![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুলাইমান (আ কে আল্লাহ শুধু বনী ইসরা"ইলেরই শাসনভারই দেননি, দিয়েছিলেন অর্ধ পৃথিবীর রাজত্ব- যা ছিল নীলনদ থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। মানুষ তো বটেই, পশুপাখি, জ্বিন এমন কি বাতাসও ছিল তার করায়ত্বে। এত কিছু পাওয়ার পরও সুলাইমান (আ
আরো দুটো জিনিস সব সময় আল্লাহর কাছে চাইতেন-
"হে আমার রব্ব! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও- যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা মাতাকে দান করেছ; আর যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি।" (সূরা নামল : ১৯)
সুলাইমান (আ শুধু একজন শাসক ছিলেন না, তিনি ছিলেন নবী। তাই তার সাম্রাজ্য বিস্তারের সময় প্রাধান্য পেত জমিন থেকে শিরক হটিয়ে আল্লাহর হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা। সেজন্য তিনি পশুপাখি ও জ্বিনদের থেকে বিভিন্ন বিপথগামী জাতির খবর নিতেন, সত্যতা যাচাই করতেন। এরপর চিঠি মাধ্যমে তাদের এক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বলতেন, যেমনটা করতেন আমাদের রাসূল (সা
।
একবার এক হুদহুদ পাখির থেকে সংবাদ শুনে তিনি সাবা নামক দেশে চিঠি পাঠান। সেখানে শাসক ছিল এক রাণী। প্রথমে সন্দিহান হলেও দূত পাঠিয়ে যখন তিনি সুলাইমান (আ এর শৌর্যবীর্য দেখতে পান, তখন স্বয়ং নিজে এসে বাদশার কাছে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। তার পৌঁছানোর আগেই পৌঁছে যায় তার সিংহাসন, জ্বিনের মাধ্যমে সেটি নিমিষে হাজির করে কিছুটা পরিবর্তনও করে দেন সুলাইমান (আ
। মূলত এটি ছিল সাবার রাণীর জন্য একটি পরীক্ষা। নিজ সিংহাসন এবং সুলাইমানের স্বচ্ছ কাচের প্রাসাদ দেখে তিনি বুঝতে পারেন, এমনটা মানুষের পক্ষে সম্ভব না। তিনি তৎক্ষণাৎ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। (আরো বিস্তারিত জানতে পড়ুন সূরা নমল)
এদিকে অনেকদিন পার হয়ে গেলেও বনী ইসরা"ইল তাদের মিশরীয় জীবনের কিছু গোমরাহী থেকে বের হতে পারছিল না, তার মধ্যে অন্যতম ছিল জাদুচর্চা। অবাক হলেও সত্য যে, এইসকল জাদুর বিদ্যা তারা পেয়েছিল বাবেল শহরে নাযিল হওয়া দুজন ফেরেশতার কাছ থেকে, যাদের নাম ছিল- হারুত ও মারুত। মূলত এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদের অনুগ্রহ ও পরীক্ষা করেছিলেন। কারণ জাদু বিদ্যা শেখার ফলে তারা জাদু ও মুজিযার পার্থক্য ধরতে সক্ষম হয়, ফলে নবীদের সহজে বিশ্বাস করে। তবে এই বিদ্যার প্রয়োগ নিষেধ ছিল, নতুবা ঈমান হারাতে হত। (দেখুন সূরা বাকারা ১০২-১০৩)
কিন্তু নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ তো আদিকাল থেকেই, তাই তারাও জাদু বিদ্যা চর্চা করে সমাজে নানান অনাচার করতে থাকে। সুলাইমান (আ এসব বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেন। তিনি জাদু বিদ্যার সব বই ও উপকরণ একটি সিন্দুকে বন্দী করে রেখে দেন। কিছুদিন পর জাদুচর্চা বন্ধ হতে থাকে (যদিও এখনও এসব বিদ্যা কিছু মানুষের চর্চায় আছে, ইহুদীদের গ্রন্থে তো এর একটি শাখাই আছে, নাম 'কাববালাহ'
। এসব ঘটনায় জাদুকররা ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় যে, তিনি নিজেই নাকি জাদু দিয়ে জ্বিন বশ করেন! অথচ তার এই ক্ষমতা ছিল আল্লাহর দান, একটি মুজিযা।
