![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
না, আজ আর চিরাচরিত রাজনৈতিক কচকচানি নয়। এমন কি মানুষ সম্পর্কিত আলোচনাও নয়। আজ আলোচনা করবো মানবেতর এক প্রাণী কুকুর সম্পর্কে। অবশ্য এই প্রাণীটিকে ‘মানবেতর’ প্রাণী বলা ঠিক হবে কি-না, সে বিষয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ আছে! কারণ মানুষই এখন ইতরের ভূমিকায় অবতীর্ণ । মানুষ এখন মানুষকে কেবল নির্মমভাবে হত্যা করেই ক্ষান্ত হচ্ছেনা; তাকে টুকরো টুকরোও করছে। মাংষ থেকে চামরা আলাদা করে নিচ্ছে। কোনো কোনো মানুষ একজন নারীকে কেবল ধর্ষণই করছে না; ধর্ষণের পর তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করছে। একজন মানুষকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে তারপর সেই লাশ পায়ে দড়ি বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে রাখছে। সেই লাশের ছবি পত্রপত্রিকায় ছাপাও হচ্ছে। কোনো হিংস্র জানোয়ার আর কোনো জানোয়ারের প্রতি এতটা নির্মম হয় কি-না সন্দেহ। অথচ আমাদের দেশের মানুষই মানুষের সঙ্গে নির্মম আচরণ করছে।
শুধু আমাদের দেশের কথাই বা বলি কেনো, মিশর, তুরস্ক, ইরাকে যা ঘটছে, আফগানিস্তানে যা হচ্ছে, আসাম কিংবা আরকান্সে কিংবা ফিলিস্তিনে যুগ যুগ ধরে যা ঘটছে- সেগুলোও কি কম নির্মম? এসব দেশে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর যে বর্বর পৈশাচিক নির্যাতন চালাচ্ছে, এরপর কি মানুষকে সভ্য, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব বলা যায়? পশু কি কখনো পশুর ওপর এমন নির্যাতন চালায়? মানুষ মানুষের প্রতি যে আচরণ করছে, যে হিংস্রতা প্রদর্শন করছে, তাতে করে কোনো ইতর প্রাণীর সঙ্গে মানুষকে তুলনা করলে ওই প্রাণীটিকেই বরং অপমান করা হয়।
থাক সে সব কথা। মূল আলোচনায় ফিরে আসা যাক। আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কুকুর। কুকুর প্রাণীটি এক সময় বাঙালির খুবই আপনজন ছিলো। রাস্তাঘাট, ফুটপাত দখল করে থাকতো এ মহৎ জন্তুটি। এখন সমাজে ভিন্ন বিন্যাস। কুকুরের জন্য বরাদ্দকৃত আসন এখন দখল করে নিয়েছে টোকাই, ছিন্নমূল, হকার প্রমুখ মানব সন্তান। কুকুর এখন ধনীর ড্রইং রুমে আভিজাত্য [ওগুলো অবশ্য ঠিক কুকুর নয়, এদের পাপ্পি বা ডগ বলাটইি শ্রেয়। এদের সঙ্গে বাঙালিত্বের কোনো মিল নেই; ব্যাণ্ড সঙ্গীতের মতো এটাও পশ্চিমা ]। গলায় শিকল সারাক্ষণ ‘গার্ড অফ অনারের’ ব্যবস্থা, সর্বোপরি সাইনবোর্ডের ব্যবস্থা- বিওয়্যার অফ ডগ। কালের প্রবাহে খাঁটি বাঙালি কুকুরগুলোর (যাকে নেড়ি কুত্তা বলা হয়, অস্থি-চর্ম-হাড্ডিসার) আজ বড়ই আকাল! সেই অকারণে ঘেউ ঘেউ, লেজ নাড়ানো, সেই দল বেঁধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি অথবা কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকা আজ কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না!
