নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন শিক্ষক, লেখালেখি, সম্পাদনা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশ কে ভালবাসি। দেশের জন্য, মানুষের জন্য সামান্য হলেও কিছু করতে চাই।

মা, মাটি ও মানুষকে ভালবাসি। ভালবাসতে চাই।

বিএইচ মাহিনী

I am a social worker.

বিএইচ মাহিনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যু বার্ষিকীতে স্মরণ : মাওলানা আব্দুর রহীম (রহ.)-এর জীবন ও কর্ম

০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৮

মৃত্যু বার্ষিকীতে স্মরণ : মাওলানা আব্দুর রহীম (রহ.)-এর জীবন ও কর্ম

আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও বিশ্ব ইসলামি স্কলারদের মধ্যে প্রসিদ্ধ দায়ী'দের অন্যতম প্রধান সিপাহসাহার আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুর রহীম (রহ.)। তাঁর রচিত ইসলামি সাহিত্য সমূহ শুধু বাঙালা ভাষা-ভাষীদেরই নয়, বরং সারা পৃথিবীর মুসলিম মিল্লাতের অমূল সম্পদ। বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে বিশেষত আরব ব্যবসায়ী ও সূফীয়ায়ে কেরামের মাধ্যমে। তাদের ভাষা ছিল আরবি, ফারসি প্রভৃতি। এদেশের অধিবাসীরা ছিল একেতো সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাষাভাষী, অপর দিকে নিম্নবর্ণের হিন্দু, বৌদ্ধ ও কৃষক শ্রেণিভূক্ত। ইসলামের সাম্য ও মানবতাবাদী দর্শনের মোহিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেও বাপ-দাদার বংশানুক্রমিক ধর্মেও বিভিন্ন আচার, কুসংস্কার ও সাংস্কৃতিক প্রভাব রয়ে গিয়েছিল তাদের জীবনাচারে। কুরআন, হাদিস, ইসলামি সাহিত্য সবই ছিল আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় লেখা। এহেন প্রেক্ষাপটে বাঙলা ভাষাভাষী মুসলিমদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দিতে এগিয়ে আসেন মাওলানা আব্দুর রহীম (রহ.)। রচনা করেন বিশাল সাহিত্য ভান্ডার ও যুগ জিজ্ঞাসার জবাব।
যুগের এ সন্ধিক্ষণে যুগের প্রয়োজনেই যেন মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহীমের মত বিরল প্রতিভার অধিাকারী, কালজয়ী গবেষক ও আধুনিক রীতিতে ইসরঅমি সাহিত্য চর্চার ধারটির সূচনা ও অগ্রযাত্রা দক্ষ ও কুশলী হাতেই নেতৃত্ব দেন মাওলানা আব্দুর রহীম। মাওলানা আব্দুর রহীমের শক্তিমান লেখনী ক্ষুরধার যুক্তি, আধুনিক মানস, যুগ জিজ্ঞাসার জবাব সম্বলিত রচনা খুব দ্রুত বাংলা ভাষায় ইসলাম চর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
*জন্ম, পরিচয় ও শিক্ষাজীবন : মাওলানা আব্দুর রহীম জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি পিরোজপুর জেলার কাউখালি উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম হাজী খবির উদ্দীন। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের পর তাঁকে ভর্তি করিয় দেয়া হয় সুপ্রসিদ্ধ দ্বীনি বিদ্রাপীঠ শর্ষিনা আলীয়া মাদরাসায়। মাদরাসার দ্বীনি পরিবেশ তাঁর আদর্শিক চরিত্র গঠনে বিশেষ সহায়ক হয়। ১৯৩৮ সালে তিনি শর্ষিনা হতে আলিম পাস কেরন। এরপর ভর্তি হন কলকাতা আলীয়া মাদরাসয়। ১৯৪০ সালৈ সেখান থেকে ফাজিল ও ১৯৪২ সালে কামিল পাশ করেন। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা আলীয়া মাদরাসাতে উচ্চুর গবেষণায় রত থাকেন আবেং ‘মুমতাজুল মুহাদ্দেসীন’ সনদ লাভ করেন। তিনি এ সময় বিভিন্ন ভাষাও আয়ত্ব করেন; বিশেষত আরবি, ফারসি, উদু ও ইংরেজি ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
