নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ আমি আমার কেন পাখির মত মন!

অনির্দিষ্ট কালের জন্য আমি ছুটিতে....

রমাকান্তকামার১১০১১৪৫

রমাকান্তকামারের ব্লগে আপনার বিচরণ আনন্দময় হোক :) ফেসবুক- http://facebook.com/daedalus145

রমাকান্তকামার১১০১১৪৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্রিকমিথঃ ডিডেলাসের ডানা

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৩৮

গ্রিক মিথোলজির বেশ চমকপ্রদ যে গল্পটা এখন বলবো তা আমাদের সবারই কমবেশি জানা। পুরনো মদ নতুন বোতলে পরিবেশিত হবে আর কি।

-----------------------------------------------------

অনেক অনেক দিন আগের কথা। গ্রীসের এথেন্সে বাস করতেন মহা প্রতিভাধর এক ব্যক্তি। নাম তার ডিডেলাস। তিনি ছিলেন একাধরে স্থপতি, ভাস্কর আর আবিষ্কারক – বলা চলে সে যুগের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি।



নসোসের মিনোয়ান প্রাসাদ যাতে রয়েছে অসাধারণ সব ফ্রেসকো আর কারুকার্যময় আসবাবে সজ্জিত ১৩০০ কক্ষ, ডিডেলাসেরই পরিকল্পনায় নির্মিত হয়।





বলা হয়ে থাকে, ডিডেলাসের তৈরি ভাস্কর্যগুলো এতটাই জীবন্ত দেখাতো যে সেগুলোর হাত পা বেঁধে রাখা হত পাছে তারা হাঁটাচলা করে!



স্বমহীমায় উজ্জ্বল ডিডেলাসের জনপ্রিয়তা তখন আকাশচুম্বী। কিন্তু একটা ঘটনা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিলো। তার বোন, ছেলে ট্যালাসকে ডিডেলাসের কাছে পাঠালেন শিক্ষানবিস হয়ে মামার কাছ থেকে কাজ শিখতে। ট্যালাস বেশ মেধাবী। সে মেধার সাক্ষর কিছুদিনের মধ্যেই সে রাখলো। সাপের দাঁত দেখে সে তৈরি করলো বিশেষ এক করাত। এই করাত আবিষ্কারের কারনে ট্যালাস বেশ বাহবা কুড়িয়েছিল যা তার জন্য কাল হল।

মামা ডিডেলাসের মনে শঙ্কা জন্মালো যে ট্যালাস হয়তো তাকেও ছাড়িয়ে যাবে নানারকম আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। পেশাগত ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে ডিডেলাস এথেন্সের এক্রোপলিস নামের এক পাহাড় থেকে ট্যালাসকে ফেলে দেয় চিরতরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য। এ সময় দেবী এথেনা ট্যালাসের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে তাকে তিতির পাখিতে পরিণত করেন।



ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে অপরাধ বোধ থেকে ডিডেলাস স্বয়ং পাড়ি জমান অথবা হয়তো নরহত্যার দায়ে তাকে নির্বাসিত করা হয় ক্রিটে।



ক্রিটের রাজা মিনোস। ডিডেলাস তার হয়ে কাজ করতে শুরু করলেন।



সময় গড়ালো। রাজা মিনোসেরই এক দাসী নক্রেটকে বিয়ে করলেন ডিডেলাস। তাদের ঘরে আসলো দুই সন্তান - ল্যাপিক্স আর ইকারাস।

-------------------------------------------------------



একবার রাজা মিনোস স্বপ্নে দেখলেন সমুদ্রদেবতা পসিডন তার নামে একটা ষাঁড় উৎসর্গ করার জন্য বলছেন। সমুদ্র থেকেই উঠে এলো সেই ষাঁড়। শ্বেতশুভ্র তার গায়ের রঙ।



মিনোস এত সুন্দর ষাঁড়টিকে উৎসর্গ করতে রাজি হলেন না। উল্টো নিজের কাছেই রেখে দিবেন বলে মনস্থির করলেন। এতে পসিডন রুষ্ট হলেন। ক্ষুব্ধ পসিডন রাজা মিনোসকে শাস্তি দেবার জন্য দেবী আফ্রোদিতির সাহায্যে সেই ষাঁড়ের প্রেমে ফেললেন মিনোসের রানী পসিফিকে।



ডিডেলাসের সাহায্যে পসিফি তৈরি করে নিলেন একটি কাঠের গরু যার ভিতরটা ফাঁপা- পসিফিকে ধারন করার জন্য।

পসিডনের সেই ষাঁড়ের সাথে মিলিত হলেন রানী পসিফি আর জন্ম দিলেন এক অদ্ভুত সন্তানের, মিনোটর বা ষাঁড়মানব - আধেক ষাঁড়, আধেক মানুষ।









লজ্জিত রাজা মিনোস চাইলেন এই মিনোটরকে কোথাও লুকিয়ে রাখতে। তিনি সরণাপন্ন হলেন ডিডেলাসের। ডিডেলাস তখন রাজাকে বানিয়ে দেন সেই বিখ্যাত ল্যাবিরিন্থ বা গোলকধাঁধাঁ। সেখানে রাখা হল মিনোটরকে। রাজা মিনোস তার অবাধ্য প্রজাদের ল্যাবিরিন্থে আটকে রাখতেন। শেষপর্যন্ত তারা ভয়ঙ্কর মিনোটরের পেটে যেত।





একবার ক্রিট আর এথেন্সের মধ্যে যুদ্ধ হয় যার শেষটা হয় এমন এক মীমাংসার মধ্য দিয়ে যে প্রতি নয় বছর অন্তর এথেন্স থেকে সাতজন নরনারীকে পাঠাতে হবে যাদেরকে গোলকধাঁধায় ঢুকানো হয় মিনোটরের খাদ্য হিসেবে। এই অমানবিক প্রথা বন্ধ করতে এথেন্সের বীর থেসিয়াস এলেন ক্রিটে।



রাজকন্যা আরিয়াদনে প্রথম দর্শনেই থেসিয়াসের প্রেমে পড়ে গেলেন। কিন্তু থেসিয়াসের দিকে চেয়ে আছে এথেন্সবাসী। তাকে হত্যা করতে হবে ভয়ংকর মিনোটোরকে। বড় কঠিন সে কাজ। যদিওবা সে মিনোটরকে মারতে সক্ষম হয়ও, ল্যাবিরিন্থ থেকে বের হওয়া তো এক প্রকার অসম্ভব।







তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এলো ল্যাবিরিন্থের আবিষ্কর্তা নিজেই। ডিডেলাস আরিয়াদনেকে একটি সুতার বল দিলেন যার এক প্রান্ত রাজকন্যার হাতে ধরা থাকলো আর অন্য প্রান্ত নিয়ে ল্যাবিরিন্থে ঢুকলেন থেসিয়াস। বিপুল বিক্রমে প্রবল এক লড়াইয়ে থেসিয়াস মিনোটরকে হত্যা করতে সক্ষম হলেন। এরপর সুতা ধরে বেরিয়ে এলেন ল্যাবিরিন্থ থেকে। আরিয়াদনে আর থেসিয়াস ডিডেলাসকে তার সাহায্যের জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ক্রিট ত্যাগ করলেন।



মিনোটরের মৃত্যু আর রাজকন্যার থেসিয়াসের হাত ধরে পালানোর খবর শুনে রাজা মিনোস প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হলেন। এর পেছনে ডিডেলাসের যোগসাজশের কথা শুনে তিনি ডিডেলাস আর তার পুত্র ইকারাসকে বন্দী করলেন ল্যাবিরিন্থে মতান্তরে কোন এক টাওয়ারের ভিতর।



ডিডেলাস বন্দী থাকার মানুষ নন। তিনি পালানোর পথ খুঁজতে থাকলেন। ডিডেলাস এত সূক্ষ্মভাবে ল্যাবিরিন্থের ডিজাইন করেছিলেন যে তার নিজের পক্ষেও বের হওয়ার পথ খুঁজে পাওয়া দুঃস্বাধ্য ছিল। এছাড়াও ল্যাবিরিন্থের বাইরে আর সমুদ্রপথে ছিল কঠোর প্রহরা। বাকি রইলো আকাশপথ। ডিডেলাস মনস্থির করে ফেললেন। পালানোর একমাত্র রাস্তাই হল আকাশপথ।



পাখির পালক আর মৌচাক থেকে মোম নিয়ে তিনি তৈরি করলেন বিশাল সাইজের ডানা। সেই ডানা রশি দিয়ে নিজের আর পুত্র ইকারাসের গায়ে বেঁধে দিলেন। তাদের পরিকল্পনা উড়ে আকাশপথে ক্রিট থেকে পালানো।







উড্ডয়নের প্রাক্কালে ডিডেলাস পুত্র ইকারাসকে বারবার করে সাবধান করে দিলেন যেন সে খুব নিচ দিয়ে বা খুব উপর দিয়ে না উড়ে। খুব নিচ দিয়ে উড়লে সাগরের পানি দিয়ে ডানা ভিজে যেতে পারে আর খুব উপর দিয়ে উড়লে সূর্যের তাপে মোম গলে যেতে পারে।



কিন্তু কিছুদূর উড়ে ইকারাস ভুলে গেল পিতার সাবধানবানী। সে উড়তে উড়তে পৌঁছে গেল সূর্যের কাছে। ফলে মোম গলে গিয়ে পালক খুলে পড়তে শুরু করলো। সাগরে পড়ে সলিল সমাধি হল ইকারাসের। শত চেষ্টা করেও পুত্রকে বাঁচাতে পারলেন না ডিডেলাস।







যেখানে ইকারাস পড়েছিল, তাকে স্মরণ করে সাগরের সেই অংশের নাম দেয়া হয় ইকারিয়া।



ডিডেলাস গিয়ে পৌঁছালেন ইতালির দ্বীপ সিসিলিতে। দুঃখ ভারাক্রান্ত পিতা যখন পুত্রের শেষকৃত্য করছিলেন তখন পুরো সময়টা অবলোকন করছিল একটা তিতির পাখি। সেই পাখি আর কেউ নয়, ডিডেলাসের বোনের ছেলে ট্যালাস। ডিডেলাস সেখানে একটা এপোলো মন্দির বানান। সেই মন্দিরে চিরদিনের জন্য ঝুলিয়ে দেন তার ডানা দুটো।



সিসিলিতে ডিডেলাস ছিলেন রাজা ককেলাসের আশ্রয়ে।

এদিকে ক্রিটে ডিডেলাসের বিস্ময়কর পালানোর কথা চাউর হল। রাজা মিনোস ডিডেলাসকে ধরার জন্য এক বুদ্ধি করলেন। তিনি একটি ধাঁধাঁর উত্তর জানার জন্য আশেপাশের রাজ্য গুলোতে লোক পাঠালেন। মিনোস জানতেন এর উত্তর ডিডেলাস ছাড়া দ্বিতীয় কারও পক্ষে দেওয়া অসম্ভব।



ধাঁধাঁটি ছিল এরকম একটা পেঁচানো ঝিনুকের এক প্রান্ত দিয়ে সুতা ঢুকিয়ে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের করতে হবে।

ডিডেলাস খুব সহজেই এক প্রান্তে একটি পিঁপড়া সাথে সুতা বেঁধে ছেড়ে দিলেন আর অন্য প্রান্তে দিলেন মধু যার গন্ধে পিঁপড়া অন্য প্রান্তে চলে গেল নিজের গায়ের সাথে বাঁধা সুতা নিয়ে।



সিসিলির রাজা ককেলাসের কাছে উত্তর পেয়ে মিনোস তাকে বললেন ডিডেলাসকে তার হাতে তুলে দেয়ার জন্য। ককেলাস মিনোসকে বলেন ডিডেলাসকে তিনি পেতে পারেন কিন্তু তিনি আগে যেন ককেলাসের চৌবাচ্চায় গোসল করে নেন। মিনোস রাজি হয়ে গেলেন। চৌবাচ্চায় নামার সাথে সাথে ককেলাসের মেয়েরা ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে মিনোসকে মেরে ফেলে।



এই ভাবে জীবনাবসান হয় অত্যাচারী রাজা মিনোসের আর সেই সাথে ডিডেলাসের ফেরারী জীবনেরও। ডিডেলাসের বাকি জীবন সিসিলিতেই কাটিয়ে দেন।



আর এভাবেই শেষ হল গ্রিক মিথোলজির সবচে’ চৌকষ ভাস্কর ও আবিষ্কারক ডিডেলাসের গল্প।







ছবি ও তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

(শেষ ছবিখানা ব্যতিরেখে, উহা রমাকান্তের নিজের ছবি :P )



ডিডেলাস ও ইকারাসের কাহিনী নিয়ে আরও পড়তে পারেনঃ

#।।--ইকারাস এবং ডিডেলাস: আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন--।।



#গ্রীক ট্রাজেডীঃ ইকারুসের ডানা

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০৬

এস.কে.ফয়সাল আলম বলেছেন: কাহিনীটা অনেক আগেই পড়েছিলাম, তবে শুরুর দিকেরটুকু বাদে।

ভাল লাগলো আবার পড়তে।

আচ্ছা এই কাহিনী নিয়ে কোন মুভি আছে কি ?

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৩

রমাকান্তকামার১১০১১৪৫ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

m.imdb.com/title/tt1402976/

২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৮

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
খালি জানতাম ইকারাস পাখা লাগিয়ে সুর্যের কাছে চলে যাবার জন্য পাখা গলে যায় এবং সে নিচে পড়ে মারা যায়।


পুরো ব্যাপারটা ক্লীয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৪৫

রমাকান্তকামার১১০১১৪৫ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও পড়ার জন্য।
ভাল থাকবেন।

৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:০৩

সুমন কর বলেছেন: যদি কিছু মনে না করেন, এই ধরনের একটি পোস্ট গতকাল দেখেছিলাম। পোস্টটি কি আপনার ছিল?

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:০৮

সুমন কর বলেছেন: আপনিই আজ পোস্টটি দিয়েছিলেন। সকালে। আবার দিলেন কিন্তু রিপোস্ট লিখেন না। এটা কি পাঠক পাবার জন্য নাকি কিছু এডিট করেছেন?

৫| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:২০

রমাকান্তকামার১১০১১৪৫ বলেছেন: @সুমন কর ভাই, ভুল করে ড্রাফটে নিয়ে গিয়েছিলাম পরে দেখি মেইনটা নাই। পুনরায় 'ব্লগে প্রকাশ' দিলে যে আগের পোস্টটা রিঅ্যাপেয়ার না করে নতুন করে পোস্ট হবে এটা বুঝি নাই (নিছক অজ্ঞানতা থেকে আর কোন ব্যাপার স্যাপার নাই)


৬| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৩৩

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: রমাকান্ত ভাই আপনার লেখাটি পড়ে ভালো লাগল।






ধন্যবাদ।






ধন্যবাদ।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৪৬

রমাকান্তকামার১১০১১৪৫ বলেছেন: ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো।
শুভ কামনা।

৭| ০১ লা মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:০৬

জুন বলেছেন: প্রিয় বিষয়টি আবার পড়লাম রমাকান্ত আর যথারীতি ভালোলাগলো ভীষন।
+

০৫ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:২০

রমাকান্তকামার১১০১১৪৫ বলেছেন: শুকরিয়া :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.