![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নারীর অধিকার : নারীবাদী বনাম ইসলামপন্থীরা প্রসঙ্গ বাংলাদেশ
বোরহান উদ্দিন রুবেল
বর্তমান বিশ্বের কয়েকটি আলোচিত বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি আলোচিত বিষয় হলো নারী অধিকার (Women Rights ) । পুরুষ শাসিত সমাজের কারনে (Human Rights) মানবাধিকারের পরেও বিশ্বসংস্থাগুলো নারীর অধিকারের কথা বলে । প্রশ্ন থাকে তাহলে কি মানবাধিকার শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য ? পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা অবহেলিত বা প্রাপ্ত অধিকার পাচ্ছে না কথাটি সত্য না হলেও মিথ্যা নয় । কিন্তু এই অধিকার না পাওয়া বা অবেহেলার জন্য শুধু ধর্ম দায়ী , তাও আবার অন্য কোন ধর্ম নয় শুধু ইসলাম ধর্মই দায়ী । বিশ্বায়নের খাতিরে এই কথাগুলো পশ্চিমাদের থেকে বাংলাদেশের মতো ৯০% মুসলমানদের দেশেও চলে এসেছে আর নারীবাদীরাও তা প্রচার করছে । তারা তা সমাজ তথা রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও লিপ্ত । এখন প্রশ্ন থাকে আসলেই কি ইসলাম নারী অধিকারের বিপক্ষে ? পক্ষে হয়ে থাকলে তার বাস্তবায়ন কতটুকু ? তাতে নারীবাদীদের সাথে ইসলামের বিরোধ কোথায় ? বিরোধ সমাধানের ক্ষেত্রে ইসলামপন্থীদের ভুমিকা কি ?
ইসলামে যে নারীর অধিকার দিয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করলে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে তাই আমি শুধু যে যে বিষয়গুলো বাংলাদেশের নারীবাদীরা(Faminist) বেশী সমালোচনা করে থাকে সেগুলো নিয়ে কথা বলবো ।
উত্তরাধিকার আইন :
বাংলাদেশের নারীবাদীরা যে বিষয়টি নিয়ে বেশী দ্বিমত পোষণ করে তা হলো ইসলামের উত্তরাধিকার আইন নিয়ে । এই বিষয়টি আলোচনার আগে একটি বিষয় পরিষ্কার করা উচিত তা হল ,ইসলামে অধিকারের( Rights) সাথে আরেকটি বিষয় আঙ্গাআঙ্গিভাবে জড়িত তা হল দায়িত্ব ( Responsibility )। । ইসলাম নারীকে কতটুকু অধিকার দিয়েছে সেটা সবসময় তার দায়-দায়িত্বের বিপরীতে ওজন করে দেখতে হবে । দায়-দায়িত্বের পরিমানের সাথে অধিকারকে ওজন করে দেখতে হবে নতুবা অধিকারের যোগ-বিয়োগে মারাত্মক ভুল হয়ে যাবার আশঙ্কা থেকে যাবে । উত্তারাধিকারের ক্ষেত্রে আল-কুরআনের সূরা নিসায় বলা হয়েছে “নারীরা পুরুষের অর্ধেক সম্পদ পাবে” । নারীবাদীদের প্রশ্ন হল অর্ধেক কেন সমান পেতে হবে । অথচ তারা এটা চিন্তা করেনা এই অর্ধেক খরচ করার কোন দায়িত্ব ইসলাম তাকে দিয়েছে কিনা আর যে পুরুষ দ্বিগুণ সম্পদ পেল তার খরচের কতগুলো খাত ইসলাম দিয়েছে । অন্যদিকে চিন্তা করলে ইসলামের উত্তরাধিকার আইনে ১২ জনের সম্পদের নির্দিষ্ট পরিমাণ বর্ণনা করেছে তার মধ্যে নারী ৮ জন আর পুরুষ ৪ জন । নারীর দায়িত্ব বিয়ের আগে বাবার উপর , বিয়ের পর স্বামীর উপর আর স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেদের উপর দিয়েছে ইসলাম । ইসলামে তারা শুধু পাবেই তাদের খরচের জায়গা দেয়া হয়নি । ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম নারীদের উত্তারাধিকার প্রদান করেনি কিন্তু তানিয়ে নারীবাদীদের কোন কথা নেই । তবে এই কথাটি সত্য ইসলাম নারীদের অধিকার দিলেও আমরা তথাকথিত মুসলমানরা তাদের অধিকার দেয়নি একজন স্ত্রী হিসেবে,মা হিসেবে অথবা বোন হিসেবে ।
এতক্ষন তো নারীবাদীদের কথা বললাম আমাদের দেশের ইসলামপন্থী যারা আছেন তাদের আবার কিছু রহস্যজনক ভুমিকা আছে । নারীবাদীরা যখন সম্পদে সমান অধিকার চায় তখন তারা সারা দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে । কারন তা ইসলাম বিরোধী বা কুরআনের আইনের পরিপন্থী । এটা নিয়ে মুসলমানদের মনে কোন প্রশ্ন নেই কিন্তু প্রশ্ন হল যখন কুরআনে বর্ণিত অর্ধেক সম্পদ নারীদের এই সমাজ বা রাষ্ট্র নিশ্চিত করেনা তখন তারা আন্দোলন করে কি না ? কারন অর্ধেক না দেয়াটা তো কুরআন বিরোদ্ধতা । যারা নারীবাদীদের বিপক্ষে আন্দোলন করে তারা তাদের বোনদের বা ফুফুদের সম্পদ কুরআনের আইন অনুযায়ী বন্টন করে কিনা । তারা নিজেরা না করুক যারা ইসলামপন্থী দল আছে তারা তাদের পন্থী নারীদের দ্বারা কোন সবাদ সম্মেলন করে বলিয়েছে কিনা ইসলামে যে অর্ধেক সম্পদের কথা বলেছে তার বাস্তবায়ন চাই । আমার জানা মতে বলে নি । তাদের এই বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে একটা সমাধানে আসা দরকার ।
ইসলামে পর্দা প্রথা :
বাংলাদেশের নারীবাদীরা ইসলামের যে বিষয়টি নিয়েও চরম বিরোধিতা করে তা হলো ইসলামে নারীদের পর্দা প্রথা । তারা মনে করে পর্দা নারীদের সকল উন্নতির অন্তরায় । তাদের এই দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কিছু সেকুলার বুদ্ধিজীবী তাদের সাথে গলা মিলিয়েছে । তাতে তাদের লাভ হল তসলিমা নাসরিন দ্বারা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শামসুর রহমানের যে ধরনের লাভ হয়েছে । তারা বাংলাদেশে এই আন্দোলনে প্রায় সফলতার ধারপ্রান্তে আওয়ামীলীগ সরকারের সহযোগিতায় । ইতিপূর্বে কয়েকটি স্কুল ,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব পরা নারীদের বের করে দেয়া হয়েছে , মেয়েদের ফুলহাতা কেটে ছোট করে দিয়েছে । আর কয়েকজন মন্ত্রিতো বলেই ফেলেছে নারীরা কুৎসিত চেহারা ঢাকতে হিজাব পরে ।
এই ক্ষেত্রে ইসলামপন্থীদের ভুমিকা স্ট্রং না হলে নারীবাদীদের পর্দা বিরোধী মতামত সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে , তাতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হবে এই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা । ইসলামপন্থীদের উচিত নারীবাদীদের সমালোচনা না করে পর্দা পরিধান করেও যে নারীরা উন্নতি করতে পারে তার উদহারন পেশ করা নারী জাতির সামনে , যেমনি ব্যাংকিং জগতে ইসলামি ব্যাংক করেছে । নারীদের জন্য উন্নতমানের স্কুল , কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে সাথে সাথে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে । ব্যাংক , বীমা , মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি ,হাসপাতাল ,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের জন্য আলাদা বিভাগ করে কর্ম সংস্থানের ব্যেবস্থা করতে হবে । অন্যদিকে বাংলাদেশের বিশাল একটি সংখ্যক নারী গার্মেন্টসে কাজ করে । তাদেরকে তেঁতুল না বলে তারা যাতে পর্দার সহিত কাজ করতে পারে সে জন্য ব্যেবস্থা করতে হবে। তাঁদের জন্য আলাদা গার্মেন্টস করতে হবে যেখানে ম্যানেজার , সুপার ভাইজার সহ সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থকবে মহিলা ।
প্রাইভেটেজাইশনের যুগের কারনে বিতরের জিনিসগুলো বাহিরে চলে এসেছে আর বাহিরের জিনিসগুলো বিতরে চলে গেছে বিশেষ করে মার্কেটের ক্ষেত্রে । এই ক্ষেত্রে ইসলামপন্থীদের কাজ হলো নারী উদ্যোক্তা তৈরি করে নারীদের জন্য আলাদা মার্কেট তৈরি করা যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা এমনকি সিকুরিটি গার্ডও নারী হবে । তাহলে যেমনি নারীবাদীদের গালে চপেটাঘাত হবে তেমনি পর্দা যে নারীর উন্নয়নের অন্তরায় নয় সেটিও প্রতিষ্ঠিত হবে ।
অন্যান্য ;
যে বিষয়গুলো নিয়ে ইসলামপন্থিদের কাজ করার সুযোগ আছে তা হলো ......
১. যৌতুক প্রথা ইসলামের না এটা হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলমানদের মধ্যে এসেছে বরং ইসলাম নারীকে মহরানা দিতে বলেছে । ইসলামপন্থীদের যৌতুকের বিপক্ষে আর মহরানার পক্ষে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে । তবে সর্বপ্রথম নিজেদের মধ্যে তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।
২. ইসলাম নারীকে একজন মা , বোন ও স্ত্রী হিসেবে যে অধিকার দিয়েছে তা বাস্তবায়নের প্রদক্ষেপ নিতে হবে ।
৩. বিজ্ঞাপনের নামে যেভাবে নারীকে পণ্য বানানো হচ্ছে তা নিয়ে নারীদের দিয়ে প্রতিবাদ করাতে হবে । হিজাবের নতুন নতুন ফ্যাশন নিয়ে আসতে হবে যাতে সাধারণ মেয়ে হিজাবে আকৃষ্ট হয় ।
৪. কাজের মেয়েদের উপর যে অমানবিক অত্যাচার করা হয় তাতে আধুনিক নারীরাই বেশী জড়িত । এমনকি যারা নিজেদের নারীবাদী তাদের ঘরের কাজের মেয়ে আরো বেশী নির্যাতিত । এই ক্ষেত্রে ইসলামপন্থী নারীদের কাজের মেয়েদের সাথে ব্যাবহারের ক্ষেত্রে উদহারন পেশ করতে হবে ।
৫. গ্রামাঞ্চলে নারীরা সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত হয় নারীদের দ্বারা , হোক তার ননদ বা শাশুড়ি । প্রত্রিকায় আসা অধিকাংশ খুন তার প্রমান বহন করে । এই ক্ষেত্রে ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রচার করতে হবে । ভাবির প্রতি ননদের , ননদের প্রতি ভাবির , শাশুড়ির প্রতি ছেলের বউয়ের আর ছেলের বউয়ের প্রতি শাশুড়ির দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে নাটক , ছবি বা সেমিনার করে তাদেরকে সতর্ক করতে হবে ।
সর্বশেষ যে কথাটি বলবো তা হলো ,ইসলামপন্থীরা যদি নারীদের প্রতি ইসলাম যে অধিকার দিয়েছে তা বাস্তবায়নে সক্রিয় না হয় তা হলে নারীবাদীদের অবৈধ আবধারে ইসলামি মূল্যবোধ বঙ্গোপসাগরে পতিত হবে ।
শিক্ষার্থী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬
বোরহান উদ্দিন রুবেল বলেছেন: আপনার কথা সত্য । কিন্তু মুসলিমরা নারী অধিকার দেয়নি । তাতে ইসলামের দোষ না তা মুসলিমদের দোষ.......... পরিবেশ বন্ধু
৩| ২৫ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:৫৭
বঙ্গতনয় বলেছেন: হুম
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: ইসলাম পূর্ব যুগে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া হত । নারী ছিল পুরুষদের নিকট শুধু
ভোগের পন্য । ইসলাম সেই অন্ধকার যুগ পরিহার করে সর্বক্ষেত্রে নারীকে দিয়েছে সমাজে তার পরিপূর্ণ মর্যাদা ।
আসলে যারা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে তারা প্রকৃত অধিকার গুলু ইসলাম কতটুকু সমর্থন দেয় তা নিয়ে চিন্তা করেনা ।
দেখা যায় একমাত্র ইসলামই প্রকৃত পক্ষে নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে ।