![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a social worker.
আমাদের ঐতিহ্যের বাংলা নববর্ষ
বাংলা সন হলো ইসলামি হিজরি সনের সৌরবর্ষীয় সংস্করণ। রসুল স. মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় থেকে হিজরি সনের শুরু। বাংলা সনের উৎসেও রয়েছে হিজরতের সেই পবিত্র স্মৃতি। ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন কায়েম হওয়ার পর হিজরি সন অনুসরণ করা হতো।
খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে হিজরি সনের উৎস ঠিক রেখে সৌরবর্ষীয় বাংলা সনের উৎপত্তি। ভারতবর্ষে মোগল শাসনামলে বাংলা সন শুরু হয়। সে সময় কৃষককে হিজরি সন অনুযায়ী খাজনা দিতে হতো। হিজরি চান্দ্র বছরের সঙ্গে বাংলা ঋতু চক্রের হিসাব এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় কৃষক বিপাকে পড়ে যেত। যেহেতু আরবি মাস চন্দ্রের হিসেবে চলে। সেখানে সৌর বছর থেকে হিজরী বছর বছরে ১১দিন কম। স¤্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণ করে এ সমস্যাটি উপলব্ধি করেন। তিনি সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে ৯১২ হিজরি সনে প্রখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজিকে সৌরবর্ষীয় সন তৈরির দায়িত্ব দেন। আমির ফতেহ উল্লাহ হিজরি সনের সঙ্গে মিল রেখে সৌরমাসভিত্তিক ফসলি সন প্রণয়ন করেন। এ সন হিজরি সনের আদলেই শুরু হয়। ৯৩৬ হিজরি সনে বাংলা সনের জন্ম বছর হলেও তা ৯৩৬ বঙ্গাব্দ হিসাবে গণনা শুরু করা হয়। শুধু তাই নয়, হিজরি সনের সঙ্গে মিল রাখার জন্য বাংলা সনের প্রথম মাস চৈত্রের পরিবর্তে বৈশাখ করা হয়। কারণ ৯৩৬ হিজরি সনের পয়লা মহররমের দিনটি ছিল পয়লা বৈশাখ। সে থেকেই পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হিসেবে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। সুতরাং বলা যায়, বাংলা সনের সঙ্গে ইসলামী ঐতিহ্যের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বাংলা নববর্ষ পালনে ইসলামী ঐতিহ্যের ব্যত্যয় যাতে না ঘটে সেদিকে নজর দিতে হবে।
পয়লা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। বাংলাভাষী মানুষের সিংহভাগ যেহেতু মসুলমান সেহেতু এ উৎসব থেকে তাদের দূরে থাকার সুযোগ নেই। বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে শরিয়তের বৈধ সীমায় আনন্দ-উৎসব করা দোষের নয়। বৈধভাবে নববর্ষ উদ্যাপনের অনেক পথও রয়েছে। শুকরিয়ার নামাজ, দান-সদকা, নফল রোজা, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে নববর্ষ উদ্যাপন করা যেতে পারে। নতুন বছরের নতুন দিনে কোনো অভাবীর অভাব পূরণ করে কিংবা ঋণগ্রস্তকে সাহায্য করে অথবা নিরক্ষর হৃদয়ে অক্ষরের আলো জ্বেলে নতুন বছর শুরু করা যেতে পারে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েও নববর্ষ উদ্যাপন করা যেতে পারে। নতুন বছর আমাদের জন্য শান্তিময় হোক। কল্যাণের বার্তা নিয়ে আসুক প্রতিটি আদম সন্তানের জন্য। এ কামনাই করছি মহান আল্লাহর দরবারে। স্রষ্টা ও সৃষ্টির সঙ্গে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হলেই মানুষে মানুষে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার আবহ তৈরি হবে। এবারের নববর্ষে আমরা সেই আবহের সর্বপ্লাবী আহ্বান আশা করি। আসুন, নববর্ষ সম্পর্কে সঠিক বাণী অন্যদের জানিয়ে দেই। পাপকর্ম থেকে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা নিজেদের এবং পরিবারের লোকদের আগুন থেকে বাঁচাও।’ (সূরা তাহরিম : ৬)
বৈশাখের প্রথম দিনের উৎসবটি প্রামবাংলার মানুষের পছন্দের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। আমরা না জানার কারণে আমাদের নববর্ষকে অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসব মনে করছি। বাঙালি হিসেবে নববর্ষটা আমাদেরই। পহেলা বৈশাখের ইতিহাস ও ঐতিহ্য মুসলমানদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
