নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এসো আমার সঙ্গে তুমিও কাঁদো

গ্রন্থ্কীট চয়ন

আমি নিজেই পৃথিবীতে আনতে পারি অনাবিল শান্তির আকাশ। যদি আমি নিজে শান্ত হই। আমাকে নিয়েই পৃথিবী। আমার চোখেই পৃথিবীর সৌন্দর্য। তাহলে সুন্দর হব না কেন? সাহিত্যে ডুবে যেতে ভাল লাগে। মাঝে মাঝে ডুবে যাই, মাঝে মাঝে লিখি।

গ্রন্থ্কীট চয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাকের সেকাল - একাল

১৯ শে মে, ২০২৩ রাত ১১:৪০




কাক, ঘন কালো লোমের একটা পাখি যার নাম শোনে নি বা চেনে না এমন কেউ নাই। কাকের সেকাল একাল নিয়ে আজকের এই লেখা -

আমাদের বাড়ি নদীর পাশেই। বাড়ির উঠান থেকে নদী দেখা যায়। নদীর পাশে বাড়ি হওয়াতে ছোটোবেলায় আমি অন্য সব পাখি চেনার আগে, কাক পাখিটাকে সবার আগে চিনে ফেলি। কারন কাকদের বাসা ছিল নদীর কিনারে বেড়ে ওঠা বড় বড় গাছে। সকালে ঘুম ভাঙতো কাকদের কর্কষ কা কা কা ডাক শুনে। কালো কুচকুচে দেখতে কাকদের দুটা ভাগ ছিল। দাড় কাক আর পাঁতি কাক। দাঁড় কাক সচরাচর দেখা যেত না। যখন দেখা যেতো তখন আমরা চিল্লায় বলতাম মা মা দাড়কাক এসেছে, দাড় কাক এসেছে। পাঁতি কাক ছিল সবার পরিচিত। তারা সব সময় বাড়ির চালে, গাছের ডালে, উঠানে থাকতো।

শীতের সকালে যখন উঠানে খেতে বসতাম তখন গাছের ডালে কাক ডাকতো কা কা কা কা শব্দে মনে হতো কয়েকটা ভাতের জন্য তাদের এই আর্তনাদ। কখনো কখনো কয়েকটা কাক উঠানে নেমে চলে আসতো থালার কাছে। তখন হাতের ইশারায় গুলতি বানিয়ে দেখালে তারা উড়ে গিয়ে আবার গাছের ডালে বসে সরব সুরে কা কা করতো।
গ্রামে ধান সিদ্ধ করে উটানে রোদে শুকাতে দেয়া হতো। আমার হাতে একটা লম্বা পাঠখড়ি দিয়ে মা উঠানে বসিয়ে রাখতো যাতে কাক এসে ধান খেয়ে না যায়। আমি পাটখড়ি হাতে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখতাম কাকের দিকে যে লম্বা ঠোঁটে কাক কেমন করে ধান খায় আর ঠোঁঠে ধান ভরে নিয়ে উড়ে চলে যায়।

আমার মা অনেক হাঁস মুরগি পালন করতো পর্যায়ক্রমে তাদের ডিম থেকে বাচ্চা হতো। তখন হাঁসের এবং মুরগীর বাচ্চার সব থেকে বড় শত্রু ছিল কাক। বাচ্চা গুলো দলছুট হলেই কাক দলবেঁধে একটা দুটা করে বাচ্চা তুলে নিয়ে উড়ে চলে যেত গাছের ডালে কখনো কখনো নদীর ওপারে। কাকের হাত থেকে নিরীহ বাচ্চাদের রক্ষা করার জন্য মা ব্যবহার করতো আঙ্কুরা নামক বাঁশের তৈরী খাঁচা।

কখনো কখনো কাক দল বেঁধে কা কা ডাকে সবার মাথা খারাপ করে দিতো। তখন ঠাকুমা বলতো হয়তো কাক কোনো বিপদের আঁচ পেয়েচে তাই ওরকম ডাকছে। মাঝে মাঝে সত্যি কাকের ডাক শুনে বিপদের কথা আঁচ করতে পারা ঠাকুমার কথা সত্যি হতো। আবার কখনো দু একটা কাক করুন সুরে কাআআআআআ, কাআআআআ, কাআআআ বলে ডাকতো। সেই ডাক এতোটাই করুন সুরের ঠাকুমা শুনে বলতো কাক হয়তো কারো মৃত্যু সংবাদ নিয়ে এসেছে, এবং একথা সত্যও হতো মাঝে মাঝে। কাকের এরকম করুন সুরে ডাকার কয়েকদিন পর শুনতাম গ্রামের অমুক লোক মারা গেছে।

