নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তুই রাজাকার..

শ্মশান

ভালো লাগলে পড়তে হবে না লাগলেও পড়তে হবে, এ যে শ্মশানের আকুতি

শ্মশান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বালের গপপো...

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:৫৫

আমার পেটের মধ্যে কথা জমতে জমতে টর্নেডো শুরু হয়ে গেছে, মোটামুটি ১০ নম্বর বিপদ সংকেত। বাল সব হজম হয় কিন্তু কথা হজম হয়না। বাল বলা আমার ছোট বেলার অভ্যাস, সবারই একটা করে কুঅভ্যাস থাকে, বাল বলা আমার কুঅভ্যাস। ছোট বেলাতে ঘুমের ঘোরে একবার বাল – বাল বলে চিৎকার করছিলাম, মা পাশের ঘর থেকে শুনতে পেয়ে কান ধরে টেনে তুলল। শুধু কান ধরে টেনে তুললে তেমন প্রবলেম ছিলোনা কিন্তু দুই গালে চড় দিয়ে বাবার কাছে নালিশ করার ভয় দেখাল। আমি মাকে লজিক দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করলাম, দেখ মা স্বপ্নে কে কি বলল, তা নিয়ে বাল এত উতলা হবার কিছু নাই, সজাগ অবস্থায় বললাম কি না সেইটা দেখার বিষয়। সজাগ অবস্থা, তুইত এক্ষণ বললি। আমি তো অবাক আমি কোথায় বাল বললাম। আমি সাথে সাথে এই কথার তীব্র প্রতিবাদ করলাম এবং মনে মনে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করলাম। আমি মাঝে মাঝে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করি, এটা খবরের কাগজ থেকে শিখেছি। আমার তীব্র প্রতিবাদের ফল আরও তীব্র হোল, মা হাতের পাখা দিয়ে আমার পিঠ পাকিয়ে দিল।
রাতে বাবা বাড়ি ফিরেছে, আমার বুকের হার্ট-বিট বেড়ে মোটামুটি হার্ট ফেল করবার জোগাড়। মা আমার রুমে এসে আবার বলে গেলো আজ তোর কপালে শনি আছে। কপালে শনি আছে ব্যাপারটা নিয়ে আমার একটু আপত্তি আছে, শনি একটা গ্রহের নাম, সৌরজগতের ষষ্ঠতম গ্রহ, ব্যাস ৫৮,২৩২ কিঃমিঃ, একটা চমৎকার বলয়ও আছে, দেখলেই মনে হয় হ্যাট মাথায় কোন নেড়ে মাথার সাহেব, অথচ আমার কপালে নাকি শনি, আমার কপাল কি সৌরমণ্ডল নাকি? মাকে পরে ব্যাপারটা লজিক দিয়ে বোঝাতে হবে, সে যাই হোক এবার লজিক দিয়ে চিন্তা করা যাক বাবা কি দিয়ে ধোলাই করতে পারে? বাবার অতি আদরের ধোলাই হোল চামড়ার বেল্ট খুলে মারা, কিন্তু বাবার বেল্টটা তো নতুন কেনা, বাবা নতুন জিনিস সহজে ব্যবহার করতে চায়না, তাহলে লাঠি, না বাবা লাঠি দিয়ে মারে না, তবেত আজ হাতের ব্যবহার হবে। আমি অন্ধকারে বসে আছি, ধোলাই পর্ব শুরুর জন্য। বাবার খাওয়া শেষ কারন টিভিতে রাত দশটার ইংরাজি খবর হচ্ছে, এটা বাবার বাড়ির সমস্যা শোনবার টাইম। আমার অবস্থা কোরবানির গরুর মত, হালাল হবার জন্য রেডি হচ্ছি। অপেক্ষার পালা শেষ, বাবার ডাক পড়েছে।
বাবুন এই দিকে আয়।
আমি তখন অবলা প্রাণী, আস্তে আস্তে বাবার রুমে গেলাম।
বাবা আমার দিকে না তাকিয়ে বলল, তুই নাকি আজকাল সাঙ্ঘাতিক মুখ খারাপ করতে শিখেছিস, ভালো খুব ভালো। বল দেখি তোর মুখ খারাপের আজকে পরীক্ষা, পাশ করলে মার খাবিনা, ফেল করলে কপালে শনি আছে।
আমার লজিক আর কাজ করছে না, মুখ খারাপের পরীক্ষা, এতো জিবনে কোন দিনও শুনিনি।
বাবা খাতা-কলম নিয়ে প্রশ্ন লিখলেন,
১। “ মুখ খারাপ কাকে বলে এবং কত প্রকার, উদাহরন সহ ব্যাখ্যা কর”.........১০ নম্বর
২। “ মুখ খারাপ কেন প্রয়োজনীয়? মুখ খারাপের উপকারিতা এবং অপকারিতা উদাহরন সহ ব্যাখ্যা কর”......১০ নম্বর
৩। “ বাল শব্দটার মর্মার্থ ব্যাখ্যা কর, বালের উৎপত্তি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। ...১০ নম্বর
৪। ভাব-সম্প্রসারন করঃ “আল-বাল-তাল-ছাল”......১০ নম্বর
এইনে ৪টা প্রশ্ন, ৪০ নম্বরের পরীক্ষা, পাস মার্ক ৩৩, ফেল মার্ক “০”। তবে ৩০ নম্বর পেলে বিশেস বিবেচনায় পাশ। এইনে ধর প্রশ্ন, সময় ৩ ঘণ্টা, ওপেন বুক এক্সাম অর্থাৎ বই-খাতা যেখান থেকে পারিস উত্তর লিখতে পারিস।
আমার মুখ হা হয়ে গেছে
বাবা প্রকাণ্ড ধমক দিয়ে বললেন, নেড়ি কুত্তার মত হা করে থাকবিনা
Your time starts now...
আমি চুন খাওয়া পোড়া মুখের মত আমতা, আমতা করে বললাম, কিন্তু ইস্কুল?
যেতে হবেনা, স্কুলে গিয়ে কে কবে ইয়ে ছিঁড়েছে?
বাবা ইয়েটা কি?
যা ভাগ হারামজাদা...।।
মা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে, বাবার উপর দিয়ে কথা বলার সাহস কোনকালে ছিলোনা আজও নেই। তবে একটু মর্মাহত, এতো ভালো অভিযোগের কিনা এই শাস্তি, ব্যাপারটা “গুরু পাপে লঘু দণ্ড হয়ে গেলো না”। যাই হোক মা আমার দিকে কঠোর একটা দৃষ্টি দিয়ে চলে গেলো দাঁতে গুল লাগাতে।