আজ আমরা বাঙালি হয়ে আমাদের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলার অপেক্ষায় রয়েছি। আমরা ভুলে গেছি বাংলা নববর্ষ প্রবর্তনের গোড়ার কথা। ফলে শূন্যস্থানটি দখল করে সেখানে ইসলামবহির্ভূত কর্মকা-সহ অপসংস্কৃতি চর্চার মিলনমেলা বসানো হচ্ছে।
আমরা যদি নববর্ষকে কেন্দ্র করে এলাকার যুবকদের নিয়ে ইসলামি মাহফিল, হামদ-নাত প্রতিযোগিতা, সাহিত্য আসর, পুঁথিপাঠ প্রভৃতির অনুষ্ঠান করতে পারি তাহলে সমাজের ছেলেমেয়েরা অপসংস্কৃতি ও পাপকর্ম থেকে বিরত থাকার প্রেরণা পাবে। আমরা দুই হাত তুলে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করতে পারি ‘প্রভু আমাদের গত বছরের ইবাদত-বন্দেগি কবুল করে নাও। জানা-অজানা, ইচ্ছা-অনিচ্ছায় যত পাপ করেছি, মাফ করে দাও। সামনের বছরটিতে শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, কালবৈশাখি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা ও বজ্রপাত থেকে আমদের রক্ষা করো। বিশেষত নগ্ন অপসংস্কৃতির ছোবল থেকে নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করো।
বছরের প্রথম দিন পালন করার রীতি ইসলামে নেই, এটা পার্সী মজুসীদের (অগ্নিউপাসক) অনুকরণ। এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীস শরীফে এসেছে: ‘যে ব্যক্তি কোন স¤প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত।’ তাই যে কোন নওরোজ সেটা থার্টি ফাস্ট নাইট হোক, পহেলা নববর্ষ হোক বিজাতীয় রীতি হিসেবে প্রতেকটি ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে ইমাম ফখরুদ্দীন উসমান বিন আলী আয যাইলায়ী বলেন, ‘নওরোজ ও মেলার নামে কিছু দেয়া নাজায়েয। এ দুই দিনের নামে প্রদত্ত হাদিয়া হারাম; বরঞ্চ কুফর’। (গ্রন্থ তাবইনুল হাকায়েক : ৬/২২৮)
ইমাম হাফস কবীর রহ. বলেন, ‘নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন উপলক্ষে যদি কেউ একটা ডিমও দান করে, তবে তার ৫০ বৎসরের আমল থাকলে তা বরবাদ হয়ে যাবে’। তাই পহেলা বৈশাখ পালন করলে মুসলমানিত্ব যায় না বামপন্থী ইনুর এ বক্তব্য মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত। অপরদিকে ইনু বলেছেন চৈত্র সংক্রান্তি পালন করলেও মুসলমানিত্ব যায় না। তাহলে তিনি কি মুসলমানদের পূজা করিয়ে হিন্দু বানাতে চান? কারণ পহেলা বৈশাখে হিন্দু স¤প্রদায়ের বিভিন্ন ধরনের পূজা এবং উৎসব রয়েছে। এগুলো হলো-১. হিন্দুদের ঘটপূজা, ২. হিন্দুদের গণেশ পূজা, ৩. হিন্দুদের সিদ্ধেশ্বরী পূজা, ৪. হিন্দুদের চৈত্রসংক্রান্তি পূজা-অর্চনা, ৫. মারমাদের সাংগ্রাই ও পানি উৎসব, ৬. চাকমাদের বিজু উৎসব (ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমাদের পূজা উৎসবগুলোর সম্মিলিত নাম বৈসাবি), ৭. হিন্দু ও বৌদ্ধদের উল্কিপূজা, ৮. মজুসি তথা অগ্নি পূজকদের নওরোজ, ৯. হিন্দুদের বউমেলা, ১০. হিন্দুদের মঙ্গলযাত্রা, ১১. হিন্দুদের সূর্যপূজাসহ বিধর্মীদের বিভিন্ন পালনীয় দিবস রয়েছে (তথ্য উইকিপিডিয়া)।
বর্ষবরণের উৎসব কুরআন, সুন্নাহ ও সংবিধান বিরোধী। মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে ১ লা বৈশাখে যে উৎসব করা হয় তা মুসলমানদের সংস্কৃতি নয়। এসব হচ্ছে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি এগুলোর সাথে শিরকী মতাদর্শ মিশ্রিত। সুতরাং এ জাতীয় উৎসবে কোন মুসলমান অংশ নিবে না। স্কুল-কলেজের সাথে মাদরাসায় বর্ষবরণের উৎসব পালন করার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ কোনভাবেই মানা হবে না। কোন মুসলমান ছাত্র-শিক্ষক এ নির্দেশ মানতে পারে না। হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি পালনে বাধ্য করা ইসলাম বিরোধী এবং সংবিধানের স্বাধীনতা পালনের ধর্মীয় অধিকারের উপরে হস্তক্ষেপ।
