![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সব সময় নিজের ইচ্ছা কে প্রাধান্য দেই। আমি স্বাধীনতা চাই, স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাই। স্বাধীন ভাবে উড়তে চাই, স্বাধীন ভাবে ঘুরতে চাই। হোঁচট খেয়ে পড়তে চাই, সেখান থেকে শিখতে চাই।
১। ব্যক্তি জীবনঃ
১৮৮৭ সালে জ্যামাইকার সেন্ট এন-এ জন্ম হয় আফ্রিকার কিংবদন্তি মসিহ গার্ভের। তিনি ইউএনআইএ (UNIA - universal negro improvement assosiation) -এর প্রতিষ্ঠাতা। রবার্ট মারলের দার্শনিক গুরু বলা যায় তাঁকেই। গার্ভে আফ্রিকান জাতিকে তাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের দিকে মুখ ফেরাতে বলেন আর দর্পের সাথে ঘোষনা করেন, ''আসছে পৃথিবী শাষন করবে কালো আফ্রিকার কালো মানুষেরা''। রাসতাফারা আন্দোলনের (RASTAFARA movement) সুচনা করেন এই গার্ভে-ই;যদিও সেটা পূর্ণ রূপ পায় আরো অনেক বছর পরে এবং যা নিপীড়িত আফ্রিকার শ্বেত শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর সঙ্গত ঘৃনার আগুন জ্বেলে দেয় কালো মানুষদের বুক জুড়ে, শোণিতে-হৃদয়ে।
রাসতাফারি জনগোষ্ঠী বাইবেলের অনেক অনুশাষনেই আস্থাশীল। কিন্তু তাঁরা মনে করেন বাইবেলের বাণীকে অনেক ক্ষেত্রেই বিকৃত করা হয়েছে। ঈশ্বরকে তাঁরা ডাকেন ''জাহ্'' বলে- এটা ঈশ্বরের বাইবেল আনুমোদিত কাব্যিক নাম। অনেকেই মনে করে থাকেন যে, রাসতাফারা আন্দোলন মূলত একটি ধর্মীয় আন্দোলন। কিন্তু আসল সত্য হল এই যে, এই আন্দোলন আফ্রিকার নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্যে ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাসে নতুন পর্বের সূচনা যা ধর্মীয় আদলে গড়ে ও বেড়ে উঠেছে।
পারিবারিক ভাবে এই বিশ্বাসের উত্তোরাধিকারি হিসেবেই বব মারলের জন্ম-বেড়ে ওঠা, তাঁর শৈশব-কৈশোর-যৌবনের দুরন্ত পথ চলা। কাজেই এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, নিজস্ব অনুসন্ধিত্সু মন, জীবনের প্রতি সুগভীরতর অন্তর্দৃষ্টি আর রাসতাফারা আন্দোলনের প্রভাব - সব মিলিয়েই তৈরি হয়েছেন আমাদের মারলে এবং RAGGAE music-কে দিয়েছেন নতুন রূপ। মারলের হাতে পড়েই সংগীতের এই বিশেষধারা বিশ্বের ইতিহাসে তার জায়গা করে নিয়েছে দৃঢ়তার সাথে।
রাসতাফারা দর্শন যেমন রহস্যময় মারলের জীবন ও মৃত্যুও তেমনি রহস্যে ঘেরা। আজ এটা প্রমাণিত যে তাঁর মৃত্যু খেলতে গিয়ে আঙ্গুলে ব্যাথা পেয়েই ঘটেনি বরং তা ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কেন? কেন এই দুর্দান্ত গায়ককে মরতে হল এমন নিদারূণ নিষ্ঠুরতায়! এটা কি তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাণ্বিত হয়ে কেউ ঘটিয়েছে! ওয়েলারসের ম্যানেজার বলেন,'না'। তাঁর মৃত্যুর কারন তাঁর দার্শনিক অবস্থান, নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি যে তাঁর স্বদেশভূমি, নিজস্ব জল-হাওয়ার সাথে সম্পৃক্ত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্যে লড়াইয়ে নেমেছিলেন সেটা। কেননা, প্রচলিত আধিপত্যবাদী খৃষ্টান সমাজের কর্তাব্যক্তিদের মনোভঙ্গ করে এর কিছুদিন আগেই তিনি প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েছিলেন, '' YES ... GOD IS BLACK'' । পশ্চিমের শ্বেত ঈশ্বরেরা তা মানবে কেন!!!