(২)

আমার মায়ের দাঁতে গুল লাগানোর ইতিহাস খুবই চমৎকার,
দাদুর বাড়িতে গিয়ে মা গেছে টিউবওয়েল এ মুখ ধুতে, দাদু অনেক বার করে বারন করলো “ পানু খরার দিন, টিউবওয়েল এ চাপ দিতে পারবিনা, টিউবওয়েল এর হ্যান্ডেল কিন্তু জাম্প করে, দাঁত ভাঙতে পারে”। আমার মার ইগো একটু বেশী, কোন কথা না শুনে জোরে জোরে পাম্প করতে লাগলো, তার পর টং করে একটা আওয়াজ, ব্যাস এক খানা দাঁত মুখের মায়া ত্যাগ করে মাটিতে লাফিয়ে পড়লো। তবে মার ফোকলা দাঁতের হাসি কিন্তু অসাধারণ ছিল, তবে সেই হাঁসি বেশিদিন আর টিকলোনা কারন বাবা সেই ফোকলা দাঁতের হাঁসি দেখে এক ছড়া বানিয়ে আমাদেরকে আদেশ করলেন আমরা যাতে সকাল, দুপুর, রাত সেই ছড়া মার কানের সামনে বলি। আমরা মানে আমি আর আমার মাসতুতো ভাই অসিম যাকে আমরা সুন্দর গাধা বলে ডাকি, সকাল, দুপুর, রাত নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে সেই ছড়া অতি যত্ন সহকারে আবৃতি করতে লাগলাম। দুইদিন মা তেমন পাত্তা দেইনি কিন্তু সমস্যা হোল একদিন যেদিন আমাদের বাড়িতে মেহমান এসেছে, মা খাবার নিয়ে বাস্ত, অসীম আমার কানের কাছে বলল, বাবুন মাসীকে ছড়াতো শুনানো হয়নি সকাল থেকে, মেস জানতে পারলে খুব রাগ করবে, আমি বললাম আমি পারবোনা তুই বল,
অসীম বলল কিন্তু আমি একা বললে কি ছড়ার মাহাত্ত থাকবে,
আমি বললাম অবশ্যই থাকবে, ধর আমার গলায় টনসিল ফুলল তুই তাহলে কি করবি? অসীম বলল মারাত্মক লজিক, তাইতো, তাহলে তুই আমার পাশেই থাক, আজকের দায়িত্ব আমার, আমি বললাম তোর পাশে থাকলে কি ছড়ার মাহাত্ত থাকবে তার থেকে তুই একাই যা, মনে রাখবি “ শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ” আর “ পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না” কি ভাব-সম্প্রসারন করিসনি? অসীম বলল তাইতো কবি বলেছেন, “ ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে” আমরা আজ শিশু কাল পিতা হব, তখন কি জবাব দেব আমার শিশুর কাছে, আমার শিশু যদি “ জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে”??
অসীম বিরদরপে আমাকে পাশ কাটিয়ে মার সামনে গিয়ে জোরে জোরে বলল মাসী আমার ছড়া বলার টাইম হয়েছে, প্রস্তুত হন, প্রস্তুত হন এমন ভাবে বলল যেন প্যারেড কে কমান্ড করছে, প্যারেড আরামে দাঁড়াও, সোজা হও। এবার আবৃতি শুরু......... “ মাসী হাসে ফোকলা দাঁতে, চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে, আয়রে মাসী ঘড়ে আয়, দুধ মাখা ভাত কাকে খায়”।