‘পহেলা বৈশাখ ও চৈত্র সংক্রান্তির পালনে মুসলমানিত্ব যায় না’ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এই বক্তব্য মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত। ওলামায়ে কেরাম বলেন, ইনু বামপন্থী। এদেশের গণতন্ত্র নস্যাৎ করে সমাজতন্ত্র কায়েমই তার মূল উদ্দেশ্য। ইনু তো জানে না যে ইসলামে কোন ধরনের নববর্ষ পালন জায়েজ নয়। নববর্ষ পালনের উৎসব বিধর্মীদের থেকে। মহানবীর (সা) হিজরতের পর পবিত্র মদীনা শরীফে এলাকাবাসীর দুটি উৎসব বন্ধ করেছিলেন। একটি হচ্ছে বছরের প্রথম দিন উদযাপন বা নওরোজ; অন্যটির নাম ছিলো ‘মিহিরজান’। এ উৎসব দুটির বিপরীতে চালু হয় মুসলমানদের দুই ঈদ। (তাফসিরসমূহ) মূলতঃ নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন পালন করার রীতি ইসলামে নেই, এটা পার্সী মজুসীদের (অগ্নিউপাসক) অনুকরণ। এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীস শরীফে এসেছে: ‘যে ব্যক্তি কোন স¤প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত।’ তাই যে কোন নওরোজ সেটা থার্টি ফাস্ট নাইট হোক, পহেলা নববর্ষ হোক বিজাতীয় রীতি হিসেবে প্রতেকটি ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে ইমাম ফখরুদ্দীন উসমান বিন আলী আয যাইলায়ী বলেন, ‘নওরোজ ও মেলার নামে কিছু দেয়া নাজায়েয। এ দুই দিনের নামে প্রদত্ত হাদিয়া হারাম; বরঞ্চ কুফর’। (গ্রন্থ তাবইনুল হাকায়েক : ৬/২২৮)
মুসলিম স্কলাররা বলেন, মুসলিম জনগণকে ইসলামহীন করার লক্ষ্যে এ অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। যেমন মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে, উলুধ্বনী দিয়ে, শাখা বাজিয়ে, মঙ্গল কলস সাজিয়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এছাড়া যেসব পশু-পাখী নিয়ে অমঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়, তাও এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের পরিপন্থী। কেননা সংখ্যালঘু একটি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাস মোতাবেক পেঁচা মঙ্গলের প্রতীক ও লক্ষীর বাহন, ইঁদুর গণেশের বাহন, হনুমান রামের বাহন, হাঁস স্বরসতীর বাহন, সিংহ দূর্গার বাহন, গাভী রামের সহযাত্রী, সূর্য দেবতার প্রতীক ও ময়ূর কার্তিকের বাহন।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এক বিবৃতিতে বলেছেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা বানানো সুপরিকল্পিত। পেঁচা, কুমির, সাপ ইত্যাদি প্রাণির প্রতিকৃতি বুকে ধারণ করে নারি-পুরুষ এই ভাবে উৎসব করা সম্পূর্ণরূপে অনৈসলামিক কর্মকান্ড। এহেন অনৈসলামিক কার্যকলাপকে উৎসবের নামে মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার কারো নেই। যে দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, যে দেশের সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম রয়েছে সে দেশে শিরকী মতাদর্শ সম্বলিত কোন উৎসব চলতে পারে না এবং এ জাতীয় উৎসবে কোন মুসলমান অংশ নিতেও পারে না। সুতরাং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রা পালনের নির্দেশ মুসলমান মানে না।
আমাদের ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে চর্চা করতে না পারায় যারা অন্য পথে এগুচ্ছে তাদের ঘৃণা না করে পাপকে ঘৃণা করা উচিত। মানুষের প্রতি দরদি হয়ে সুন্দর ও সঠিক জিনিসটি সমাজের সামনে তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব। ইসলামি সংস্কৃতি ও জীবনাচারে সৌন্দর্য মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারলে নিশ্চয়ই মানুষ সেদিকে আকৃষ্ট হবে।
কোরআন মজিদে মানুষকে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আল্লাহর পথে ডাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানুষ যাতে নৈতিকতার শিক্ষা পায়, একে অপরকে ভালোবাসে। সমাজে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির চর্চা হয়। আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হলেই মানুষে মানুষে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার আবহ তৈরি হবে। এবারের নববর্ষে আমরা সেই আবহের সর্বপ্লাবী আহ্বান আশা করব। আসুন, নববর্ষ সম্পর্কে সঠিক বাণী অন্যদের জানিয়ে দেই। পাপকর্ম থেকে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা নিজেদের এবং পরিবারের লোকদের আগুন থেকে বাঁচাও।’ (সূরা তাহরিম : ৬)।
©somewhere in net ltd.