নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃষ্টি আসুক কচুপাতায় ধূসর স্ফটিক হয়ে

ছায়াবিথী

রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।

ছায়াবিথী › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাক্ষসী তারা এলগল

২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৯

মধ্যযুগীয় আর রেনেসাঁ পরবর্তী ইউরোপ এবং আরবজুড়ে জ্যোতিষ শাস্ত্রের সাথে সম্পর্কিত মন্ত্রপূত তাবিজ কবজ আর যাদুবিদ্যায় ব্যাবহৃত পনেরটি স্থির নক্ষত্রের মাঝে এলগল (Algol) বা ডেমন স্টার ছিল অন্যতম। এই নক্ষত্রটি বেশি পরিচিত সর্পমস্তক গ্রিক দেবী মেডুসার সাথে এর পৌরনিক সংযোগের কারনে তবে এলগল নামটা এসেছে আরব থেকে যার অর্থ শয়তানের মস্তক।বলা হয়ে থাকে আকাশে এর অনিশ্চিত আচার আচরনের সাথে ভয়ংকর মেডুসার অনেক মিল আছে। জোত্যির্বিদ টলেমি সর্বপ্রথম দ্বিতীয় শতাব্দীতে একে পারসিয়াসের দানব বলে নথিভুক্ত করেন সে সময় থেকেই শিল্প সাহিত্যে এই নক্ষত্র শিরচ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুর প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
গ্রিক পুরান অনুযায়ী মেডুসা ছিল এথেনার মন্দিরের লাস্যময়ী বিচক্ষণ কুমারী পরিচারিকা।সে বিখ্যাত ছিল তার অপূর্ব সুন্দর কেশরাজির জন্য।কামনার বশবর্তী হয়ে পসাইডন তার সাথে জোর করে মিলিত হয়।পবিত্র মন্দির অপবিত্র করায় এথেনার অভিশাপে মেডুসা ভয়ংকর সর্পমাথা দানবীতে পরিনত হয় যার চোখের দৃষ্টি সবাইকে পাথর বানিয়ে দিত।মেডুসাকে বধ করতে পারসিয়াস্ কে পাঠানো হয়।পারসিয়াস আয়নার সাহায্য নিয়ে মেডুসার মাথে কেটে ফেলে।যখন পারসিয়াস মেডুসার মাথা কেটে ফেলল তখন তার শরীর থেকে পাখাওয়ালা ঘোড়া পেগাসাস আর সোনার তরবারিসহ দানব ক্রাইসর বের হয়ে আসে।আর মেডুসার মাথা থেকে যে রক্ত ঝরেছিল তা থেকে দানবীয় সরিসৃপ এম্ফিবেনার জন্ম হয় যার দেহের দুইপ্রান্তে ছিল দুটো মুখ।এম্ফিবেনাকে মনে করা হয় দ্বৈতবাদ,অনৈক্য আর অনিশ্চয়তার প্রতীক কারন এম্ফিবেনো তার দুইমুখের যে কোন দিক থেকেই আক্রমণ করতে পারতো।পারসিয়াস কিছুদিন মেডুসার মাথাকে নিজের শত্রুদের প্রস্তুরিভুত করতে ব্যাবহার করে, পরে তা দেবী এথেনা কে দিয়ে দেয়।এথেনা এটা নিজের ঢালে লাগিয়ে রাখে।বর্তমানে নারীবাদ এবং সাইকোলজিক্যাল সংঘগুলোতে মেডুসার এই ভয়াল ছিন্নমস্তক উগ্র ক্রোধের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
ঐতিহাসিক ভাবে বিভিন্ন সভ্যতায় এলগলকে ভায়োলেন্সের প্রতীক ভাবা হত।হিব্রুতে তিন তারার যে ধারনা আছে যার মধ্যে দুটা আবার একে অন্যকে ঘিরে ঘুরপাক খাচ্ছে তার নাম “রশ হা স্যাটান “ বা শয়তানের মাথা। আরবিতে বলা হয় “রাস আল ঘুল” মানে শয়তান মস্তক। চীনে একে ডাকা সমাধিস্তম্ভের পঞ্চম নক্ষত্র নামে। জ্যোতিষশাস্ত্রে এলগলকে অমঙ্গলজনক দুষ্টগ্রহ মনে করা হয়। রেনেসাঁর প্রাথমিকযুগে যাদুবিদ্যা আর জ্যোতিষশাস্ত্রে এলগলকে পনেরটা বেহেনিয়ান তারার একটা হিসেবে অনর্ভুক্ত করা হয়।এই বেহেনিয়ান স্থির তারাগুলো ছিল মন্ত্রপূত তাবিজকবজের সংক্রান্ত যাদুবিদ্যার প্রতীক। এই বেহেনিয়ান শব্দটা এসেছে আরবি “বাহমান” থেকে যার অর্থ “শিকড় বা মূল“।মনে করা হয় এই স্থির তারাগুলো যখন অন্য এক বা একাধিক গ্রহের সাথে একই কক্ষপথে চলে আসে তখন বিশেষ শক্তির আধার হিসেবে কাজ করে।প্রতিটা নক্ষত্রের জন্য নির্দিষ্ট আছে আলাদা আলাদা গাছ আর রত্নপাথর।স্থির নক্ষত্রগুলো কোন বিশেষ গ্রহের সাথে নির্দিষ্ট অবস্থানে আসলে বিশেষ রত্নপাথর এবং গাছ মিলিয়ে যাদুবিদ্যার আচার পালন করে নক্ষত্রের বিশেষ প্রভাবকে কবজের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব। যখন কোন গ্রহ কোন স্থির নক্ষত্রের সাথে ছয় ডিগ্রী কোনে অবস্থান করে তখন ওই নক্ষত্র বিশেষ ক্ষমতা প্রাপ্ত হয় এবং সেটাই যাদুর আচার পালনের মোক্ষম সময়।ষোড়শ শতকে যাদুকর ও জ্যোতির্বিদ কর্নেলিয়াস এগ্রিপ্পা তার বিখ্যাত বই অকাল্ট ফিলোসফিতে এই পনেরটা স্থির নক্ষত্রের যাদুকরী ক্ষমতা এবং গুপ্ত সংকেতের ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা দেন।তিনি পনেরটা নক্ষত্রের নাম,যাদুর আচার পালনের সুবিধা জনক সময় এবং তার সাথে দরকারি সব গাছ ও রত্নের নাম এবং গ্রহনক্ষত্রের আপেক্ষিক অবস্থানের বিস্তারিত বিবরণ দেন।যদিও এসব যাদুর মূল উৎপত্তিস্থলের ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে কিছু জানা যায় না তবে বিশ শতকের বিশিষ্ট ইজিপ্টোলজিষ্ট স্যার ওয়ালিস বাজের মতে প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতা থেকে এই যাদুবিদ্যা এসেছে।
চাঁদের সাথে যখন স্থির নক্ষত্রপুঞ্জের সংযোগ ঘটে শয়তানকে ডাকার সেটাই উপযুক্ত সময়। এসময় শয়তান অশুভ শক্তি হিসাবে নয় বরং প্রাকৃতিক শক্তি হিসাবেই বিরাজ করে।এমনকি তখন মৃত ব্যাক্তির আত্মার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব প্রাচীন কাল থেকে দুর্ভাগ্যের প্রতীক এই এলগল প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার যাদুতে ব্যাবহৃত হয়ে আসছে।এই যাদুর জন্য আপনার শুধু লাগবে ঠিকঠাক রত্ন আর গাছের নির্যাস আর সেই সাথে নক্ষত্রের সাথে সম্পর্কিত বিশেষ ধাতুর তৈরি আংটি যেটার সাথে পাথরটা বাধতে হবে।এরপর যাদুকর গাছের নির্যাস আংটির সাথে রেখে বর্ণনানুযায়ী মন্ত্র আর গুপ্ত সংকেত যোগ করবে।যেমন এলগলের যাদুকে কাজে লাগাতে হলে আপনাকে কালো গোলাপের নির্যাসের সাথে সমপরিমাণ সোমরস মিশিয়ে একটা হীরকখন্ডের নিচে রাখতে হবে।
প্রাচীন জ্যোতির্বিদরা অন্যান্য নক্ষত্রের মাঝে উজ্জ্বলভাবে জ্বলছে আবার দপ করে উজ্জ্বলতা কমে যাচ্ছে এমন অদ্ভুত একটা তারা দেখতে পেত।এতে অবাক হবার কিছু নেই যে সবার চেয়ে আলাদা হবার কারনেই এলগলকে নক্ষত্রমণ্ডলের সবচেয়ে বিপদজনক ও অশুভ তারা মনে করা হত।যা কিছু অনিশ্চিত, আস্বাভাবিক আর অসম, প্রাচীন কালে তাই ছিল যত কুসংস্কার আর ভয়ের উৎস। বর্তমানযুগে এলগল পরিবর্তনশীল নক্ষত্র হিসেবেই পরিচিত যার উজ্জ্বলতা ঘড়ির কাটা ধরে বাড়ে কমে। এলগলের একটা পূর্ন আবর্তন সম্পন্ন হতে সময় লাগে দুই দিন বিশ ঘন্টা ঊনপঞ্চাশ মিনিট যার পুরোটাই খালিচোখে দেখা যায়।এর কারন এলগল আসলে আবর্তনকারি দ্বৈত নক্ষত্র। অন্যভাবে বলা যায় এলগল আসলে একটা না দুইটা নক্ষত্র যারা একে অপরকে ঘিরে নিয়মিত ঘুরে চলেছে।এই দুই নক্ষত্রের মাঝে দূরত্ব এতই কম যে তাদেরকে টেলিস্কোপে আলাদাভাবে দেখা যায় না। পৃথিবী থেকে আমরা প্রায় কোনাকুনি এই দ্বৈত নক্ষত্রের অক্ষরেখা দেখতে পাই। তাই যখন ম্লান তারাটা উজ্জ্বল তারার সামনে চলে আসে তখন আমরা এলগলকে ম্লান দেখি।দর্শকের কাছে তখন মনে হয় কোন দানব চোখ পিটপিট করছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.