নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালোলাগে,ভাবনার আকাশে পাখা মেলতে...

বুরহানউদ্দীন শামস

আমি বাংলায় গান গাই আমি বাংলার গান গাই আমি, আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই ।।

বুরহানউদ্দীন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ রেজাল্ট আউট

৩০ শে মে, ২০২০ রাত ১১:০৬


বনগা শিয়ালদহ রেললাইনের হাবড়া রেলস্টেশনের পাশেই বস্তিতে রামশঙ্কর দের বাড়ি । এমনিতেই বস্তির মানুষগুলো খুবই গরীব। দিন আনি দিন খায় অবস্থা । রামশঙ্কর দের অবস্থা আরো খারাপ । পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ওর বাবা ।সারাদিন রেলে হকারি করে । সামান্য যা কিছু আয় করে সেটাও উড়িয়ে দেয় রাতের মদের আড্ডায় ।
রামশঙ্কর এর বয়স অনেক কম । সবে সিক্সে পড়ে।
না হলে সেও হয়তো সংসারের হাল ধরতে পারত । কিন্তু এত ছোটো বয়সে সংসারের হাল ধরা তো দূরের কথা বাবাকে সংসার চালাতে সাহায্য করাটাও সম্ভব না ।
রামশঙ্কর এর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসারের চাকা গড়িয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে কিছুটা ।
ডিসেম্বর মাস। ' শীত' সচিন তেন্ডুলকরের মত ব্যাটিং করে চলেছে পুরোদমে ।
রেললাইনের ধারে দাড়িয়ে আছে রামশঙ্কর । সকালের হালকা রৌদ্র চিকচিক করছে চারিদিকে। পাতলা একটা সোয়েটার গায়ে আর সকালের রৌদ্র স্নানে শরীর টাকে গরম করার চেষ্টা করছে ও ।
প্রায় গায়ের পাশ দিয়েই বেরিয়ে গেলো আপ বনগা লোকাল । বোয়ে নিয়ে আসা দমকা হাওয়া শরীরটাকে আরো ঠান্ডা করে দিয়ে গেলো ।
কিছুই করার নেই ওদের । ওদের উঠানটাই এক হিসাবে রেল পথ ।
রেলের জমিতে অবৈধ ভাবে বসবাস । একটু তো সইতে হবে ।
তার উপর রিফিউজি ।
আপ ট্রেন চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আর কোনো ট্রেন আসবে না এই ট্রাকে ।
রেল ট্রাকেই বসে পড়লো রামশঙ্কর ।
আজ একটু টেনশনে আছে সে। স্কুলে রেজাল্ট দেবে ।
ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে উঠতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে ওর নিজেরও যতেষ্ঠ সন্দেহ আছে ।
পড়াশোনাটা করতে ওর মোটেও ভালো লাগে না।
এমনিতেই বাড়ির অবস্থা করুণ । তার উপর ওকে গাইড করার লোকের অভাব।
লোকের বাড়িতে কাজ করে এসে ওর মা ওকে রাতে সময় দিতে পারে না । আর তো ওর বাবা তো রাত হলে জগতের সমস্ত নেটওয়ার্কের আওতার বাইরে চলে যায় ।
সারাবছর পড়াশোনা না করলে তো ফেল করার সম্ভবনা একশো শতাংশ ।
যখন সবাই স্কুলে পড়াশোনা করতে যেত তখন সে যেত খালের পানিতে মাছ ধরতে।
বাবুদের বড়ো আমবাগানে লুকিয়ে রেখে আসতো ছিপ । বাড়ি থেকে পিঠে স্কুল ব্যাগ নিয়ে সোজা চলে যেত ওই আমবাগানে ।
ছিপ নিয়ে বসে যেত খালের ওপর তৈরি করা বাঁশের মাচাটাই ।
কার কাছ থেকে সে নাকি শুনেছিল...
" মৎস্য মারিব খাইবো সুখে
লেখাপড়া করে কি মরিব দুঃখে "
সেজন্যই মনে হয় স্কুলে না গিয়ে , স্কুল ব্যাগ নিয়ে মাছ ধরতে যেত রামশঙ্কর ।
অন্যদিন না হয় স্কুলের নাম করে মাছ ধরতে যেত সে । কিন্তু আজ তো স্কুলে যেতেই হবে সারাবছরের খাটনির ফসল ঘরে তুলতে ।
সাথে আবার অভিভাবক কেও নিয়ে যেতে হবে আজ ।
এ এক মহা জ্বালা ।
স্কুলের দিকে রওনা দিয়ে রামশঙ্কর । সাথে ওর বাবা ।
রেললাইন পেরিয়ে কিছুটা গেলে ওর স্কুল ।
ট্রেন আসছে দেখে দাড়িয়ে গেলো ওরা । সামনে দিয়ে হুস করে বেরিয়ে গেল ডাউন শিয়ালদহ লোকাল । কলকাতা যাচ্ছে ট্রেনটা ।
চুলে সর্ষের তেল দিয়ে সুন্দর করে আচড়ানো চুল । পরনে ময়লা হয়ে যাওয়া স্কুল ড্রেস ।
স্কুলের গেট দিয়ে সবে ঢুকে রামশঙ্করকে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে বাইরে দাড়িয়ে থাকলো ওর বাবা ।
হাবড়া মডেল হাই স্কুল।
মডেল স্কুল বলে এলাকার অভিজাত অভিভাবকদের বাচ্চারাও বেসরকারি স্কুল ছেড়ে এখানে পড়ে । সেসব অভিভাবকরাও এসেছে আজ । সেই সব বড়োলোক দের মাঝে রামশঙ্করের বাবা শ্যামশঙ্কর যেনো নিতান্তই সাধারণ মানুষ ।
ক্লাস সিক্সের ক্লাসটিচার হলেন পতিত পবন সরখেল ।
খাঁটি বামুন । ছয় ফুট উচু লম্বা । দেখলেই কেমন যেনো পিলে চমকে যায় ।
রেজাল্ট বিতরণ শুরু করে দিয়েছে এতক্ষণে ।
রামশঙ্কর রেজাল্ট হাতে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে সবে । ওর বাবা ওকে দেখে এগিয়ে এলো । ছেলের মন খারাপ দেখে ইতিমধ্যে বুঝে ফেলেছে , ফেল করেছে সে ।
কি আর করার ।
ছেলের উপর রাগ চেপে দাড়িয়ে রইলো ক্লাস টিচার সরখেল স্যারের সাথে দেখা করবে বলে ।
সবে রেজাল্ট বিতরণ শেষ করে বেরিয়েছে সরখেল স্যার ।
চোখে চশমা । হাতে বেশ কিছু কাগজপত্র ।
সরখেল স্যারের দিকে এগিয়ে গেলো শ্যামশঙ্কর ।
" ম্যাস্টর " বলে ডাক দিয়ে দাড় করালেন সরখেল স্যার কে ।
এমন এক অদ্ভুত ডাক শুনে সাথে সাথে দাড়িয়ে গেলেন রামশঙ্করের ক্লাসটিচার ।
তারপর ছেলেকে কাছে টেনে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বেশ হতাশার সুরে বললেন , " ম্যাস্টর , তোরাই পড়ালি , তোরাই পরীক্ষা নিলি , আর তোরাই ফেল করালি .??"

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মে, ২০২০ রাত ১১:১৭

আমি সাজিদ বলেছেন: বেশ লেগেছে।

৩০ শে মে, ২০২০ রাত ১১:৩৫

বুরহানউদ্দীন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।
ভালো থাকবেন সবসময় ।

২| ৩১ শে মে, ২০২০ রাত ১২:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: ব্লগার গেছো দাদার মতো পোষ্ট।
বনগা আমি গিয়েছি।

৩১ শে মে, ২০২০ সকাল ১১:৩৭

বুরহানউদ্দীন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।
আবার আসবেন আমাদের দেশে ।
বণগা থেকে 30 কিমি দূরে থাকি আমি ।

৩| ৩১ শে মে, ২০২০ রাত ১:০২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

সবই যদি তোদের হাতে
তা হলে ফেল করালি কেনে !!

৩১ শে মে, ২০২০ সকাল ১১:৩৭

বুরহানউদ্দীন শামস বলেছেন: সেটাই...
ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ৩১ শে মে, ২০২০ ভোর ৫:৫৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অত্যন্ত মুগ্ধকর লেখা

৩১ শে মে, ২০২০ সকাল ১১:৩৭

বুরহানউদ্দীন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.