![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বিএম খালিদ হাসান, ইংরেজিতে অনার্স, প্রফেশনাল সিনেমাটোগ্রাফার-ডিরেক্টর, ইভেন্ট ম্যানেজার, স্টেজ ও রেডিও শো প্রেজেন্টার ।
একটা ফিচার ফিল্মে প্রত্যেকটা কাজের জন্য আলাদা ডিপার্টমেন্টের লোকজন কাজ করে থাকে । ডিরেক্টর ক্যারেক্টার ও, সীন কেমন হবে বোঝানোর পর সিনেমাটোগ্রাফার, মেক আপ আর্টিস্ট, আর্ট ডিজাইনার, লাইট ম্যান, ও এডিরা যার যার গ্রুপ নিয়ে কাজ শুরু করে ।
ডিরেক্টরের কাজ হয়ে থাকে ঠান্ডামাথায় সীন বুঝিয়ে শট নেওয়া, মনিটরে স্ক্রিপ্ট, অভিনয় ও লুক পারফেক্ট হয়েছে কিনা অবজার্ভ করা। সবাই অভিজ্ঞ হওয়াতে তাকে সব কিছু নিয়ে ভাবতে হয়না ।
কিন্তু যখন ইনডিপেন্ডেন্ট শর্ট ফিল্ম করবেন তখন টিমে লোক থাকবে কম । কেউ ই অভিজ্ঞ থাকবে না । তখন সেটে গিয়ে শ্যুট শুরু করার পর একটা কনফিউজিং অবস্থার তৈরি হয় । এর ফলে আপনাকে ছোটাছুটি করতে হয়, আর্টিস্টরা আন কমফোর্ট ফিল করে, ক্যামেরাতে শট মিলে না । মোট কথা কাজে একেবারেই প্রফেশনালিজম থাকে না ।
আজ অনেকদিন পর পোস্ট লিখছি শুধু এটা বলতে কিভাবে ঠান্ডা মাথায় সব ম্যানেজ করে সেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন । আমি নিজের অভিজ্ঞতা ও প্রতিবন্ধকতা গুলোর আলোকে লিখছি ।
১. স্ক্রিপ্টঃ
ফিল্ম মেকিংয়ের প্রথম শর্ত হলো কাজ হতে হবে একেবারে বাই দ্য বুক । হলিউডের অনেক মুভির ব্রেক ডাউনে দেখবেন একটা লাইন ও স্ক্রিপ্টের বাইরে থাকে না ।
প্রথমেই সব প্রি প্ল্যানড রাখতে হবে যেন লোকেশনে গিয়ে সময় নষ্ট না হয় । স্ক্রিপ্ট ফিনিশ করার পর ই সিনেমাটোগ্রাফার কে নিয়ে লোকেশন দেখতে হবে । আপনি বলার পর সিকোয়েন্স কোনদিক থেকে কোনদিকে হবে সে আপনাকে বলবে ।
তখন আপনি প্রতিটা ডায়লগের শট ডিভাইড করে রাখতে পারবেন । এতে হবে কি, আপনার মাথায় ভিজুয়ালি ছবিটা তৈরি হয়ে যাবে । অন সেটে একেকটা শট পড়ে পড়ে শ্যুট করবেন । পুরো ফোকাসটা অভিনয়ে দিতে পারবেন ।
২. লীডারশিপঃ
একটা ফিল্ম প্রোডাকশনে সবার ভূমিকা থাকলেও অরগ্যানাইজ করার দায়িত্ব ডিরেক্টর এর । প্রফেশনাল কাজে যে ডিরেক্টর তার কথা অনুযায়ী প্ল্যান করা হয় সব । অন্যরা অনেক সাজেশন দিতে পারে । কিন্তু মেইন কনসেপ্ট ডিরেক্টর এপ্রুভ করলেই সেটা কাজে লাগে ।
অ্যান্থনি রুশো ও জন ফ্যাভ্রু দুজনেই ফেমাস ডিরেক্টর । কিন্তু রুশোর মুভিতে ফ্যাভ্রু অভিনয় করে তার প্ল্যান শুনে, তার কথামত । এটাই প্রফেশনালিজম ।
আমাদের যে সমস্যা হয় বন্ধুদের নিয়ে আমরা কাজ করি । তখন সবাই যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে আইডিয়া দিতেই থাকে, দিতেই থাকে । এতে ডিরেক্টরের মোটিভেশন টা চলে যায় । আবার মন খারাপ হয় কিনা এটা ভেবে বন্ধুর কথা রাখা হয় । নেভার ডু ইট ।
