![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথমে বলা হল আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা করা যাবে না। তার পরে মাটির আদমকে তৈরি করে বলা হল সেজদা করো! তাহলে আজাজিলের দোষ কোথায়?
যদি জানার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে, তবে এই পোষ্ট আপনার জন্য। আর যদি তর্ক করা উদ্দেশ্যে হয় তবে আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন।
আল্লাহ হচ্ছেন স্বাধীন, অমুখাপেক্ষী।
তিনি যা চান, তা তিনি করেন। কে আছে যে তার কাছে তার কর্মের ব্যাপারে দোষারোপ করবে, কৈফিয়ত চাইবে? তার কাউকে জবাব দিতে হয় না। তিনি স্বাধীন, স্বার্বভৌম ক্ষমতার মালিক।
আনুগত্য প্রকাশের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। তার মধ্যে সর্বোচ্চ হচ্ছে নিজের সর্বোচ্চ, গুরুত্বপূর্ণ, অংগ এবং সম্পদকে সমর্পণ করা। আর মানুষের সবচেয়ে উর্ধাঙ্গ হচ্ছে মাথা, জ্ঞানের ভান্ডার তাই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের অবস্থান এই মাথা। চিন্তা চেতনা, বিবেক, ইচ্ছা সব কিছুই মাথায় থাকে। মোটকথা মানব সত্তার অস্তিত্ব হিসেবে যদি দৃশ্যমান কিছু উপস্থাপন করতে হয়, তবে নিজের মস্তিষ্কই উপস্থাপন করতে হবে। তাই সেজদা হচ্ছে আনুগত্যের সবচেয়ে উতকৃষ্ট পন্থা।
ধরুন এই মহাবিশ্বে কোন সৃষ্টি নেই, শুধু স্রষ্টা রয়েছেন। তাতে তো তিনি স্রষ্টা হতে পারবেন না। যদি তিনি কিছু সৃষ্টি না করেন।
তাতে করে নিজেকেই কিছুতেই গর্বিত ভাবতে পারেননি স্রষ্টা, কারন কাকে নিয়ে গর্ব করবেন, দেখবে কে?
অতঃপর তিনি সৃষ্টি করার ইচ্ছে করলেন। ফেরেস্তা সৃষ্টি করলেন, একদম ইচ্ছেমত। উদ্দেশ্য তারা আল্লাহর গুনগান করবেন,, হুকুম পালন করবে, জানবে যে তিনি স্রষ্টা, তাকে ভয় করবে। মোটকথা নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যেই তিনি সৃষ্টি করলেন। ঠিক একজন রাজার মত। রাজা যেমন একা একটা রাজ্য নিয়ে বসে থাকলে কোন কৃতিত্ব নেই।
ফেরেস্তা সৃষ্টি করার পরে আল্লাহ দেখলেন যে ফেরেস্তারা নিজের ইচ্ছে মত কিছুই করতে পারে না। অথচ আল্লাহ নিজের ইচ্ছে মত সব কিছু করতে পারেন। অবাধ্য হওয়ার ক্ষমতা না থাকলে সবাই বাধ্য হবে এটাই স্বাভাবিক। সবাই আল্লাহকে খুব মেনে চলে একদম শতভাগ। এদের নেই কোন ইচ্ছে শক্তি। তারা অবাধ্য হতে জানে না। কিন্তু তারা আল্লাহর শতভাগ বিশ্বস্ত।
অতঃপর আল্লাহ জ্বিন জাতি সৃষ্টির ইচ্ছে করলেন। যারা বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে ফেরেস্তাদের থেকে একটু উন্নত। সেটা হচ্ছে ইচ্ছে এবং বিবেক। যাকে এক কথায় বলা হয় বুদ্ধিমত্তা। তবে গঠনগত দিক থেকে তারা ফেরেস্তাদের মতই অনেকটা। তবে কতটা তা জানি না। ফেরেস্তাদেরকেও আল্লাহ একটা শক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর জ্বীনকেও আল্লাহ একটা শক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আলো ও তাপ। আলো ও তাপ বা আগুনের মধ্যে শক্তির গঠনগত মিল আছে।
কিন্তু মানুষকে আল্লাহ কোন শক্তি থেকে সৃষ্টি করেননি। মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পদার্থ থেকে। এটা আল্লাহর এক মহা সৃষ্টি। যাদের ইচ্ছে, ও জ্ঞান বুদ্ধি রয়েছে। এটা পরে কখনো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আল্লাহ যখন মানুষ সৃষ্টি করলেন, তিনি তো জানেন মানুষকে কতটা সুন্দর ও সুকৌশলে সৃষ্টি করেছেন। কতটা জ্ঞান বুদ্ধি, কতটা স্বাধীনতা এবং কত ক্ষমতা দিয়েছেন। আর যেহেতু পুর্বের সকল সৃষ্টির অভিজ্ঞতা ও দর্শন প্রয়োগ করেছেন মানুষ সৃষ্টিতে, তাই স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ শ্রেষ্ঠ হবে। এতে অনেক কিছু চিন্তার প্রয়োজন হয় না।
মানুষ সৃষ্টির সেরা। যেহেতু পুর্বে আরো অনেক জাতি ছিল, এখনো আছে। এদের মধ্যে সবার চেয়ে মানুষ শ্রেষ্ঠ। আনুষ্ঠানিকভাবে এই শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনা করতে হবে, স্বীকৃতি দিতে হবে, প্রচার করতে হবে এবং সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে, যে মানুষ শ্রেষ্ট, তোমাদের উপরে!
