নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোথাও নেই আর সেই স্বার্থহীন নীল, ভর দুপুরে ডানামেলা মায়াবী গাঙ্গচিল!! https://www.facebook.com/firefromtheclouds

ফায়ার ফ্রম দ্যা ক্লাউডস

https://www.facebook.com/firefromtheclouds

ফায়ার ফ্রম দ্যা ক্লাউডস › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিলো ফ্লাইটঃ মেঘ ফুড়ে ওরা এসেছিলো বজ্র হতে (Kilo Flight: They Were The Fire From The Clouds) - পর্ব-১ (সাময়িক পোষ্ট)

১৮ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৫৩


৩রা মার্চ, ১৯৭১
করাচী, পশ্চিম পাকিস্তান


পিআইএ এর একটী বোয়িং ৭০৭ টেকঅফের জন্য তৈরী। সেই বিমানের কো পাইলট ক্যাপ্টেন নিজাম আহমেদ চৌধুরি। করাচি – ঢাকা নিয়মিত ফ্লাইটের জন্য সবই প্রস্তুত। প্রসিডিউর অনুযায়ী উড্ডয়নের আগে লোড শিট (যাত্রী সংখ্যা, মালামালের হিসেব এবং তেল ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য এতে লেখা থাকে) দেখে নেবার কথা, নিজাম আহমেদ চৌধুরী তা চেক করে বেশ অবাক হলেন। লোড এবং যাত্রী কোনটাই নিয়মিত ফ্লাইটের মতো নয়। সর্বোচ্চ সংখ্যক যাত্রী এবং মালামালের উল্লেখ আছে সেই লোড শিটে, যদিও যাত্রীদের সবাই বেসামরিক। তবু উনার সন্দেহ হল। উনি কো পাইলটের আসন ছেড়ে যাত্রীদের দেখতে বিমানের ভেতরে ঢুকলেন এবং অবাক হলেন। কারন এদের একজনও বেসামরিক যাত্রী নয় তা পোষাক, চুল এবং হাবভাবেই বোঝা যাচ্ছিলো।

তিনি এমনিতেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নিজের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ নিয়ে খুশী ছিলেননা। তিনি বুঝতে পারলেন এটা এক অশুভ সংকেত। তিনি প্রধান পাইলটের সাথে তর্কে লিপ্ত হন এবং এক পর্যায়ে এই ফ্লাইট নিয়ে যেতে অস্বীকার করে বিমান থেকে নেমে যান। সামরিক কর্তুপক্ষের আদেশে গ্রেফতার করা হলো নিজাম আহমেদ চৌধুরিকে এবং তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হলো। অন্য আরেক পাকিস্তানী ক্যাপ্টেনকে কো-পাইলট হিসেবে রিপ্লেস করে ফ্লাইট চালনা করা হলো।

(এরপর পুরো ৭১ জুড়েই আর কোন বাঙ্গালী বৈমানিক এই রুটে উড্ডয়ন করেননি। আভ্যন্তরীন কিছু রুটে মার্চের ২৫ তারিখ পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনায় ছিলেন কিছু বাঙ্গালী বৈমানিক। তবে নিজাম আহমেদ চৌধুরীর ভাগ্য ভালোই ছিলো কারন উনার স্ত্রী ছিলেন একজন জার্মান নাগরিক যিনি ওই সময় ঢাকায় ছিলেন। বেশ কিছুদিন খোজ না পেয়ে উনি জার্মান দুতাবাসের মাধ্যমে পাকিস্থান সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেন।তাকে মুক্তি দেয়া হয় কিন্তু সেইসাথে পিআইএ থেকে বরখাস্ত করা হয়। ৭১ এর বাকীটা সময় তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে অন্তরীন করে নজরদারীতে রাখা হয়। এরপর স্বাধীনতার পর উনি করাচী থেকে ঢাকা পালিয়ে আসেন।)

নিজাম আহমেদ চৌধুরির এই ঘটনা অন্যদেরও প্রভাবিত করে। যাদের অনেকেই পাকিস্তান ত্যাগ করে দেশের বাইরে চলে যান এদের মধ্যেই ৪ জন পরে কিলো ফ্লাইটে যোগ দেন। কিলো ফ্লাইটের ৯ জন বৈমানিকের মধ্যে ৬ জন ছিলেন সিভিল পাইলট, যাদের ৪ জন পি আই এ এবং বাকী ২ জন কৃষি অধিদপ্তরের অধীনে কাজ করতেন।

পিআইএর এমন চারজন পাইলটের কথা জানা যায় যারা ২৬ মার্চের পর ঢাকা ত্যাগ করতে পারেননি। পরবর্তীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের এপ্রিল এর প্রথম সপ্তাহে গ্রেফতার করে এবং এপ্রিল মাসের মধ্যেই ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ এবং নির্যাতনের পর তাদের সবাইকে হত্যা করে। উনারা হচ্ছেনঃ

- ক্যাপ্টেন সিকান্দার আলী, জেষ্ঠ্যতম বৈমানিক, পুর্ব পাকিস্তান

- ক্যাপ্টেন আবু তাহের মোহাম্মদ আলমগীর

- ক্যাপ্টেন এন এস হায়দার

- ক্যাপ্টেন আমিনুল ইসলাম

৩রা এপ্রিল, ১৯৭১
প্রধানমন্ত্রীর কার্য্যালয়, দিল্লী


তাজউদ্দীন আহমেদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করবার সুযোগ পেয়েছেন, তিনি নিজেকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। তাকে কোলকাতা থেকে সরাসরি দিল্লী উড়িয়ে আনা হয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী উনাকে জিজ্ঞেস করলেন,

- “ আপনারা কি সত্যি স্বাধীনতা চান?”