সুলাইমান (আ জীবনের একদম অন্তিমকালে এসে একটি বড় কাজ করেন। আদম (আ
এর সময় জেরুসালেমে ফেরেশতাদের তৈরিকৃত মসজিদুল আ"কসা, যা নুহ (আ
এর সময়কার মহাপ্লাবনের ধ্বংস হয়েছিল, তা তিনি পুনঃনির্মাণের হুকুম দেন জ্বিনদের। নির্মাণের সময়েই তার মৃত্যু হয়, কিন্তু তার দেহ আল্লাহর ইচ্ছায় লাঠির উপর ভর দিয়ে দাড়ানো থাকায় কেউ টের পায় না। কদিন পর ঘুণ পোকায় খাওয়া লাঠি ভেঙ্গে যাওয়ায় সবাই যখন ব্যাপারটা টের পায়, ততদিনে মসজিদের কাজ শেষ। এতে প্রমাণিত হয়, জ্বিন জাতি অনেক কিছু করতে সক্ষম, কিন্তু গায়েব জানতে নয়।
ই"হুদীরা দাবি করে, মসজিদুল আ"কসা নয় বরং একটি নতুন ইবাদতগৃহ নির্মাণ করেছিলেন সুলাইমান (আ যাকে তারা বলে হাইকেলে সুলাইমানি বা 1st temple of Solomon। তাদের মতে, বর্তমানে ওই স্থানে আবার হাইকেল প্রতিষ্ঠা করলে তাদের স্বর্ণযুগও আবার ফিরবে। এজন্যই ফি"লিস্তিন নিয়ে তাদের এত আগ্রহ।
যাহোক, সুলাইমান (আ এর মৃত্যুর পর তার বিশাল রাজত্বে ভাঙন শুরু হতে থাকে। তিনি নিজে বনী ইসরা"ইলের যে গোত্রের ছিলেন (বনী ইয়াহুদা), সে গোত্র বাদে বাকি ১০ গোত্র বিদ্রোহ শুরু করে। ফলে ফি"লিস্তিন দুভাগ হয়ে যায়- উত্তর ভাগের নাম ইসরা"ইল (Isr"ael) আর দক্ষিণ ভাগের নাম ইয়াহুদ (Judah)। অনেক বছর পর বনী ইয়াহুদ আবার ইসরা"ইল দখল করার পর বনী ইসরা"ইলের নাম পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল ই"হুদিতে। (বর্তমানে এটি একটি বিকৃত, বংশগত ধর্মে পরিণত হয়েছে, যা আর নতুন ই"হুদি কনভার্ট গ্রহণ করে না)
ধীরে ধীরে আবার গোমরাহী শুরু হয়, ফিরে আসে মূর্তিপূজা। এবার কিছু গোমরাহ আলেমও তৈরি হয়, যাদের প্ররোচনায় একের পর এক নবীদের হত্যা পর্যন্ত করা হয়। এদের মধ্যে ইলিয়াস (আ, যুলকিফল (আ
, মিকাইয়াহ (আ
এবং ইয়ার্মিয়াহ (আ
ছিলেন অন্যতম।
অতঃপর যা হওয়ার তাই হলো। খ্রিস্টপূর্ব ৫৭৮ সনে তৎকালীন বাবেল (বর্তমান ইরাক) থেকে আসিরিয়ান বাদশাহ বোখতে নসর (Nebuchadnezzar II) এসে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করে, মসজিদুল আকসা ধ্বংস করে দিয়ে যায় এবং পুড়িয়ে দেয় তাওরাত। আর সাথে নিয়ে যায় তাবুতে সাকিনা এবং জীবিত যেকজন অভাগা ছিল তাদের।
এরপর একদিন জেরুসালেমের এই ধ্বংসস্তূপ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সেই শহরেরই এক প্রাক্তন বাসিন্দা উজাইর। তিনি ভাবছিলেন, এখানে আর প্রাণের সঞ্চার সম্ভব হবে না কোনোদিন। এই কথা জানতে পেরে আল্লাহ তাকে সেখানেই ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। যখন উঠলেন, দেখলেন ১০০ বছর পার হয়ে গেছে, আর সেই মৃত শহর হয়েছে আবার লোকে লোকারণ্য! (আরো দেখুন সূরা বাকারাহ : ২৫৯)
এর কারণ, এর মাঝে ব্যবিলীয়দের হটিয়ে পারস্য রাজা সাইরাস এসে ইহুদীদের আবার জেরুসালেমে ফিরে যেতে দিয়েছেন। ফিরেই তারা আবার একই জায়গায় 2nd Temple বা হাইকেল বানিয়েছে।
কিছুদিন পর উজাইর (তিনি নবুয়্যত পেয়েছিলেন কিনা জানা যায়নি) একটি লুকিয়ে রাখা তাওরাত খুঁজে বের করেন এবং আবার প্রতিষ্ঠা করেন আল্লাহর আইন। এজন্য কেউ কেউ তাকে ডাকতে থাকে 'দ্বিতীয় মূসা', আর কেউ কেউ তাকে ডাকা শুরু করে 'স্বয়ং আল্লাহর পুত্র'! এভাবে তারা বিকৃত করতে থাকে আল্লাহর ধর্ম, আর হারাতে থাকে শ্রেষ্ঠত্ব।
চলবে…
©somewhere in net ltd.