![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a social worker.
ভাষার মাসে আমরা কিছুটা বাঙালীপনা দেখালেও পরনির্ভরতা ও ভিনদেশী সংস্কৃতি আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের সন্তানদের তেমন স্পষ্ট ধারণা আছে বলে মনে হয় না। তাদের চলমান জীবনযাত্রায় মা-বাবা ও দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য হয়তো তেমন কাজে লাগে না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে যারা ভালো বেতনে চাকরি পেয়ে যায়, তাদের অনেকের কাছেই ইতিহাস-ঐতিহ্যের তেমন কোনো দাম নেই। যারা যেকোনোভাবেই ধনী হয়ে গেছেন তারা তো মনে করেন বিদ্যারই কোনো প্রয়োজন নেই। সরকারের কাছেও এসবের কোনো দাম নেই। আমরা বাঙালি বলে জিগির তুলে ’৭১ সালে ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেয়েছি, যা ছিল পূর্ব পাকিস্তান এখন তা বাংলাদেশ। পাকিস্তান যে সীমানা বা ম্যাপ দিয়ে গেছে তাই এখন আমাদের সীমানা বা ভূগোল। যদি কাউকে প্রশ্ন করেন, ’৪৭ সালে আমরা যদি পাকিস্তানের সাথে না থাকতাম তাহলে কোথায় থাকতাম। সোজা উত্তর ভারতের সাথে থাকতাম একটি প্রদেশ বা রাজ্য হিসেবে। তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশ্ন আর উঠত না। অনেকেই বলেন, পাকিস্তান না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। এ ব্যাপারে অনেকেই আবার দ্বিমত পোষণ করেন। পশ্চিম বাংলার মানুষ সুযোগ পেয়েও স্বাধীন না হয়ে দিল্লির অধীনে গেল কেন? তারা আমাদের বাঙালি বানাতে চায় বা বাঙালি হিসেবে দেখতে চায়, কিন্তু নিজেরা দিল্লির অধীনে আছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুবই সোজা। পশ্চিম বাংলার মানুষ প্রথমত নিজেদের হিন্দু মনে করে, তারপর বাঙালি।
একটু পেছনের দিকে গিয়ে যাত্রা শুরু করতে চাই। কট্টর হিন্দুরা মনে করেন মুসলমানেরা ভারতীয় নন, তারা বিদেশী মুসলমান বা যবন বা ম্লেচ্ছ। এমনকি ভারতের বিজেপি, আরএসএস, হিন্দু মহাসভা, শিবসেনা নেতারা মনে করেন মুসলমানেরা বিদেশী। হিন্দু মহাসভা নতুন থিউরি দিয়েছে। তা হলো সব ভারতীয়ই হিন্দু। হিন্দুস্তানে বাস করলেই হিন্দু হতে হবে। পরিচয় হবে হিন্দু মুসলিম, হিন্দু শিখ, হিন্দু বৌদ্ধ, হিন্দু খ্রিষ্টান ইত্যাদি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা আশা করেছিল আমরা আর মুসলমান থাকব না, শুধুই বাঙালি হবো। পশ্চিমবঙ্গের বন্ধুদের সে আশা পূরণ হয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরেও এ দেশের মানুষ মুসলমান রয়ে গেছে। যদিও বাংলাদেশে কিছু আরবি নামধারী মুসলমান নামে পরিচিত কিছু বুদ্ধিজীবী নিজেদের শুধুই বাঙালি বানাতে চান। এরা হীনম্মন্যতায় ভোগেন এবং মানসিকভাবে অসুস্থ। এরা এদের বাপ-দাদার কথা ভুলে গেছেন। আমাদের তরুণসমাজ, বিশেষ করে তরুণ কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের শুধুই বাঙালি ভাবতে পছন্দ করেন। এরা বিভ্রান্ত। এরা এখন ভাবাবেগে চলছেন। এদের ভুল পথে পরিচালিত করছে এক শ্রেণীর স্বার্থবাদী বুদ্ধিজীবী। এরা এক ধরনের সংস্কৃতি সওদাগর। কারো কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এরা সমাজেকে ভুলপথে পরিচালিত করার কাজে নেমে পড়েছেন।
পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হিসেবে শত শত বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে এই দেশে। এমনকি পাকিস্তান আমলে বাংলা নববর্ষ পালনে কোনো বাধা ছিল না। বিশেষ করে গ্রাম-বাংলায় হালখাতা অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে। এখনো পালিত হচ্ছে। এই হালখাতা অনুষ্ঠানের সাথে অর্থনীতি জড়িত। হিসাবের খাতা জড়িত। স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ সময়ে বন্ধ থাকত এবং এখনো থাকে। কিন্তু অতি সম্প্রতি ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে নতুন ঢঙে পালিত হচ্ছে পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ। লাখ লাখ টাকা খরচ করে ছাত্ররা পয়লা বৈশাখের মিছিল বের করে। যে মিছিলের সাথে গ্রাম-বাংলার কোনো সম্পর্ক নেই। নানা ধরনের জন্তু-জানোয়ারের ছবি বানিয়ে মিছিলে তা দেখানো হয়। যার সাথে বাংলাদেশের মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও এ মিছিল হচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরে। কারা এ মিছিলের জন্য অর্থ সরবরাহ করছে তা আমাদের জানা নেই। কেউ এ ব্যাপারে এ পর্যন্ত কোনো প্রশ্ন তোলেনি। নতুন বিষয়ে বা জিনিসে গা ভাসিয়ে দেয়া তরুণদের অভ্যাস। কিন্তু তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করার দায়িত্ব মা, বাবা ও শিক্ষকদের। মোবাইল কোম্পানি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এ ধরনের অনুষ্ঠানে অর্থ জোগান দেয় তাও আমরা জানি না। আমাদের মিডিয়াও এ ব্যাপারে নীরব। বাংলার সব উৎসবের সাথেই দেশের অর্থনীতি জড়িত। এটা শুধু হৈ হুল্লোড় করার কোনো বিষয় নয়। পয়লা বৈশাখে গ্রামীণ পণ্যের মেলা দেশের অর্থনীতির জন্য অনেক কল্যাণকর। আমাদের নতুন প্রজন্ম বা তরুণসমাজ এ ব্যাপারে সজাগ নয়, অথবা বিভ্রান্ত। হয়তোবা কোনো অদৃশ্য শক্তি তাদের বিভ্রান্ত করছে।
বাংলাদেশে এখন তিনটি নববর্ষ পালিত হয়। প্রথম ও প্রধান নববর্ষ হলো বাংলা সন অনুযায়ী পয়লা বৈশাখ। দ্বিতীয় নববর্ষ হলো ঈসায়ি সন অনুযায়ী পয়লা জানুয়ারি। এই পয়লা জানুয়ারি চালু হয়েছে ইংরেজ শাসন আমলে। আমাদের সরকারি নিয়ম-কানুন, হিসাব-নিকাশ চলে ইংরেজি সন মোতাবেক। শহুরে লোকেরা ইংরেজি সন পালন করেন। নতুন ডায়েরি ও ক্যালেন্ডার প্রকাশ ও প্রচার করেন। এর জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়। সরকারিপর্যায়ে হিসাব-নিকাশ ও বাজেট ইংরেজি মাস ও বছরের হিসাবেই করা হয়। এ ছাড়া ইংরেজি বছর বা সন বিদায়লগ্নে ৩১ ডিসেম্বর রাতে বা থার্টিফার্স্ট নাইটে তরুণসমাজ মাতাল হয়ে ওঠে। পুলিশকে নানা নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে হয়। ইদানীং মেয়েরাও থার্টিফার্স্ট নাইটে অংশ নিতে শুরু করেছে। অনেক কেলেঙ্কারির খবরও পত্রিকায় ছাপা হয়। আমাদের দেশের সংস্কৃতি ও উৎপাদন ব্যবস্থা অনুযায়ী বাজেট বর্ষের শুরু বৈশাখ থেকে হওয়াই উচিত। কিন্তু এখনো তা হয়নি। সরকারি অফিসের লেখালেখিও ইংরেজিতে করা হয়। অনেকেই আবার অভিযোগ করছেন, আমাদের আমলারা ইংরেজি না জানার ফলে দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। শুক্রবারের ছুটি নিয়ে এখনো একশ্রেণীর ব্যবসায়ী শুক্রবারের ছুটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের নাকি ব্যবসায়ের ক্ষতি হচ্ছে। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা রোববার ছুটি পালন করেন। ইহুদিরা শনিবার ছুটি পালন করেন। মুসলমানদের শুক্রবার ছুটি পালনের কথা। বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। তারা শুক্রবার ছুটির দিন পালন করতে চায়। অপর দিকে মুসলমান হিসেবে অনেকেই আরবি ক্যালেন্ডার অনুসরণ করেন। আমাদের খবরের কাগজগুলোতে নিয়মিত তিনটি তারিখ উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে আরবি ক্যালেন্ডারও রয়েছে। সলমানদের ধর্মীয় জীবনে আরবি বা হিজরি ক্যালেন্ডারের গুরুত্ব রয়েছে। ১৪৩৩ হিজরি সন শুরু হয়েছে ক’দিন হলো। মহররম মাস মুসলমানদের জন্য খুবই পবিত্র মাস। বলা হয়ে থাকে এই দিন আল্লাহপাক পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে মহররম মাসে। ইসলামের ইতিহাসের আরো বহু ঘটনা ঘটেছে পবিত্র মহররম মাসেই।
কয়েক বছর ধরে ঢাকায় ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ভালোবাসা দিবস পালন হতে শুরু করেছে। এর আগে এ ধরনের কোনো দিবস ঢাকায় বা বাংলাদেশে পালন হতো না। শ্রদ্ধেয় শফিক রেহমান বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস পালনের ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। শ্রদ্ধেয় শফিক সাহেব আবার একজন জাতীয়তাবাদী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। কিছু দিন আগে তিনি ‘নেড়ি কুকুরের সাক্ষাৎকার’ লিখে বেশ নাম করেছেন। টিভি চ্যালেনগুলো ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ প্রোগ্রাম প্রচার করে। ছেলেমেয়েরা খুব খোলামেলা মাঠে ময়দানে বসে ভালোবাসার সাক্ষাৎ দেয়। গ্রিটিংস কার্ড কোম্পানিগুলো নানা ধরনের কার্ডের ব্যবসা করে। এই ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ আমাদের এখানে পশ্চিমা কৃষ্টি দুনিয়া থেকে। এটা একটা ব্যবসায়ের ফাঁদ। ভ্যালেন্টাইন হচ্ছেন একজন খ্রিষ্ট সন্যাসী। তিনি প্রেম করে নিহত হয়েছেন। হঠাৎ করে এই দিবসটি চালু করেছে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। কিছু কাল আগেও আমাদের দেশে এপ্রিল ফুল পালন করত আমাদের তরুণসমাজ মশকরা করার জন্য। এখন করে না, কারণ তারা এই এপ্রিল ফুলের মূল ইতিহাস জানতে পেরেছে। একইভাবে খ্রিষ্ট জগৎ ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ পালন করে। সমগ্র পশ্চিমা জগৎ, বিশেষ করে ব্যবসায়ী জগৎ মাতোয়ারা হয়ে ওঠে ব্যবসার জন্য। শুক্রবার মুসলমানদের পবিত্র দিন। এই দিনকে ঈদের দিনের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আর এই দিনকেই তারা ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’, অশুভ শুক্রবার, আনলাকি শুক্রবার হিসেবে পালন করে। কিন্তু মুসলমানেরা কখনো বলে না ব্ল্যাক সানডে বা ব্ল্যাক স্যাটারডে। আমি ভয় পাচ্ছি, কিছু না জেনেই আমাদের তরুণসমাজ বা জ্ঞানপাপী বুদ্ধিজীবীরা ব্ল্যাক ফ্রাইডে পালন করা শুরু করে দেয়। এমনিতেই আমাদের তরুণসমাজ ইতিহাস সচেতন নয়। কারণ তারা যে মুসলমান, সে বিষয়টাই তাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। তাদের তেমন দোষ দেয়া যায় না। আমাদের ইতিহাস কী হবে তা আজো আমরা নির্ধারণ করতে পারিনি। হাল ইতিহাস নিয়েও আমরা বিতর্কে জড়িত হয়ে পড়েছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই এখনো স্পষ্ট নয়। মুক্তিযুদ্ধ কেন করেছি, ঠিক সে সময়ে রাজনৈতিক প্রেক্ষিত কী ছিলÑ এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো নেই। পুরো জাতির ইতিহাস নিয়ে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামীপন্থীদের চিন্তাভাবনা এক রকম, অন্য সবার ভাবনা আরেক রকম। চিন্তার ক্ষেত্রে জাতি আজ দুই ভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ ও আওয়ামীপন্থীরা মনে করেন তারা শুধুই বাঙালি, অন্যরা মনে করেন তারা প্রথমে মুসলমান, তারপরে বাঙালি। সোজা কথায় তারা বাঙালি মুসলমান। আওয়ামী লীগ চায় তারা যেভাবে চায় সমগ্র জাতি সেভাবেই ভাববে। কেউ যদি আওয়ামী চিন্তাধারা বিপরীতে থাকে তাহলে তাকে বলা হয় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, সেকুলারিজম-বিরোধী। কেউ যদি ধর্মকে গুরুত্ব দেয় আওয়ামী লীগ তাদের জঙ্গি সাজিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়।
আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে আমাদের ধর্ম। আমাদের ধর্মের একটা সংস্কৃতি আছে। যার সাথে মিশে আছে আমাদের ভৌগোলিক ও আঞ্চলিক সংস্কৃতি। আমরা যদি নিজেদের মুসলমান ভাবি তাহলে পোশাক, খাদ্য, সাহিত্য, কবিতা ও জীবনধারা এক রকম, আর যদি শুধুই বাঙালি ভাবি তাহলে সব কিছুই অন্য রকম হবে। এর আগে বহুবার লিখেছি যে, আমরা মুসলমান বলেই আজ স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। আমি আরেকটি কথা প্রায়ই নিয়মিত বলে থাকি যে, সব জাতিরই একটা বায়া দলিল আছে। সে দলিল হারিয়ে গেলে বা ভুলে গেলে আমাদের স্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে পড়বে। কেন স্বাধীন হয়েছি এটা না জানলে স্বাধীনতা থাকবে কেন? বাঙালি মুসলমানের মূল ইতিহাস আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। দেশের প্রধান ও প্রাচীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ৮০ শতাংশই জানে না, কেন এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। এ বিষয়ে আমি গত রোববার একই কলাম লিখেছি। অনেকেই আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেইল ও ফোন করেছেন। হিন্দু নেতারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন। আর মুসলমান নেতারা এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন। উভয় পক্ষই নিজেদের স্বার্থ রক্ষার কাজ করেছেন। ব্যথিত হই যখন দেখি আমাদের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও তরুণসমাজ সেই ইতিহাস ভুলে যাচ্ছেন।
কিছু দিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন এবং সেখানে রাজধানীর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেছিলেন, ইতিহাসের বড় ভুলগুলো শোধরাবার সময় এসেছে। কী ভুল তিনি শোধরাবার প্রস্তাব দিয়েছেন তা খোলাসা করে বলেননি। এ দিকে ভারতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশন অখণ্ড ভারত পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তারা বলছে, ভারত বিভক্তির জন্য হিন্দু নেতারা দায়ী। মুসলমানরা ভারত বিভক্তি চায়নি। এই গবেষণার উদ্দেশ্য অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করা। মোদিজি সেদিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এখন