![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বনী ইসরা"ইলীরা একদিনে ই"হুদিতে পরিণত হয়নি, বরং ধীরে ধীরে তারা আল্লাহর ধর্মকে পরিবর্তন করে, কুরআনের ভাষায়- 'স্বল্প মূল্যে বেঁচে'।
বোখতে নসরের ধ্বংসযজ্ঞের পর তাওরাত ও বনী ইসরা"ইলিদের বিপুল পরিমাণ ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিল। যাদের ব্যাবিলনে ধরে নেয়া হয়েছিল, তাদের কিছু মদীনা ও খাইবার এ পালিয়ে যায়। বাকিরা সেখানেই কাটাতে থাকে গোলামীর জীবন।
এ সময় ব্যবিলনে আল্লাহ দানিয়েল নামে একজন নবী পাঠান। তিনি আল্লাহর কাছে সকলের মুক্তি এবং জেরুসালেমে প্রত্যাবর্তনের জন্য দুআ করেন। আল্লাহ তাকে স্বপ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দেন যে শীঘ্রই তারা পবিত্র ভূমিতে ফিরবে এবং পরবর্তী কোনো এক যুগে প্রতিশ্রুত মাসিহ (ত্রাণকর্তা)-এর হাতে বিশ্বজুড়ে আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
স্বপ্ন মোতাবেক পারস্যের বাদশাহ সাইরাস (ফারসি- খসরু) এর সময় বনী ইসরা"ইল জেরুসালেমে ফিরে আসে। কিন্তু এরপর আবার আরেকটি নতুন গোমরাহীর সূচনা করে, যার নাম 'তালমুদ'। তাদের কিছু স্কলারদের মনগড়া বর্ণনায় রচিত হয় এটি। তাদের দাবি, মূসা (আ এর সাথে যারা তুর পাহাড়ে গিয়েছিলেন, তারা নাকি এসব ওহী লাভ করেছিলেন। এভাবে তারা দ্বীনকে আমূল পরিবর্তন করে ফেলে।
এমন এক ক্রান্তিকালে আল্লাহ্ পাঠান সেই মাসিহকে- ঈসা (আ, যিনি খ্রিস্টানদের সেই আরাধ্য জেসাস (Jesus)। তিনি এমন ব্যক্তি যার নানা এবং মা উভয়েই ছিলেন ভীষণ সম্মানিত এবং তাদের নামে কুরআনে সুরাও রয়েছে (সূরা ইমরান ও মারিয়াম)। তৎকালীন নবী জাকারিয়া ছিলেন তার তার খালু এবং নবী ইয়াহিয়া (John the Baptist) ছিলেন খালাতো ভাই, আলাইহিমুস সালাম।
ঈসা (আ এর জন্ম ছিল খুবই আশ্চর্যজনক- আদম (আ
এর মত কোন পিতা ব্যতীত। ঘটনাটি কুরআনে সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে-
"আর স্মরণ কর এই কিতাবে (বর্নিত) মারইয়ামকে, যখন সে তার পরিবারবর্গ থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব দিকের কোন এক স্থানে চলে গেল। আর সে তাদের নিকট থেকে (নিজকে) আড়াল করল। তখন আমি তার নিকট আমার রূহ (জিবরীল) কে প্রেরণ করলাম; অতঃপর সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রূপ ধারণ করল।মারিয়াম বলল, ‘আমি তোমার থেকে পরম করুণাময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করছি; তুমি সংযমশীল হও (সরে যাও)।’ সে বলল, ‘আমি তো কেবল তোমার রবের বার্তাবাহক, তোমাকে একজন পবিত্র পুত্র দান করার জন্য এসেছি’।" (সূরা মারইয়াম : ১৬-১৯)
এভাবেই অলৌকিক উপায়ে গর্ভধারন করেন মারিয়াম। তিনি দূরে একটি স্থানে একাকী চলে গেলেন এবং অপেক্ষা করতে থাকেন প্রসবের জন্য। অতঃপর সন্তান নিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলে সকলে তাকে দুশ্চরিত্রা ভেবে ভর্ৎসনা করতে থাকে। তখনই আল্লাহ ঈসা (আ এর প্রথম মুজিযা পেশ করেন- কোলের শিশু নিজ মুখে নিজেকে আল্লাহর বান্দা ও নবী ঘোষণা করে। কিন্তু বনী ইসরা"ইলী স্কলাররা তাও তাকে মেনে নেয়নি।
সেসময় বনী ইসরা"ইলীরা রোমানদের শাসনাধীন ছিল আর নিম্নোক্ত পাঁচ দলে বিভক্ত ছিল (আজকাল যেমন মুসলিমদের মাঝে দেখা যায়)-
১. ফারিসি: তালমুদকে মূল ওহী মানতো, সর্বদা শাসকদের পক্ষে রায় দিত
২. সাদুকি: ভাবতো সব কর্মের প্রতিদান দুনিয়াতেই দেয়া হবে
৩. কাতিবিন: লেখাপড়া জানতো, ওহী লিপিবদ্ধ করতো
৪. জিয়ালুট: আল্লাহর শাসন চাইলেও ছিল উগ্রপন্থী, তাদের আন্দোলনের কারণে রোমানরা ই"হুদীদের তাড়িয়ে দেয় (সামনে দেখবো)
৫. ইসেনি: ইবাদতে নিবেদিতপ্রাণ ছিল; এক তারাই মূলত ঈসা (আ এর অনুসারী ছিল
ঈসা (আ কে প্রথম থেকেই নানান বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়। বিভিন্ন মুজিযা (অন্ধ অসুস্থকে আরোগ্য দান, মৃতকে জীবিত করা ইত্যাদি) দেখানো সত্বেও বেশিরভাগ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়। যেহেতু ঈসা (আ
দেশ শাসনের পরিবর্তে মানুষদের আগে দ্বীনমুখী করতে বেশি উদ্যোগী ছিলেন, তাই তারা তাকে মাসিহ হিসেবে মেনে নেয়নি।
এক পর্যায়ে ফারিসি স্কলারদের প্ররোচনায় রোমানরা ঈসা (আ হত্যা করতে পরিকল্পনা করে। তখন আল্লাহ আরেক ব্যক্তি (তার অনুসারী অথবা প্রতারক)-কে তার মতো দেখতে বানিয়ে দেন, যাকে রোমানরা ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করে। আর ঈসা (আ
? আল্লাহ তাকে আসমানে উঠিয়ে নেন এবং তার অসমাপ্ত মিশনের জন্য পরবর্তীতে আবার পৃথিবীতে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। (দেখুন সূরা নিসা: ১৫৫-৫৭)
এ সমস্ত ঘটনার পর ইহুদীদের ওপর আল্লাহ আবার অত্যাচারী এক বাদশা চাপিয়ে দেন, যে ছিল রোমান সম্রাট 'টাইটাস'। সত্তর খ্রিস্টাব্দে ই"হুদিদের আন্দোলন দমনের করার জন্য নিজ বাহিনী নিয়ে সে আক্রমণ করে এবং দ্বিতীয়বারের মত জেরুসালেম ও হাইকেল সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়।
কুরআনে বনী ইসরা"ইলের উপর পাঠানো দুটো বড় দুর্যোগের কথা উল্লেখ আছে। অনেকের মতে সেগুলো হলো- বোখতে নসর ও টাইটাসের আক্রমণ। (দেখুন সূরা বনী ইসরা"ইল: ৪-৭)
দ্বিতীয়বার বিতাড়িত হওয়ার পর ছন্নছাড়া ই"হুদিরা দুহাজার বছর আর জেরুসালেমে ফিরতে সক্ষম হয়নি, এমনকি নিজেদের সুদি কারবারের কারণে অন্য কোন দেশেও বেশিদিন টিকতে পারেনি। এই সেই মাগদুব (অভিশপ্ত) যাদের মত হওয়া থেকে আমরা আল্লাহর কাছে প্রতি ওয়াক্তে পানাহ চাই।
চলবে..
©somewhere in net ltd.