নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন শিক্ষক, লেখালেখি, সম্পাদনা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশ কে ভালবাসি। দেশের জন্য, মানুষের জন্য সামান্য হলেও কিছু করতে চাই।

মা, মাটি ও মানুষকে ভালবাসি। ভালবাসতে চাই।

বিএইচ মাহিনী

I am a social worker.

বিএইচ মাহিনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সদকাতুল ফিতরা : বৈষম্যহীন ঈদ উদযাপনের সেতুবন্ধন

০৮ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫

সদকাতুল ফিতরা : বৈষম্যহীন ঈদ উদযাপনের সেতুবন্ধন
--প্রভাষক বি এইচ মাহিনী
পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম (রোজা) পালনের ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরন হিসেবে ঈদুল ফিতরের সালাতে পূর্বেই নিসাব পরিমান (স্বচ্ছল) ব্যক্তির উপর গরীব-অসহায় মানুষদেরকে যে সদকাহ (দান) প্রদান করা হয় তাকেই ইসলামি শরিয়াতে সদকাতুল ফিতরা বলা হয়। কাওয়াঈদুল ফিকহ’র বর্ণনা অনুযায়ি ‘সাদাকাহ’ মানে দান এবং ‘আল-ফিতর’ মানে রোজা ভেঙে পানাহারের বৈধতা। অর্থাৎ পানাহারের বৈধতার সুযোগ প্রাপ্তিতে কিছু দান করা এবং ‘ঈদুল ফিতর’ মানে পানাহারের বৈধতা দানের আনন্দে খুশি। পরিভাষায় সাদাকাতুল ফিতর মানে ‘নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের উপর ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের সময় থেকে যে ‘দান’ ওয়াজিব হয়। প্রকৃতপক্ষে, পবিত্র রমজানের সিয়াম পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি যে অফুরন্ত নিয়ামত দান করেছেন, তার শোকর (কৃতজ্ঞতা) হিসেবে এবং রোজা পালনে ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ বিবেচনায় সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে। ওয়াকি ইবনুল জাররাহ রা. বলেন, ‘সিজদায়ে সাহু যেমন নামাজের ক্ষতিপূরণ, তেমনি সাদাকাতুল ফিতর রোজার ক্ষতিপূরণ’।
নিসাব (নির্ধারিত) পরিমাণ তথা সম্পদশালী ব্যক্তির নিজের পক্ষ থেকে, নাবালক সন্তানদের পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। পরিবারস্থ স্ত্রী, কন্যা ও রোজগারবিহীন সাবালক সন্তানের পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করা উত্তম, তবে ওয়াজিব নয়। (হিদায়া, আলমগীরী-১) নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বলতে জীবিকা নির্বাহের আবশ্যকীয় উপকরণ যথাÑআবাসগৃহ, পরিধেয় বস্ত্র, খাদ্যদ্রব্য, ঘরের ব্যবহার্য সরঞ্জামাদি ব্যতীত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ (৮৮ গ্রাম সোনা) বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা (৬১৩ গ্রাম রূপা) অথবা সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা সম্পদ থাকলে নিসাবের মালিক বলা হয়ে থাকে। (আলমগীরী-১, শামি-২)
ফিতরার পরিমাণ : এর পরিমাণ ছোট-বড়, নারী-পুরুষ প্রত্যেকের পক্ষ থেকে আধা সা’ গম-আটা বা এক সা’ যব, কিসমিস, খেজুর, চাল, বাজরা, ভুট্টা ইত্যাদি বা তার মূল্য। (শামি-২, ইত্যাদি) বর্তমান হিসাব মতে, এক সা’ মানে (৩.৩০০ কেজি) তিন কেজি ৩০০ গ্রাম এবং অর্ধ সা’ মানে (১.৬৫০ গ্রাম) এক কেজি ৬৫০ গ্রাম। রোজা ও ফিতরা দু’টি পৃথক ইবাদত। তাই কোনো কারণে রোজা না রাখলেও ফিতরা দিতে হয়। (আলমগীরী:১) ঈদের নামাজের আগে আদায় করতে না পারলে ফিতরা মাফ হবে না। পরে তা আদায় করা ওয়াজিব হিসেবে বহাল থাকবে। (হিদায়া-১) যব, গম, আটা, খেজুর, কিসমিস ইত্যাদির বাজারমূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থও ফিতরা হিসেবে আদায় করা যায়। শরিয়তের পক্ষ থেকে ধার্যকৃত ফরজ, ওয়াজিব ইত্যাদি আর্থিক ইবাদতগুলো, যেমনÑজাকাত, ফিতরা ইত্যাদি বাধ্যতামূলক দানগুলো কেবল মুসলিম ফকির, মিসকিন, ঋণী ও অসহায়দের প্রদান করা যায়; অমুসলিম কাউকে দেয়া যায় না।
ফিতরা পাওয়ার প্রথম হকদার হচ্ছেন একান্ত নিকটাত্মীয় গরিবেরা; অতঃপর দূরাত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী, মিসকিন, নওমুসলিম, ঋণভারে জর্জরিত ব্যক্তি এবং সাময়িক আর্থিক সঙ্কটে পতিত ব্যক্তিরা। হাদিসগুলো থেকে জানা যায়, মহানবী সা: যেসব খাদ্যদ্রব্যকে ফিতরা আদায়ের মাধ্যম হিসেবে নির্ধারণ করেছেন তা হচ্ছে-গম বা আটা, যব বা বার্লি, খেজুর, কিশমিশ ও পনির। জাকাতের অনুরূপ সাদাকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে পুরো বছর নিসাবের মালিক থাকা আবশ্যক নয়। কেবল ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের পূর্ব মুহূর্তে নিসাব পরিমাণ মাল থাকা বিবেচ্য। কেউ যদি ঈদের আগেই ফিতরা প্রদান করে, তা জায়েয; এমনকি উত্তমও বটে।
আল্লাহ তায়ালা যাকে যেরূপ আর্থিক সামর্থ্য দান করেছেন তার তদানুসারে দান-খয়রাত করা উচিত। একজন দিনমজুর বা নির্মাণ শ্রমিক যদি ৬৫ টাকা ফিতরা দেন এবং একজন ধনী ব্যক্তিও যদি তাই দেন তবে সেটা মোটেই ইনসাফপূর্ণ ও মানবিক দান হলো না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ধনী লোকেরা যেন তাদের সামর্থ্য অনুসারে ব্যয় করে এবং যার সম্পদ সীমিত সে যেন আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা থেকেই ব্যয় করে’ (সূরা তালাক : ৭)। ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা রোজগার করো এবং আমি ভূমি থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করি, তার উৎকৃষ্ট অংশ দান করো এবং এর নিকৃষ্ট অংশ ব্যয় করার ইচ্ছা পোষণ করো না; অথচ তোমরা তা (নিকৃষ্টটি) গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নও’ (সূরা বাকারা : ২৬৭)।
বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র নগদ অর্থে ফিতরা প্রদান একটি প্রচলিত প্রথা হয়ে গেছে। ফিতরা প্রাপকেরাও নগদ অর্থ পেলেই অধিক আনন্দিত হন। উপরন্তু তারা নগদ অর্থের মাধ্যমে সহজেই নিজেদের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন। এ ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা শরিয়তে জায়েজ। ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজতা চান, তোমাদের সঙ্কটে নিপে করতে চান না’ সূরা বাকারা : ১৮৫। মহানবী সা: বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই দ্বীন সহজসাধ্য’ (বুখারি, নাসায়ি, মুসনাদ আহমাদ)।
কোনো ব্যক্তি সঙ্গত ওজরবশত রোজা রাখতে না পারার কারণে তাকে ফিদিয়া আদায় করতে হয়। এ জন্য একজন মিসকিনকে দুইবেলা রান্না করা খাবারও তার বাড়িতে ডেকে এনে আহার করাতে পারেন অথবা খাবারের মূল্য নির্ধারণ করে নগদ অর্থও প্রদান করতে পারেন। নগদ অর্থে ফিতরা আদায়ের বিষয়টিও অনুরূপ।
তাই আসুন ঈদের খুশি সর্বজনে (ধনী-গরীব) ছড়িয়ে দিতে ও আনন্দ ভাগাভাগি করতে সদকাতুল ফিতর প্রদানের মাধ্যমে বৈষম্যহীন ঈদ উদযাপনে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করি। (আমিন)

লেখক : পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা
খতিব : সিংগাড়ী বাজার জামে মসজিদ, অভয়নগর, যশোর।
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সম্পাদক : সিংগাড়ী আঞ্চলিক গণ-গ্রন্থাগার ও ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, অভয়নগর, যশোর।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.