ইতিহাস পুনর্র্নিমাণ ও ভারত পুনর্র্নিমাণ করার কথা উঠেছে। এসব চিন্তার সাথে বাংলাদেশের বহু বুদ্ধিজীবী জড়িত আছেন বলে শোনা যায়। অখণ্ড ভারতে মুসলমানরা সংখ্যার দিক থেকে মাইনরিটি। হিন্দু নেতারা যদি মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারতেন তা হলে ভারত ভাগ হতো না। এখন তো আমরা ভারতের মুসলমানদের অবস্থা দেখতে পাচ্ছি। ভারতের সব নেতাই নিজেদের হিন্দু মনে করেন। মনু সংহিতাই তাদের জীবনের প্রথম ও প্রধান নিয়ামক ও প্রভাবক শক্তি। মনু সংহিতার আলোক ও আদলেই তারা ভারতকে দেখতে চান। যার সাথে মুসলমানদের কোনো মিল নেই। ভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৮৮৫ সালে। তার ২০ বছর পরে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঢাকায়। ২০ বছরে মুসলমানেরা দেখেছে কংগ্রেস শুধুই হিন্দু স্বার্থের কথা বলছে। তারা মুসলমানদের কথা শুনতেই চায় না। এমনকি তারা মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠারও বিরোধিতা করেছেন।
আমরা তো পাকিস্তান থেকে মুক্তি লাভ করেছি ৪০ বছর আগে। ইংরেজ আর হিন্দু জমিদারেরা আমাদের শোষণ করেছে ১৯০ বছর। উইলিয়াম হান্টারের বই পড়ুন। পাকিস্তান শোষণ করেছে ২৩ বছর। আশা তো ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হলে আমরা একটা উন্নত জাতিতে পরিণত হবো। কিন্তু তা হয়নি। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের উত্তর কার কাছে পাওয়া যাবে? রাজনীতিবিদদের কথা বাদ দিলাম। তারা তাদের গদি নিয়ে ব্যস্ত আছেন। সেটাই রাজনীতির নিয়ম। কিন্তু দেশের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক তরুণসমাজ কী করছে? তারা কি কখনো নিজেদের প্রশ্ন করেছে- ৪০ বছরেও বাংলাদেশের আকাক্সিক্ষত উন্নতি হচ্ছে না কেন? উন্নতি একেবারে হয়নি তা বলব না। শুনেছি, পাকিস্তানে ২২ পরিবার ছিল যারা দেশের মানুষকে শোষণ করেছে। এখন তো শুনি ২২ হাজার ধনী পরিবারের কথা, যারা দেশকে শোষণ করে ধনী হয়েছে। আমাদের চোখের সামনেই সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, তাইওয়ান নিজেদের আর্থিক ও রাজনৈতিক ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে। কিন্তু আমরা পারিনি। কেন পারিনি- প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই তরুণসমাজকে এখনই খুঁজে বের করতে হবে। যে উদ্দেশ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। ভাবতে হবে পাকিস্তান থেকে কেন মুক্তিলাভ করেছি। কেন ভারতের সাথে মিশে যাইনি। ভাবতে হবে কী কী উপাদান নিয়ে আমরা একটি আলাদা জাতিতে পরিণত হয়েছি। সেই উপাদান নির্ধারণে ভুল হলে আমাদের আলাদা অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা থাকবে না। অখণ্ড ভারতে আমরা বাঙালি মুসলমান ছিলাম, পাকিস্তানেও ছিলাম, স্বাধীন বাংলাদেশেও আমরা বাঙালি মুসলমান। আমরা কখনোই শুধু বাঙালি ছিলাম না। এখনো নই। আগামীতেও না। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রধান উপাদান আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ধর্ম। পশ্চিম বাংলার বাঙালিরা আমাদের সাথে থাকেনি কারণ তারা হিন্দু। তাই তারা অবাঙালি হিন্দু দিল্লির অধীনে থাকাটাকে যুক্তিযুক্ত মনে করেছে।
©somewhere in net ltd.