নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালোলাগে,ভাবনার আকাশে পাখা মেলতে...

বুরহানউদ্দীন শামস

আমি বাংলায় গান গাই আমি বাংলার গান গাই আমি, আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই ।।

বুরহানউদ্দীন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : চিঠি

২৮ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:০৬


"মামীমা কি এটা ?"
বায়েজিদ একটা ভাজ করা কাগজের টুকরো ওর মামীর হাতে দিয়ে বললো ।
কাগজের টুকরোটা খুলে শিউলি কিছুক্ষণের মধ্যে ধপ করে বসে পড়লো বারান্দার বড়ো সোফাটায় । ফর্সা চেহারাটা লাল টুকটুকে হয়ে গেলো। চোখের পলক না ফেলেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঝের দিকে ।
আমি দুর থেকে জিনিস টা লক্ষ করছিলাম এতক্ষণে । ঘটনার কিছুই বুঝতে পারলাম না । খারাপ কিছু না হোক এমন টা হওয়ার কথা না । অবস্থা খুব একটা সুবিধার মনে হলো না। ঝড় উঠতে পারে যখন তখন । ঝড়ের পূর্বাভাস পেলে যেমন পিপড়েরা নিরাপদ স্থান খুঁজে নেয়। আমারও উচিত এক্ষুনি নিরাপদ স্থান খুঁজে নেওয়া ।
নাহ বাড়ির দিকে থাকা যাবে না । মোড়ের চায়ের দোকান থেকে ঘুরে আসি ।
হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে পড়লাম ওদিকে..
বায়েজিদ আমার দিদির ছেলে । বছর পাঁচেক বয়স্ হবে হয়টো। দুই ভাই । আর একটা আছে, সে মুজাহিদ । ওর বয়স সাত বছর ।
দুটোর দুষ্টামির পরিসীমা মাপার কোনো যন্ত্র আবিষ্কার হয়নী এখনো ।
ওরা যখনই আমাদের বাড়িতে আসে । শুরু হয়ে যায় গোছানো বাড়ি অগোছালো করা । এটা খুলে দেখবে । সেটা খুলে দেখবে । বইপত্র ঘাটবে । উঠানে খোড়াখুরি শুরু করবে । দুজন যেনো প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখলদাস বন্দোপাধ্যায় আর দয়ারাম সাহানি । খনন কাজে এক্সপার্ট। বাড়ির কোথায় কি আছে সব কিছু খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নেয় ওই বিচ্ছু দুটো ।
আজকের কাগজের টুকরোটা খুঁজে পেয়েছে একটা পুরনো বইয়ের পাতার মধ্যে।
কাগজটা আসলে কি ..?? কি আছে ওটার মধ্যে .??
ভাবতে ভাবতে টেনসন ঘনীভূত হচ্ছে ক্রমে।
পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালিয়েছি সবে ।
ফোন টা বেজে উঠছে বারবার ।
স্ক্রিনে দেখলাম হোম মিনিস্টার কল করেছে এর মধ্যে অনেকবার । ধরতে সাহস পেলাম না কিছুতেই ।
সাইলেন্ট মুডে মোবাইলটা পকেটে রেখে দিলাম টুক করে ।
মনে ভয় আর বাইরে ডোন্ট কেয়ার ভাব ধরে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ছি উধ্বগগণে ।
দুতিন দিক আগে আরো এক কাণ্ড ঘটিয়েছে ওরা ।
দাড়ি সেভ করা ট্রিমার সবে চার্জে বসিয়ে বাইরে গিয়েছি । বাইরে থেকে শুনতে পাচ্ছি ট্রিমার চলার শব্দ।
কে চালাচ্ছে ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকতেই ট্রিমার টা টান মেরে টেবিলে ছুড়ে ফেলে ওরা দৌড়ে পালালো ওদের মামীর কাছে ।
আমি গলার সুর নরম করে বললাম , মুজাহিদ- বায়েজিদ এই দিকে আয় । ফিচ ফিচ করে হাসতে হাসতে আমার কাছে এলো ওরা । মাথায় দু হাত দিয়ে কিছু একটা ঢেকার চেষ্টা করছে দুজনেই ।
আমি বললাম, " মাথায় কি হয়েছে দেখি ।" হাত সরাতেই আমি অবাক । মাথার কিছু জায়গায় চুল নেই ।
এ ওর মাথায় ট্রিমার চালিয়েছে আর ও এর মাথায় ...
আমি বললাম কি করেছিস এটা .??
হাসতে হাসতে বললো, "চুল কেটেছি .."
