নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্লিন'স অল্টারনেটিভ ওয়ার্ল্ড

clingb

clingb › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঐতিহাসিক ৭ ই নভেম্বর।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০১

কেউ পুরনো ইতিহাসের আশায় আসলে হতাশ হতে হবে। আমি আমার ইতিহাস লিখছি।





ইউকে-র বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষে বলা হয় প্রবেশনারি স্টুডেন্ট। বছর শেষে তাকে রিপোর্ট জমা দিয়ে, ভাইভা ফেস করে উত্তীর্ণ হয়ে পিএইচডি স্টুডেন্টশিপ কনফার্ম করতে হয়।

আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টা তাই।



প্রথম ছয়মাস যথারীতি তেমন কিছুই করা হয় নি। ল্যাবে কোথায় কি আছে আর সেগুলো নিয়ে টুকটাক এটা সেটা করে করেই সময় চলে গেছে। পরের তিনমাস কিছু ধারণা দানা বাঁধতে শুরু করলো। আর তার পরের তিনমাস মনে হলো কিছু একটা হতে যাচ্ছে।



এই পুরো সময়টাতেই যেটা সবচেয়ে উপভোগ্য ছিলো সেটা হচ্ছে ল্যাবের অন্যদের সাথে সম্পর্ক। এখনও কারো সাথে কখনো কোন বিষয় নিয়ে মন খারাপ করার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। (এবং আমার ধারণা বাকি দুই বছরেও ঘটবে না)। বিষয়টা অদ্ভুত লাগে। অচেনা একঝাক মানুষ মনের মানুষ হয়ে গেছে অল্পতেই।



পুরো সময়টাতে কয়েকটা উপলব্ধিও হয়েছে আমার। যেমন-



১. গবেষণার জন্য পরিকল্পণা করতে শেখা একটা আর্ট। এবং সেটা রপ্ত করতে খানিকটা সময় লাগে।

২. শিখতে হবে সবার কাছ থেকেই।

৩. ভালো মানুষের ভান করা আর সত্যিকার ভালো মানুষ হবার মধ্যে তফাত আছে। অন্যরা সহজেই সেটা ধরে ফেলে। তাই নিজের বৈশিষ্ট্য নিয়ে সৎ থাকতে হবে।

৪. কেউ হঠাৎ আপাত শক্ত কথা বললে তার কারণটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে হবে- হুট করেই প্রতিক্রিয়ায় চলে যাওয়া উচিত নয়।

৫. সুপারভাইজাররা সাধারণত খুবই উদার প্রকৃতির মানুষ। তাদের উদারতাকে সম্মান জানাতে হবে। এর অপব্যবহার করা যাবে না।



যাইহোক, আমার দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হবার পথে ৭ ই নভেম্বর একটা বড় ধাপ অতিক্রম করলাম। এখানে আমার ইনস্টিটিউটে প্রত্যেক টার্মে তরুণ গবেষকদের প্রেজেন্টেশন দিতে হয়। এর নাম আরআইপি- রিসার্চ ইন প্রোগ্রেস।

আরআইপি প্রেজেন্টেশনে যেতে পারা মানেই হলো প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে যাবার মতো যথেষ্ট কাজ হয়েছে।

গত মাস খানেক ধরে আমার কাজগুলোকে এর জন্য প্রস্তুত করছিলাম।



হঠাৎ এক সপ্তাহ আগে মাথায় ভুত চাপলো- আগের এক্সপেরিমেন্টগুলো সব রিপিট করবো। রেজাল্টগুলো আরো শার্প হওয়া দরকার।

এক সপ্তাহ আগে ল্যাবের ফ্রেঞ্চ পোস্ট ডক (যে আমাকে ছোট ভাইরে মতো করে যত্ন করে সব শেখায়) বললো- এই এক সপ্তাহ কোন কাজ নয়। যা করেছো সব নিয়ে নিজের স্টোরি দাড় করাও আর স্লাইড প্রিপেয়ার করো।

আমি যদিও বললাম- ঠিক আছে কিন্তু মনে মনে পরিকল্পনা থাকলো ভিন্ন। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক আমি রাত জেগে আমার কাজগুলো করে গেলাম। স্লাইড রইলো স্লাইডের জায়গায়। নতুন একটা কনসেপ্টও দাড় করিয়ে সেটা থেকেও রেজাল্ট নেয়ার জন্য গোপন কাজ চলতে থাকলো।



