নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন স্বপ্নবাদী।স্বপ্নের কথা বলি।আমার স্বপ্ন,চারপাশের মানুষের স্বপ্ন... ....কখনো কখনো অনেকের স্বপ্ন নিজের বলে মনে হয়। আমি সবার স্বপ্নের কথাই বলার চেষ্টা করি।
মামনি,
তুমি হয়তো আমাকে চিনবে না। তোমার আম্মু তো তোমার সাথে মনে মনে অনেক কথা বলতো। আমি কখনো বলিনি। আজ তাই বলতে বসলাম। আমি তোমার জন্ম না দিতে পারা পিতা। মানুষের মনে কত স্বপ্ন থাকে, থাকেনা আম্মু? আমাদের মনেও ছিলো। আমি আর তোমার আম্মু, কত রাত পার করেছি তোমার স্বপ্ন নিয়ে।
তুমি কিভাবে হবে, তুমি হবার সময় আমি তোমার আম্মুর হাত ধরে ডেলিভারি রুমে থাকবো। তোমার আম্মু ব্যাথায় কষ্ট পাবে, আর আমি তার নরম হাত ধরে রেখে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলবো, আরেকটু সহ্য করো পাখি, এইতো আরেকটু। জোরে জোরে শ্বাস নাও, এই তো আছি আমি তোমার পাশে, তোমার খুব কাছে। কোন ভয় নেই। তোমার আম্মু তো একটুতেই অস্থির হয়ে যায়। রেগে যায়। তুমি তো জানো। সে হয়তো আমাকে ব্যাথায় গালি দিবে, পানি দিতে বলবে। আমি একটু করে পানির বোতল মুখের কাছে ধরবো, আর বলবো, অল্প করে খাও। শুধু ঠোঁটটা ভিজিয়ে নাও।
হ্যা, তোমার আম্মুকে আমি পাখি বলে ডাকি। ও যেমন আমাকে ডাকে উটপাখি বলে, আর আমি ওকে লক্ষ্মীপ্যাঁচা। তুমি হতে আমাদের পাখির ছানা। ড্যাবড্যাবা চোখের নরম তুলতুলে শ্যামবর্ণের পাখির ছানা। তোমার আম্মু চাইতো তুমি আমার মত হও। আমার গায়ের রঙ পাও। আমার কেন যেন বিশ্বাস ছিলো তুমি হতে তোমার আম্মুর মতো। টকটকে ফর্সা আর ছোটখাটো।
আম্মুটা,
তোমার আম্মুর সাথে আমার প্রথম দেখা হবার আগেই আমরা তোমার নাম ঠিক করে ফেলেছিলাম। ছেলে হবে না মেয়ে, সেটা নিয়ে সেকি তুমুল ঝগড়া! আর নাম ঠিক করা নিয়ে। ছেলে হলে নাম রাখা হবে ইলিশ, তোমার আম্মু বলতো, অথবা প্রেম। আমি ক্ষেপে যেতাম। এটা কোন নাম হলো? এটা কি বাংলা সিনেমা? আমার ছেলের নাম হবে প্রেম? ধুর! আর ইলিশ-ই বা কেমন? তোমার আম্মু খিল খিল করে হাসতো, আর তার মায়াভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতো, না আমি আমার ছেলের নাম রাখবো প্রেম। মেয়ের নাম অনল আর ছেলের নাম প্রেম , অথবা ইলিশ। আসলে কি জানো, আমরা দুজনেই দেশটাকে খুব ভালোবাসি। তোমার আম্মুর সাথে যেবার আমার প্রথম দেখা হয়, সেবার তোমার আম্মু তার পিঠে বাংলাদেশের ম্যাপ ও পতাকার ট্যাটু করায়। কি অদ্ভুত এক মানুষ, বলো? ইলিশ যেহেতু আমাদের জাতীয় মাছ, সেজন্য তোমার ভাইয়ার নাম রাখতে চেয়েছে ইলিশ। কিন্তু মেয়ের ব্যাপারে দুজনেই একমত ছিলাম, মেয়ের নাম হতে হবে অনল। আমাদের ভালোবাসার অনল!
ছোট্টপাখিটা,
তোমার আম্মু জানো, শাকিরার খুব পাগল। সে পারফিউম ইউজ করে শাকিরার, সে শাকিরার গান শুনলে লাফ দিয়ে ওঠে। শাকিরা একটা গান বের করলো, হৃতপিন্ড পাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে একতা মানুষ। তখন তোমার আম্মুর সাথে আমার রাগারাগি চলছে। তোমার আম্মু এই গানটা কতবার তার স্টোরিতে দিয়েছে। আর আমার কাছে যখন এসেছে, তার চোখে দেখেছি আমি পানি। সে বলতো, আমার মেয়েকে আমি শাকিরা বানাবো। শাকিরার মত করে নাচবে কোমর দুলিয়ে আর গান গাইবে। বিশ্বাস করো, তোমার আম্মু নাচতেও পারেনা, গাইতেও চায় না। দু এক লাইন গুনগুনিয়ে শুধু। কিন্তু তার স্বপ্ন সে শাকিরার মতো করে তোমাকে বড় করবে। রঙ বেরঙ্এর জামা কাপড় কিনে দেবে, তোমাকে সুন্দর করে সাজাবে। তোমার আম্মু খুব সুন্দর করে সাজতে পারে জানো? রাস্তায় বের হলে ওর দিকে সবাই তাকিয়ে থাকতো। আর সে চলতো বুক ফুলিয়ে সবার মাঝে। আমার এত ভালো লাগতো। পৃথিবীর অদ্ভুত সুন্দর এই আত্মবিশ্বাসী মানুষটা আমার, আমার ভালোবাসা, আমার পাখিটা। সে যখন সাজতো, আমি অপলক তাকিয়ে থাকতাম। জানো আম্মু, আমার মনে হতো আমি আসলে আগের জন্মে কোন পূন্য করেছিলাম যে তোমার আম্মুর মত এত সুন্দর একটা মানুষ আমার জীবনে এসেছিলো। আমি তার চারপাশে ঘুর ঘুর করতাম আর গান গাইতাম। দেশের গান। জয় বাংলা বাংলার জয়। তোমার আম্মু একটু পর পর আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসতো।
হইলজার বডু,
পৃথিবীতে আটশ কোটি মানুষ। তার ভেতর তুমি হতে আরো একজন। তুমি হয়তো জানো না, তুমি কত সৌভাগ্যবান একজন হতে। তোমার আব্বু একেবারে হেলাফেলা করার মত কেউ ছিলোনা। আর তোমার আম্মু তো নিজ গুনে গুনান্বিতা। এত অসাধারন রান্না করতো। জানো, আমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুস্বাদু মাটন রান্না তোমার আম্মুর হাতে খেয়েছিলাম। আমি যেবার গেলাম তোমার আম্মুর কাছে, সে এগারো পদ রান্না করে পুরা প্লেট ভরে আমাকে আপ্যায়ন করেছিলো। তাকে আমি বিয়ে করেছিলাম মাথায় সিঁদুর পরিয়ে। অনল, তোমার আম্মু হয়তো বোঝেনি, সে আমার সাথে সাত জন্মের জন্য বাঁধা পড়ে গিয়েছে। সে যেখানেই থাকুক, পৃথিবীর যে প্রান্তেই, আমার সাথে আর দেখা না হোক কোনদিন, এই জগত সংসারের কোথাও যদি একটা প্যাঁচাও বেঁচে থাকে, আমাদের ভালোবাসা বুকে জাগ্রত থাকবে রে মা। তুই জন্মাসনি আমার ঔরসে, হয়তো জন্মাবি অন্য কারো ঘরে। আমি দূর থেকে যদি পারি, দেখবো। বিশ্বাস কর রে মা, আমার খুব ভালো লাগবে। আমার অনলের জন্ম তো হলো। আমার না হোক, আমার লক্ষ্মীপ্যাঁচার পেটে তো হয়েছে।
কালাচান পাখি,
তোর বাপটা খুব অসহায় রে মা। এত ভালোবেসেও তোর বাপ হতে পারলো না। পৃথিবীর নিয়ম এত কঠিন, এত নিষ্ঠুর, এত দয়ামায়াহীন, কপালের এক টিপের ভেতর এতটুকু জায়গা হলোনা তোর বাপটার। মামনি, মন খারাপ করবা না। জানো, এত সুন্দর এই পৃথিবীর প্রতিটা দেশ তোমার হাত ধরে দেখার কথা ছিলো আমার আর তোমার আম্মুর। তা না হলে কি হবে, তোমার আম্মু নিশ্চয়ই আমাদের স্বপ্নটা পূরণ করবে। আমি নাহয় ছায়া হয়েই পাশে রবো। তোমার আর তোমার মায়ের পাশে পাশে রয়ে যাবো আমি আমৃত্যু। যদি কোনদিন মনে হয়, আমি আছি, পৃথিবীর যে কোনেই থাকি না কেন, যদি বেঁচে থাকি রে মা, আমি তোমার বা তোমার মায়ের যেকোন বিপদে পাশে আছি। তোমার আম্মুর তো খুব আত্মসম্মানবোধ, কোনদিন হয়তো আর চাইবে না যোগাযোগ করতে। তুমি কইরো রে মা। জানিনা এই চিঠি তোমার হাতে পৌছাবে কিনা। জানিনা তোমার জন্ম হবে কিনা। আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি, এই নশ্বর ধরায় তোমার পদার্পন হোক বা না হোক, মা, অনল, আমি তোমার বাবা হিসেবেই রয়ে যাবো, আমৃত্যু।
ইতি
তোমার আব্বু
উটপাখি
১২ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৩:৩৮