তাই আল্লাহ একটা আয়োজন করলেন। আয়োজনের মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে শ্রেষ্ঠ ঘোষনা করা। এই আয়োজনের অনেক গুলো পর্ব এবং আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে একটি ছিল সেজদা করা। বলা হল তোমরা আদমকে সেজদা করো। কারনঃ
আদম শুধু একজন মানুষ এই হিসেবে নয়, বড়ং আদম একটা জাতি, ভিন্ন জাতি। এই সেজদাটা এই জাতিকে মর্যাদায় ভুষিত করার জন্য। স্তর ভাগাভাগি করার জন্য, এক জাতিকে অন্য জাতির উপরে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করার জন্য। এটা ইবাদতের সেজদাহ নয়। আল্লাহর হুকুম পালন করা আল্লাহর ইবাদত, সুতরাং এই সেজাদাহ করার মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম পালন করা হয়েছে সেই হিসেবে এটা আল্লাহর ইবাদত, কিন্তু এই সেজাদাহ মানুষকে করার মাধ্যমে মানুষের ইবাদত করা হয় নি। বরং এই জাতিকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
ইবলিশ এই সেজাদাহ করতে অপারগ। কারন তার ধারনা সে শ্রেষ্ঠ। যিনি উভয় জাতিকে সৃষ্টি করলেন এবং কাকে শ্রেষ্ঠ করেছেন সেটা তো স্রষ্টাই জানেন! সৃষ্টি হয়ে যদি ইবলিশ আল্লাহর সিদ্ধান্তকে মেনে না নেয়, সেটা কত বড় নির্বুদ্ধিতা!
আল্লাহ বলেন, আমি স্রষ্টা, আমি জানি কে শ্রেষ্ঠ, তুই কি করে করে জানলি?
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি একে শ্রেষ্ঠ করার, তুই মেনে নিতেই কে আর না নিতেই কে?
আদমকে আমি যত জ্ঞান দিয়েছি তা আমি জানি, তার ক্ষমতা সক্ষমতা আমি জানি। সুতরাং এখানে অন্য কেউ এই বিশাল সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনবে এটা ভাবা যায়?
আল্লাহ এত সুন্দর করে সখ করে সুকৌশলে মানুষ বানালেন শ্রেষ্ঠ করে, আর কেউ এটা মেনে নেবে না, তার পরিনতি কি হতে পারে?!!
আমরা প্রত্যেকেই কম বেশি নামাজ ছেড়ে দেই। আল্লাহকে সেজদাহ করি না। অনেক আলেম সমাজ এই ব্যাপারে বলে থাকেন যে ইবলিশ একটা সেজদাহ না দেওয়াতে তার এই পরিনতি, তো আপনার আমার কি পরিনতি হবে?
তাদেরকে বলবো দয়া করে এসব খোড়া যুক্তি দেবেন না। আমাদের সেজদাহ আর ঐ সেজদাহ টার অনেক পার্থক্য। আমরা তো আল্লাহর ডাকে সারা দিয়ে সেজদাহ করি, যার উদ্দেশ্য শুধু আল্লাহর ইবাদত করা। আর ঐ সেজদাহটা ছিল একটা নতুন সৃষ্টি করা জাতির স্বীকৃতি, মানুষকে তার অবস্থান বুঝিয়ে দেওয়া, মর্যাদায় ভুষিত করা।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে একটা সেজদাহ না দেওয়ার জন্য তাকে কেন বিতারিত হল!
যারা বলে আল্লাহই তো তাকে ছাড়া কাউকে সেজদাহ করতে নিষেধ করেছে। আবার কেন আদমকে সেজদাহ করতে বললেন?
আল্লাহ যখন যেটা বলবেন, তখন সেটা ইবাদত। আপনি কি আল্লাহর কাছে কৈফিয়ত চাইছেন নাকি দোষারোপ করছেন? যে কেন তিনি এমন করলেন? আপনার স্থান তবে জাহান্নাম।
নাকি আপনি জানার জন্য প্রশ্ন করছেন? সেটা ভাল। তার উত্তর হচ্ছে, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি যখন যেটাকে চান পরিবর্তন করে দেন।