এমন ব্যাপার ঘটতো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পরীক্ষার আগে। পরীক্ষার আগের রাতে সব নতুন করে আবার না পড়লে মনে হতো- হলে গিয়ে কিছুই পারবো না। সুতরাং ফলাফল পুরো রাত জেগে থাকা। মা রাত দশটার দিকে ঘুমাতে বলে চলে যেতো। বেশি রাতে যদি সজাগ পেতো তবে হালকা বকাঝকা জুটতো কপালে। সেই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবার জন্য একটা সহজ বুদ্ধি বের করলাম। কেউ রাতের বেলা জেগেছে বুঝতে পারলে রুমের লাইট বন্ধ করতাম। তারপর সব চুপচাপ হলে আবার শুরু।



এখানে অবশ্য তেমন ঝামেলা নেই। এমনিতে রাত দশটার পরে ল্যাব ফাকা হয়ে যায়। সুতরাং তারপর কেউ নেই দেখার। তারপরও পরের দিন চেহারা দেখে বুঝে ফেলে।



যাই হোক, বুধবার ল্যাব ম্যানেজার বললো- স্লাইড দেখাও। আমার তখনো বেশ কিছু এনালাইসিস কর বাকি। বললাম- আর পনের মিনিট।

শুনে ল্যাব ম্যানেজার যা বললো তার সারমর্ম এমন-

".......- কাল তোমার প্রেজেন্টেশন। আর এখনো তুমি স্লাইড বানাও নি। আর তোমাকে দেখে তো মনেও হচ্ছে না এই নিয়ে বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তা আছে। এই প্রেজেন্টেশন তো ওয়াল্টার (আমার সুপারভাইজার)-কে দেখাতে হবে। আমি যদি আগে না দেখতে পারি, তাহলে কিন্তু আমি বলবো যে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। .....................আমি কী তোমার মনে কিছুটা ভয় ঢুকাতে পেরেছি?"

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।

সে বললো- আচ্ছা যাই হোক, আরো দেড় ঘণ্টা সময় দিলাম। সব রেডি করো। তারপর বসবো।



দেড় ঘণ্টা পরে বসলাম।

অভিজ্ঞতার অভাব আসলে কিছু দিয়ে পূরণ করা যায় না। আমার প্রেজেন্টেশনটা দেখে ল্যাব ম্যানেজার এমন সব চমৎকার পরামর্শ দিলো মনে হলো এতক্ষণে আমার গল্পটা একটা অর্থবহ কিছু হতে চলছে। খুবই ভালো লাগলো তখন।

বুধবার রাতে একটা পর্যণ্ত ল্যাবে বসে প্রেজেন্টেশন ঠিক করলাম। তারপরও আরো কিছুটা বাকি রইলো। ভাবলাম বাসায় যাই- ঘুমাতে যাবার আগে লাস্ট স্লাইড দুটো বানাবো।



বাসায় আসার পথে মনে হলো ঘুমানো জরুরি। মাথা ম্যাথা শুরু করছে মৃদু। এর একমাত্র ওষুধ ঘুম। ফেরার পথে ম্যাকডোনাল্ডস থেকে ফিস বার্গার খেয়ে আসলাম।

রুমে ঢুকে ল্যাপটপ খুলে বুঝলাম- স্লা্ইডগুলো আনি নাই। কি আর করা! একটা এনালাইসিস শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। আটটার মধ্যে ল্যাবে গিয়ে স্লাইডগুলো শেষ করে ল্যাব মিটিং এ যাবো। তারপর সেখান থেকে আসবো আবার মূল প্রেজেন্টেশন এর জন্য।



ল্যাবে পৌঁছলাম নয়টায়। স্লাইড খুলে বুঝলাম- কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। কয়েকটা চিত্র গায়েব। ওপেনও হয় না।

যাইহোক- এটা খুবই প্রত্যাশিত ছিলো। জরুরি মুহূর্তে কম্পিউটার বিট্রে করবে এটা খুবই স্বাভাবিক।