দিদি ওদের সামলাতে সামলাতে নাজেহাল ।
বাড়িতে যখন থাকে তখনও একটা না একটা কিছু করতেই থাকে।
কিন্তু আজকের ঘটনা যে বাড়িতে একটা ঝড় তুলবে সেটা আমি নিশ্চিত ।
বেশ কিছুক্ষণ ভেবে যা হয় হবে বলেই বেরিয়ে পড়লাম বাড়ির উদ্দেশে । এখন না হলে পরেও তো নিড়ে ফিরতেই হবে ।
বাড়ীতে ঢুকে বারান্দা পেরিয়ে ঘরে পা বাড়িয়েছি সবে ..
পরিবেশ টা বেশ শান্ত মনে হলো । কোথায় কোনো আওয়াজ নেই তেমন । খালি মাঝে মাঝে ঘর থেকে মৃদু কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি ।
আওয়াজ টা বেশ চেনা চেনা লাগছে । সারাক্ষণ তো কানের কাছে রিংটোন এর মত বাজছে এই চার বছর ধরে । দুবছরের প্রেম আর বছর দুয়েকের মত সংসার জীবন ।
আগে কিছু হলেই ফোন ধরে এইভাবেই রেখে কান্নাকাটি করতো আর এখন দিনে যায় ঘটুক সেটা রাতে টেলিকাস্ট হয় রাতে শোওয়ার সময় ।
কিন্তু আজ দুপুরে কেনো এই রিংটোন.???
কাহিনী কি ?
ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকেছি । শিউলি ওর নিজের জামা কাপড় গুলো একটা একটা করে গুছিয়ে রাখছে ইয়া বড়ো একটা ব্যাগে ।
পাশে থাকা আমার একটা জামা হাতে পড়তেই টান মেরে ছুড়ে ফেললো আমার দিকে ।
ভাব সুবিধার না ।
সাহস করে কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম , "শুধু নিজের কাপড় জামা গুলোই ভাজ করে গুছিয়ে রাখছো .? আমার গুলোও তো ঘুছিয়ে রাখতে পারো । "
আমার কথা শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য কান্না থামিয়ে কটমট করে তাকিয়ে রইল আমার দিকে ।
আমি বেগতিক দেখে বললাম, "থাক আমার গুলোর দরকার নেই । "
ঘটনাপ্রবাহ দেখে যা বুঝলাম শিউলি বাপের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে । সবে ব্যাগ গোছানো শুরু করেছে ।
আমি পড়েছি মহা বিপদে । কি হয়েছে কিছুই বলছে না অথচ ফ্যাচ ফ্যাচ করে চোখের জল ভাসিয়েই চলেছে ।
আমি একটু কাছাকাছি এসে কাধে হাত দিয়ে বললাম, " কি হয়েছে সেটা খুলে না বললে বুঝবো কিভাবে.??"
ব্যাগ গোছানো বাদ দিয়ে টেবিলের উপর থেকে কাগজের টুকরোটা আমার দিকে ছুড়ে মারলো । বললো , " দেখো" ।
মেঝে থেকে কাগজের টুকরোটা তুলে খুললাম আমি ।
ওটা একটা পুরানো লাভ লেটার। তিন চার বছর আগেকার হবে ।
বুকটা ধড়াস করে উঠলো । মনে হলো যেনো কাগজ নয় , শিউলি অ্যাটম বোম ছুড়ে মেরেছে আমার দিকে ।
চারিদিকে লাভ চিহ্ন আঁকা । ওপরে বড়ো বড়ো করে লেখা B+R ...
কার চিঠি কে জানে । শিউলির সাথে পরিচয়ের আগে একাউন্ট তো অনেক ছিল এদিকে সেদিকে ।
সাহস করে পড়া শুরু করলাম চিঠি টা ...
প্রিয়তম...
" তোমাকে ছাড়া কাটানো আগের সময়গুলোর কোনো গুরুত্ব ছিল না । আগের ঋতু গুলো ছিল রংহীন, বর্ণহীন । তোমাকে প্রথম দেখাতে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছিলাম ।কিন্তু আমি সেটা নিজে তোমাকে প্রথম বলতে পারিনি । যখন বলেছিলাম তখন এর অভিযান টা একদম আলাদা ছিল । তোমাকে ভালোবাসার পর প্রকৃত ভালোবাসতে হয় কি করে সেটা শিখেছি । তুমি আমার মনে, চোখে বাস করো । যখন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম তখন থেকে। যখন তোমার সাথে একটা দিন দেখা বা কথা হয় না তখন পাগলের মত মনে হয়। যেনো আমার কাছ থেকে আমার মূল্যবান জিনিসটা হারিয়ে গেছে ।
তোমাকে ভীষণ মিস করছি।
আমাকে নিয়ে একদম চিন্তা কোরো না। এই রিমি তোমারই আছে আর তোমারই থাকবে ।" ( চিঠি থেকে কপি করা )
ইতি,
তোমার ...

