![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
The Man of No Complain! - http://nhnero.info
আমাদের ঝিরুনাতি গ্রামটা ছিল পাহাড়ের ঠিক গোড়ায়। পাহাড়ী জঙ্গল গ্রামটাকে ছুঁয়ে ফেলেছে প্রায়। আর ল্যানটানা লতাগুলো বাড়তে বাড়তে প্রায়ই গ্রামের ভেতর ঢুকে পড়তো....।
পাহাড়ের ওদিকটায় ছিল একটা বাড়তি অংশ। কতকটা ছেতারের মত দেখতে। এক শীতে সেই বাড়তি অংশটায় এসে তার আস্তানা গাড়লো রামুদ্দিন নামের এক সাধু। বোধহয় একাধারে একজন সাধু এবং একজন সঙ্গীতজ্ঞ। অসাধারন ছিল তার সুরেন্দ্রীয়। পাগল করা সুরে বাঁশি বাজাতো...।
প্রত্যেক অষ্টাদশী চাঁদে সারা রাত্রি সে বাঁশি বাজাতো। অসাধারন এক মোহনীয় সুর উঠতো তার বাঁশিতে। ঝিরুনাতি গ্রামের সমস্ত লোক সারা রাত জেগে সে বাঁশির সুর শুনতো। অষ্টাদশী চাঁদ মানেই রামুদ্দিনের বাঁশি, আর সবার রাত্রি জাগরণ।
একটা সময় বিষয়টা একদম বাঁধা হয়ে গেল ঝিরুনাতি গ্রামের মানুষদের জন্য। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো অষ্টাদশী চাঁদের জন্য.... রামুদ্দিনের পাগল করা বাঁশির জন্য। আর সেটাই তাদের জন্য কাল হয়ে গেল...।
প্রথম দিকে কেউ বিষয়টাকে আমল দেয় নি। সবাই ভেবেছিল আবহাওয়ার কোনো গন্ডগোল হয়েছে হয়তো। তখন তো আবার শীতকাল চলে। শীতকালে অনেকের মধ্যেই পাগলামী দেখা দেয়। কিন্তু প্রত্যেক অষ্টাদশী চাঁদের পরের দিনে যে এক জন করে লোক পাগল হয়ে যাচ্ছে ঝিরুনাতি গ্রামের অন্তত আধ ডজন লোক পাগল হওয়ার আগ পর্যন্ত সেটা কেউ-ই আঁচ করতে পারে নি। আর যখন গ্রামের চুলপাকা বুড়োরা পর্যন্ত মাথা নেড়ে সায় দিল যে গ্রামের সব পাগলই পাগল হয়েছে অষ্টাদশী চাঁদের পরের দিনই, ততদিনে বেশ কিছু পাগলকে নিজের বলে দাবি জানাতে পারে ঝিরুনাতি গ্রাম।
তবে সবাই এটার একটা বিহিত করতে হবে বলে স্থির করলো। ভীষণ চটে গেল তারা রামুদ্দিনের উপর। গ্রামের সবাই। অষ্টাদশী চাঁদ এখন আর তাদের কাছে কোন সুখের বিষয় নয়। রীতিমত শত্রু। অষ্টাদশী চাঁদ আর রামুদ্দিনের বাঁশি মিলে একটা একটা করে মানুষকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে তাদের গ্রামের। ভীষণ ক্ষেপে গেল সবাই।
তারা আবারো অষ্টাদশী চাঁদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। আগামী অষ্টাদশী চাঁদ হবে রামুদ্দিনের জীবনের শেষ দিন। আর তার বাঁশিরও।
আর এই ভাবনাটাই সবচে' বড় ভুল ছিল ঝিরুনাতি গ্রামের লোকদের.........।
পরবর্তী অষ্টাদশী চাঁদের রাতে গ্রামের সব পেশিধারি লোকগুলো একত্রিত হলো রামুদ্দিনের বাঁশি শুরু হবার আগেই। সবার হাতই যার যার মত করে অস্ত্রে সজ্জিত, কারোর হাতই ফাঁকা নেই। সবাই রওনা দিল সেই সেতারের মত দেখতে পাহাড়ের ওই অংশটার দিকে।
কিন্তু সে রাতে আর কেউ ফিরলো না............
পরদিন সকালে সবাইকে পাওয়া গেল পাহাড়ের গায়ে গায়ে। ল্যানটানা লতায় পেঁচানো অবস্থায়। এবং সবাই পাগল হয়ে গেছে।
সেই থেকে ঝিরুনাতি গ্রামের পুরুষ মানুষদের একটা অংশ পাগল।
আর হ্যাঁ, সেদিনের পর থেকে রামুদ্দিনের বাঁশিও আর কখনো শোনা যায় নি....।
©somewhere in net ltd.