নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্যালিগ্রাফি মন ভাল করে দেয়...

মোহাম্মদ আবদুর রহীম

ক্যালিগ্রাফি করতে ভালবাসি

মোহাম্মদ আবদুর রহীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা ক্যালিগ্রাফি : ফন্ট ও শৈলী

২৮ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৩৭

রিয়াদ প্রাচ্যকলার ছাত্র। আকা-আকির সাথে তার সিলেবাসে এবার ক্যালিগ্রাফি যোগ হয়েছে। রিয়াদের হাতের লেখা বেশ ভাল। পোস্টার ও দেয়াল লিখনের জন্য তার ডাক পড়ে প্রায়স। গ্রাফিক ডিজাইন ও প্রাচ্যকলা একই ভবনে হওয়ায়, লেটারিং ডিজাইন সম্মন্ধে বেশ ধারনা হয়েছে তার।
বাংলা টাইপোগ্রাফি নিয়ে ইদানিং পড়াশুনা ব্যক্তিগত পর্যায় বেশ এগিয়েছে। ছাপার অক্ষর এক সময় সীসার ব্লক আর কাঠের ব্লকে হত। গত ‘৮০ দশকেও সেটা রমরমা ছিল। লেটার হেড বা কোন শিরোনাম একটু ব্যাতিক্রম বা কোন ইমেজ ছাপাতে হলে জিংক ব্লকের দ্বারস্থ হতে হত। এরপর টাইপরাইটারে এল মুনির কীবোর্ড। তারপর মোস্তফা জব্বার কম্পিউটারের জন্য মেয়ের নামে সুতন্বি তন্বি ফন্ট আনেন। এখানে তিনি অনুঘটকের কাজ করেছেন, কারিগরি বা ফন্ট তৈরিতে তার হাত ছিল না। হামিদুল ইসলাম তখন দৈনিক সংগ্রামের স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে নয়াদিগন্তে আছেন। তিনি জব্বারের অফিসে গিয়ে দিনের পর দিন হাতে ফন্ট বানিয়েছেন। তখন স্ক্যানার আসেনি। সুতরাং মনিটরের স্ক্রিনে আন্দাজের ওপর পাথ করার কাজ করতে হত। এতে ফন্ট যথার্থ হচ্ছিল না। প্রিন্ট দিলে হাতে আকা ফন্টের সাথে মিলে না। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। একদিন শিল্পী হামিদুল ইসলাম বাটার পেপার দেখে নতুন আইডিয়া পেলেন। আবার কাজ শুরু হল। তিনি বাটার পেপারে ফন্ট একে দেন এবং সেটা মনিটরে কসটেপ দিয়ে লাগিয়ে হরফ পাথ করা হল। এবার প্রিন্টে মনমত টাইপ বের হল। এই অতি পরিশ্রমের মূল্য ছিল মাত্র বিশ হাজার টাকা। এরপর তো প্রযুক্তির কল্যাণে আরো কত ফন্ট বের হল।
বাংলা ফন্টের স্বভাব বর্গাকার বা চারকোনা স্বভাবের। সব হরফ আনুভুমিক সমান মাপের নয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করতে হয়েছে। এই উপমহাদেশের প্রধান ভাষাগুলোর মধ্যে অধিকাংশেরই নিজের লিপি নেই। যেমন- উর্দু, হিন্দি, সংস্কৃত। উর্দু লেখা হয় আরবি হরফে আর হিন্দি-সংস্কৃত লেখা হয় নাগরিতে। সিলেটে একসময় নাগরি লিপিতে সমৃদ্ধ সাহিত্য ছিল। সেক্ষেত্রে বাংলা(বাঙলা, বাঙালা, বাঙ্গালা) ভাষার নিজস্ব লিপি থাকায়, এর মর্যাদা ও গৌরব অন্যদের থেকে বেশি। বাংলা ফন্ট ক্রমান্বয়ে দৃষ্টি নন্দন করতে এর অবয়বে পরিবর্তন করা হয়েছে। ১৭৭৮ ইসায়িতে হ্যালহেডের বাঙ্গালা ব্যকরণ ছাপার মাধ্যমে বাঙ্গালা হরফে ছাপার প্রযুক্তি হুগলি থেকে শুরু হয়। ছাপার প্রযুক্তির আগে বঙ্গে ও বাঙালাদেশে হাতে বই লেখা হত। সে ক্ষেত্রে বঙ্গের তুলনায় বাঙালাদেশের লেখকদের ফন্ট ও শৈলি উৎকৃষ্ট মানের ছিল।
