![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখাটা যখন লিখছি তখন আমার এখানে ২৭ তারিখ রাত। লেখাটা যখন প্রকাশ হবে তখন হয়তো দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার রায় হয়ে যাবে। রায় যদি ফাঁসির হয় তবে এর বিরুদ্ধে যারা ছিলেন তারা যতদিন বেঁচে থাকবেন, ভাববেন- শাহবাগ আন্দোলনের কারণে চাপের মুখে এই রায় ঘোষিত হয়েছিলো। আর রায় যদি ভিন্ন কিছু হয়, শাহবাগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত যারা আজীবন মনে রাখবেন- সরকার শেষ পর্যন্ত তাদের সাথে প্রতারণা করেছে।
এই হচ্ছে শাহবাগ আন্দোলনের একটা প্রতিক্রিয়া। দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া। শাহবাগ আন্দোলন থেকে অভিযুক্ত যু্দ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়ে গেছে এবং আদালতের যেকোন রায়ের ওপর এর একটা অবশ্য প্রভাব থেকে যাচ্ছে।
শাহবাগ আন্দোলনের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর সাড়াশি চরিত্র। বিশেষত শিক্ষিত তরুণদের মাধ্যমে- যারা মূলত রাজপথের পাশাপাশি অনলাইনে একটা বড় ধরনের আলোড়ন তৈরি করেছে এ আন্দোলনের মাধ্যমে। শাহবাগ আন্দোলনটা ভীষণ আপোষহীণ। এখানে কোন মধ্যবর্তী মতামতের সুযোগ রাখা হয় নি। হয় আপনি এ আন্দোলনের পক্ষে অথবা বিপক্ষে। কোন ধরনের সমালোচনা বা প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এ আন্দোলনের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক নয় কিন্তু কর্মপদ্ধতি ভিন্ন- এমনটাও প্রকাশ করার সুযোগ রাখা হয় নি। আন্দোলনের শুরু থেকেই একটা বড় প্রচারণা ছিলো- “আপনি একটি ‘বিশেষ প্রাণি’ যদি বলেন যে, আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান, তবে…..”। অর্থাৎ আপনি ‘তবে’.. কথাটিও তুলতে পারবেন না। এখানে কোন রকম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের সুযোগ নেই। হয় ফাঁসি চাইবেন, নইলে আপনি ওই ‘বিশেষ প্রাণি’ (আবদুন নূর তুষার খুব সহজে শব্দটা তার ডিকশনারিতে যোগ করতে পারলেও আমি এখনো পারি নি, কারণ এ শব্দটার বিপরীত একটি শব্দও ব্লগ জগতে খুব প্রচলিত- দুটোকেই আমি অব্যবহারযোগ্য মনে করি)। এই হুমকিটি কাজও করেছে বেশ। ফেসবুকসহ অন্য অনলাইন মাধ্যমগুলোতে মধ্যবর্তী মতামতের মানুষগুলো পুরোই চুপ হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এরফলে পুরো সুবিধাটা আন্দোলনকারীদের পক্ষেই গেছে।
কিন্তু সমস্যাটা হয়েছে অন্য জায়গায়- ভিন্নমতগুলো কানে তোলার মতো মনোভাবই যেহেতু এর উদ্যোক্তা বা সমর্থকদের নেই, সুতরাং এর কোন ভুলচুক বিশ্লেষণের সুযোগও তারা পাননি। যুদ্ধাপরাধের রায়ের ইস্যুটি তেমনই একটি ভুল বিষয়। এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত কেউ হয়তো এখনই এ কথাগুলো গ্রহণ করবেন না। কিন্তু একটা আন্দোলনের ফলাফল একবছর, এক দশকেই শেষ হয়ে যায় না। যে বিষয়টার একটা স্বচ্ছ সমাধান হওয়া উচিত ছিলো তা বিতর্কের মধ্যে দিয়েই শেষ হচ্ছে। আমাদের একীভূত বাংলাদেশের স্বপ্ন দূরেই সরে গেল আরো।
অনেকেই হয়তো বলবেন- একীভূত বাংলাদেশ মানে একটি বিশেষ দলের সাথে যুক্ত সবাইকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ। কিন্তু একটা উক্তি আমাদের প্রায়শই শুনতে হয়- “ষোল কোটি মানুষ আমাদের সাথে আছে”। এমনকি সেদিন শুনলাম চরমোনাইয়ের একটি সমাবেশেও কেউ একজন বললেন, ষোল কোটি তৌহিদী জনতা তাদের সাথে আছে। প্রত্যেক দলই যখন ষোলকোটি মানুষকে তাদের পক্ষে রাখেন তখন সব দলের, সব মতের মানুষই সেখানে ঢুকে যায়। যদি কারো স্বপ্ন হয়ে থাকে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে নির্মুল করে (হয়তো হত্যা বা নির্যাতনের মাধ্যমে) দেশকে একটি সমস্বত্ব জনপদে পরিণত করবেন- তাহলে তার উচিত হবে পৃথিবীর দিকে তাকানো। এই পদ্ধতিটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রচলিত পরিক্ষীত ভুল পদ্ধতি। পৃথিবীর কোথাও হত্যা বা পীড়নের মাধ্যমে কাউকে নির্মূল করা যায় নি।