২। সুর ও কথায়- ব্যক্তি থেকে সমষ্টি
রবার্ট মারলে - ১৯৪৫ এর বসন্তে জন্ম নেয়া জ্যামাইকান বালক; যে কিনা পরবর্তী ১৮ বছরের মধ্যেই বিশ্বের সংগীত জগতে নিজের জন্যে এমন একটি জায়গা করে নিয়েছিলেন যে, মাত্র ৩৬টি বসন্ত পেরোনো এই যুবককে পৃথিবী মনে রেখেছে বা বলা যায় মনে রাখতে বাধ্য হয়েছে। তিনি ছন্দ-তাল লয়ে কথার পদ্য গেঁথেছেন আর সেই নিরেট পদ্যে সুরও জুড়েছেন নিজেই। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে ওয়েলারস ( wailers - যার অর্থ বিলাপ করে করুণ সুরে কাঁদছে এমন একদল মানুষ ) নামে গানের দল দিয়ে তাঁর যাত্রার শুরু। খুব অল্প সময়েই মারলের গায়কি ধরণ সংগীত জগতে ছড়িয়ে পড়ে আর তার নিনাদ আমরা আরো অনেকের মাঝে খুঁজে পাই;অনেক দূর দূর থেকে। এখানেই মারলের সার্থকতা।
১৯৭৪ এর দিকে ওয়েলারস দল ভেঙ্গে গেলে তিনি একক পরিবেশনায় মনযোগ দেন এবং ১৯৭৭-এ আমরা পাই তাঁর একক গানের এলবাম Exodus; যা তাঁকে বিশ্বের কাছে নতুন পরিচয়ে পরিচিত করিয়ে দেয়। আধ্যাত্মিকতা বা পারলৌকিকতার প্রগাঢ় বোধ তাঁর সংগীতের অনুপ্রেরণা বলেই মনে করা হয়। কিন্তু তবু লৌকিকতাকে তিনি উপেক্ষা করেননি। তাঁর গানে তাই আমরা একদিকে যেমন পাই অপার্থিক ভালবাসায় নিগুঢ় আত্মমগ্ন হৃদয়, তেমনি অন্যদিকে পাই সমতাহীন পৃথিবীর অন্ধকার প্রবঞ্চনা - ক্ষুধাতুর ব্যাথিত আত্মার গুমরে কাঁদা।
প্রিয়া বিরহে তার চোখের নোনা জল যখন একাকার হয়ে যায় বর্ষার জলধারায় আমাদের কানে আসে গায়কের করুণআর্তি ...
''...... i just can't tell the raindrops from my teardrops
falling down my face, Look at it,
it does'nt really raindrops...''
'ওগো মেয়ে, আমার কপোলে গড়িয়ে নামা জলের দিকে তাকাও।
একবার দেখো, এ তো বর্ষার অবিরল ধারাই কেবল নয়,
এ যে আমার ভালবাসার অশ্রুজল।'
দু'দুটো বিশ্বযুদ্ধে ছিন্নভিন্ন সভ্যতার কংকালসার দৃশ্যপটে দাঁড়িয়ে আবার সেই মারলেকেই আমরা দেখি অসমতার বিরুদ্ধে অবিনাশী সুরের মায়াজাল সৃষ্টিতে। 'নদী নষ্ট, বীজ নষ্ট, বড় নষ্ট যখন সংসার', যখন ধনতন্ত্রের দাঁতাল নখর খুবলে ধরে মানবিকতার সবুজ পৃথিবী, তিনি সুর তোলেন-
. ''them belly full but we hungry.
A rain a-fall but the dirt it tough;
A pot a-cook but the food no 'nough.
''ওদের থালা উপচে পড়ে ভাতে,
আমার বাছা ক্ষুধায় কাঁদে রাতে।
তোমরা ভাবো কোনটা ছেড়ে কোন পোশাকটা পরো,
লজ্জা আমার হয়না ঢাকা, যা আছে তা সব করেও জড়ো'' ..
