![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেমিক্যালের হাত থেকে রেহাই পায়নি দেশের জাতীয় ফল কাঁঠালও। পাকাতে ও পচনরোধে নানা বিষাক্ত কেমিক্যাল এবং ফরমালিনমিশ্রিত পানিতে চুবানো হচ্ছে কাঁঠাল। আগে অন্যান্য ফলে ফরমালিন ও কেমিক্যাল মেশানো হলেও কাঁঠাল ছিল মুক্ত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কাঁঠালেও বিষাক্ত কেমিক্যাল ও ফরমালিনের ব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা। তারা বলেন, এর ফলে অনেকদিন রেখে কাঁঠাল বিক্রি করা যায়। পচন ধরে না। লাভও বেশি। এ কারণে কাঁঠাল বাগানের মালিক, ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা কেমিক্যাল এবং ফরমালিন মেশাচ্ছেন।
বাদামতলী, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও কাওরানবাজারে ১৫টি কাঁঠালের আড়তে গিয়ে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, অল্প কিছু দিন হলো কেমিক্যাল দিয়ে কাঁঠাল পাকানো ও পচন রোধে ফরমালিন ব্যবহার হচ্ছে। বাজারের প্রায় সব ফলই কেমিক্যাল ও ফরমালিন দিয়ে অনেকদিন ধরে বিক্রি হচ্ছে। এতে ফল থাকে টাটকা। খেতে স্বাদ না লাগলেও ক্রেতারা এই ফল কিনে এবং খায়। এই কারণে তারা কাঁঠালও বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে পাকাচ্ছেন।
বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত কাঁঠাল খেলে মানুষের মরণব্যাধি হয় কিংবা যারা ব্যবহার করে তাদের নানা রোগব্যাধি হতে পারে এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন, কেমিক্যাল কিংবা ফরমালিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। জানেন এতে লাভ হয় বেশি। বিশিষ্ট লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মবিন খান বলেন, কেমিক্যালযুক্ত কাঁঠাল খেলে লিভার নষ্ট, লিভার ক্যান্সার, কিডনিসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল ও মরণব্যাধি হওয়ার আশংকা থাকে। মরণব্যাধি আশংকাজনক হারে বৃদ্ধির এটাই অন্যতম কারণ।
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেছেন, কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো ও ফরমালিন মেশানো কাঁঠাল খেলে স্নায়ু দুর্বল হয়ে নিউরোপ্যাথি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কেমিক্যালের টক্সিনের প্রভাব পড়ে স্নায়ুতে। এর ফলে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর মারাত্মক ক্ষতি হয়। বুদ্ধি কমে যায়। বিকলাঙ্গ শিশু জন্মের হার বেড়ে যাওয়ার এটাও একটা কারণ।
কিডনি, শিশু বিশেষজ্ঞ, গাইনি বিশেষজ্ঞ ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরাও একই ধরনের মতামত পোষণ করে বলেন, খাদ্যে বিষ মেশানো থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র উপায়।
গাজীপুরের কাপাসিয়া সংবাদদাতা জানান, গাজীপুর জেলার গাজীপুর সদরের কিছু এলাকা, শ্রীপুর, কাপাসিয়া এলাকা কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত। অত্যন্ত সুস্বাদু এই কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে রফতানি করা হয়। পাইকাররা বাগানের মালিকের কাছ থেকে কাঁঠাল কিনে সড়ক পথে ও নৌপথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। এক শ্রেণীর অসাধু পাইকার ক্রয়কৃত কাঁঠাল দ্রুত যাতে নষ্ট না হয় যে জন্য কাঁঠালে ফরমালিন জাতীয় কেমিক্যাল মিশিয়ে থাকে। পাইকারদের নিকট কাঁঠাল ক্রয়ে সাহায্যকারী (স্থানীয় দালাল) আফজাল জানান, পাইকাররা কাঁঠাল ক্রয় করে সড়ক পথে যদি নিয়ে যায়, তাহলে ট্রাকে তোলার আগে পানির সাথে ফরমালিন মিশিয়ে কাঁঠালের গায়ে ছিটিয়ে দেয়। ফলে কাঁঠাল সহজে পচে না। আবার যারা কাঁঠাল নদী পথে নৌকার মাধ্যমে নিয়ে যায়, তারা কাঁঠাল ক্রয় করার সময় প্রথমে নদীর পানিতে ফেলে জমা করে। পরে নদীর পানিতে রেখে তারা কাঁঠালের গর্ভদণ্ডে (মুলায়) লম্বা লোহার রড (গজ) দিয়ে ছিদ্র করে তাতে ফরমালিন দেয়। আবার কেউ নদীর পানিতে ফেলে শুধু গজ ঢুকিয়ে নৌকায় তুলে নিয়ে যায়। তাদের দাবি এতে কাঁঠাল দ্রুত পাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাইকার দাবি করেন, তারা কাঁঠালে ফরমালিন মেশান না। তবে আগে পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণে চারপাশে মাছি ভন ভন করতো। কিন্তু আজকাল কাঁঠালে মাছি বসে না।
©somewhere in net ltd.