শাহবাগ আন্দোলন থেকে জয় বাংলা স্লোগানটাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দাবি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামীলীগের কব্জায় থাকা এ স্লোগান সব মানুষের মুখে তুলে দেয়ার একটা চেষ্টাও হয়েছে। অনেকে নিয়েছেনও তুলে। কিন্তু দেশপ্রেম প্রকাশ করার কেন একটিই স্লোগান থাকতে হবে? হ্যাঁ, জবাব হচ্ছে এটা স্বাধীনতার চেতনার ডাক। দাবিটা ঠিক- কিন্তু স্বাধীনতার চেতনা থেকে কেউ যদি অগ্রগতির চেতনা নিয়ে নতুন কোন স্লোগান তুলতে চান, তাহলে সেটাও হতে দেয়া উচিত। বিশেষেত দীর্ঘ দিন ধরে একটি রাজনৈতিক দল এ স্লোগানের একক সুবিধা নিয়ে নেয়ায় অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সেটা গ্রহণ করা খুব সহজ কাজ নয়। দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের একটাই স্লোগান থাকতে হবে এমন ধরাবাঁধা নিয়মও এতবছর পর সবার পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে বলা হয়েছে এটি অরাজনৈতিক আন্দোলন। কিন্তু আন্দোলনটা রাজনৈতিক হলে সমস্যটা কোথায় সেটা পরিষ্কার নয়। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুটি বাংলাদেশের রাজনীতির একটা বড় অংশ ছিল বরাবর। গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তাদের ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছিলো এ বিষয়টাকে। এবং একথা বহুবার বলা হয়েছে যে, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী তাদেরকে ক্ষমতায় আনার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। শাহবাগ আন্দোলনে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় আছে। বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা একটি ইস্যুকে যদি সমাধান করা যায়, তাহলে তার জন্য রাজনৈতিক সাফল্য দাবি করা থেকে নিজেদের তারা বঞ্চিত করবেন কেন? বুঝাই তো যাচ্ছে, এ আন্দোলনের ফলাফলকে সামনের নির্বাচনে বড় করে তুলে ধরা হবে। এ আন্দোলন থেকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করারও দাবি উঠেছে। তারও একটা রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে। এত এত রাজনৈতিক নাক-মুখ থাকতে এটি একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন হতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা- কোন কিছুর সাথে রাজনীতি যুক্ত থাকলেই বিষয়টা খারাপ এই হীনমন্যতা থেকে বের হয়ে আসা দরকার। রাজনীতি মানেই নেতিবাচক কিছু নয়। ন্যায়ের জন্যই রাজনীতি। যুদ্ধাপরাধের বিচার চাওয়া ন্যায়সঙ্গত দাবি- এর জন্য রাজনীতি করা খারাপ কিছু নয়। এই আত্মবিশ্বাসটুকু থাকলে এ আন্দোলনকে অরাজনৈতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়ার মানে থাকতে পারে না।
তবে যুদ্ধাপরাধের বিচার চাওয়ার সাথে সাথে যদি এর লক্ষ্য হয় ব্যাংক দখল করা, কোন হাসপাতাল ধ্বংস করা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হরণ করা, নিরপরাধ মানুষের চরিত্র হনন করা- তখন একটি বিচারের দাবির সাথে অনেকগুলো অবিচারের সূত্রপাত হয়। এতবড় আন্দোলন তখন নৈতিক ভিত্তি হারায়। নৈতিকতাহীণ আন্দোলনে বিপক্ষ পরাজিত হতে পারে, তবে বিজয়ীদের কোন প্রাপ্তি নেই।
শেষ করা যাক পরীক্ষা বিষয়ক কথা দিয়ে। এ আন্দোলন থেকে বলা হয়েছে, আপাতত যেকোন একটি বিষয়ের পরীক্ষা হচ্ছে- যুদ্ধাপরাধের বিষয়। ভবিষ্যতে আরো বিষয়ের পরীক্ষা হবে- যেমন দুর্নীতি এবং দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য ইস্যু, ইত্যাদি।
যারা বর্তমান আন্দোলনের নেতৃত্বে আছেন সামনের আন্দোলনগুলোতেও হয়তো লোকজন তাদেরকেই দেখতে চাইবে। এই সরকারই যদি আরেকবার ক্ষমতায় যায় তাহলে সেটা দেখা হয়তো অনেক কঠিন হবে। তবে তারপরও তারা ধন্যবাদ পাবেন। কারণ, পথটা তারাই তৈরি করে দিয়েছেন। অনেক আশা-নিরাশার মধ্যে বাংলাদেশের জন্য এটা একটা বড় প্রাপ্তি।
০৭ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:১৬
clingb বলেছেন: শাহবাগ আন্দোলনের এন্টিসোস্যাল বিষয় বলতে আসলে কী বোঝানো হয়? সে বিষয়গুলো কী আসলেই এখানে মুখ্য? আমার মতে সেটা কোন ইস্যু নয়। লাখ লাখ ছেলে মেয়ে এতদিন ধরে আন্দোলন করেছে- কয়টা খারাপ খবর আমরা শুনেছি? খুব বেশি না- দেশপ্রেমের আবেগটা এখানে অনেক বড় করে ছিলো এখনো আছে। এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট ইতিবাচক দিক বলেই আমি মনে করি।
আমার দ্বিমত হচ্ছে ওখানকার নীতির সাথে। আরো একটু উদার, সুচিন্তিত এবং যৌক্তিক এবং অন্য মতকে গ্রহণ করার ইচ্ছাটা তাদের থাকলে আমরা অনেক বড় কিছু পেতাম। ভবিষ্যতের জন্য। সেটা হবে কি-না এখন তাই নিয়ে আমার সন্দেহ এবং কষ্ট।
২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৮:০৫
নুরুল অমিন বলেছেন: +++
০৭ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:১২
clingb বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:২৩
আতাউররহমান১২০০৭ বলেছেন: সূন্দর একটি Analysis.but u should write about different antisocial acvities in shahbag.