নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালোলাগে,ভাবনার আকাশে পাখা মেলতে...

বুরহানউদ্দীন শামস

আমি বাংলায় গান গাই আমি বাংলার গান গাই আমি, আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই ।।

বুরহানউদ্দীন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

~দখিনা হাওয়া~

১৩ ই জুন, ২০১৫ রাত ২:৪৮

জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে মিলি। তাকিয়ে আছে বিষণ্ন ভাবে দূরের ঐ আমগাছ ,গুল্ম ,লতা গুলির দিকে কেমন জেন শুষ্ক শুষ্ক লাগছে গাছ গুলিকে। শীতের প্রভাবে গাছের পাতা গুলি ঝরে পড়ছে । চোখের পলক না ফেলেই তাকিয়ে আছে ঐদিকে। পাখিদের দেখা নেই বললেই চলে। দুই একটি থাকলেও তারা যেন বিরক্ত।গাছের ডালে বসে চারিদিকে তাকিয়ে যখনি দেখছে গাছগুলি সব ছন্নছাড়া ঠিক তখনি ফুড়ুত করে উড়ে ছলে যাচ্ছে অন্য দিকে। বিরক্তিকর অবস্থা।এমন আবস্থা কারও ভালও লাগার নয়।
-মিলি কি দেখছিস অমন করে..??
-মা,বসন্ত আসতে অনেক দেরি তাই না?
-কেন ??
-মা দেখো গাছগুলি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।দিনদিন না খেয়ে যেন শুকিয়ে যাচ্ছে।
বসন্ত আসলে হয়ত গাছগুলি তাদের পুরাতন রুপ ফিরে পেত।
- প্রকৃতির নিয়মে শীতকালে এমন অবস্থা হয়েই থাকে। তাছাড়া বসন্ত আসলে কচি পাতা সৃষ্টি করে নিজেদের কে সাজিয়ে তুলবে দেখ।
- আরে তুমি আসল কথাটাই বলছ না কেন..??
-কোন কথা..???
-ওই যে বললাম, বসন্ত আসতে আর কত দেরি..?
-এখনও মাস খানেক বাকী আছে ,আর তুমি এসব চিন্তা ভাবনা করে নিজেকে আরও অসুস্থ করে তুলছ কেন??? শুয়ে পর...
ঔষধ খেয়েছো ঠিক মতো..???
মিলিকে ধমক দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ওর মা।
''মা তুমি তো জানো ঐ আমার কি অসুখ করেছে। আর কতদিনি বা হাতে সময় আছে কে জানে, তার আগে যদি আমার প্রিয় ঋতুটির আগমন দেখে যেতে পারতাম, আমার মরন বড় সুখকর হত''- মিলি নিজে নিজে বলতে থাকে।
চোখের কোন থেকে বেরিয়ে আসা বাঁধ ভাঙ্গা বন্যার মতো জলের বিন্দু গুলিকে হাত দিয়ে মুছে ফেলে ,
হাতের আঙ্গুল গুনে দিন গুনতে থাকে মিলি।
পৌষ মাস শেষ হতে আর দিন পনেরো বাকী ।
আস্তে আস্তে সমস্ত গাছের ডাল গুলি সেজে উঠবে নব সজ্জায় , সবুজে সবুজ হবে প্রতিটি গাছের অঙ্গ প্রতঙ্গ । প্রতিটি পাতার শেষে থাকবে বসন্তের আগমনের প্রতীক।
আর আমি, আমি যদি সুস্থ হয়ে উঠি সবুজ পাড়ের এক খানি হলুদ শাড়ি পরবো আর কপালে দেব একটি ছোট্ট লাল টিপ ।
মা বলতো কপালে ছোট্ট টিপে আমাকে দারুণ লাগে। তোমাকে দেখাব ।