মাহ্মুদুল হক মুন্সী বলেছেন: না রে ভাই, আমি এটা এই প্রথম লিখলাম। এখানেই টাইপ করেছি।
২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৬:৪৪
রোকসানা লেইস বলেছেন: মন খারাপ করা লেখা। আশা করি কল্পনা।
নিজের ঘটনা হলে কঠিন অবস্থা। ভালো থাকুন
১২ ই জানুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৪:১৩
মাহ্মুদুল হক মুন্সী বলেছেন: হা হা হা, হয়তো কল্পনা, হয়তো সত্যি, কে জানে
আপনিও
৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৭:১৫
আলামিন১০৪ বলেছেন: পুরোটা তিন-তিনবার পড়লাম মুন্সী ভাই। কাহিনীর আগা-মাথা কিছই বুঝলাম না। শিরোনাম দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম stillbirth, পরে মনে হলো পরকিয়া কিন্ত তাও না, তাহলে কি Separation Case? কি বুখিয়েছেন আসলে? হিন্দু পরিবারে বিবাহ-বিচ্ছেদ নেই, জানেন তো? ভাষাশৈলী ভালো, লিখতে থাকুন।
১৪ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৬
মাহ্মুদুল হক মুন্সী বলেছেন: হিন্দু না তো, মুসলিমও না। ওরা মানুষ। পরিবার হতেই হবে তাও না। ওরা পার্টনার। হতে পারে না?
৪| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৩৭
নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: রোকসানা লেইস বলেছেন: মন খারাপ করা লেখা। আশা করি কল্পনা।
নিজের ঘটনা হলে কঠিন অবস্থা। ভালো থাকুন
রোকসানা আপার সাথে একমত। ভালো থাকুন সবসময়। শুভ সকাল।
১৪ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৭
মাহ্মুদুল হক মুন্সী বলেছেন: অনেক কৃতজ্ঞতা, ভালো থাকবেন।
৫| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:৪২
বিজন রয় বলেছেন: অনেক সুন্দর। অনেক দরদ দিয়ে লেখা হয়েছে।
আপনাকে স্যালুট।
১৪ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৮
মাহ্মুদুল হক মুন্সী বলেছেন: দরদ ছাড়া তো লেখা বেরোয় না বিজন দা।
স্যালুটের কিছু নেই, ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো
৬| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:২০
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।
দারুন আবেগময়।
১৪ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৮
মাহ্মুদুল হক মুন্সী বলেছেন: ধন্যবাদ, ভালোবাসা জানবেন
৭| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:২১
শায়মা বলেছেন: তোমার লক্ষীপেঁচার ছবি তুমি আমাকে একদিন দেখিয়েছিলে ভাইয়া। এমন মায়াবী চোখ এই দুনিয়ায় নেই এই রকম কিছু একটা বলেছিলে। কিন্তু সে আর তোমার সাথে নেই এটা যদি গল্প না হয় শুধুই তো জেনে খারাপ লাগছে ভাইয়া।
আর গল্প হলে ঠিক আছে। দুঃখের গল্প তবুও ঠিক আছে। নয়ত ....
১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:০৯
মাহ্মুদুল হক মুন্সী বলেছেন: আপা, তারপর কত জল গড়িয়ে গেলো রাইন নদীতে.। হা হা হা
জীবন তো গল্পই, আর গল্পই জীবন। কিছু সত্যি আর কিছু কল্পনা মিলিয়েই লেখক সৃষ্টি করেন দৃশ্যকল্প
৮| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: মনকে কেম বিষণ্ণ করে দেয়া লেখা।
১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:০৯
মাহ্মুদুল হক মুন্সী বলেছেন: মন খারাপ করে দেবার জন্য দুখিত
৯| ১৪ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২৪
আহমেদ জী এস বলেছেন: মাহ্মুদুল হক মুন্সী ,
অদ্ভুত আকুতি। দুঃখময় ।
১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:১০
মাহ্মুদুল হক মুন্সী বলেছেন: কৃতজ্ঞতা ভাই
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৬:৪২
শ্রাবণধারা বলেছেন: এটি একটি অপূর্ব সুন্দর লেখা। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে লেখাটা বোধহয় অনেক অনেক দিন আগে এই ব্লগেই পড়েছিলাম।
লেখা টা কী নতুন আর আমার এই আগে পড়ার অনুভুতিটা কী Déjà vu টাইপ কিছু?