নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://bihosh.com/

পান্থ বিহোস

আমি নিজের কাছে নিজে জবাবদিহী করতে পারার সাহস রাখি। bihosh.com

পান্থ বিহোস › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোয়েন্দা গল্প : মামার ঘড়ি

১৩ ই এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৮









মামার ঘড়ি

পান্থ বিহোস



মন্টু মামা সকালে বের হতে গিয়ে কী যেন হয়েছে, এখন রেগে গিট্টু হয়ে আছেন। যে কেউ তার কাছে গেলেই ফুঁস ফুঁস শব্দ শুনতে পাবে সেটা সহজেই বলা যায়।



অরিত্র প্রচণ্ড ভীতু। তাই মামার কাছে যাবার সাহস হয়নি।

সুহা অবশ্য এতোটা ভীতু নয়। পেন্সিল খোঁজার নাম করে একবার ঘুরে এসেছে সে মামার রুম থেকে। তবে মামার বেশি কাছে যাবার সাহস তারও নেই। কিন্তু তক্কে তক্কে আছে। সুযোগ পেলে আবারও মামার কাছে যাবে। যে করেই হোক মন্টু মামার ফুঁস ফুঁস শব্দ শুনতেই হবে।

মা বলেছে মন্টু মামা নাকি ছোটবেলায় রেগে গেলে হিস-হিস আর ফুঁস-ফুঁস করে শব্দ করতো।

অরিত্র আর সুহা অবশ্য সেরকম শব্দ কখনোই শুনেনি। তবে শোনার প্রবল আগ্রহ। তাই মামা রেগে গেলেই দু ভাই-বোন মামার আশেপাশে ঘুর ঘুর করে।

সুহা একটু পর পর-ই মামার ঘরের আশেপাশে একবার করে ঘুরে আসছে।

কিন্তু অরিত্র ভাবছে অন্য কথা। হঠাৎ করে মামা এমন রেগে গেলো কেন? কী হয়েছে মামার? কেন মামা বের হতে গিয়েও বের না হয়ে রেগে নিজের রুমে বসে আছে?



গম্ভীর হয়ে ভাবছে অরিত্র। ভাবছে আর ভাবছে। এই সময় মন্টু মামার গুরু গম্ভীর হাঁক শোনা গেলো- ‘অরি! এই অরি, এদিকে একবার আয় তো।’

‘আসছি মামা।’ বলেই ছুট দিলো অরিত্র।

অরিত্রর পেছনে পেছনে সুহাও ছুটলো। সুহাকে দেখে রেগে গেলেন মামা।

‘এই, তোকে কে ডেকেছে? যা ভাগ!’ গর্জে উঠলো মামা।

চুপসে গিয়ে থেমে গেলো সুহা। বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি মুখে পুরে মামার ঘর থেকে বের হয়ে গেলো সে। তবে বেশি দূরে গেলো না। হয়তো মামা এখনই আবার ডাকবে- সেই আশায়। কিংবা মজার কিছু ঘটলে তো এখান থেকেই টের পাওয়া যাবে।

‘কয়টা বাজে?’ অরিত্রকে জিজ্ঞেস করলো মামা।

মামার কথা বুঝতে পারলো না অরিত্র। দেয়ালে ঘড়ি আছে, আছে ঘড়ি টেবিলেও। তারপরও মামা সময় জানার জন্য ওকে ডাকলো!

অভিমান হলো অরিত্রর।

বললো, ‘তোমার সামনেই তো মামা ঘড়ি আছে। সেটা যদি নষ্ট হয় তাহলে টেবিলে...’

