নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন শিক্ষক, লেখালেখি, সম্পাদনা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশ কে ভালবাসি। দেশের জন্য, মানুষের জন্য সামান্য হলেও কিছু করতে চাই।

মা, মাটি ও মানুষকে ভালবাসি। ভালবাসতে চাই।

বিএইচ মাহিনী

I am a social worker.

বিএইচ মাহিনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

চেতনায় কুরবানী : ঈদুল আযহায় করণীয় ও বর্জনীয়

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৫

চেতনায় কুরবানী : ঈদুল আযহায় করণীয় ও বর্জনীয়
--- সাংবাদিক বি.এইচ.মাহিনী
প্রভাষক-গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা
মহান আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন, ‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।’ ‘নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার বেঁচে থাকা ও আমার মৃত্যুবরণ সবকিছুই প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই নিবেদিত।’ (সূরা আনআম : ১২৬)। কোরবানির পশু জবাই করার সময় দোয়া হিসেবে কোরআন মজিদের এ আয়াতটি পড়তে হয়। আসলে এ দোয়ার মধ্যেই কোরবানির আসল চেতনা নিহিত। নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য, আল্লাহর আদেশ পালন ও সমাজে বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিত হতে পারলেই জীবন হবে প্রকৃত ইসলামী জীবন। এমন জীবন লাভের অনুশীলনীর নাম কোরবানি। আমরা কোরবানি সম্পূর্ণ আল্লাহর ওয়াস্তে হচ্ছে কি-না তা মনের কাছে জিজ্ঞেস করতে পারি। যদি কোরবানির পশু কত টাকায় কিনলাম, কত দিক দিয়ে অন্যদের চেয়ে সেরাÑএমন অহমিকা মনে আসে, বুঝতে হবে শয়তান আমার মনের মিনায় জামারায় পাথর মারায় দমিত হয়নি। কোরবানি পশুর গোশত খাওয়া শেষ নবী (সা.) এর উম্মতের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। নিয়ম হলো, গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজে, এক ভাগ আত্মীয়স্বজন ও এক ভাগ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া। এখানে আমি লোভের কাছে পরাজিত হচ্ছি কিনা, ভোজের ডিপ ফ্রিজের কাছ পরাজিত হচ্ছি কি-না, তা দিয়ে পরীক্ষা নিতে পারি নিজের কুরবানিকে। মনে রাখতে হবে, কোরবানিতে আনুষ্ঠানিকতা আল্লাহর কাম্য নয়। তিনি বলেন, ‘কখনও কোরবানি পশুর গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া তথা খোদাভীতি।’ (সূরা হজ : ৩২)।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘কোরবানির দিন আদম সন্তানের এমন কোনো আমল নেই, যা আল্লাহর কাছে পশুর রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক প্রিয়। কেননা কোরবানির পশুকে কেয়ামতের দিন তার শিং, পশম, ক্ষুর সহকারে হাজির করা হবে। আর কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগে তা আল্লাহর কাছে চলে যায়।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাযাহ্ সূত্রে মেশকাত, বাবুল ফিল উদহিয়্যা)।
কোরবানির এ ধারাবাহিকতা ও প্রথা অনুসরণ পশু জবাইয়ের আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) এর ত্যাগ এবং কোরবানিকে জীবনে ধারণ করার অনুশীলন। কোরবানির অন্তর্নিহিত আবেদন এই যে, আমরা বড়রা যেন ইবরাহিমের ত্যাগ ও আল্লাহপ্রেমের সবক গ্রহণ করি। আমাদের মায়েরা যাতে হাজেরার প্রেম ও ত্যাগকে ধারণ করে জীবনকে সুন্দর করে গড়তে পারে। আর ছোটরা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার চেতনা নিয়ে জীবনকে সাজাতে পারে।
ঈদের দিনে বর্জনীয় বিষয়সমূহ :
১. ঈদের দিনে সিয়াম নিষিদ্ধ : সহিহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং ঈদের দিন সিয়াম বা রোজা পালন করা যাবে না।
২. বিজাতীয় আচরণ হারাম : ঈদ নামক পবিত্র একটি ইবাদতকে আকাশ সংস্কৃতি ও বিজাতীয় আচরণের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে অপসংস্কৃতি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদে, চাল-চলনে, শুভেচ্ছা বিনিময়ে অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে মুসলমানদের অনেকেই। হাদিসে এসেছে- আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে (আবু দাউদ : ৪০৩৩)।