হ্যা, মুভিতে ইমপ্রোভাইজ করা যায় অনেক কিছু । কিন্তু সেটা সবার কথা মেনে নয় । সবাই আপনার মত মুভি মেকিং নিয়ে ভাবেনি, স্টাডি করেনি, শুধু দেখেই অভ্যস্থ । আপনি শুট ও এডিটিং দুটোই ভেবে রেখেছেন । সবার কথা মানলে মিসম্যাচের ফলে মুভি খিচুড়ি হয়ে যাবে ।
আপনাকে সবাইকে কনভিন্স করতে হবে আবার বাজে আইডিয়া এড়িয়ে চলতে হবে ।
৩. অ্যাসিস্ট ও ক্রুঃ
আপনার কথা শুনে হেল্প করবে এমন বন্ধুদের সাথে রাখবেন । তবে কখনোই অতিরিক্ত মানুষ রাখবেন না । প্রথমত বন্ধুর কাজ বলে প্রফেশনাল সেটের মত সবাই সাইলেন্ট থাকবে না । এতে ফোকাস চলে যাবে । পাবলিক প্লেস হলে ঝামেলা হবে ।
ব্যাকগ্রাউন্ডে বিভিন্ন জিনিস প্লেসিং ও এক্টরকে সাজানো ও কোনো খারাপ পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য জন্য যে কয়জন দরকার ঠিক সেই কয়জন ই রাখবেন । খুব দুষ্টুমি ও প্রাংক করে এমন কাউকে রাখবেন না, সে শুধু ঝামেলা করে সময় ও ফোকাস নষ্ট করবে ।
যারা অ্যাসিস্ট করবে তাদেরকে আপ্যায়ন করুন । যাতায়াতের খরচের বিষয়টা খেয়াল রাখুন । এরা আপনার দুঃসময়ের সাথী, তাই কৃতজ্ঞ থাকতে হবে ।
৪. অভিনয়ঃ
মেইন শ্যুটের আগে অ্যাক্টর কে নিয়ে একবার শট রিহার্সাল করবেন । ওইসময় সিনেমাটোগ্রাফার ফ্রেমিং চেক করবে । এক্টরকে বলবেন কোন শট থেকে কোন শট টুকু ক্যামেরাতে যাবে । তারা সেটুকু করবে ।
এভাবে আগে থেকে লেখা শট বাই শট নিবেন । যেহেতু সবাই নতুন তাই সিকোয়েন্সে সিরিয়াল মেইন টেইন করবেন । প্রফেশনাল সেটে সুবিধা মত অংশ আগে শুট নেয়া যায় । কিন্তু বেগিনারদের কাজে এক্টর ও ডিরেক্টর দুজনেই গুলিয়ে ফেলবে । তাই স্ক্রিপ্টের ধারাবাহিকতা মেনে কাজ করতে হবে ।
এক্টর একটু ভূল করলে সাথে সাথেই থামাবেন না । এতে সে থতমত খেয়ে যাবে । পুরো টেক ফিনিশ করবেন । দেখা যাবে যেটুকু খারাপ হয়েছে অন্য এংগেল থেকে নিতে পারবেন, এতে সময় বাঁচবে । অথবা সেম শট আবার নিলে এক্টর ভালো ফ্লো নিয়ে করতে পারবে ।
এনকারেজ করবেন । খারাপ করলেও বলবেন যে গুড শট, কিন্তু আরেকবার নিব আমরা, এই জায়গা টুকু আরেকটু এভাবে করতে হবে । সবসময় এক্সপ্রেসন কম দিতে বলবেন । বেশি দিলে ওভার এক্টিং লাগে । যত হালকা ও বাস্তবিক অভিনয় হবে বেটার ।
৫. আর্ট ডিজাইনঃ
একটা বন্ধু বা বান্ধবীকে রাখবেন যে ক্যামেরা টেস্ট করার সময় ইনটেরিয়রে কি কি থাকবে ভাল বুঝে । বিলিভ মি, আপনি সব ম্যানেজ করার ফলে প্রতিটা মোমেন্টে অনেক ছোটখাট জিনিস ভূলে যাবেন । এজন্য প্রফেশনাল কাজে সব কাজের মেইন পার্সনের সাথে গ্রুপে অ্যাসিস্ট্যান্ট বা সুপারভাইজর থাকে ।
আরো অনেক ব্যাপার আছে । তবে আজ এই কয়টার বেশি বলব না । এগুলো শুটিংয়ের গতি অনেক এগিয়ে দেবে,। ক্যামেরা ওয়র্ক বেশি করলে ফল্ট ঢাকা পড়ে যায়, কিন্তু সিনেমাটোগ্রাফার এক্সপার্ট না হলে শট যত পারেন কম নেবেন । পাঁচ টা খারাপ শটের চেয়ে দুই টা ভালো শট থাকলে দৃষ্টিনন্দন হবে ।
©somewhere in net ltd.