![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a social worker.
পবিত্র কুরআন ও রাসুলের (স.) সহীহ হাদিস অনুযায়ি ইসলামে সব ধরনের নরহত্যা, গুপ্তহত্যা, গুম, অপহরণ ও বিনা বিচারে মানুষ হত্যা চিরতরে হারাম বা নিষিদ্ধ। ঈদ পূর্ব ও ঈদোত্তর যে ভয়াবহ হত্যার ঘটনা ঘটেছে তার সাথে ইললাম ধর্ম বা অন্য কোন ধর্মের কোনা সম্পর্ক নেই। যারা এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তাদের কোনো ধর্ম নেই। তাদের একটাই পরিচয়, তারা সন্ত্রাসী। তারা নরপিশাচ। তারা মানবতার শত্রু। মুসলিম হিসেবে আমরা সবাই আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ। আর মানুষ হিসেবে আমরা সবাই একই পিতা-মাতার (আদম ও হাওয়া আ.) সন্তান। কোন মুসলিম ভাইয়ের জন্য অপর কোন ভাইকে সাময়িক উত্তেজনা বা পার্থিব কোন মোহের বশবর্তী হয়ে হত্যা, অপহরণ, খুন, গুপ্তহত্যা যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ বা জলন্ত পুড়িয়ে মারার মতো চরমপন্থা গ্রহণ করা জায়েজ নয। মনে রাখতে হবে যে কোন অবৈধ হত্যাকান্ড গোটা মানব জাতিকে হত্যার শামিল। বৈধ কারণ ছাড়া আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ প্রাণকে হত্যা করা মহাপাপ। একারনে যেকোন ধরনের চরমপন্থা অবলম্বনকে অবৈধ করে হত্যা, গুম ও অপহরণ থেকে বিরত থাকতে ইসলাম বার বার আহ্বান করেছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বার বার তাগিত দিয়ে বলা হয়েছে-“আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করো না” (সুরা বনী ইস্ররাইল-৩৩)। মহানবী স. বিনা অপরাধে কাউকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। বিদায় হজ্জের ভাষনে এটি সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন তিনি। এছাড়া তিনি আরো বলেছেন-“যে মুসলমান সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ স. আল্লাহর রাসূল, তিনটি কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা সম্পূর্ণ হারাম ১. হত্যার বদলে হত্যা বা কেসাস ২. বিবাহিত অবস্থায় যেনা করা জন্য হত্যা ৩. ধর্ম ত্যাগ করার জন্য হত্যা” (মিশকাত)। মানুষ হত্যা, গুম ও অপহরণকে ইবাদত কবুল না হওয়ার কারণ হিসেবে বর্ণনা করে মহানবী স. বলেন-“হত্যাকারীর ফরয-নফল কোন ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না”(তিরমিযি)। শুধু তাই নয় একজন মানুষকে বিনা কারণে হত্যাকে গোটা মানব জাতিকে হত্যার অপরাধ হিসেবে গন্য হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-“নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করল আর যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে” (সুরা মায়িদা-৩২)। মুসলিম হিসেবে আল্লাহর বিধি-বিধান ভুলে যখনই মানুষ নিজেদের মনগড়া ও ইচ্চাধীন ভাবে চলাফেরা করছে তখনই মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ে পৌছেঁ যাচ্ছে সমাজ। যেখানে আদর্শিক প্রতিপক্ষকে শত্রু বিবেচনা করে মানুষ হত্যার মত জঘন্য কাজে সমাজের মানুষ লিপ্ত হচ্ছে। এভাবে যখনই কোন সমাজের মানুষ তার সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে নিজের মত চলাফেরা শুরু করে তখই নেমে আসে সামাজিক বিপর্যয়। মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় হয়ে মানুষের মাঝে পশুত্ব বিরাজ করে। আর তখনই আল্লাহর গজব নেমে আসে। বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন মানুষ রাস্তায় বের হওয়ার পর সে জানেনা কাজ শেষে সে পুনরায় বাসায় ফিরে যেতে পারবে কি না। শুধু তাই নয় দেশের বিভিন্ন স্থানে বস্তাবন্দি লাশ ও বিভিন্ন জায়াগায় পাওয়া যায় মানুষের কংকাল। যার ফলে সমাজে একটা আতংক ছাড়িয়ে পড়েছে। অথচ ইসলামে নরহত্যা মহাপাপ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-“কেউ স্বেচ্ছায় কোন মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম” (সুরা আন্-নিসা-৯৩)। আল্লাাহ তায়ালা নরহত্যাকে ঘৃনিত কাজ উল্লেখ করেছেন। হাদিস এসেছে-“একজন মুসলমান হত্যা করা অপেক্ষা আল্লাহর দরবারে সমগ্র দুনিয়া ধ্বংস করা সমধিক সহজ কাজ”(তিরমিযি)। কিয়ামেতের দিন সকল বিচারের আগে যে বিচার কাজ সমাধা হবে তা হলো মানুষ হত্যা। মহানবি স. বলেন-“কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা হবে, তাহলো রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত” (বুখারি ও মুসলিম)। ‘হত্যা’ সমাজে ধ্বংস ডেকে আনে। মাহনবি স. বলেন-“যে সাতটি জিনিস মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে, তার মধ্যে দু’টি হলো আল্লাাহর সাথে কাউকে শরীক করা ও মানুষ হত্যা করা” (সহীহ মুসলিম)। ইসলামে ফেতনা-ফ্যাসাদ, মানবিক বিপর্যয় ও সমাজে ত্রাস সৃষ্টি করাকে হত্যার চেয়ে জঘন্য ঘোষনা করা হয়েছে। তাই আজ সময় এসেছে সামাজিকভাবে এ ধরণের জঘন্যতম বিচার বহির্ভূত মানুষ হত্যা, গুম, অপহরণ, মানুষ জ্বালিয়ে মারা, অসহায় নিরপরাধ নারী-শিশু হত্যার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার। অপরদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে যেন মানবিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনরতদের যেন দেশের শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর হাতে নির্বিচারে প্রাণ না দিতে হয়। যেভাবে প্রাণ দিচ্ছেন মিশর, সিরিয়া, মিয়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা।
©somewhere in net ltd.