দেখবে তুমিও মুগ্ধ হয়ে গেছ ।
তোমার চোখের পাতা পড়তে চাইবে না । তখন আমি তোমার চোখে একটু খানি ফুঁ দিয়ে দেব, তখুনি তুমি চোখের পলক ফেলবে।
আয়নাই নিজের প্রতিবিম্বের সাথে কথা বলতে বলতে মিলি যেন কেমন করে ওঠে।
মাথায় প্রচন্ড যন্তনা অনুভব করে।
মা বলে চিৎকার করে ওঠে মিলি।
মিলি ক্রমে অসুস্থ হয়ে পরেছে।উঠে জানালায় দাড়িয়ে গ্রীল ধরে সবুজ দেখা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাই।
শুধু চোখ দিয়ে ঘরের সিলিং দেখে।অল্প অল্প কথা বলতে পারছে,তবুও যেটা বলতে চাইছে সেটাও ঠিক মতো হচ্ছে না।
মিলির মা জুসের গেলাস টা রেখে গেছে অনেক্ষণ । খেতে মন চাইছে না কিছুতেই ।
কেন যে খোদা আমার ভাগ্যে ব্রেইন ক্যানসার এর মত রোগ দিয়েছে কে জানে ।
খোদা আমি কি পাপ করেছি।খোদা গো...
বিড়বিড় করে বলতে থাকে মিলি।
- মা জুসটা এখনো খাওনি। খেয়ে নাও তাড়াতাড়ি .
- আমার পাশে একটু বসবে মা।
মিলির মা আস্তে আস্তে এসে মিলির মাথার পাশে বসে। হাত বুলিয়ে দেই মিলির মাথায়।
- মা তোমার মনে আছে ,আমি যখন ছোটো ছিলাম।
প্রতি বছর পয়লা ফাল্গুনে কি করতাম।কত আনন্দ করতাম তাই না মা।
পৌষ মাসের শেষ তারিখে দখিন দিকের জানালাই মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখতাম। দখিনা হাওয়ার আগমন হবে বলে ।
পর দিন পয়লা ফাল্গুনের দিনে দেখতাম দখিনা হাওয়াই নিভে জড়িয়ে মোমবাতির নিভে যাওয়া টুকরো ।সবাই মিলে বসন্ত পালন করতাম ।সবুজ আবির মাখতাম।
- মা বল তোমার মনে আছে ?
মিলি কে জড়িয়ে ধরে ওর মা।
কান্না ভরা কণ্ঠে বলে ওঠে -হ্যাঁ মা।
- জান মা আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে ঐ দখিনা হাওয়ায় নিভে যাওয়া মোমবাতি দেখতে ।
-মা আজ পৌষ মাসের শেষ দিন।পারবে আমার জন্য একটুখানি কষ্ট করতে।পারবে আমার মাথার কাছের জানালায় একটা মোমবাতি রাখতে।
* * * *
পয়লা ফাল্গুন। দখিনা হাওয়া বইছে।গাছের কচি পাতাগুলি নড়ে নড়ে তাকে স্বাগত জানাচ্ছে।চারিদিকে যেন উৎসবের রব। সবুজ আবির মাখছে সবাই।
-মিলি দেখ মা, বাইরের দিকে একটু তাকিয়ে দেখ।সবাই কেমন আনন্দ করছে ।
তোমার ইচ্ছে ছিলনা দিনটি দেখার জন্য । দেখ তোমার ইচ্ছে পুরন হয়েছে। মিলি অর মায়ের কথা মনে হয় কিছুই শুনতে পেল না ।
কোনো সাড়া দিলো না ওর মায়ের কথায় ।
কেবলই তাকিয়ে আছে আগের দিনের জ্বালিয়ে রাখা মোমবাতির দিকে।
দেখছে মোমবাতির নিভে যাওয়া টুকরো ।
দখিনা হাওয়া বইছে ঠিকই তবে বন্ধ হয়ে গেল উত্তুরে বাতাস ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.