নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আশা রাখো পৃথিবীর যতো অসম্ভবে

দীপংকর চন্দ

হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরেতুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!

দীপংকর চন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাও ফরমান আলী খানের মিথ্যাচার

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:১৬



আজ একটি ভিন্নধর্মী গল্পের অবতারণা করব আমরা। প্রবৃত্ত হব এক মিথ্যাচারের কাহিনীর কিয়দংশ বর্ণনায়। সুপরিকল্পিত এই মিথ্যাচারের প্রণেতা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট নামের সামরিক অভিযান বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই পাকিস্তানি জেনারেল যুদ্ধে পরাজিত হবার পর দেশে ফিরে যান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজেদের ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের সমর্থনে মিথ্যাচারে পূর্ণ একটি গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থের নাম How Pakistan got divided



সেই গ্রন্থে রাও ফরমান আলী খান ২৫ মার্চ সম্পর্কে বলেন, “ঢাকা নগরীতে সেদিন পরিলক্ষিত হয় উত্তেজিত তৎপরতা। ...স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপের একটি প্লাটুন রাত ১টা ৩০ মিনিটে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে তাঁর বাসভবন থেকে। ...রাত দুটোয় বন্ধ করে দেয়া হয় টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলো। পিলখানায় রাত ২টা ৩০ মিনিটে ইপিআরকে নিরস্ত্র করা হয়, তারা গ্রহণ করেছিল সামান্য প্রতিরোধ প্রচেষ্টা। রিজার্ভ পুলিশ, যারা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তাদেরকে নিরস্ত্র করা হয় রাত তিনটার দিকে। ...ভোর পাঁচটার মধ্যে দখল করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকা। ইকবাল হল ও জগন্নাথ হলের ছাত্ররা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এদের মধ্যে ভয়াবহ ছিল জগন্নাথ হলের প্রতিরোধ। ...শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতার অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল তখন, এমনকি পুলিশও সেখানে যেতে পারত না। ধ্বংসাত্মক তৎপরতার জন্য নিরাপদ স্বর্গ ছিল এটি। ৭ মার্চের পর বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলো রূপান্তরিত হয়েছিল গেরিলা প্রশিক্ষণ শিবিরে। সেখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কৌশল, কাঁটাতার জড়ানো ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ পদ্ধতির বিকাশ ঘটানো হতো। ছাত্র-স্বেচ্ছাসেবক নির্বিশেষে সকলকেই দেয়া হতো প্রশিক্ষণ। জগন্নাথ হল, যেখানে হিন্দু ছাত্ররা বসবাস করত, ছিল পাকিস্তানবিরোধী তৎপরতার জন্য সবচেয়ে কুখ্যাত। এই হলটিই মারাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। কোন কোন লোক বলে, সেনাবাহিনী ছাত্রদের হত্যা করেছিল। কিন্তু একথাও একজনের জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘একজন ছাত্র কখন আর ছাত্র থাকে না’, তখনই একজন ছাত্র আর ছাত্র থাকে না, যখন সে অস্ত্র বহন করে- পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অভিযোগ থেকে দায়মুক্ত করার জন্য এই উত্তরটিই যথেষ্ট।”

কী নির্লজ্জ মিথ্যাচার!
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত আয়োজন অপারেশন সার্চলাইট নামের পাপ চাপা দেবার কী বিকারহীন চেষ্টা!
আসলে সেদিন শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করার পরপরই ২২ বালুচ রেজিমেন্ট পিলখানায় নির্মম অভিযান চালায় এবং বেতার কেন্দ্র দখল করে। পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট নির্বিচারে হত্যা করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের বাঙালি পুলিশদের। ১৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট আঘাত হানে নবাবপুর এবং পুরোনো ঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলে। অন্যদিকে ১৮ পাঞ্জাব, ২২ বালুচ এবং ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সমন্বয়ে গঠিত একটি সেনাদল ট্যাংক, মর্টার, মেশিনগান নিয়ে বিনা উস্কানিতে আক্রমন চালায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। জগন্নাথ হলের দেয়াল ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে তারা। বিরামহীন গুলি বর্ষণের সাথে সাথে আত্মসমর্পণ করে বাইরে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দেয় ছাত্রদের। জগন্নাথ হলের অভ্যন্তরে শুরু হয় নারকীয় কাণ্ড। উত্তর ও দক্ষিণ বাড়ির প্রতিটি কক্ষ অনুসন্ধান করে ছাত্রদের নির্বিচারে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। পশ্চিম দিকের টিনশেড, ক্যান্টিন ও ক্যান্টিন সংলগ্ন ছাত্রাবাসে ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন। আক্রান্ত হয় জগন্নাথ হলের প্রাক্তন প্রাধ্যক্ষ ডঃ গোবিন্দ চন্দ্র দেবের বাসভবন। পাকিস্তানি সৈন্যরা কালবিলম্ব না করে হত্যা করে অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব এবং তাঁর পালিত কন্যা রোকেয়ার স্বামীকে। আক্রমনের শিকার হয় জগন্নাথ হল সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্টাফ কোয়ার্টার, যেখানে পুত্র ও আত্মীয়সহ নিহত হন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান। মারাত্মকভাবে আহত হন জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, যিনি পরবর্তীতে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। পাকিস্তানি সেনারা মধুসূদন দে’র বাসগৃহও আক্রমণ করে। হত্যা করে মধুসূদন দেসহ তাঁর পুত্র, পুত্রবধূ এবং স্ত্রী যোগমায়াকে।

প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তান সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই হিন্দু জনগোষ্ঠীকে ভারতের দালাল এবং পাকিস্তানের শত্রু হিসেবে গন্য করতেন পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের প্রায় সকলেই। ফলে ২৫ মার্চ রাতেই শুধু নয়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পুরো সময়ই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচারের স্বীকার হন হিন্দু জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। তবে জাজ্জ্বল্যমান সত্য এই যে, হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা তুলনামূলক বেশী হলেও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালি জাতিসত্তার প্রাণসংহারই ছিল রাও ফরমান আলী খানের মতো পাকিস্তানি জেনারেলদের অন্তিম লক্ষ্য।
এই প্রসঙ্গে জেনারেল নিয়াজী তার প্রণীত The betrayal of East Pakistan গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের শ্যামল মাটি লাল করে দেওয়া। আর সে মাটি লাল করে দেওয়া হয়েছিল, এবং সেটা করা হয়েছিল বাঙালির রক্ত দিয়েই।




ছবি: সংগৃহীত



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৩৯

শামছুল ইসলাম বলেছেন: সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকার অপপ্রয়াস।
এবং তা কখনোই সফল হয়নি।

ভাল থাকুন। সবসময়।

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৩১

দীপংকর চন্দ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।

কৃতজ্ঞতা উপস্থিতিতে। অনেক।

আমার শুভকামনা অনিঃশেষ জানবেন।

ভালো থাকবেন। অনেক। সবসময়।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৩৩

নীলপরি বলেছেন: ভালো লিখেছেন । এতো নিষ্ঠুর ইংরেজরাও বোধহয় ছিল না ।

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৪০

দীপংকর চন্দ বলেছেন: কালের তল ভিন্নতায় নিষ্ঠুরতার মাত্রা নিরুপন করা অসাধ্যপ্রায় সম্ভবত!

অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা উপস্থিতিতে কবি।

আমার শুভকামনা থাকছে। অনিঃশেষ।

ভালো থাকবেন। সবসময়। অনেক।

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: চিরস্থায়ী অভিশাপ নেমে আসুক ফাকিস্তানের বুকে।

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪২

দীপংকর চন্দ বলেছেন: আমরা সাধ্যমতো আমাদের কথা বলে যাবো প্রিয় কথাসাহিত্যিক।

কারো না কারো হৃদয়ে তো নাড়া দেবেই কথাগুলো একদিন। তাই না?

কৃতজ্ঞতা জানবেন উপস্থিতিতে।

এবং জানবেন শুভকামনা। অনিঃশেষ।

ভালো থাকবেন। সবসময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.