*কর্মজীবন : মাওলানা আব্দুর রহীম শিক্ষাজীবন শেষে বরিশাল নাজিরপুর হাই মাদরাসায় ১৯৪৫-১৯৪৭ সাল পর্যন্ত হেড মাওলানা পদে শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৭-১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সাল পর্যন্ত কেউন্দিয়া কাউখালী মাদরাসায় হেড মাওলানার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৯-১৯৫০ সালে ‘তানজীম’ নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনার কাজে নিয়োজিত থাকেন। এরপর প্রথাগত চাকরি ছেেেড় দিয়ে তিনি জামায়াতে ইসলামির সার্বক্ষণিক জনশক্তি মনোনীত হন। সংগঠন, রাজনীতি, সাহিত্য চর্চা, জ্ঞান-গবেষণা প্রভৃতিতেই তাঁই বাকি জীবন অতিবাহিত হয়।
*রাজনীতিক ও সংগঠক মাওলানা আব্দুর রহীম : মাওলানা আব্দুর রহীম ছিলেন যুগ সচেতন সংগঠন ও রাজনীতিবিদ। জামায়াতে ইসরামীর রাজনীতিতে তিনি দীর্ঘকাল স্থিতি ছিলেন। পওে ‘ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আইডিএল)’ ও ‘ইসলামি ঐক্য আন্দোলন’ নামে রাজনৈতিক দল গঠন করে তাতে নেতৃত্ব দেন।
*কলকাতা আলীয়ায় গবেষণা কর্মে নিয়োজিত থাকাকালীন তিনি মাওলানা মওদূদীর (রহ.) সাহিত্যেও সাথে পরিচিত হন এবং মাওলানার সান্ন্যিধ্যে আসেন। ১৯৪৬ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামিতে যোগদান করেন।
*মূলত মাওলানা আব্দুর রহীমই বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামির দাওয়াত ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের সূচনা করেন। ১৯৫০-১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি। পরে ১৯৫৬ সালে প্রাদেশিক জামায়াতে ইসলামির আমির নির্বাচিত হন। তখন থেকে ১৯৬৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধওে তিনি এতদাঞ্চলে মূল নেতৃত্বে থেকে জামায়াতের সাংগঠনিক ভিত্তি দাঁড় করান।
*১৯৬৯ সালে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মনোনীত হন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এশাত্তর পরবর্তী পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ইসলামি নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক রোষানলে পতিত হলে ১৯৭৪ পর্যন্ত তিনি নেপালে অবস্থান করেন। সালের মে মাসে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর গবেষনাকর্ম, গ্রন্থ প্রণয়ন ও সংগঠন গোছানোর কাজে পুনরায় আত্মনিয়োগ করেন। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির অবসান হলে ১৯৭৬ সালে ৭টি ইসলামি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (এলডিএল) গঠন করেন এবং তিনি এর ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতপার্থক্যেও কারণে আইডিএল ভেঙে গেলে তিনি আইডিএল-এর একাংশের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
*সাহিত্যাঙ্গনের মরণজয়ী মুজাহিদ : মাওলানা আব্দুর রহীম ছিলেন এশাধাওে শীর্ষস্থানীয় আলেম, রাজনীতিবিদ, সংগঠক, সুবক্তা ও সাহিত্যিক। তাঁর বহুবিধ পরিচিতির মধ্যে চিন্তাবিদ-গবেষক-সাহিত্যিক পরিচয়টি অধিকতর সমুজ্জল। চিন্তার মৌলিকত্ব, জীবনের প্রায় সব বিভাগের উপর অতলস্পর্শী গবেষণা ও উচ্চাঙ্গের সাহিত্য রচনা-ই তাকে কালজয়ীর আসনে সমাসীন করেছে। বাংলা ভাষায় ইসলাম চর্চার ক্ষেত্রে তাঁর ধারে-কাছেও কেউ নেই। তাঁর আগে অনেকে বাংলায় ইসলাম