ঢাবি’র পুথিশালায় রক্ষিত আরবি হরফে বাংলা ভাষার তেত্রিশটি পুথির কথা জানা যায়। এর অধিকাংশের লিপিকালের হদিস নেই। তবে গবেষকরা বলছেন, এগুলো ১৮ শতকের আগে লেখা। এগুলি সৈয়দ সুলতানসহ অপরাপর মুসলিম লেখকদের রচিত। বাঙলা ভাষার পুথি আরবি হরফে কেন লেখা হল? ইতিহাসে দেখা যায়, সুলতানি আমলে(১২০৪-১৫২৬ ইসায়ি) প্রাপ্ত প্রায় সব শিলালিপি বিশুদ্ধ আরবি ভাষা ও উৎকৃষ্ট আরবি ক্যালিগ্রাফিতে করা হয়েছে। সুতরাং সাধারনের কাছে আরবি ভাষা সহজপাঠ্য ও গ্রহনীয় ছিল। এই তেত্রিশটি পুথির প্রায় সবক’টি ধর্মীয় বিষয়ে লেখা। জনগণের চাহিদা মোতাবেক এবং পাঠের সুবিধার্থে এগুলো আরবি হরফে লেখা হয়েছে বলে গবেষকদের ধারণা।
বাঙলা পুথির লিপির চরিত্র-বৈশিষ্ট্য ও শৈলি নিয়ে বেশ মজার তথ্য পাওয়া যায়। টানা হাতের লেখায় বিশেষ করে তাল পাতায় লেখা পুথিতে শব্দের পর শব্দে কোন ফাক রাখা হত না এক শব্দের শেষ হরফের মাত্রা পরের শব্দের সাথে মিলে যেত। ল ও ন প্রায় একই রকম হত। ই-কার এ-কারের মত হত। ঈ-কারের উড়ানি এবং ঋ-কারের উড়ানি লম্বা এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দেখা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে ১৪ শতকের কোন পুথির লেখার শৈলির মান ১৮শতকের থেকে উৎকৃষ্ট ছিল। আসলে পুথি লেখক অর্থাৎ পুথির কপি লেখক শিল্প মনোভাবাপন্ন হলে তার লেখা হত উৎকৃষ্ট।
এখন চারুকলায় বিশেষ করে প্রাচ্যকলায় বাংলায় যে ক্যালিগ্রাফি চিত্রকর্ম করা হচ্ছে, সেগুলো রেখা প্রধান এবং ছবির অনুসঙ্গ ও ভাবের সাথে মিল রেখে। তা ছবি হল কি না, সেটাই মূল কথা। ট্রেডিশনাল ক্যালিগ্রাফি চর্চা এখানে গণ্য নয়। তাহলে দেখা যেত কঞ্চি বা বাশের কলম দিয়ে বাংলা হরফ লেখা ও ক্যালিগ্রাফি করা হচ্ছে। আর সেটা একটা নির্দিষ্ট নিয়ম কানুনের ব্যাপারও বটে। কারন আরবি হরফ ডান থেকে বামে লেখা হয়, সেজন্য এর কলমের মাথার স্ট্রোক ডান দিকে ৪৫ ডিগ্রি কোন বরাবর থাকে, অন্যদিকে বাংলা বাম দিক থেকে ডান দিকে লেখা হয় বলে এটার কলমের মাথার স্ট্রোক বাম দিকে ৪৫ ডিগ্রি কোন বরাবর থাকে।
আমরা বাংলা ক্যালিগ্রাফিতে উন্নতি করতে চাইলে প্রাচীন পুথির লেখন বৈশিষ্ট্যকে আয়ত্ব ও যাচাই করতে হবে। আরবি হরফের বৈশিষ্ট্য বাংলা হরফে প্রয়োগ করার চেষ্টা হবে আত্মঘাতি ও কাকের ময়ুরপুচ্ছ ধারণের মত নিঃষ্ফল প্রয়াস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.