সে সময় গ্রামের গরু, ছাগল মারা গেলে মাটি চাপা না দিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হতো। ফেলা দেয়া গরুর, ছাগলের চামড়া ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য মুচিরা নদীর পাশ দিয়ে ঘোরা ঘুরি করতো। নদীতে ভাসমান গরু, ছাগল দেখলেই তারা নদীতে ঝাপিয়ে তা টেনে কূলে নিয়ে আসতো এবং যত্ন সহকারে চামড়া ছাড়িয়ে আবার সেটা ভাসিয়ে দিতো। চামড়া ছাড়ানো মরা গরুর উপর তখন কাকের রাজত্ব শুরু হতো। ঝাঁক বেঁধে কাক মরা গরুর উপর বসে মাংশ ঠুকরে ঠুকরে খেতো। মরা গরু স্রোতে ভাসতে ভাসতে সামনে যেতো আর কাক তার মাংশ মুখে নিয়ে উড়ে গাছের ডালে এসে বসতো। একটা দুটা কাক আগে গাছের ডালে বসে ডাকা ডাকি করতো। তখন আমরা বুঝতাম নদী দিয়ে এখন কোনো মরা গরু, ছাগল ভেসে আসবে।

গ্রামে একটা প্রবাদ আছে - ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না। কিন্তু বর্তমানে গ্রামে আপনি গামলা গামলা ভাত ছড়ালেও একটা কাক আপনার ভাত খেতে আসবে না৷ কারন গ্রাম থেকে কাক প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তখন গ্রামে ভাতের অভাব ছিল, কাকের অভাব ছিল না। এখন গ্রামে হয়তো ভাতের অভাব নাই কিন্তু কাকের অভাব আছে।

আজ খুলনা বিএল কলেজে এসে এক ঝাঁক কাকের পানিতে স্নান করা দেখে কাক নিয়ে অতীতের কথা মনে পড়ে গেলো। গ্রামে কাক স্নান করতো নদীর কূলে। জোয়ারে যখন পানি কানায় কানায় পূর্ণ হতো কাক তখন স্নান করতো।
আজ দীর্ঘ বছর যাবত গ্রামে কাক দেখি না, কাকের ডাক শুনি না। মাঝে মাঝে মনে হয়, কাক যে কা, কা, কা, শব্দে ডাকে সে শব্দ ও ভুলে গেছি।

ভাবতেই অবাক লাগে গ্রামের বাস করা কাক আজ শহরের বাসিন্দা। গ্রামের উচ্ছিষ্ট খাবারে চেয়ে শহরের উচ্ছিষ্ট খাবার উন্নতমানের তাই হয়তো কাকগুলো দেখতে সুন্দর, স্বাস্থ্যবান আর ডাকও সুরেলা। আসলে এটা হবারও কথা গ্রামের নদীতে এখন কেউ মরা গরু, ছাগল ফেলা না। কোনো উচ্ছিষ্ট খাবার কেউ ফেলে দেয় না বরং গবাদি পশুদের দেয়। খাবারে অভাবে গ্রামের কাক আজ শহরবাসী। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তাই কাক আজ গ্রাম ছেড়েছে। তারপরও কাকদের বলতে চাই- "হে কাক তুমি শহরের কোলাহল পরিবেশ ছেড়ে ফিরে এসো গ্রামের শান্ত নিবিড় পরিবেশে, আবার সরব করো পরিবেশ কা কা কা শব্দে"।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মে, ২০২৩ রাত ১১:৫২

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: কাকের কাকাগণ শহরবাসী হওয়ায় কাকেরাও শহরবাসী হয়েছে। কারণ কাকাদের সাথে কাকেদের সম্পর্ক অতি উত্তম।

২| ২০ শে মে, ২০২৩ দুপুর ২:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: হে কাক
কালো কাল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.