চর্চা করলেও তা ছিল খুবই সীমিত পর্যায়ের; তিনিই সর্বপ্রথম ইসলামি জীবন-দর্শনকে ব্যাপক ও বিস্তৃত পরিসরে বাংলাভাষী বিশাল জনগোষ্ঠীর সামনে উপস্থাপন করেছেন। বাংলাভাষায় ইসরাম চর্চার পথিকৃৎ মাওলানা আব্দুর রহীমই। তাঁর অঙ্কিত পদরেখা অনুসরণ কওে পওে বাংলা ভাষায় ইসলামি জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার গড়ে তুলেছে অজস্র গবেষক। তারপরও তাঁর পরবর্তীরা এষনও পর্যন্ত তাঁকে অতিক্রম করা দূরে থাক, স্পর্শ করতেও সক্ষম হয়নি। মানব জীবনের প্রায় প্রত্যেক বিভাগে কী অর্থনীতি, কী রাজনীতি, পারিবারিক জীবন, নারী অধিকার, ইতিহাস চর্চা, সৃষ্টিতত্ত্ব, সংস্কৃতি, শিক্ষা, তুলনামূলক মতবাদ সব বিষয়েই তিনি সমান পারদর্শিতায় তাঁর কলমের ধার প্রমাণ করেছেন। একজন আলেম হওয়ার পরও তাঁর সাহিত্যে উচ্চাঙ্গেও ভাষা ব্যবাহার, আধুনিক গবেষণা পদ্ধতির প্রয়োগ, যুগজিজ্ঞাসার ভারসাম্যপূর্ণ সামধান দৃষ্টে রীতিমত বিস্মিত হতে হয়। তাঁর রচনা ভাষারও বিশাল। ৬০টি মৌলিক গ্রন্থ ও ৬০টি মৌলিক গ্রন্থ মিলে তাঁর রচনা প্রায় ১২০টি। ইসলামি সাহিত্যাঙ্গের মরণজয়ী এ মুজাহিদেও রচিত ও অনূদিত গ্রন্থাবলীর শিরোনামই তাঁর রচনাবলীর মান ও বিশালত্ব অনুধাবনে অনেকখানি সহায়ক হতে পারে।
*বহুমূখী দায়িত্ব পালন : রাজনৈতিক ময়দানের ব্যস্ত রাজনীতিবিদ, গবেষণারত গীবর আত্মমগ্ন সাহিত্যিক কিংবা বৃহত্তর ইসলামি সংগঠনের শীর্ষ মাওলানা আব্দুর রহীম বহুমূখী দায়িত্ব পলন করেছেন। রাজনীতি, সাগঠন ও সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি তিনি ১৯৪৯-১৯৫০ সালে ছিলেন সাপ্তাহিক ‘তানজিম’ পত্রিকার সম্পাদক ও ১৯৫৯-১৯৬০ সালে দৈনিক নাজাত এর জেনারেল ম্যানেজার।
১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ সালে ছিলেন ‘ইসলামি গবেষণা একাডেমি’র পরিচালক। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ ইসলামি অর্থনীতি গবেষণা ব্যুরোর চেয়ারম্যান পদেও নিয়োজিত ছিলেন। ছিলেন রাবেতায়ে আলমে ইসলামির ফিকহ একাডেমির অন্যতম ফকিহ। গবেষণা কর্মের জন্য ১৯৭৭ সালে এবং অনুবাদেও জন্য ১৯৮৩ সালে পেয়েছেন ইসলামি ফাউন্ডেশন পুরস্কার।
বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিশ্বাবিদ্যালয় আয়োজিত প্রথম বিশ্ব ইসলামি শিক্ষা সম্মেলন রাবেতায়ে আলমে ইসলামি সম্মেলন, ইমাম খোমেনির আমন্ত্রন, এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অতিথি হিসেবে তিনি সফর করেছেন সৌদিআরব, ইরান, ইংল্যন্ড, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, থাইল্যান্ড, মায়ানমার প্রভৃতি দেশ।
*ইন্তেকাল : প্রায় ৪ দশক ইসলাম ও ইসলামি আন্দোলনের খেদমতে অক্লান্ত শ্রম বিনিয়োগ করেন মাওলানা আব্দুর রহীম। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিষ্ক্রিয়তা কিংবা শৈথিল্যতা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। ১৯৮৭ সালে ১ অক্টবর বেলা ১২টা ২০ মিনিটে এই কৃতিমান মনীষীর ইহজীবনের অবসান ঘটে। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। মগবাজারস্থ রাশমনো ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে মাওলানার বয়স হয়েছিল। ৬৯ বছরের কিছু বেশি। মাওলানা আব্দুর রহীম স্ত্রী, ৭ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে ইন্তোকাল করেন। পরদিন বাদ জুম্মা বায়তুল মোকাররমে তাঁর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.