ইবন হিববান : ২৮০)
১৩. মা-বাবার ভালো কাজসমূহ জারি রাখা : মা-বাবা যেসব ভালো কাজ অর্থাৎ মসজিদ তৈরি করা, মাদরাসা তৈরি করা, দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরিসহ যে কাজগুলো করে গিয়েছেন সন্তান হিসেবে তা যাতে অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। কেননা এসব ভালো কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে। হাদীসে এসেছে, ‘ভালো কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে’। (সুনান আত তিরমীযি : ২৬৭০) যে ব্যক্তির ইসলামের ভালো কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদের সওয়াব থেকে কোনো কমতি হবে না’ (সহীহ মুসলিম : ২৩৯৮)।
১৪. কবর জিয়ারত করা : সন্তান তার মা-বাবার কবর জিয়ারত করবে। এর মাধ্যমে সন্তান এবং মা-বাবা উভয়ই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, অতঃপর মুহাম্মাদের মায়ের কবর জিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর জিয়রাত কর, কেননা তা আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় (সুনান তিরমীযি : ১০৫৪)। জিয়রাত কর, কেননা তা আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় (সুনান তিরমীযি : ১০৫৪)। কবর জিয়ারত কোনো দিনকে নির্দিষ্ট করে করা যাবে না। কবর জিযারত করার সময় বলবে, কবরবাসী মুমিন-মুসলিম আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক । নিশ্চয় আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আপনাদের এবং আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (সুনান ইবন মাজাহ : ১৫৪৭)
১৫. ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা : মা-বাবা কারো সাথে কোনো ভালো কাজের ওয়াদা করে গেলে বা এমন ওয়াদা যা তারা বেঁচে থাকলে করে যেতেন, সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা বনি ইসরাঈল : ৩৪)
১৬. কোনো গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা : মা-বাবা বেঁচে থাকতে কোনো গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরীয়াহ সম্মতভাবে সংশোধন করে দিবে। কেননা আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লহ সা. বলেছেন, এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহ্বান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোনো কমতি হবে না। (সহীহ মুসলিম : ৬৯৮০)।
১৭. মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়া : মা-বাবা বেঁচে থাকতে কারো সাথে খারাপ আচরণ করে থাকলে বা কারো ওপর জুলুম করে থাকলে বা কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে মা-বাবার পক্ষ থেকে তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নিবে অথবা ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিবে। কেননা হাদীসে এসেছে, ‘আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরিব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরিব যে, কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিপে করা হবে। (সুনান আত তিরমিযি : ২৪২৮)
©somewhere in net ltd.