কুকুর নিয়ে অনেকে অনেক কিছুই লিখেছেন। তবে এ বিষয়ে সবচেয়ে মর্মস্পর্শী কাহিনিটি লিখেছিলেন মহামহিম সৈয়দ মুজতবা আলী। তা বিখ্যাত ‘পণ্ডিত মশাই’ গল্পে লাট সাহেবের তিন ঠ্যাঙে কুকুরের সঙ্গে পণ্ডিত মশাইয়ের জীবনযাত্রা ও আর্থনীতির যে সাদৃশ্য তিনি দেখিয়েছিলেন, তা কখনো ভোলার নয়।
কুকুর নিয়ে আলোচনা, এ নিয়ে গল্প-গবেষণার কোনো শেষ নেই। লুই পাস্তুর নামে এক বিজ্ঞানী তো কুকুরের কামড় ও এর ফলে সৃষ্ট জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক আবিস্কার করতে নিয়ে জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় ব্যয় করেছেন। অপর এক রুশ বিজ্ঞানী পাভলভ কুকুর ও মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করে সারা জীবন পার করে দিয়েছেন। এই জন্তুটি আমাদের সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আপাত নিরীহ, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রানীটি মানুষের অনেক উপকার করলেও কেনো জানি বাঙালিরা গালি হিসেবেই একে বেশি প্রধান্য দিয়ে থাকে। পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব অথবা অন্য কোনো মহল থেকে জীবনে একবারও ‘কুত্তার বাচ্চা’ সন্বোধন শোনেনি-এমন অধম বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
তবে মানুষের মধ্যে কুকুরের প্রবণতাগুলোর অনেকগুলোই বর্তমান। হয়তো এ কারণেই মানুষের বাচ্চাকে আমরা কুকুর বা কুত্তার বাচ্চা বলি। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও তার এক বিখ্যাত কবিতায় লিকেছেন, ‘আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে’ (যদিও কবির এই অভিলাশের কোনো মানে খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা কারো পায়ের কাছে না বসেও খুব সহজেই অনেকের ভেতরের কুকুরটাকে দেখতে পাই। কেউ কেউ অবশ্য তার ভেতরের কুকুরটাকে লুকাতে চায়; অনেকে আবার বেপরোয়া তারা রাখ-ঢাকের পরোয়া করে না)।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও কুকুরকে উদাহরণ হিসেবে সামনে টেনে আনা হয়। যেমন আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে একটি গোষ্ঠী ‘দুই কুকুরে লড়াই’ বলে অভিহিত করেছিলেন। যারা এ কথা বলেছিলেন, তারা অবশ্য নিজেরাই কামড়া-কামড়ি করে কবরে পৌছে যেতে সক্ষম হয়েছেন! থাক সে সব কথা। কুকুরে বিষয়ে বরং একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা বর্ণনা করি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটি ভয়ঙ্কর ভীতু কুকুর ছিলো। আমরা আদর করে তাকে ‘বাঘা’ নামে ডাকতাম। ওর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট ছিলো। যখনই সে লেজ গুটিয়ে উসাইন বোল্টের গতিতে রান্নাঘরে অথবা শোবার ঘরের চৌকির তলে আশ্রয় নিতো, তখনই আমরা বুঝতাম বাড়িতে কেউ এসেছে। চোর, জামাই, মেহমান, ভিক্ষুক সবার ক্ষেত্রেই বাঘা একই রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতো। সেটা ছিল তার এক আজব বৈশিষ্ট্য!
অনেকে দৃষ্টান্ত হিসেবেও ইদানীং কুকুরকে ব্যবহার করে। একবার একটি ‘স্পোকেন ইংলিশ’ ক্লাসে বিদেশি ভাষা শিক্ষার সুফল সম্পর্কে মর্মান্তিক গল্প শুনেছিলাম। গল্পটি সংক্ষেপে উল্লেখ করা যাক : এক বাঙালি যুবক বিলেতে লেখাপড়া শিখতে গেছে। বৈদেশিক একাকিত্ব ঘোচাতে সে তার পোষা বিড়ালছানাটিকেও সঙ্গে করে নিয়েছে। সেখানে হোষ্টেলে বেশিরভাগ ছাত্রেরই রয়েছে পোষা কুকুর। গোটা হোষ্টেলে বেড়াল ওই একটিই। সেখানে ক্রমেই কুকুরগুলোর সঙ্গে বেড়ালটির সখ্য তৈরি হলো। আস্তে আস্তে বিড়ালছানাটি কুকুরের মতো কথা বলতে চলতে ফিরতে শিখলো। দীর্ঘদিন পর ওই যুবক দেশে ফিরে এলো। সঙ্গে বিড়ালটিও এলো। একদিন সেই বিলেত-ফেরত বিড়ালটি অপর একটি দেশি বিড়ালের সঙ্গে মর্নিংওয়াকে বের হলো। পথে একটি নেড়ি কুকুর বেড়ালদুটিকে আক্রমণ করে বসলো। এক পর্যায়ে বিলেত-ফেরত বেড়ালটি আত্মরক্ষার্থে রুখে দাঁড়ায় এবং ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। বিড়ালের কন্ঠে এমন নিখুঁত ‘ঘেউ’ ‘ঘেউ’ শুনে দেশি অশিক্ষিত কুকুরটি হতবিহল হয়ে পড়ে এবং জান বাঁচানো ফরজ মনে করে দৌড় লাগায়। কুকুরের খপ্পর থেকে মুক্ত হওয়ার পর সেই বিড়ালটি অত্যন্ত গর্ব ভরে তার সঙ্গীকে বলে- দেখেছো বিদেশি ভাষা শিক্ষার সুফলই আলাদা!
কুকুর নিয়ে এ রকম বহু দূরারোগ্য কাহিনী প্রচলিত আছে। সেসব লিখে কারও মন ভারাক্রান্ত করতে চাই না। এ বিষয়ে বরং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় ফিরে যাই। একবার আমাদের বাড়িতে এক স্বল্প পরিচিত মানুষ বেড়াতে এসেছিলেন। আমাদের ‘বাঘা’ ঘেউ ঘেউ করে শোবার ঘরের চৌকির নিচে আশ্রয় খুঁজছিলো। এদিকে ওই ঘেউ ঘেউ শুনে আগত ব্যক্তি ভীষণ ঘাবড়ে গেলেন। আমার ছোট কাকা দ্রুত এগিয়ে এস তাকে অভয় দিলেন, ‘ভয় পাবেন না। জানেন তে, যে কুকুর বেশি ঘেউ ঘেউ করে, সে কামড়ায় না।’ একথা শুনে ভদ্রলোক মিষ্টি হেসে বললেন, ‘সে তো আপনিও জানেন, আমিও জানি। কিন্তু সমস্যাটি হচ্ছে, আপনাদের এ কুকুরটা কি তা জানে না?’
একথা শুনে যথেষ্ট চিন্তিত হয়েছিলাম। সত্যিই তো। এ মূর্খ কুকুরটি এ সব নীতি কথা নাও জানতে পারে। তাই তো ওগুলো খামোখা উৎপাত করে বেড়ায়।
কুকুর নিয়ে মনীষীরাও অনেক কথা বলেছেন। অ্যালডাস হ্যাক্সলি বলেছিলেন, প্রত্যক কুকুরে কাছে তার প্রভু হলো নেপোলিয়ন, তাই কুকুর এতো জনপ্রিয়। মার্ক টোয়েন তো দ্বিপদীয়দের সঙ্গে চতুষ্পদীয় তুলনা পর্যন্ত করেছেন। তার মতে, যদি আপনি ক্ষুধার্ত কুকুরকে খাবার নিয়ে দেন, ভালো করে তোলেন-সে আপনাকে কামড়াবে না। বরং সেটাই হচ্ছে একটি কুকুরে সঙ্গে মানুষের প্রধান পার্থক্য
যদিও এ ধরনের তুলনা আমাদের দেশের অনেক আঁতেলের সংবিধান বা নীতিসিদ্ধ নয়। তারা তর্ক জুড়ে দেবে-আচরণে না হলেও চেহারায় উভয়ের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে না!
২৮ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:১১
চিররঞ্জন সরকার বলেছেন: ভাইজানের কি মাথার সমস্যা? ঘেউ ঘেউ পড়া যায় না, শোনা যায়..
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:৪৪
ভুদাই আমি বলেছেন: কুত্তার ঘেউ ঘেউ পড়ার মতো সময় দিতে পারলাম না।