মারলে তখন পষ্ট ভাষায় জানান দেয় ''a hungry mob is a angry mob'' অথবা, ''we the street people talking, we the people struggling''...ব্যক্তি যখন সমষ্টি হয়ে ওঠে তখন সে আর একা থাকেনা;দুর্বল থাকেনা। নিঃসীম সমূদ্রের মাঝে, সমূদ্রের বিরুদ্ধে নির্জন দ্বীপের মত তাদের বিদ্রোহ যে শক্তিশালী রূপ পায় মারলের বোধে তা যৌক্তিক ভাবেই ধরা দিয়েছিল। তাই এটা হুশিয়ারি, ধনতন্ত্রের অসমতার বিরুদ্ধে, বর্ণবাদী পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে, কালো আফ্রিকার আধিপত্যবাদী শ্বেতশত্রুদের বিরুদ্ধে এবং বিপরীতে মানবিকতার পক্ষে। সাম্রাজ্যবাদী পাশ্চাত্য আর মুনাফা ভিত্তিক ব্যাবিলিনীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা সুর সৈনিক মারলে এক সাক্ষাত্কারে নিজেই এ ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘My music fights against the system that teaches to live and die.’ জীবন-মৃত্যুর প্রচলিত সামাজিক ধারনাকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তার কথা ও সুরে। কাজেই এই বিরুদ্ধ অবস্থানে দাঁড়িয়ে এমন স্বিকারোক্তি মারলেকেই মানায়। এটা তিনি করতে পারেন বা করেন, কেননা তিনি বুঝে যান ''so much trouble in the world now... now they are sitting on a time bomb''। কিন্তু তিনি হতাশাবাদী নন। আর তা নন বলেই তার পরেই তিনি উচ্চারণ করেন আশার বর্ণিল স্বপ্নময় শব্দ –
''Now i know the time has come,
what goes up must come down''
মারলের কিছু লেখা ও সুরে অদ্ভুত একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের তুলনামূলক দরিদ্র-খেটে খাওয়া শ্রমিক-শ্রমজীবী শ্রেণীর মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট। জীবনের সকল প্রবঞ্চনাকে, না পাওয়াকে হেসে উড়িয়ে দিতে জানে বলেই অল্পে তুষ্ট শ্রমজীবী মানুষ আজো বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে পারে। আমাদের রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেন, ' চারিদিকে দেখ চাহি হৃদয় প্রসারি, তুচ্ছ দুঃখ যত অক্ষয় নাহি, আনন্দধারা বহিছে ভূবনে'। মারলেও তার গানে সেই কথাখানা ভারী মিষ্টি করে আমাদের সামনে তুলে এনে হাজির করে দিয়েছেন -
'we are gonna dance to JHA music,
Forget your troubles and dance,
Forget your sorrow and dance,
Forget your sickness and dance,
Forget your weakness and dance'
লৌকিকতা আর পারলৌকিকতার দোলাচলে থেকেও বব মারলে যে স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়ে গেছেন তা আজো কেবল সংগীত-প্রেমীদের মনেই নয়, বদলে দেবার স্বপ্ন দেখা আরো কত হৃদয়কে যে প্রেরণা দেয় বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সামিল হতে তার খবর আমাদের জানা একান্তই প্রয়োজন, নিজের জন্যে; অনাগত পৃথিবীর জন্যে ...
''Rise up this morning, Smile with the raising sun''।
যে মারলে ঘোষনা করেন ''now the weak must got strong'' সেই মারলে তখন ব্যক্তি থেকে সমষ্টিতে মিশে যান। তাঁর কাছে তাই আমাদের কৃতজ্ঞতা সীমাহীন- কেবল শিল্পের জন্যেই নয় বরং গভীর এক জীবনবোধেরও জন্য.
৩
রবার্ট মারলের প্রকাশিত এলবামসমূহঃ
The Wailing Wailers (1965), Soul Rebels (1970), Soul Revolution (1971), The Best of the Wailers (1971), Catch a Fire (1973), Burnin' (1973), Natty Dread (1974), Rastaman Vibration (1976), Exodus (1977), Kaya (1978), Survival (1979), Uprising (1980), Confrontation (1983), Live! (1975), Babylon By Bus (1978).
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩২
চাঁদগাজী বলেছেন:
বব গায়ক ও মিউজিশিয়ান ছিলেন; প্রাতিস্ঠানিক লেখাপড়া ছাড়া এ যুগে কোন ফিলোসোফিক ভাবধার প্রবর্তন সম্ভব নয়।
বব সাধারণ কালো পরিবারের মানুষ হিসেবে সাদাদের প্রভাব অনিভব করেছেন; কিন্তু সাদারা প্রথমে পড়ে, শিক্ষায় ওরা সামনে আছে।