নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌরভ আহমেদ

সৌরভ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাগদুব সিরিজ ♦️ ▪️পর্ব ২: যিল্লাতু ওয়া মাসকানাতু…

৩০ শে অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ১০:১৪

লোহিত সাগর হেঁটে পাড়ি দিয়ে, সিনাই মরুতে পৌঁছানোর কয় ঘণ্টা পরের ঘটনা। এক জাতির মূর্তিপূজা দেখে বনী ইসরা"ইল মূসা (আ:) এর কাছে আবদার করে একটি মূর্তির জন্য! আসলে তাদের ধৃষ্টতার এটা ছিল শ্রেফ শুরু।
একদিন আল্লাহর ডাকে মূসা (আ:) তুর পাহাড়ে যান ৩০ দিনের জন্য, হারুন (আ:) কে দিয়ে যান কওমের দায়িত্ব। সেখানে গিয়ে তিনি আল্লাহর সাথে কথা বলেন এবং এজন্য তাকে ডাকা হয় 'কলিমুল্লাহ'। এসময় তার উপর তাওরাত নাযিল হয়, যার বাণী লেখা ছিল কিছু পাথরের ফলকের উপর।
এদিকে বনী ইসরা"ইল শুরু করে দেয় অনাচার। সামেরি গোত্রের এক লোক (অনেকের মতে এটাই তার নাম) সোনা দিয়ে একটি বাছুর তৈরি করে। এতে সে ব্যবহার করে সমুদ্র দিখন্ডের সময় উপস্থিত হওয়া জিব্রাইল (আ:) এর পদতলের মাটি। হয় জ্বিনের সাহায্যে বা কোনো কারসাজির মাধ্যমে সেই বাছুরটিকে শব্দ করাতে সক্ষম ছিল সে। এই দেখে অনেকে তাদের পূর্বকার খায়েশ অনুযায়ী তা পূজা করা শুরু করে, হারুন (আ:) এর নিষেধ সত্বেও।
আল্লাহর আদেশে মূসা (আ:) ফিরেন ৪০ দিন পর। বনী ইসরা"ইলের অবস্থা দেখে তিনি ভীষণ রাগ করেন এবং শিরকে জড়িতদের কঠিন শাস্তি দেন (আপোস-হত্যা)। এরপর আল্লাহ তাদের সকলকে ক্ষমা করে দেন।
মূসা (আ:) ভাবলেন তিনি আবার তুর পাহাড়ে যাবেন, তবে এবার ৭০ জন উত্তম বান্দাকে সাথে নিয়ে। সেখানে পৌঁছে তিনি আবার আল্লাহর সাথে কথা বলেন এবং আরো ওহী লাভ করেন। কিন্তু তাদের কথোপকথনের মধ্যে শুধু তার অংশটিই বাকিরা শুনতে পায়। এবার তারা দাবি করে বসে, আল্লাহকে না দেখা পর্যন্ত তারা নাকি বিশ্বাস করবে না!
এই কথায় আল্লাহ ক্রোধান্বিত হয়ে তৎক্ষণাৎ বজ্রপাত পাঠালেন এবং তারা মারা গেলো। মূসা (আ:) তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ আবারও তাদের জীবন দান করেন। কিন্তু এতেও তারা বিশ্বাস আনতে অস্বীকৃতি জানলে আল্লাহ কিছু ফেরেশতাদের বলেন তাদের উপর তুর পাহাড় তুলে ধরতে, যেন তাদের ভয় হয়।
সিনাই মরুতে (কারো মতে তীহ্ প্রান্তরে) আল্লাহ বনী ইসরা"ইলের জন্য ১২টি ঝর্না প্রবাহিত করেন যেনো তাদের ১২টি গোত্রের মাঝে পানি নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ঝামেলা না সৃষ্টি হয় (ইয়াকুব আলিহিস সালামের ১২ পুত্র থেকে তৈরি হয় ১২ গোত্র)। তাদের আরো দেয়া হয় মান্না ও সালওয়া*।
