নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতিবাদ তো পজিটিভ ও হতে পারে।

ডাব্বা

জোছনা রাত। হট চকলেট। লেক এর পাড়। ছোট ছোট চুমুক। ভেজা রাস্তায় চেনা মুখ। আলিঙ্গন। হট চুমুক। ছোট ছোট জোছনা রাত। চকলেট লেক এর পাড়।

ডাব্বা › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে Duty Free Shop এ প্রতারণা

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ ভোর ৪:৩১

নিজের কথা

এয়ারপৌর্ট বুঝে আমি নিয়ম করেই অন্তত তিন ঘন্টা আগে পৌঁছাই যাতে তাড়াতাড়ি check in করে ভেতরে একটু ঘুরতে পারি। কোনও ফ্লাইটে যখন দীর্ঘ layover থাকে তখন আমার মনটা খুশি হয়ে যায়।

আমার তো চোখে অনেক রঙ। তাই ঘুরে ঘুরে রঙ দেখি। যা দরকার না তা দেখি। যা জানা নাই, তা জানি। আমি প্রশ্ন করি আর শুনি।

মানুষ দেখি। কত রঙের মানুষ! কত ভূষার মানুষ! কত ভাষার মানুষ! কত পেশার মানুষ!

বিভিন্ন দোকানে যাই। গিয়ে আঁতকে উঠি। অবাক হই। দারুণ লাগে। কাছ থেকে দেখি। ছবি তুলি। লেখার, ক্লাস, বা course সমৃদ্ধির উপকরণ খুঁজি।

ঘটনার শুরু

এমনই এক সুযোগ এসেছিল জুলাই ৩১ এর সকালে। ভোর সাড়ে তিনটায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে সাড়ে চারটার মধ্যে যখন ইমিগ্রেশন শেষ হয়ে গেল, ভাবলাম সময় যখন হাতে আছেই তো Duty Free Shop থেকে কিছু একটা নেই আমার মেয়েদের জন্য। করোনাকালীন নিষেধাজ্ঞায় ঢাকায় কোনও শপিং মলে যেতে পারিনি।

ছোট একটা ডিউটি ফ্রি শপে একটু ঢুঁ মেরে বড়টায় ঢুকলাম যেখানে দেশীয় অনেক কিছুই সাজানো। আমি একাই কাস্টোমার। হয়তো ভোর বলেই দোকানেও একজনই কর্মকর্তা।

এটা সেটা দেখার পর পাটের তৈরি কাঁধে ঝুলানো ব্যাগটা পছন্দ হলো। দাম ৮ ডলার। আমার কাছে কিছু এক্সট্রা টাকা ছিল তাই উনাকে জিজ্ঞেস করলাম সেটা দিয়ে মূল্য পরিশোধ করা যাবে কিনা। উনি বললেন, 'যাবে। ডলারের দাম পড়বে ৯১ টাকা করে। প্রতিটি ব্যাগ ৭২৮ টাকা'। উপযাচক হয়ে গলা নামিয়ে যেন গোপন কিছু বলছেন ভাব নিয়ে আরো বললেন, 'ব্যাংক থেকেই আমাদের কিনতে হয় ৮৯ টাকা করে'।

এটা যদিও অনেক high exchange rate আর ৮৯ আর ৯১ এর হিসাবটা না বুঝলেও আর সময় নষ্ট করতে চাই নি।

দুটো ব্যাগ নিয়ে কাউন্টারে গেলাম। ভদ্রলোক ব্যাগগুলো বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এর লোগো সম্বলিত Duty Free Shop লেখা একটা প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে আমার কাছে ২×৮×৯১=১৪৫৬ টাকা চাইলেন। আমি টাকাটা দিয়ে বললাম, 'আমাকে একটা মানি রিসিট দেবেন।'

ঘটনাটা এরপরই শুরু হলো।

'আমাকে একটা মানি রিসিট দেবেন।'
-- রিসিট লাগবেনা। (তার তড়িৎ জবাব)
'আমার লাগবে।'

ভদ্রলোক বেশ অনিচ্ছা নিয়ে কম্পিউটারের সামনে গেলেন। একটা window open করাই ছিল। কয়েক সেকেন্ড এটা সেটা করে আমাকে বললেন,
-- ১০৯২ টাকা দেবেন! দাম কমে গেছে।

আমি শকড্! একটা দুর্গন্ধ এসে জোর ধাক্কা দিলো নাকে। ৩৬৪ টাকা কমে গেল!

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন পরিচালিত কোনও Duty Free Shop এ এমন একটা প্রতারণামূলক পরিস্থিতির সামনে পড়ব এটা আমি কল্পনাও করিনি। দুঃস্বপ্নেও আসেনি, তা ও আবার একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে!

এর পরের কথোপকথন সংক্ষিপ্ত আকারে নিচে তুলে দিলাম।

'আপনি আমার টাকা নিজের পকেটে ঢুকাতে চেয়েছিলেন!'

(আত্মবিশ্বাসী হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে)
-- দাম কমে গেছে তো স্যার আমার জানা ছিল না।
'এটা কোন কথা হলো?'
-- নতুন দাম আসছে। (ঠোঁটে মৃদু হাসি)
'এই কাজটা আপনি কেন করলেন? আপনি আমার পকেটের টাকা সরকারকে না দিয়ে নিজের পকেটে ঢুকাতে চেয়েছিলেন!'
-- আমি দাম জানতাম না।
'আপনি দোকানের দায়িত্বে আর আপনি দাম জানবেন না?'
-- বললাম তো স্যার আমি দাম জানতাম না।

বুঝলাম, জিনিসটা শক্ত। অভিজ্ঞ।

'আপনি মানি রিসিট কেন দিতে চাচ্ছিলেন না?'

এবার চুপ।

'আপনি মানি রিসিট না দিয়ে বাড়তি টাকাটা নিজের পকেটে ঢুকাতে চেয়েছিলেন!'

কোনও কথা বলছে না।

'আপনি আমার সাথে প্রতারণা করেছেন। আপনি আমার পকেটের টাকা আপনার পকেটে ঢুকাতে চেয়েছিলেন। আপনি আমার সাথে, সরকারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।'

-- আমি দাম জানতাম না।

এই লোক ভাঙবে না, মচকাবেও না। ঘাগু লোক।

দিলাম মোক্ষম দাওয়াই।

'প্রধানমন্ত্রী না খেয়ে, না ঘুমিয়ে দেশের সেবা করে যাচ্ছেন, তলাবিহীন বালতি জোড়া লাগাচ্ছেন, দূর্নীতির বিরুদ্ধে zero tolerance ঘোষণা করেছেন, আর আপনার মত প্রতারকেরা ইঁদুর হয়ে বালতি ছিদ্র করেই যাচ্ছেন! আপনি এখন যা করলেন আপনার কি ধারণা আপনাকে রিপোর্ট না করেই ছেড়ে দিব?'
-- স্যার, স্যরি। আমি আপনার পা ধরি।
'এটা আপনি কেন করলেন? কেন আপনি আমার টাকা সরকারকে না দিয়ে নিজের পকেটে ঢুকাতে চেয়েছিলেন?'
-- স্যার আপনার পায়ে ধরি।
(কাউন্টারের উপর দিয়েই পা ধরার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল)

'আপনার নাম কি?'
কোনও কথা নাই। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম।
'আপনার নাম কি?'
আবার চুপ।
'আপনার নাম বলুন?' আওয়াজ উঁচু করতে হলো।
-- মোহাম্মদ হারিস
'আপনার ID টা দেখান।'

ID টা গলায় উল্টো করে ঝুলানো, নামটা ভেতরের দিকে। সে কোনও ভাবেই তা দেখাবে না। অনেকবার অনুরোধ করলাম।

শেষমেশ এক ঝলক দেখালেন।

নাম লেখা 'আবুল' হারিস।

শেষ কথা

আমি সবসময়ই মানি রিসিট নেই যেকোনো কেনাকাটার বিপরীতে তা সে যত ক্ষুদ্রই হোক। মানি রিসিট পাওয়াটা কাস্টোমারের right আর সেটা কাস্টোমারকে দেয়া ব্যবসার responsibility ও duty. এর অনেক উপকার ও আছে। কিন্তু সবাইতো তা করে না, বিশ্বাসে ভরসা করেই কেনাকাটা সারে।

সেদিন আমি রিসিট না চাইলে এই ৩৬৪ টাকা যে হারিসের উদরেই যেত তাতে তো কোনও সন্দেহ নেই। এভাবে কতজনের পকেট কেটেছেন এই আবুল/মোহাম্মদ হারিস অ্যান্ড গং? ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি যেভাবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে তাকে এই কাজে অত্যন্ত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বলে মনে হয়েছে।

আর আমার রিসিট লাগবে কি লাগবে না তা বলার সে কে? উনার দায়িত্ব পণ্য ক্র‍য়ের বিপরীতে মানি রিসিট দেয়া। উনি আমার boarding pass ও দেখতে চাননি। প্লাস্টিক ব্যাগটা তিনি seal ও করে দেননি।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এর দোষ আপাতত দিচ্ছি না যদিও চাইলে দেয়া যায়। প্রতারণার মামলা করলে তো তাঁদের বিরুদ্ধেই করতে হবে। কিন্তু এই অসৎ আবুল/মোহাম্মদ হারিস একজন গ্রাহক কে সম্মান দেবার বদলে যেভাবে harass করলেন তার একটা যথাযথ সমাধান তো বিমানবন্দর ব্যবহারকারী ও এর সেবা গ্রহণকারী হিসেবে আমি দাবি করবোই।

নাকি এটাও 'নবাবী' ব্যাপার হয়ে যাবে?