‘তোকে পণ্ডিতি করতে হবে না। যা জিজ্ঞেস করেছি জবাব দে।’ চিবিয়ে চিবিয়ে বললো মামা।

মামার কথা শুনে চুপসে গেলো অরিত্র। কোনো রকমে জবাব দিলো- ‘পৌনে এগারোটা।’

‘যা ভাগ!’ ধমক দিয়ে মামা বললো।

অরিত্র ভাগলো না। মামার দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে বললো- ‘মামা, তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে তোমার হাতঘড়ি কোথায় আছে খুঁজে দেখতে পারি।’



আশ্চর্য হয়ে অরিত্রর দিকে ফিরে তাকালো মামা। তারপর আরও আশ্চর্য হয়ে বললো- ‘আমার হাতঘড়ি খুঁজে পাচ্ছি না সেটা তোকে কে বলেছে?’

‘অনুমান করেছি মামা।’ বিজ্ঞের মতো জবাব দিলো অরিত্র।

‘মানে- মানে সেটা কীরকম বলতো শুনি?’ জিজ্ঞেস করলো মামা। মামার রাগ মনে হচ্ছে অনেকটাই কমে এসেছে।

‘আমি কয়েকটি বিষয় ভেবেছি মামা। যেমন, প্রথমত তুমি রেডি হয়ে বসে আছো। বের হতে গিয়েও বের হওনি। তার মানে তুমি সম্পূর্ণ রেডি হয়েছিলে বাইরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তোমার হাতে ঘড়ি নেই। দ্বিতীয়ত তুমি ঘড়ি হাতে না পরে বাইরে বের হও না। তৃতীয়ত তুমি আমাকে ডেকে কয়টা বাজে জিজ্ঞেস করেছো। এ থেকে বুঝতে পারলাম তুমি তোমার হাতঘড়ি কোথায় আছে জানো না। আমরা কেউ তোমার ঘড়ি দেখেছি কি-না সেটাও জিজ্ঞেস করছো না। কৌশলে এমন ভাবে জিজ্ঞেস করেছো যাতে তোমার ঘড়ি কোথায় আছে সেটা যদি আমরা জানি তাহলে তোমার ‘কয়টা বাজে’ শুনেই বলে দেবো- মামা, তোমার ঘড়ি তো ওখানে। ঠিক বলেছি মামা?’

‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস। অরি, তোর তো দারুণ বুদ্ধি!’ কথাটি বলেই মন্টু মামা হেসে ফেললেন। কাস ফাইভে পড়–য়া তার ভাগ্নে যে এতোটা বুদ্ধি রাখে সেটা ভেবেই সে খুব আনন্দিত।



এই সময় মন্টু মামার মোবাইলে রিং টোন বেজে উঠলো। মন্টু মামা মোবাইল রিসিভ করে খানিক কথা বলে লাইন কেটে দিয়ে হাসতে হাসতে অরিত্রর দিকে তাকিয়ে বললো- ‘হাতঘড়ি পাওয়া গেছেরে অরি। ওটা আমার বন্ধু সফিকের বাসায় গতকাল রেখে এসেছিলাম ভুলে। রাতের খাবার ওদের বাসায় খেয়েছিলাম। হাত-মুখ ধোয়ার সময় ওটা খুলে বেসিনের ট্রেতে রাখার পরে গিয়েছিলাম ভুলে। যা হোক, তোকে ধন্যবাদ ভাগ্নে।’



এই সময় সুহা মামার ঘরে উঁকি দিলো। মন্টু মামা হাসতে হাসতে সুহাকে ডাকলো হাত ঈশারা করে।

মামার হাসি হাসি মুখ দেখে সুহার মন খারাপ হয়ে গেলো। আজও মামার রেগে যাওয়ার ফুঁস-ফুঁস কিংবা হিস্-হিস্ শব্দ শোনা গেলো না!



অলংকরণ : রকিবুল হক রকি

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০০৯ সকাল ৭:০১

নাফে মোহাম্মদ এনাম বলেছেন: ভাল লেখার কদর সব জায়েগায় মনে মনে হয়। কেউ হিংসে করে ব্যাপারটা জানায় না। তবুও লিখে যাও নিজের মত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.