অনেকের মতে 'মান্না' ছিল আল্লাহর অবতীর্ণ এক প্রকার ক্বুদরতী মধু অথবা একরকম চিনি যা পাথর, পাতা ও ঘাসের উপর শিশির-বিন্দুর মত জমা হত। আবার কেউ বলেছেন, এটা ছত্রাক (মাশরুম)। আর 'সালওয়া' ছিল এক প্রকার পাখি। কিন্তু এই জান্নাতি খাবারই তাদের কাছে নাকি একঘেয়ে লাগতে শুরু করে! তারা গম, পেঁয়াজ, তরকারি ইত্যাদির জন্য আবার আবদার করে। তাদের নবী খালি দুঃখ করে বলেন, তাহলে মিশরেই ফেরত যাও।
এমনই নানা টাল বাহানা করতে করতে একদিন তারা ফি"লিস্তিনের জেরুসালেম শহরের কাছে পৌঁছালো (বর্তমানে এটি ফি"লিস্তিনের পশ্চিম তীরে অবস্থিত)। মূসা (আ:) বনী ইসরা"ইলকে বললেন সেই পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করতে, কারণ সেটি আল্লাহ তাদের জন্য নির্ধারণ করেছিলেন।
কিন্তু তারা প্রবেশ করতে চাইলো না, কারণ তখন সেখানে শক্তিশালী আমালিকা জাতির শাসন চলছিল। আল্লাহ চেয়েছিলেন তারা জি"হাদ করুক, কিন্তু তারা সেই আদেশ মানেনি, কেবলমাত্র দুজন ছাড়া- ইউশা বিন নুন এবং কালিব বিন ইউফনা। তাদের চরম ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেল যখন তারা বললো, 'আপনি আর আপনার রবই যান, উভয়ে যুদ্ধ করুন।' অতঃপর আল্লাহ তাদের শাস্তি দিলেন- ৪০ বছরের নির্বাসন। তবে এর চেয়েও বড় শাস্তি তো আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা (যিল্লাত) ও দারিদ্র্য (মাসকানাত) এর অভিশাপ লাভ করা-
وَضُرِبَتۡ عَلَیۡہِمُ الذِّلَّۃُ وَالۡمَسۡکَنَۃُ ٭ وَبَآءُوۡ بِغَضَبٍ مِّنَ اللّٰہِ
"আর তাদের উপর আরোপ করা হয়েছে লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্য এবং তারা আল্লাহর ক্রোধের শিকার হল।" (সূরা বাকারা : ৬১)
এভাবেই ৪০ বছর কাটে মরুভূমিতে। মূসা (আ:) জীবদ্দশায় বনী ইসরা"ইলের পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ আর দেখে যেতে পারেননি। তবে তার একটি ইচ্ছা আল্লাহ পূরণ করেন, তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জেরুসালেমের খুব কাছেই।
এরপর নবী হন সেই ইউশা, যিনি আল্লাহর ডাকে লড়তে প্রস্তুত ছিলেন। এদিকে বনী ইসরা"ইল এও এসেছে পরিবর্তন, উদ্ধত ও ভীরু বুড়োদের জায়গায় এখন সব অনুগত ও টগবগে যুবক। এবার আল্লাহর ডাকে দুজন নয়, বরং অনেক গুলো কণ্ঠ বললো 'লাব্বাইক'।
চলবে…
(এ ঘটনা গুলো উল্লেখিত আছে যথাক্রমে: সূরা আরাফ এর ১৩৮, সূরা বাকারার ৪৭- ৬১, সূরা মায়িদার ২১-২৬ নং আয়াতে। ঘটনা গুলোর ক্রম নিয়ে নানা মতভেদ আছে। যেমন, নির্বাসন দেয়ার পর সামেরির ঘটনা ঘটে এবং এরপর আল্লাহ মান্না-সালওয়া পাঠান বলে অনেকে ধারণা করেন। আমরা ঘটনার শিক্ষণীয় দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করবো, ক্রম যেটাই হোক।)


Collected

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.