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ ভোর ৪:৫১

চাঁদগাজী বলেছেন:


লোকটা অন্যায় করেছে, আপনি উনার নাম চাওয়াতে আপনার কাছে মাফ চাইলো, তারপরও আপনি উনাকে চাড়েননি; পা ধরে মাফ চাইছিো চাকুরীর ভয়ে।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:২৪

ডাব্বা বলেছেন: লোকটা খুব পেশাদার প্রতারকের মত আচরণ করেছিল। একটুও ঘাবড়ায়নি।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ ভোর ৪:৫২

চাঁদগাজী বলেছেন:



প্রাইম মোনিষ্টার দেশ চালাচ্ছেন না, উনি শেখ কলোনী চালাচ্ছেন।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:২৮

ডাব্বা বলেছেন: সেটা ধরে নিয়েও বলছি আমাদের নিজস্ব একটা নৈতিক মানদন্ড তো থাকা উচিত।

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৪৫

শাহ আজিজ বলেছেন: আমাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি এয়ারপোর্ট কর্মচারীরা সব ধরনের কর্মের সাথে জড়িত । ৮২ সালে প্রথম দেশত্যাগের সময় আমাকে দিয়ে সিগারেট কেনাল একজন এবং দুইপায়ের মোজার মধ্যে ঢুকিয়ে সে বাইরে যাবে বলে আমায় বলল । পর্যটনএর কর্মচারীরা তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করল । আমার নামে সিগারেট কিনে লোকটি খাবে এতে আমি অপরাধ বোধে ভুগিনি । এরপরে কখনই ওদের ফাদে পা দেইনি । এয়ারপোর্ট একটা অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু বহু আগে থেকে । আমার সব থেকে ভাল লাগত হংকং এয়ারপোর্ট । সেখানে সবকিছু একধরনের কোম্পানিকে চুক্তিভিত্তিক দিয়ে দেওয়া হত । চেক ইন, পরিবহন , কাস্টমস , ফ্লোর সব । শুধু নিরাপত্তার ব্যাপারটি সরকারের হাতে থাকত । আমাদের পর্যটন কর্পোরেশন বিলুপ্ত করে বিবিধ পেশাদার কোম্পানিকে চুক্তিভিত্তিক ইজারা দিতে হবে । এয়ারপোর্ট একই ব্যাপার হবে । এরকম সার্ভিস ওরিয়েন্টেড কোম্পানি এশিয়াতে অনেক এবং তাদের লোকেরা একটা নিরবিচ্ছিন্ন চাকুরি চায় সততার বিনিময়ে । পিকিং এয়ারপোর্ট ইজারা নিল হংকং গ্রুপ । তারা প্রথম বছরেই ১০ গুন শুল্ক আদায় করে সবাইকে তাজ্জব বানিয়ে দিল । স্থানীয়রা জানল তাদের সুপুত্ররা কিভাবে পকেটে টাকা ঢুকাচ্ছিল । এভাবেই একটি রাষ্ট্রের কাঠামো গড়ে ওঠে এবং একসময়ের চোর পর্যন্ত ভাল হয়ে যাবার কাগজে মুচলেকা দেয় । আমাদের দরকার পেশাদারী সরকার পরিচালনা । রাজনৈতিক সরকারের প্রয়োজনীয়তা একদম ফুরিয়ে গেছে ।
এজন্য এইসব লিখলাম যে কেউ কাউন্তারের ওপাশ থেকে আপনার সাথে ফিস ফিস করে কথা বলতে চাইবে না , আই ডি উলটো করে রাখবে না । আপনার যাত্রা শুভ হোক প্রতিবারে ।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৩৭

ডাব্বা বলেছেন: আমি '৮৭ থেকে দেখে আসছি, সার্ভিসের মান খানিকটা বেড়েছে। পরিচ্ছন্নতা ও আগের চেয়ে কিছুটা ভাল। কিন্তু ৩২ বছরে এই উন্নতি ভাগ করে দিলে কিছুই দেখা যায় না।
বাংলাদেশের নৈতিকতার মানদন্ডের প্রেক্ষিতে প্রাইভেট কোম্পানি কি খুব সফল হবে বলে মনে করেন আপনি?
ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৫২

শাহ আজিজ বলেছেন: পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় দেখুন কেউই এরকম জঞ্জাল না পুষে চুক্তিভিত্তিক ইজারা দেয় । এতে এই বদেরা কাজ হারাবে । হারাক কিন্তু একটু শৃঙ্খলা ফিরে আসুক । গুড প্রাকটিসের বিকল্প নেই ।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৪১

ডাব্বা বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন।

৫| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট পড়ে কিছু শিখলাম।

০৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৩৫

ডাব্বা বলেছেন: হাহাহা। রিয়েলি?

৬| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ ভোর ৪:২৯

কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: ভালো শিক্ষা হয়েছে। না ধরলে আরও মানুষ ঠকাতো সে।

০৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৩৬

ডাব্বা বলেছেন: থেমে থাকার গ্যারান্টি নেই কিন্তু। চাকরিতে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন এই লোক।

৭| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৫৪

নিয়াজ সুমন বলেছেন: ভাবতে ঘা গিনগিন করছে... এই আন্র্তজাতিক মানের দশা...
দুর্নীতি দুর্নীতি
ছেয়ে গেছে আগা-গোড়া...

০৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৩৭

ডাব্বা বলেছেন: প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.