মা ভাবতেও পারেনি অসীম সবার সামনে এই ভাবে ছড়া বোলবে, মা লাফিয়ে অসীম এর কান ধরল, তারপর তো শিলাবৃষ্টি, আমি ধুর থেকেও বুঝলাম শিল এর সাইজ বেশ বড়, ঝর আমার দিকেও আসতে পারে, তাই পরিত্রাণ কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া ভালো, আমি এক দৌড়ে পিসিদের বাড়ি চলে গেলাম।
সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরেছি, ঝড়ের পড়ে নিস্তব্ধ নিরবতা, ব্যাপার ভালো না বড় ধরনের ঝড়ের আলামত, পা টিপে টিপে আমাদের রুমে ঢুকেছি দেখি অসীম মুখটা কোলা ব্যাঙ এর মত করে বসে আছে, আমি আস্তে আস্তে অসীম এর কাছে গিয়ে বললাম, “কিরে domestic animal, বাড়ির কি অবস্থা?” (আমি আর অসীম লজিক দিয়ে বের করেছি, “ the cow is a domestic animal, মানে গরু একটি গৃহপালিত প্রাণী, অর্থাৎ গরু ঘরে থাকে, আবার আমরাও ঘরে থাকি, গরুকে গৃহে লালন-পালন করা হয়, আমাদের কেও গৃহে লালন-পালন করা হয়, তাহলে লজিক কি দাড়ায়? আমরাও domestic, এবার গরুর প্রান আছে তাই প্রাণী, আমাদেরও প্রান আছে মানে আমরাও প্রাণী, অর্থাৎ আমরাও domestic animal, তাই আমরা কাওকে গরু বলতে হলে এখন থেকে বলব domestic animal, যাতে লজিক দিয়ে বোঝান যায় যে আমরা আসলে domestic animal বলতে গরুনা, মানুষকেই বুঝিয়েছি।)
অসীম কোন কথা না বলে এমন ভাবে তাকাল যেন সব দোষ আমার। আমি আস্তে আস্তে বললাম, মা কইরে? অসীম সাংঘাতিক ক্ষেপে গেছে, চিৎকার করে বলল তুই খেমঙ্কিনি তেরেস্কভা। ( আমি আর অসীম সবাইকে একটা করে নাম দেই, এটা আমাদের ঐতিহাসিক নাম প্রদানের খেলা। যেমন ভেলেন্তিনা তেরেস্কভা প্রথম রাশিয়ান নারী যিনি প্রথম মহাশূন্যে যান আবার শাহ আয়াতুল্লাহ খমিনি যিনি ইসলামিক রিপাবলিকান পার্টির জনক। এরা যেমন বিখ্যাত তেমনি এদের নাম গুলাও ভারী খটোমটো, এদের নাম মনে রাখা আমাদের কাছে নিমের পাতন এর মত, তাই আমরা সবার নাম বদলে ঐতিহাসিক নাম দিয়ে দিয়েছি )
আমি বুঝলাম অসীমের রাগ কমানো দরকার, আমি অসীমের পা ধরে বললাম ঠিক আছে আমি খেমঙ্কিনি ( খমিনি) , আমি বুইড়া নাসির, আমি ঈশপ, খুশী, এবার বল মা কই?
মাসী, মেসর সাথে গেছে দাঁত লাগাতে,
ওহ নকল দাঁত, যাক বাঁচা গেলো, আজকে তাহলে মা শুয়ে থাকবে ডাক্তার খানা থেকে এসে, আর শুয়ে থাকা মানে ঘুমাবে, আর লজিক বলে মানুষ ঘুমালে সব ভুলে যায়, তার মানে কি? প্লাস -মাইনাস = মাইনাস, মানে কাল মা সব ভুলে যাবে, তবে আজ খুব ভদ্র ছেলের মত জোরে জোরে পড়তে হবে।

(৩)

বাংলা অভিধান এ বাল বলতে যা বোঝান হয়েছে তা দেখে এটা যে একটা খারাপ শব্দ তা আমার একেবারেই মনে হলনা, কারন বাল শব্দটির অনেকগুলো মানে আছে, যেমনঃ বাল- মানে বালক; শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনে বালক কৃষ্ণকে বাল- কৃষ্ণ বলা হচ্ছে। আবার বাল মানে গায়ের লোম বা মাথার চুল। আমি একটু ধন্দের মাঝে আছি, তবে কি একদেশের গালি আরেক দেশের বুলি। নিজের বুদ্ধি দেখে আমি নিজেই চমৎকৃত, কি অসাংঘাতিক ব্যাপার আমিতো বুদ্ধিজীবী লেবেলে চলে যাচ্ছি। এটা অবশ্য আমি বুঝতে পারি যে আমি অন্যদের থেকে অনেকটাই আলাদা । এবার প্রশ্নের উত্তর গুলো লিখা যাক, এখন আমার মাথায় কেবল একটি চিন্তা বাবা উত্তর গুলো দেখে খুশি হবে তো আর তা যদি না হয় তবে তো রাম-কেলানি খেতে হবে, যাই হোক আজ হয়ে যাক এস্পার বা ওশপার, খুব মনোযোগ এর সাথে আমি লিখতে লাগলাম, কেবল মাত্র দুইটা প্রশ্নের উত্তর লিখেছি, ব্যাস বাবার ডাক উঠল কিরে বাবুন তুই কি সারা রাত ভর মহাকাব্য লিখছিস, কি লিখলি আমাকে দেখিয়া নিয়েজা। আমার মনের মধ্যে গুড় গুড় আওয়াজ করতে লাগলো, আমার তো লিখবার মধ্যে কেবল দুইটা লিখা হয়েছে, এবার কি হবে?? কাল ইস্কুল তবে কেউ আটকাতে পারলো না। আমি ভয়ে ভয়ে বাবার ঘরের দিকে এগুতে লাগলাম------ ( বাকিটা কালকে--)







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.