তাজউদ্দীন আহমেদ জবাব দিলেন,
- “আমরা স্বাধীনতা চাই।“

ইন্দিরা গান্ধী বললেন,
- “তাহলে আপনাদের দেরী না করে খুব দ্রুত স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠন করতে হবে। আপনাদের স্বাধীনতার জন্য যা করা প্রয়োজন আমাদের সামর্থ্যের সবটূকু দিয়ে আমরা করবো।“

১০ মে, ১৯৭১
পিএএফ হেডকোয়ার্টার, পেশোয়ার


উইং কমান্ডার এ জি মাহমুদের পোস্টিং এখন পেশোয়ারের বিমান বাহিনী সদরদপ্তরের প্রসাশনিক বিভাগে। ২৫শে মার্চের পর থেকেই সকল বাঙ্গালী পাইলট গ্রাউন্ডেড অবস্থায় আছেন এবং বাকী সকলকে বিভিন্ন কম গুরুত্বপূর্ন পদে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। রিসালপুরের পাকিস্তান এয়ারফোর্স একাডেমীতে ছিলেন ৫৬ জন ফ্লাইট ক্যাডেট, তাদের প্রশিক্ষণ স্থগিত করে নজরবন্দী রাখা হয়েছে। তাদের ঢাকা পাঠাবার জন্য ব্যবস্থ্যা নিতে উইং কমান্ডার মাহমুদকেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। উনি জানতে পারলেন ঢাকায় অবতরনের সাথে সাথেই তাদের সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হবে যাতে তাদের সহজেই নির্মুল করে ফেলা যায়। নাহ্লে তারা মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে পারে।
এয়ার কমোডোর এনাম ছিলেন এয়ার অফিসার কমান্ডিং (এওসি) ইস্ট পাকিস্তান। উনার সাথে আগের পরিচয়ের সুত্র ধরে তার কাছেই ফ্লাইট ক্যাডেটদের সুরক্ষার জন্য কিছু একটা করা যেতে পারে বলে উনি মনে করলেন। ইস্ট পাকিস্তান এয়ার কমান্ডের কাছে তাদের সুরক্ষার সকল ব্যবস্থ্যা নিতে উনি এওসি ইস্ট পাকিস্তান বরাবর একটি বার্তাপত্র লিখে পাঠালেন, “IMMEDIATE” প্রাধিকার দিয়ে।

এরপর তাদের ভাগ্যে কি হয়েছিলো সেভাবে হয়তো উনার জানা হয়ে ওঠেনি।

মার্চ (১ম সপ্তাহ), ২০১১
পূর্ব রাজাবাজার, ঢাকা


এক তরুণ ফ্লাঃ লেঃ কে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিমানবাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত প্রাক্তন বাহিনী প্রধানদের জন্য বাহিনী প্রধানের পক্ষ হতে সম্মাননা অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র পৌছে দেবার জন্য। তাঁদেরই মধ্যে থেকে একজনের বাসার ঠিকানা দেয়া ছিলো রাজাবাজারের (ফার্মগেটের কাছেই)। এর আগেরদিন সে রাজাবাজারের গলি গলি ঘুরে ঠিকানা মিলিয়ে বাসা খুঁজে পায়নি হাতে সময় কম থাকার কারনে। সার্ভিসের জীপ নিয়ে গলির জ্যামে অনেকক্ষন আটকে থেকে সেদিন আর খোজার সাহসও করেনি। এরপরদিন আবার সকালে সে রওনা দিলো, তবে এবার সময় বাচাতে নিজের বাইকটা সম্বল করেই। বাসাও খুঁজে পাওয়া গেলো এবার খুব বেশি ঝামেলা না ভোগ করেই। এক প্রায় ৬০ পেরোনো ভদ্রলোক গেট থেকে এসে তাকে বাসার ভেতরে নিয়ে গেলেন। স্যারের কথা জিজ্ঞেস করতেই উনি বললেন,
- “উনি তো এখন আমেরিকায় আছেন, আসতে পারবেননা। তবে উনাকে খবর পৌছে দেব আর দাওয়াতপত্র যখন উনি আসবেন হাতে দিয়ে দেব।“

কিছুটা বিমর্ষ হলো সেই তরুণ অফিসার। সে ভেবেছিলো কিছু নতুন গল্প শুনতে পারবে। এর আগে যতবারই এমন সুযোগ পেয়েছে কখনোই এমন কিছু শুনতে পাবার সুযোগ হাতছাড়া করেনি। আর বাসায় গেলে এমনিতেই অনেক কথা বলেন পুরোনো দিনের সেইসব অফিসারেরা। এরপর কিছুক্ষন সেই ভদ্রলোকের সাথে আলাপ হলো। উনি তাকে “তুমি” করে সম্বোধন করছিলেন। আর বিমান বাহিনীর অফিসারদের কথা বলার স্বভাবসুলভ সৌজন্যের মতো একটা ব্যাপার চোখে পড়ছিলো। ব্যাপারটা একটু কেমন যেনো লাগলো। এভাবে সাধারনত কেউ বলেনা ইউনিফর্ম পড়ে গেলে। কৌতুহল দমন করতে না পেরে সে জিজ্ঞেস করেই ফেললো,
- “If you don’t mind, may I know you were in defence or not.”

সেই ভদ্রলোক জবাব দিলেন,
“হ্যা, আবার নাও বলতে পারো। ৭১ এ আমি ক্যাডেট ছিলাম। ২ বছর পার করবার পর ৭১ এ আমাদের ট্রেনিং সাস্পেন্ড করা হয়। এরপর দেশে পাঠাবার কথা থাকলেও না পাঠিয়ে নজরবন্দী হিসেবে রাখা হয়। এরপর ৭৩ সালে আমরা ফেরত আসি দেশে বন্দী বিনিময় চুক্তির পর।“

এরপর আরো কিছু কথা হয় উনার সাথে, বিদায় নেবার আগে উনার ফোন নম্বরও নিয়ে আসে আরো বিস্তারিত কথা বলবার জন্য, জানা হয়তো হয়েছিলো আরো অনেক কিছুই। কিন্তু সেগুলো এই লেখার পরিধির বাইরে। সে এক অন্য কাহিনী!

উইং কমান্ডার এ জি মাহমুদ ৭১ এ কিংবা এর পরে সেই ক্যাডেটদের ভাগ্যে কি হয়েছিলো জানতেন নাকি জানা নেই। তবে সেই ৫৬ জনের একজন সেই তরুণ ফ্লাঃ লেঃ কে তার উত্তরের কিছুটা জানিয়ে দিলেন ঠিক ৪০ বছর পর!!

১৭ মে, ১৯৭১
স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী কার্য্যালয়
বালিগঞ্জ, কলকাতা


গ্রুঃ ক্যাঃ এ কে খন্দকার প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের সাথে দেখা করতে এসেছেন। গত ১৫ মে উনি তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় আগরতলা পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন আরো কিছু সদস্য এবং তাদের পরিবার সহ। তাকে একটী বিমানে পরেরদিন কলকাতায় উড়িয়ে আনা হয়। এটাই তার অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান কর্মকর্তাদের সাথে প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাত। উনি তাজউদ্দীন আহমেদকে বললেন,
- “স্যার, আমরা বিমান বাহিনীর বেশ কয়জন উর্ধতন কর্মকর্তা ঢাকা থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছি। এর মধ্যে বেশ কয়জনেরই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে। আরও বেশ অনেকজন এয়ারম্যান পালিয়ে নানা সেক্টরে যুদ্ধ করছে যাদের বিমান রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষতা আছে। দেশের জন্য আমরা যে কাজই দরকার করতে রাজি, তবে মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীর প্রয়োজনীয়তাও আছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের যদি কিছু বিমান আর একটা এয়ারফিল্ডের ব্যবস্থা করে দিতে পারতেন তবে খুব ভালো হত।“

তাজউদ্দীন আহমেদ উত্তর দিলেন,
- “আমি যথাসাধ্য চেস্টা করবো।“

এর আগে তিনি কর্নেল ওসমানীকেও এই ব্যাপারে বলেছিলেন। তবে সেই সময়ের পরিস্থিতিতে ব্যাপারটা সম্ভব হবেনা বলে কর্নেল ওসমানী তাকে জানিয়ে দেন। তবে নীতিনির্ধারক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের মাধ্যমে ব্যাপারটি ভারত সরকারের উপর মহলে যেতে পারে ভেবে নিয়ে তিনি চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

চলবে... (ড্রাফট পোষ্ট)

(এই পর্ব জরুরী নয়, তবু ভুমিকা হিসেবে আনা হলো)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১:১১

আমিতপু বলেছেন: ক্লাইভ কাসলার বা কাজি আনোয়ার হোসেনের থিলারের মত, শুরুটা অসাধারন হয়েছে।

পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

(আপনি কি জানেন, আমি প্রায় ৬ মাস পর লগ ইন করলাম। আপনার লেখায় মন্তব্য দিতে)

১৯ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৫

ফায়ার ফ্রম দ্যা ক্লাউডস বলেছেন:
ভাই, অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ব্রাকেটের ভেতরের কথাগুলা আমার জন্য সম্মানের। :)

এইসবই সত্য ঘটনা, কেবল একটু গল্পের ভঙ্গীতে বলতে চাওয়া আরকি। পরবর্তীতে মেগা পোস্টই দিবো, পুরাটা একসাথে। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.