সুতরাং আবার সেগুলো বানালাম। ল্যাব মিটিং এ গেলাম। সুপারভাইজারের সামনে প্রেজেন্টেশন দেয়ার আগে বললাম- আমি একটা রিহার্সাল করতে চাই। সুতরাং শেষ করার আগে কোন প্রশ্ন না।

সে রাজী হলো।

তারপরও কয়েক জায়গায় থামিয়ে আমার বক্তব্য শুধরালো। শেষের একটা পুরো কনসেপ্ট বাদ দিয়ে দিলো। বললো তোমার হাতে খানিকটা সময় আগে এই কারেকশনগুলো করার। সেগুলো শেষ করে প্রেজেন্টেশনে সময় মতো আসো।



সৌভাগ্যবশত আমার প্রেজেন্টেশন ছিলো দ্বিতীয় নম্বরে। সুতরাং খানিকটা সময় পেলাম আরো। কারেকশন করছি এমন সময় তাইওয়ানিজ ল্যাব মেট ওর পয়েন্টারটি দিলো আমাকে ব্যবহার করার জন্য। (এটা ভালোবাসার একটা নিদর্শন। আমি চাই নাই। সে নিজে থেকেই দিয়েছে)।



যাই হোক ল্যাবে কারেকশনগুলো করে সেমিনার রুমে গেলাম। তখনো প্রথম প্রেজেন্টেশন চলছে। বসলাম সুপারভাইজারের পাশে। অনেক রিলাক্স লাগছিলো কেন জানি। পরিচিত অনেকেই আছে। এটাই এই প্রেজেন্টেশন-এর মূল বিষয়। পরিচিতদের সামনে নিজের আর সুপারভাইজারের ইজ্জত রক্ষা করা।



সময় হলো আমার। গিয়ে দাড়ালাম স্টেজে। কেন জানি মনে হচ্ছিল একটা ভালো প্রেজেন্টশন হবে।

হলোও তাই। বাংলাদেশের একজন সিনিয়র পোস্টডক আছেন এখানে। তিনি ছিলেন। তার প্রতিক্রিয়া খেয়াল করছিলাম প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময়। বুঝছিলাম তিনি ফলো করতে পারছেন আমাকে। অন্যদেরও মনে হলো আগ্রহ হারিয়ে ফেলেনি।



প্রেজেন্টেশন শেষ করলাম যখন- সুপারভাইজার এসে মৃদু হেসে (যেটা তিনি সবসময় করেন) বললেন- ভালো হয়েছে। সামনে করার জন বেশ কয়েকটা এক্সপেরিমেন্ট সাজেস্ট করলেন।



এরচেয়ে বেশি কিছু এই মুহূর্তে আমার চাওয়া ছিলো না। ল্যাবের সবাই পজেটিভ ফিডব্যাক দিলো। অন্য ল্যাব থেকে পরিচিতজনরাও এসে জানালো- ইট ওয়াজ গুড।



আমি যখন এখানে এক বছর পাড় করেছি তখন সবাইকে একটা মেইল করেছিলাম- বলেছিলাম- আমি এখান থেকে কয়টা পেপার নিয়ে যাবো, আমার গবেষণা থেকে পৃথিবী কি উপকার পাবে সেটা অন্যদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, আমার জন্য না। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- এই যে তোমাদের সাথে এত এত সুন্দর সময় কাটাচ্ছি এটা।



পিএইচডি'র সময়টা জীবনের অন্যতম উপভোগ্য সময় হয়ে উঠছে। যেদিন এটা শেষ হয়ে যাবে মন খারাপ হবে খুব সেটা এখনই বুঝতে পারি। তবে তার আগে গবেষণাটাকে উপভোগ করার আরো অনেকগুলো মুহুর্ত আসবে। সেটাই ভালোলাগার কথা।



উইনচেস্টার রোড, অক্সফোর্ড

৮ অক্টোবর, ২০১৩

সন্ধ্যা ৫.৫৩

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৭

লেজারবিম বলেছেন: দেখুন ভালোলাগতে পারে click here

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১১

clingb বলেছেন: অনলাইন পত্রিকার উপর চরম বিরক্ত আমি। ভালোলাগার সম্ভাবনা কম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.