![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।
দরজায় প্রথমে বেশ ভদ্রস্থ, মৃদু, মোলায়েম খটখট নকের শব্দ । উঠে গিয়ে দরজা খুলতে আলসী লাগায় মটকা মেরে শুয়ে রইলাম । যে নক করছে সে নিশ্চয়ই আরো দু - তিনবার নক করার পরও সাড়া না পেয়ে হতাশ হয়ে চলে যাবে । হিসেবে ভুল ছিলো । এরপর দ্রিম দ্রিম শব্দে আমার ঘরের চিকন পাল্লার কাঠের দরজায় নির্ঘাত দুইটা লাথির আওয়াজ । ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে দরজা খুলতে তাড়াতাড়ি করে হাঁটা ধরলাম । যেই আসুক তার কোন ভদ্রতা জ্ঞান নেই এবং লাথির ধরনে বোঝা যায় দরজা না খুললে তার দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকার প্ল্যান আছে!
- কে!?
কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না । তবে দরজার ওপাশ থেকে নিজের পরিচয় দেয়ার বদলে এবার দরজায় যেন লাথির বদলে বজ্রপাত । কপাট ইঞ্চিখানেক সামনের দিকে চলে আসায় ফাঁক দিয়ে বাইরের আলো দেখে ফেললাম, ছিটকানি খুলে মেঝেতে পড়ার দশা । আরো একবার লাফ দিয়ে উঠে, হোঁচট খেয়ে দরজার দিকে দিলাম জানপ্রান দৌড়,মানে দিতেই হলো । তাড়াহুড়ায় আরেকটু হলে টি - টেবিলের কানায় উষ্টা লেগে নখ উঠানোর বন্দোবস্ত করা থেকে বেঁচে গিয়ে দরজা খুলে দেখি এক অতি পরিচিত কিম্ভূত মূর্তি । গায়ে কাগজ দিয়ে বানানো আলখাল্লা টাইপ কিছু একটা । প্রথম দেখায় মনে হয় খবরের কাগজ, ভালোমতো তাকালো বোঝা যায় ওগুলো আসলে বইয়ের পাতা । একটার সাথে আরেকটা আঠা দিয়ে জোড়া লাগিয়ে জামার মতো বানিয়ে ফেলা হয়েছে । দুই পাশে দুইটা বড় বড় পকেটও দেখা যাচ্ছে । এক পকেট থেকে উঁকি দিচ্ছে স্কেল, কলম, ইরেজার, মার্কার, পেন্সিল ,ক্যালকুলেটর এসব আর অন্য পকেট থেকে অর্ধেক বের হয়ে আছে বিশাল একতাড়া কাগজ; ক্লাস নোট, আর্টিকেল বা লেকচার শিট বোধহয় । চোখে মোটা কাঁচের চশমা, যার আবার একটা ডাটি ভাঙ্গা বলে কালো রঙ্গের সুঁতা দিয়ে কানের সাথে বেঁধে রাখা ।
দর্শনীয় মূর্তি, সন্দেহ নেই ।
কিন্তু আমি যথারীতি একেবারে ছোটবেলার মতোই আদি ও অকৃত্রিম আতংক নিয়ে তাকিয়ে রইলাম । কয়েক সেকেন্ড পর চিনতেই পারি নি এমন ভান করে ঢোঁক গিলে চিঁ চিঁ গলায় জিজ্ঞেস করি,
- আপনি কে? এতো সকালে কাকে চান?
জবাবে আমার দিকে তাকিয়ে লোকটা দাঁত বের করে একটা হাসি দিলো । সব দাঁত একেবারে কুঁচকুঁচে কালো, ডান পাশের একটা দাঁত তামা দিয়ে বাঁধানো । হাসার সময় ওখানে সূর্যের আলো পড়ে ঝিক্ করে উঠল । বিভৎস হাসি! সব মিলিয়ে শিউরে না উঠে পারা গেলো না । দরজার আরেকটু পিছনে গিয়ে বন্ধ করার প্রস্তুতি নিয়ে চোখের সামনে জলজ্যান্ত নিজের উপস্থিতিকেই অস্বীকার করে বললাম ;
- বাসায় কেউ নাই । মাফ করেন ।
এ কথা শুনে তার মুখের হাসিটা আরেকটু বড় হয় । যেন আমি এইমাত্র খুব মজার কোন কিছু বলেছি ।
- আমারে চিনো নাই বাবাজী খালিদ রহমান?
- না না না । অন্য দিকে যান ।
দরজা তাড়াতাড়ি লাগিয়ে ফেলতে যাই আর সাথেসাথে সে চৌকাঠে পা দিয়ে আটকে ফেলে ।
- প্রতিবার এই একই কথা । সেই ক্লাস ওয়ানের ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুনে আসতেছি । তুমি আর বদলাবা না । এখন দেখি সরো তো । কাজ আছো ।
আমাকে ধাক্কা দিয়ে একপাশে সরিয়ে দিয়ে সে ঘরে ঢুকে পড়ে । আমি বেরোন বেরোন বলে চেঁচিয়ে উঠতে উঠতে দেখি সে ঘরের মাঝখানে চলে গেছে । তারপর শীষ্ বাজাতে বাজাতে আমার নিজের লাইব্রেরি আর কম্পিউটারের মাঝখানের জায়গাটাতে এমন পজিশনে চেয়ার নিয়ে বসে পড়ে যে তাকে পেরিয়ে ঐ দুই জায়গায় পৌছানো খুবই মুশকিল । মোবাইলটা চার্জে লাগানো ছিলো । চার্জ থেকে সেটটা আলতো করে খুলে নিয়ে টাচস্ক্রীনে আঙ্গুল ঘষাঘষি করতে করতে লোকটা জ্বীব দিয়ে আঠসোসের চুকচুক শব্দ করলো ।
- নতুন কেনা মোবাইলটারও দেখি ছাল - বাকলা তুইলা ফেলছো । সারাদিন এরে নিয়াই থাকো নাকি? দেখি বই - খাতার কি অবস্থা; ওগুলো কেমন পুরান করলা পইড়া? বাইর করো ।
আর কোন উপায় নেই । বাস্তবতা মেনে নিয়ে মুখ গোঁজ করে ইউনিভার্সিটির এক সাবজেক্টের বই এগিয়ে দেই । বই হাতে নিয়ে সে মোটামুটি হাহাকার করে উঠে ।
- বই দেখি এক্কেবারে নয়া! ধরোও নাই মনে লয় । বাকি গুলার কি অবস্থা? বাইর করো বাইর করো । শিগগির শিগগির! সময় নাই ।
বাধ্য হয়ে আমার এমনিতেই কালো চেহারা আরো কালো করে অন্যসব বই - খাতা টানাটানি শুরু করি । ধুলো পড়ে গেছে সবগুলোর উপর । পড়ার টেবিলের চিপা - চাপি আর ব্যাগের কোনা-কান্চি থেকে বের হয় নানা লেকচার শীট, ক্লাস নোট, ফটোকপি যারা আদৌ আছে বলে কোন ধারণাই ছিলো না । ড্রয়ার খুলি, খাটের নিচে উঁকি দেই । কাগজের স্তুপ বাড়তে থাকে জ্যামিতিক হারে আর সাথে পাল্লা দিয়ে পড়ে কপালের ঘাম । রাগে গা রি রি করছে, কিন্তু আমি নিরুপায় । এর যন্ত্রনা সহ্য করতে হবেই । পড়ার টেবিল গোছানোর ফাঁকে রাগ চাপার নিস্ফল চেষ্টায় দাঁত কিড়মিড়ি করতে করতে আড়চোখে একবার তাকালাম তার দিকে ।
ঘরের মাঝখানে চেয়ারে বসে সামনে পেছনে দোল খেতে খেতে জনাব পরীক্ষা এবার চশমার উপর দিয়ে একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে ।
২| ২৪ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:০০
শহুরে আগন্তুক বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:১৩
বৃতি বলেছেন: