![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজেকে ভালোবাসি, ভালোবাসি আমার কন্যা মনস্বিতা মেধাকে, ভালোবাসি কবিতা, গান, আর মানুষ, সকালের শিশির, সব চেয়ে বেশি ভালোবাসি আমার বাংলাদেশকে।
হেলেনার মে দিবস
গতকাল সকাল নয়টা পর্যন্ত আমার ছুটা বুয়া হেলেনা না আসায় মনে হলো আজ মে দিবস ও আজও কেন কাজে আসবে? অন্য সময় ও একদিন না এলে আমি পানিতে পড়ে যাই, কিন্তু আজ নিজের ভেতরে টের পেলাম অন্য রকম তৃপ্তি! ওর নিজস্ব দিবসটি নিয়ে ওকে কনসার্ন দেখে সত্যি একটা আনন্দ আমাকে জড়িয়ে ছিলো। হাশেম আমাদের সার্বক্ষনিক সহযোগী আমি কিচেনে গিয়ে ওকে বলি আজ বেশি কিছু রান্না করার দরকার নেই, শটকার্ট কিছু করে ও যেন হেলেনার কাজ গুলোতে হাত লাগায়। আমি নিজেও লেগে পড়ি টুকটাক কাজে, এটা দেখে মেধা আমার পিছু পিছু ঘুরে -মা কি হয়েছে তুমি কেন কাজ করছো?
-কাজ না করলে খাওয়া হবে কি করে?
-কেন? হেলেনা আসেনি কেন?
-আজ মে দিবস, হেলেনা আসবে না।
-মে দিবসে কি হেলেনার বেবীটার বার্থডে?
-না মে দিবস হলো শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিন
-হেলেনার বেবীর নাম কি শ্রমিক?
মেধার প্রশ্ন এতো বেশি আমি মাঝে মাঝে হাপিয়ে উঠি, তার উপর ঘরের সব কাজ পড়ে আছে এখনো মেধার সকালের নাস্তা তৈরি হয়নি, তবু আমার মনে হয় তাইতো ওতো এখনও জানে না শ্রমিক কাকে বলে? আমি নুডলসের প্যাকেটটা হাশেমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসে খুব সহজ করে বোঝাতে চেষ্টা করি যারা কাজ করে মানি আর্ন করে তাদেরকে শ্রমিক বলে।
-ও বুঝেছি আমার বাবা হলো শ্রমিক তাই না? আমার বাবাও তো কষ্ট করে টাকা আর্ন করে?
-হ্যাঁ তোমার বাবাকেও শ্রমিক বলা যায়, হেলেনাও শ্রমিক
-না, হেলেনা শ্রমিক না, হেলেনা অনেক অল্প টাকা পায়, আমার বাবার অনেক বেশি টাকা আছে
-আচ্ছা এবার শোন! অনেক দিন আগে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকরা কাজের সময় আট ঘন্টা করার দাবীতে ধর্মঘট করেছিলো ওরা লাল পতাকা হাতে রাস্তায় নেমে এসেছিলো, কিন্তু পুলিশ ওদের উপর গুলি চালায়, এতে দশজন শ্রমিক মারা যায়। এই দিনটিকে পরে মে দিবস হিসেবে প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে পালন করা হয়। আমি যত সহজে মেধাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলবো ভেবেছিলাম বোঝাতে গিয়ে দেখলাম বিষয়টা আসলে তত সহজ নয়, কারণ আমার বলা প্রায় প্রতিটা শব্দ নিয়েই ও দেখলাম অজস্র প্রশ্ন তৈরি করে ফেলছে মুহুর্তেই, ভাবছি এর চেয়ে আরো কত সহজে ওর কাছে শ্রমিক শব্দটা উপস্থাপন করা যায়! এমন সময় ও বলে
-মা ঐ পুলিশগুলো কি অনেক দুষ্ট ছিলো? এ যাবৎপরীক্ষার হলে বসে আমার বরাবর যে দশা হয় আমি সেই দশায় পড়ে যাই, এই সময় কলিং বেল বেজে আমাকে উদ্ধার করে, সকাল থেকে হেলেনা না আসায় আমি যে তৃপ্তি নিয়ে ঘরের পড়ে থাকা কাজ গুলোর মোকাবেলা করার জন্য মনে মনে তৈরি হচ্ছিলাম, দশটা নাগাদ কেটে গেলো এই তৃপ্তি তৃপ্তি ঘোর, হেলেনা এসে হাজির। ওকে দেখে আমি হতাশ, নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম একই সাথে আমি ফেলছি স্বস্তির শ্বাস। মুখে বললাম
-কি বিষয় হেলেনা দেরি কেন?
ও ইতিমধ্যেই ওর কাজে লেগে গেছে
-মাফ চাই খালাম্মা, দুই তলার বাসার খালাম্মায় কইছিলো আইজ যেন তার বাসার কাজটা সকাল সকাল কইরা দিয়া আহি। দেরি হইয়া গেলো।
-আমিতো ভাবলাম তুমি আজ আসবে না
-কি কন খালাম্মা আমার একটা বিবেক আছে না, অসুক বিসুক অইলে বিন্ন কথা, আমি না আইলে আপনি পানিতে পড়বেন হেইটা কি আমি জানি না।
আমি বলতে চাই -হেলেনা আজ মে দিবস তুমি কি তা জান? আজ কাজে না এলেও পারতে, আজকের দিনটাতো তোমাদের নিজের দিন, কিন্ত আমি এসব কিছুই বলি না
আমি টের পাই আমার ভেতরে আছে একটা আবেগের কাঁঠাল, বিবেকের ডায়ালগ দিয়া হেলেনা সেই কাঁঠাল ভাইঙ্গা খাওয়ার আগেই আমি সতর্ক হয়ে যাই।
-আমি সাঁতার জানি না এইটা জাইনা বুইঝাওতো প্রতি মাসে তিন চারদিন তোমার বিবেক নাইয়র যায়গা।
হেলেনা এক পৃথিবীর অসহায়ত্ব মুখে জড়ো করে আমাকে প্রায় জড়িয়ে ধরে বলে
-সত্যি নাইয়র যাই না খালাম্মা, পাঁচটা বাসায় কাজ কইরা শরীরে কুলাইতে পারি না। হেলেনা কাঁঠাল ভাইঙ্গা ফেলতে সক্ষম হয়। যদিও আমি ওকে মে দিবসের গুরুত্ব বুঝিয়ে বলি না, কিন্তু কাজ শেষ করে যাওয়ার সময় ওর হাতে ছুটির দিনের বাড়তি কাজ করার জন্য পঞ্চাশ টাকা দিয়ে দায় মুক্ত হই।
১১ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৬
চৈতী আহমেদ বলেছেন: আপনাকেও শুভেচ্ছা রেজোওয়ানা। ভালো থাকবেন খুব।
২| ০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ৩:৩৬
বাংলার হাসান বলেছেন: এত ভাল একটি লেখা, অথচ কমেন্ট নাই।
১১ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৭
চৈতী আহমেদ বলেছেন: লেখায় এসে কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ banglar_hasan, ভালো থাকবেন।
৩| ২৭ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯
মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লাগলো ।
১১ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৮
চৈতী আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন রশিদ, ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:২৫
রেজোওয়ানা বলেছেন: মে' দিবস শুধু আমরা মুখে মুখেই পালন করলো!
ভাল লাগলো লেখাটা আপা,
শুভেচ্ছা......