৩. পুরুষ নারীর বেশ ও নারী পুরুষের বেশ ধারণ : পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন ও সাজ-সজ্জার ক্ষেত্রে পুরুষের নারীর বেশ ধারণ ও নারীর পুরুষের বেশ ধারণ হারাম। ঈদের দিনে এ কাজটি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। হাদিসে এসেছে- ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসূলে করিম (সা.) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন (আবু দাউদ : ৪০৯৯)।
৪. নারীদের রাস্তাঘাটে বের হওয়া : ঈদের দিনে নারীদের বেপর্দায় রাস্তা-ঘাটে বের হওয়া যাবে না । এ বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে,‘আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন মূর্খতার যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ (সূরা আহযাব : ৩৩) নারীগণ পর্দা পালন করে বের হবে।
৫. অশ্লীল গান-বাজনা, সিনেমা ও নাটক দেখা : ঈদ উপলে বিশেষ নাটক, সিনেমা ও বিভিন্ন গান বাজনা-যা ইসলাম অনুমোদন করে না, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে (সহিহ বুখারী : ৫৫৯০)।
৬. অপচয় ও অপব্যয় : ঈদের কেনাকাটা থেকে শুরু করে এ উপলে অপচয় ও অপব্যয় করা হয়। অথচ কুরআনে বলা হয়েছে,“ আর তোমরা কোনভাবেই অপব্যয় করো না, নিশ্চই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই” । (সূরা বনি ইসরাঈল-২৬-২৭)। ‘এবং তোমরা খাও, পান করো কিন্তু অপচয় করো না’ [সূরা আরাফ-৩১]।
৭. জুয়া খেলা ও আতশবাজি : এগুলো শরিয়াত বিরোধী কাজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা মায়েদা-৯০)
অনেকে ঈদের আনন্দে মাতওয়ারা হয়ে নতুন জামা-কাপড় পরিধান, সেমাই, ফিরনী ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ঈদের সালাত আদায় করার কথা ভুলে যান। অথচ এই দিনে ঈদের সালাত আদায় করা হচ্ছে মূল করণীয়। ঈদের সালাত আদায় করা ওয়াজিব।
ঈদে করণীয় বিষয়সমূহ :
১. ঈদের দিন ভোরে ঘুম থেকে জাগা ও ফজরের নামাজ জামায়াতে আদায় করা : মনে রাখা দরকার ঈদের নামাজের চেয়েও ফজরের নামাজের গুরুত্ব বেশি। অথচ আমাদের দেশে অনেকেই ফজরের নামাজ আদায় করে না। ঈদের জমায়াতের জন্য ফজরের নামাজ জামায়াতে পড়ার গুরুত্বও দেয়না। অথচ মুত্তাফাকুন আলাইহি’র মধ্যে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি তারা এশা ও ফজর নামাজের মধ্যে কী আছে তা জানতে পারতো তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দুটি নামাজের জামায়াতে শামিল হত।
২. তাকবীর পাঠ করা : তাকবীর পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা হয়। কুরআনে এসছে, আল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চাননা, আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের যে, হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। [সূরা বাকারা-১৮৫]। তাকবীর হলো ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ বাক্যটি উচ্চস্বরে পড়া। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন। ঈদের সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন। বিশেষভাবে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে যখন বের হবে ও ঈদগাহে সালাতের অপোয় যখন থাকবে তখন গুরুত্ব সহকারে তাকবীর পাঠ করতে হবে।
৩. ঈদের দিন গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা : ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন। কেননা এ দিনে সকল মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মিলিত হয়। ইবনে উমার (রা.) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত যে তিনি ঈদের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (সুনান বায়হাকী : ৫৯২০)।
৪. নতুন ও সাধ্যমত পোশাক পরিধান করা : ঈদে উত্তম জামা-কাপড় পরিধান করে ঈদ উদযাপন করা। ইবনে উমার (রা.) থেকে সহি সনদে বর্ণিত যে তিনি দু’ঈদের দিনে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। (সুনান বায়হাকি) । আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার উপর তার প্রদত্ত নেয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন’ (সহিহ আল-জামে : ১৮৮৭)।