চিঠি টা শেষ করলাম এক নিঃশ্বাসে । শেষে চিঠি প্রেরকের নাম না থাকলেও শেষ লাইনটা দেখে বোঝা যায় কার চিঠি ।
এটা রিমির চিঠি । কিন্তু এই চিঠি দেখে শিউলি রেগে যাবে কেনো.? এই চিঠি তো......
সব বোঝা শেষ । এবারে বিরক্ত হচ্ছি রীতিমত।
ওদিকে উনি প্যান প্যান করে কেদেই চলেছে। আমাকে ছেড়ে বাপের বাড়ি যাবেই আজ ।
আমি ওকে বললাম , "দেখো তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে ...
আমি এটার ব্যাখ্যা করতে পারবো । আমাকে শুধু একটু সময় দাও প্লিজ । "
কথাটা শেষ করা মাত্রই সাপের মত ফোঁস করে উঠলো শিউলি ।
ঝাঁঝিয়ে বলে উঠলো , 'কি বোঝাবে আমাকে । আমাকে কি বাচ্চা মেয়ে পেয়েচো যে, যা বলবে সেটাই বুঝে যাবো ।আমার সাথে ছাড়াও কত জনের সঙ্গে তোমার প্রেম ছিল কে জানে ।
এখনো কোথাও খাতা খুলে রেখেছ কিনা কে জানে । "
এত মহা জ্বালা কিছু বলতে গেলেই ফোঁস ফোঁস করে উঠছে ।
কিছুতেই কোনো কথা শুনতে চাইছে না ।
পাশের ঘরে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে এসেছে ইতিমধ্যে । ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে কাদতে কাদতে সাজুগুজু করছে । আর আমার দিকে ঘুরে ঘুরে কটমট করে তাকাচ্ছে ।
ব্যাগ নিয়ে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে ঘর থেকে। আমি পথ আটকে বললাম, " চিঠিটা পুরো একবারও পড়েছ ?? শেষে তো যার চিঠি তার নাম লেখায় আছে । তার পরেও কেনো রাগ করছ..!"
"কার চিঠি" ,বলেই ঝাঁঝিয়ে উঠল শিউলি।
আরে চিঠিটা তো তোমারই । তোমারই লেখা চিঠি তুমি নিজেই চিনতে পারছ না ।
" মানে .!!" থমকে দাঁড়ালো শিউলি।
কই চিঠিটা দাও দেখি ।
আমি শেষের লাইন টা দেখিয়ে বললাম এই দেখ তোমারই নাম লেখা আছে এখানে।
রিমি নামটা কি আমার .?? হ্যাঁ তাইতো । ভুলেই গিয়েছিলাম । বলেই হাসতে হাসতে চোখ মুছে ঘরের দিকে হাঁটা দিলো ।
ব্যাপার টা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছি । একটা মানুষ কিভাবে তার নিজের নাম ভুলে যেতে পারে। অবশ্য দোষ টা ওরই বা কি করে দেই।
ওই নামটা আমি ছাড়া আর কেউই জানত না ।
প্রেম করার শুরুতে একটা ভুলভাল নাম তো আজকাল সবাইই দেয়।
ঘরে ঢুকে দেখি সাজগোজ খুলে ফেলছে সব ।
একটু মুচকি হেসে বলল , "গোসল টা সেরে এসো । আমি খাবার রেডি করছি । "

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:৫৩

এম এ হানিফ বলেছেন: ভাগ্যিস চিঠিটা অন্য কারো ছিল না।

২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১০:২৯

বুরহানউদ্দীন শামস বলেছেন: সেটাই ...
ধন্যবাদ আপনাকে...

২| ২৮ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২১

রাজীব নুর বলেছেন: চিঠি লেখা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রযুক্তি মানুষকে চিঠি লেখা বন্ধরে দিয়েছে।

২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১০:৩০

বুরহানউদ্দীন শামস বলেছেন: চিঠির যুগের প্রেমগুলোই সেরা মনে হয়....

ধন্যবাদ আপনাকে ।
রইলো শুভকামনা ।

৩| ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১০:০৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: একরাশ  মুগ্ধতা । একরাশ ভালো লাগা

২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১০:৩১

বুরহানউদ্দীন শামস বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ...

ভালো থাকবেন সবসময় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.