নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ম্যায়াও একটি নিস্পাপ শব্দ

ম্যাঅ্যাও. একটি নিষ্পাপ শব্দ

ক্যাটম্যান

আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তিত। ঐ বিষয়ে লেখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে সত্যকে সত্য বলার একটা চেষ্টাও করি। কারো ভাল না লাগলে কিছু করার নাই।

ক্যাটম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

চর্যাপদ ও দেড়শ বছরের অন্ধকার

২০ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯



বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন ধরা হয় চর্যাপদকে। বইটির নাম বেশ রহস্যময়। কেউ একে "চর্যাচর্যবিনিশ্চয়" বলে থাকে। বইটির কথা ২০ শতকের গোঁড়ার দিকেও কেউ জানত না। বইটির সন্ধান মিলে ১৯০৭ সালে।

চর্যাপদ শব্দের অর্থ জীবন যাপনের পদ্ধতি যে কবিতা বা চরনে লিখা থাকে। জীবন যাপনের পদ্ধতিকে চর্যা বলে।‘চর্যা’ থেকে বর্তমানে ‘চর্চা’ শব্দটির উৎপত্তি।‘পদ’ অর্থ চরণ বা পা।‘



বাংলায় মুসলমান আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবার আগে ব্রাহ্মণ্য হিন্দুসমাজের পীড়নে এবং মুসলমান শাসনে ধর্মচ্যুত হবার আশংকায় বাংলার বৌদ্ধগণ তাঁদের ধর্মীয় পুঁথিপত্র নিয়ে শিষ্যদেরকে সঙ্গী করে নেপাল, ভুটান ও তিব্বতে পলায়ন করেছিলেন– এই ধারণার বশবর্তী হয়ে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চারবার নেপাল পরিভ্রমণ করেন। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয়বার নেপাল ভ্রমণকালে চর্যাচর্যবিনিশ্চয় নামক একটি পুঁথি নেপাল রাজদরবারের অভিলিপিশালায় আবিষ্কার করেন।



চর্যাপদ নিয়ে অনেক বিতর্ক। ১৯১৬ সালে 'হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষার বৌদ্ধ গান ও দোহা' নামে একটি বই প্রকাশ করেন পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। যার মধ্যে এই বইয়ের কথা উল্লেখ ছিল। বইটি প্রকাশ করার মত তুমুল আলোচনা হয়। বাঙালি পণ্ডিতরা দাবি করে এটি বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন, অন্যদিকে অসমিয় পণ্ডিতরা দাবি করে একে অসমিয় ভাষার বলে, উড়িয়া পণ্ডিতরা দাবি করেন এটা তাদের ভাষার, বাদ পড়েনি মৈথিলী, হিন্দিও। তখন এগিয়ে আসেন বাংলার সেরা পণ্ডিতরা। ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ১৯২৬ সালে ইংরেজিতে একটি ভয়াবহ বিশাল বই লিখেন " বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ" নামে আর প্রমান করেন "চর্যাপদ" বাংলার অধিকার। তাছাড়া ডক্টর প্রবোধচন্দ্র বাগচি, ডক্টর মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, ডক্টর সুকুমার রায়, ডক্টর শশিভূষণ দাশগুপ্ত আলোচনা করে প্রমান করেন চর্যাপদের উৎস। চর্যাপদ জলে উঠে বাংলা বাসার প্রদীপের মত।



চর্যাপদের কবিতা আছে মত সাড়ে ৪৬ টি ( পূর্ণ ৪৬টি, আর একটি ছেঁড়া খণ্ডিত কবিতা ), কবিতাগুলো লিখেছে ২৪ জন বৌদ্ধ বাউল কবি। যাদের ছিল না ঘরবাড়ি, তারা ছিলেন সমাজের নিচুতলার অধিবাসি। তারা জানুক না জানুক এখন তাদের গণ্য করা হয় বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবিকুল হিসেবে। কবিদের মধ্যে কাহ্নপাদ সবচেয়ে বেশি কবিতা লিখেছেন। তার অপর নাম কৃষ্ণাচার্জ। তার লেখা কবিতা পাওয়া যায় ১২টি। তাছাড়া আছেন লুইপাদ, শরহপাদ,চাতিল্লপাদ, ডোম্বিপাদ, শরবপাদ, শান্তিপাদ, লুইপাদ, কুক্কুরিপাদ।



চর্যাপদের সবগুলো কবিতা ছন্দে রচিত, পঙ্কির শেষে আছে মিল। এগুলো আসলে গান। তাই কবিরা প্রতিটি কবিতার শুরুতে কোন সুরে কবিতাটি গাওয়া হবে তার উল্লেখ করেছেন।



চর্যাপদ ৯৫০ থেকে ১২০০ অব্দের মধ্যে রচিত হয়েছিল। এর পর ১২০০ থেকে ১৩৫০ সালের মাঝে পাওয়া যায়নি কোন সাহিত্যের নিদর্শন। অনেকে বলে থাকেন শূণ্যপুরাণ - রামাই পন্ডিত রচিত ধর্ম পূজার শাস্ত্রগ্রন্থ ও -শেফশুভদয়া- রাজা লক্ষণ সেনের সভাকবি হলায়ুধ মিশ্র কর্তৃক রচিত এ সময়ের সাহিত্য। তবুই সাহিত্যের বিবর্তনের ধারায় এ সময়টাকে সাহিত্যের অন্ধকার যুগ বলা হয়।



১২০৭ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি লক্ষন সেনকে পরাজিত করে বাংলার সিংহাসনে বসেন। অনেকে মনে করেন নতুন যুগের শাসকরা এত অত্যাচারী ছিল যে কারো মনে সাহিত্য রচনার কথা জাগেনি। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কেননা ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি মুসলিমরা আমাদের দেশের সাহিত্যের বেশ উৎসাহ দিয়েছে। যারা প্রথমে সাহিত্যকে দমিয়ে রেখেছে তারা তো পরবর্তীতে সাহিত্যকে উৎসাহ দিবে এটা তো হতে পারে না। আসলে এই সময়ের মানুষ সাহিত্য চর্চা করত তা ছিল মুলত মুখে মুখে গাওয়া গান, পুথি লিখে রাখার জন্য ছিল না ছাপাখানা।

তাহলে প্রশ্ন জাগবে চর্যাপদ তাহলে লিখা অবস্থায় পাওয়া গেল কিভাবে? আসলে সেটা পাওয়া গিয়েছে নেপালে। নেপালের ভাষা বাংলা না, তখন বাংলা ভাষাকে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন হয়েছিল একে বর্ণমালায় লিখে রাখা।



হুমায়ুন আজাদ তার " লাল নীল দিপাবলি" বইতে যদিও বলেছেন যে এই সময় আসলে কিছুই নাই। আসলে মূল কথা হচ্ছে সেই সময়ে এই সাহিত্য দুটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে শূণ্যপুরাণ ও শেফশুভদয়া এর সন্ধান পাওয়ার পর ১২০০ থেকে ১৩৫০ কে অন্ধকারযুগ বলা আসলে যুক্তিযুক্ত নয়। এখন আমরা ৯৫০ থেকে ১৩৫০ সাল সময়কে প্রাচীন যুগ হিসেবে বলতে পারি।



উৎসঃ

১- লাল নীল দিপাবলি- হুমায়ুন আজাদ

২- চর্যাগীতিকা‌‌: মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা, ষষ্ঠ সংস্করণ

৩- বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, প্রথম খণ্ড, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়,

৪- চর্যাগীতি-পদাবলী, সুকুমার সেন,

৫- বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, প্রথম খণ্ড, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫২

বিবর্ণ সময় বলেছেন: ভাল লাগলো পড়ে

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:০৪

ক্যাটম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২০ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৪

মাহমুদুর রাহমান বলেছেন: গভীর জ্ঞানের কথা :) +

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:০৫

ক্যাটম্যান বলেছেন: :-B

৩| ২০ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯

সোহাগ সকাল বলেছেন: অনেক কষ্টসাধ্য লেখা। ভালো লাগলো অনেক। শুভ কামনা রইলো।

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:০৬

ক্যাটম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:০২

আলাপচারী বলেছেন: পুরোটা পড়া হয় নাই। যে টুকু পড়েছি দারুণ। চালিয়ে যান।

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:০৭

ক্যাটম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ। চেষ্টা করবো

৫| ২১ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:১৩

সাঢাবক বলেছেন: জ্ঞানের কথ....

৬| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৩

শাহীদুল বলেছেন: ভাল লাগলো গুরুত্বপূর্ন তথ্য জানতে পেরে। ধন্যবাদ

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৩

ক্যাটম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.