৫. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া : আর ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া হলো সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : সুন্নত হলো ইদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া (সুনান আত তিরমিযী : ৫৩৩)।
৬. ঈদের সালাত আদায় করা : ঈদের সালাত আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের সালাতে মহিলাদেরকে শামিল করানোর বিষয়ে হাদিসে এসেছে, ‘উম্মে আতিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা.) আদেশ করেছেন আমরা যেন মহিলাদের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে সালাতের জন্য বের করে দেই ; পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনীসহ সকলকেই। কিন্তু ঋতুবতী মেয়েরা (ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে) সালাত আদায় থেকে বিরত থাকবে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদের মাঝে কারো কারো ওড়না নেই। (যা পরিধান করে আমরা ঈদের সালাতে যেতে পারে) রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : সে তার অন্য বোন থেকে ওড়না নিয়ে পরিধান করবে’ (সহীহ মুসলিম : ২০৯৩)।
৭. ঈদের খুতবা শ্রবণ করা : ঈদের খুতবা বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। আব্দুল্লাহ বিন সায়েব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি নবী করিম (সা.) এর সাথে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের সালাত শেষ করলেন, বললেন : আমরা এখন খুতবা দেব। যার ভালো লাগে সে যেন বসে আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে। (সুনান আবু দাউদ)
৮. যে পথে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসা : জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন (সহিহ বুখারী : ৯৮৬)। অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে না এসে অন্য পথে আসতেন।
৯. ঈদের দিনে খাবার গ্রহণ : ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত তবে ঈদুল আযহার দিন ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে সালাত আদায়ের পর কোরবানির গোশত খাওয়া সুন্নত। বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সা.) ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আযহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না (সুনান আত তিরমীযি : ৫৪৫)।
১০. মুসাফাহা ও মুআনাকা করা : মুসাফাহা ও মুআনাকা করার মাধ্যমে পারস্পারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত. একদা হাসান ইবনে আলী রা. নবী করিম (সা.) এর নিকট আসলেন, তিনি তখন তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং মুআনাকা (কোলাকুলি) করলেন (শারহুস সুন্নাহ)।
১১. গরিব ও অসহায় মানুষের সাহায্য করা : ঈদের আনন্দ ধনী-গরিব সকলের মধ্যে ভাগ করে নেয়া। প্রতিবেশী ও আতœীয়দের মধ্যে যারা অভাবী তাদের যথাসম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) অপরের কস্ট দূর করা ও অপরকে সাহায্য করার প্রতি উৎসাহিত করে বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের কস্ট দূর করে দেবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতে তার কস্ট দূর করে দিবেন (সহীহ মুসলিম ৭০২৮)।
১২. আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খবর নেয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া : ঈদের সময় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খবর নেয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে আখিরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে”(সহীহ বুখারী : ৬১৩৮)।
১৩. প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নেয়া : ঈদের সময় প্রতিবেশীর হক আদায়ের সুযোগ তৈরি হয়। আল-কুরআনে বলা হয়েছে, তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট আত্মীয়Ñ প্রতিবেশী, অনাত্মীয়Ñপ্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী। (সূরা নিসা : ৩৬)।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের পিতাদের ইবরাহিম (আ.), ছেলেদের ইসমাঈল (আ.) আর মেয়ে ও মায়েদের মা হাজেরার চেতনায় উজ্জীবিত করুন। আল্লাহর প্রিয়তম বন্ধু ইবরাহিম খলিলুল্লাহর অনুসরণে কোরবানি ও হজের সূত্রে আমাদের জীবন আবার হেসে উঠুক ঈদের আনন্দে, আল্লাহর ভয়ের চেতনায় এবং ভালোবাসার উষ্ণতায়।
লেখক-সাংবাদিক বি.এইচ.মাহিনী, প্রভাষক-গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, অভয়নগর, যশোর।
সাংবাদিক বি.এইচ.মাহিনী
প্রভাষক-গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা
মহান আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন, ‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।’ ‘নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার বেঁচে থাকা ও আমার মৃত্যুবরণ সবকিছুই প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই নিবেদিত।’ (সূরা আনআম : ১২৬)। কোরবানির পশু জবাই করার সময় দোয়া হিসেবে কোরআন মজিদের এ আয়াতটি পড়তে হয়। আসলে এ দোয়ার মধ্যেই কোরবানির আসল চেতনা নিহিত। নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য, আল্লাহর আদেশ পালন ও সমাজে বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিত হতে পারলেই জীবন হবে প্রকৃত ইসলামী জীবন। এমন জীবন লাভের অনুশীলনীর নাম কোরবানি। আমরা কোরবানি সম্পূর্ণ আল্লাহর ওয়াস্তে হচ্ছে কি-না তা মনের কাছে জিজ্ঞেস করতে পারি। যদি কোরবানির পশু কত টাকায় কিনলাম, কত দিক দিয়ে অন্যদের চেয়ে সেরাÑএমন অহমিকা মনে আসে, বুঝতে হবে শয়তান আমার মনের মিনায় জামারায় পাথর মারায় দমিত হয়নি। কোরবানি পশুর গোশত খাওয়া শেষ নবী (সা.) এর উম্মতের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। নিয়ম হলো, গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজে, এক ভাগ আত্মীয়স্বজন ও এক ভাগ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া। এখানে আমি লোভের কাছে পরাজিত হচ্ছি কিনা, ভোজের ডিপ ফ্রিজের কাছ পরাজিত হচ্ছি কি-না, তা দিয়ে পরীক্ষা নিতে পারি নিজের কুরবানিকে। মনে রাখতে হবে, কোরবানিতে আনুষ্ঠানিকতা আল্লাহর কাম্য নয়। তিনি বলেন, ‘কখনও কোরবানি পশুর গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া তথা খোদাভীতি।’ (সূরা হজ : ৩২)।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘কোরবানির দিন আদম সন্তানের এমন কোনো আমল নেই, যা আল্লাহর কাছে পশুর রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক প্রিয়। কেননা কোরবানির পশুকে কেয়ামতের দিন তার শিং, পশম, ক্ষুর সহকারে হাজির করা হবে। আর কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগে তা আল্লাহর কাছে চলে যায়।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাযাহ্ সূত্রে মেশকাত, বাবুল ফিল উদহিয়্যা)।
কোরবানির এ ধারাবাহিকতা ও প্রথা অনুসরণ পশু জবাইয়ের আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) এর ত্যাগ এবং কোরবানিকে জীবনে ধারণ করার অনুশীলন। কোরবানির অন্তর্নিহিত আবেদন এই যে, আমরা বড়রা যেন ইবরাহিমের ত্যাগ ও আল্লাহপ্রেমের সবক গ্রহণ করি। আমাদের মায়েরা যাতে হাজেরার প্রেম ও ত্যাগকে ধারণ করে জীবনকে সুন্দর করে গড়তে পারে। আর ছোটরা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার চেতনা নিয়ে জীবনকে সাজাতে পারে।
ঈদের দিনে বর্জনীয় বিষয়সমূহ :
১. ঈদের দিনে সিয়াম নিষিদ্ধ : সহিহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং ঈদের দিন সিয়াম বা রোজা পালন করা যাবে না।
২. বিজাতীয় আচরণ হারাম : ঈদ নামক পবিত্র একটি ইবাদতকে আকাশ সংস্কৃতি ও বিজাতীয় আচরণের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে অপসংস্কৃতি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদে, চাল-চলনে, শুভেচ্ছা বিনিময়ে অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে মুসলমানদের অনেকেই। হাদিসে এসেছে- আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে (আবু দাউদ : ৪০৩৩)।
৩. পুরুষ নারীর বেশ ও নারী পুরুষের বেশ ধারণ : পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন ও সাজ-সজ্জার ক্ষেত্রে পুরুষের নারীর বেশ ধারণ ও নারীর পুরুষের বেশ ধারণ হারাম। ঈদের দিনে এ কাজটি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। হাদিসে এসেছে- ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসূলে করিম (সা.) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন (আবু দাউদ : ৪০৯৯)।
৪. নারীদের রাস্তাঘাটে বের হওয়া : ঈদের দিনে নারীদের বেপর্দায় রাস্তা-ঘাটে বের হওয়া যাবে না । এ বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে,‘আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন মূর্খতার যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ (সূরা আহযাব : ৩৩) নারীগণ পর্দা পালন করে বের হবে।
৫. অশ্লীল গান-বাজনা, সিনেমা ও নাটক দেখা : ঈদ উপলে বিশেষ নাটক, সিনেমা ও বিভিন্ন গান বাজনা-যা ইসলাম অনুমোদন করে না, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে (সহিহ বুখারী : ৫৫৯০)।
৬. অপচয় ও অপব্যয় : ঈদের কেনাকাটা থেকে শুরু করে এ উপলে অপচয় ও অপব্যয় করা হয়। অথচ কুরআনে বলা হয়েছে,“ আর তোমরা কোনভাবেই অপব্যয় করো না, নিশ্চই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই” । (সূরা বনি ইসরাঈল-২৬-২৭)। ‘এবং তোমরা খাও, পান করো কিন্তু অপচয় করো না’ [সূরা আরাফ-৩১]।
৭. জুয়া খেলা ও আতশবাজি : এগুলো শরিয়াত বিরোধী কাজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা মায়েদা-৯০)
অনেকে ঈদের আনন্দে মাতওয়ারা হয়ে নতুন জামা-কাপড় পরিধান, সেমাই, ফিরনী ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ঈদের সালাত আদায় করার কথা ভুলে যান। অথচ এই দিনে ঈদের সালাত আদায় করা হচ্ছে মূল করণীয়। ঈদের সালাত আদায় করা ওয়াজিব।
ঈদে করণীয় বিষয়সমূহ :
১. ঈদের দিন ভোরে ঘুম থেকে জাগা ও ফজরের নামাজ জামায়াতে আদায় করা : মনে রাখা দরকার ঈদের নামাজের চেয়েও ফজরের নামাজের গুরুত্ব বেশি। অথচ আমাদের দেশে অনেকেই ফজরের নামাজ আদায় করে না। ঈদের জমায়াতের জন্য ফজরের নামাজ জামায়াতে পড়ার গুরুত্বও দেয়না। অথচ মুত্তাফাকুন আলাইহি’র মধ্যে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি তারা এশা ও ফজর নামাজের মধ্যে কী আছে তা জানতে পারতো তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দুটি নামাজের জামায়াতে শামিল হত।
২. তাকবীর পাঠ করা : তাকবীর পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা হয়। কুরআনে এসছে, আল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চাননা, আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের যে, হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। [সূরা বাকারা-১৮৫]। তাকবীর হলো ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ বাক্যটি উচ্চস্বরে পড়া। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন। ঈদের সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন। বিশেষভাবে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে যখন বের হবে ও ঈদগাহে সালাতের অপোয় যখন থাকবে তখন গুরুত্ব সহকারে তাকবীর পাঠ করতে হবে।
৩. ঈদের দিন গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা : ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন। কেননা এ দিনে সকল মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মিলিত হয়। ইবনে উমার (রা.) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত যে তিনি ঈদের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (সুনান বায়হাকী : ৫৯২০)।
৪. নতুন ও সাধ্যমত পোশাক পরিধান করা : ঈদে উত্তম জামা-কাপড় পরিধান করে ঈদ উদযাপন করা। ইবনে উমার (রা.) থেকে সহি সনদে বর্ণিত যে তিনি দু’ঈদের দিনে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। (সুনান বায়হাকি) । আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার উপর তার প্রদত্ত নেয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন’ (সহিহ আল-জামে : ১৮৮৭)।
৫. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া : আর ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া হলো সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : সুন্নত হলো ইদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া (সুনান আত তিরমিযী : ৫৩৩)।
৬. ঈদের সালাত আদায় করা : ঈদের সালাত আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের সালাতে মহিলাদেরকে শামিল করানোর বিষয়ে হাদিসে এসেছে, ‘উম্মে আতিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা.) আদেশ করেছেন আমরা যেন মহিলাদের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে সালাতের জন্য বের করে দেই ; পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনীসহ সকলকেই। কিন্তু ঋতুবতী মেয়েরা (ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে) সালাত আদায় থেকে বিরত থাকবে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদের মাঝে কারো কারো ওড়না নেই। (যা পরিধান করে আমরা ঈদের সালাতে যেতে পারে) রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : সে তার অন্য বোন থেকে ওড়না নিয়ে পরিধান করবে’ (সহীহ মুসলিম : ২০৯৩)।
৭. ঈদের খুতবা শ্রবণ করা : ঈদের খুতবা বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। আব্দুল্লাহ বিন সায়েব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি নবী করিম (সা.) এর সাথে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের সালাত শেষ করলেন, বললেন : আমরা এখন খুতবা দেব। যার ভালো লাগে সে যেন বসে আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে। (সুনান আবু দাউদ)
৮. যে পথে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসা : জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন (সহিহ বুখারী : ৯৮৬)। অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে না এসে অন্য পথে আসতেন।
৯. ঈদের দিনে খাবার গ্রহণ : ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত তবে ঈদুল আযহার দিন ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে সালাত আদায়ের পর কোরবানির গোশত খাওয়া সুন্নত। বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সা.) ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আযহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না (সুনান আত তিরমীযি : ৫৪৫)।
১০. মুসাফাহা ও মুআনাকা করা : মুসাফাহা ও মুআনাকা করার মাধ্যমে পারস্পারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত. একদা হাসান ইবনে আলী রা. নবী করিম (সা.) এর নিকট আসলেন, তিনি তখন তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং মুআনাকা (কোলাকুলি) করলেন (শারহুস সুন্নাহ)।
১১. গরিব ও অসহায় মানুষের সাহায্য করা : ঈদের আনন্দ ধনী-গরিব সকলের মধ্যে ভাগ করে নেয়া। প্রতিবেশী ও আতœীয়দের মধ্যে যারা অভাবী তাদের যথাসম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) অপরের কস্ট দূর করা ও অপরকে সাহায্য করার প্রতি উৎসাহিত করে বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের কস্ট দূর করে দেবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতে তার কস্ট দূর করে দিবেন (সহীহ মুসলিম ৭০২৮)।
১২. আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খবর নেয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া : ঈদের সময় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খবর নেয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে আখিরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে”(সহীহ বুখারী : ৬১৩৮)।
১৩. প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নেয়া : ঈদের সময় প্রতিবেশীর হক আদায়ের সুযোগ তৈরি হয়। আল-কুরআনে বলা হয়েছে, তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট আত্মীয়Ñ প্রতিবেশী, অনাত্মীয়Ñপ্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী। (সূরা নিসা : ৩৬)।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের পিতাদের ইবরাহিম (আ.), ছেলেদের ইসমাঈল (আ.) আর মেয়ে ও মায়েদের মা হাজেরার চেতনায় উজ্জীবিত করুন। আল্লাহর প্রিয়তম বন্ধু ইবরাহিম খলিলুল্লাহর অনুসরণে কোরবানি ও হজের সূত্রে আমাদের জীবন আবার হেসে উঠুক ঈদের আনন্দে, আল্লাহর ভয়ের চেতনায় এবং ভালোবাসার উষ্ণতায়।
লেখক-সাংবাদিক বি.এইচ.মাহিনী, প্রভাষক-গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, অভয়নগর, যশোর।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.