![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।
পাঁচটা ভাই আমরা; সায়মন, শুভ, মাকসুদ, আমি আর মিশাল । ছোট বেলার একটা দিনও পাঁচজন একসাথে ছাড়া কাটিয়েছি বলে মনে পড়ে না । বাসার ভেতরেই তখন বিরাট খেলার জায়গা, আম গাছের গায়ে ইটের টুকরা বা স্কুল থেকে নিজের মনে করে নিয়ে আসা চক দিয়ে দাগ কেটে স্ট্যাম্প এঁকে সকাল বিকেল চলতো প্লাস্টিকের বলে মারমার কাটকাট ক্রিকেট খেলা । সবার বড় সায়মন অলিম্পিকে " কান্ডমানি " ডিসিপ্লিন থাকলে বাংলাদেশের জন্যে একটা গোল্ড মেডেল সহজেই নিয়ে আসতে পারতো এমন একটা বিশ্বাস আমার মনে এখনো একেবারে পাকাপোক্ত । সবার ছোট মিশাল একটু মোটাসোটা হওয়ায় দৌড়ানোটা ছিলো ওর জন্য বিশাল সমস্যা । বেচারা ব্যাটিং ভালোই করতো, কিন্তু হাসফাস করে দৌড়ে রান নিতে গেলেই রান আউট । মাকসুদ ছিলো ভালো উইকেট কিপার, আমি বোলার আর শুভ অলরাউন্ডার । খেলতে খেলতে কখন যে প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পেড়িয়ে প্রায় রাত হয়ে যেতো খেয়ালই করতাম না । হুশ ফিরতো যার যার মায়ের চিৎকারে ।
আর শুধু ক্রিকেট কেন ? ফুটবল, কুমিড় কুমিড়, কুঁতকুঁত, গুল্লি, পলান্টিস, বরফ পানি, সাতচারা, দড়ি, বাগাডুলি, হাডুডু, বোম্বাস্টিক , চোর পুলিশ সহ দুনিয়ার কোন খেলাটা আমরা খেলি নি? স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম চারজন একসাথে টোকাই হয়ে গেলাম । রাস্তায় রাস্তায় ম্যাচের খালি বাক্স খুজে বেরাতাম । ম্যাচের খালি বাক্স দিয়ে তখন লেকিন নামের নতুন এক খেলা বের হয়েছিলো যেখানে একেক কোম্পানির ম্যাচের বাক্সের একেক পয়েন্ট । প্রজাপতি ১০০, ডলফিন ২০০, ডায়মন্ড ৫০০ এমন । স্কুলে যেতাম খালি পকেটে আর ফেরার পর একেবারে প্রফেশনাল টোকাইদের মতো পকেট ভর্তি করে ফিরতাম নানান রকমের খালি ম্যাচের বাক্সে । বাসায় আসার পর জামা কাপড়ের অবস্থা আর পকেট থেকে এসব বেরোতে দেখে মা'দের চোখ উঠতো সোজা সোজা কপালে । দেখা গেলো কোন এক অজানা কারণে শুভ ম্যাচের বাক্স জোগাতে সবচেয়ে এক্সপার্ট । যতদূর মনে পরে টোকাই হওয়ার আগ্রহটা কমেছিলো শক্ত একটা ধোলাই খাওয়ার পর ।
আমার খুব বেশী হাসি আসে যখন দেখি এখনকার বাচ্চাদের গোসল, বৃষ্টিতে ভেজা, ঘেমে যাওয়া নিয়ে বাবা - মায়েরা দুঃশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে আছেন । যত্ন আমাদের বাবা মা'রাও একবিন্দু কম নেন নি, " এক মা'র এক পুত " বলে আঞ্চলিক যে প্রবাদ আছে আমরা পাঁচজনই তাই । কিন্তু আমরা এখনকার বাচ্চাদের মতো দম বন্ধ অবস্থার মধ্যে বড় হই নি । বৃষ্টি নামলে হাফ প্যান্ট পড়ে খালি গায়ে দিতাম বাড়ির পাশের মেইন রাস্তার দিকে দৌড় । " কাঁচা " নামের বিশাল বড় এক পুকুর ছিলো এলাকায় । ছোট দাদার কাছে ( আল্লাহ্ তাকে বেহেশত নসিব করুক, আমিন) পাঁচজনের সবাই সাঁতার শিখেছি ওখানে । দাদা কিছুক্ষন পেটের নিচে হাত দিয়ে ধরে রেখে ভাসিয়ে রাখতেন, তারপর হঠাৎ ছেড়ে দিতেন বা বাস্কেটবলের মতো ঢিল মেরে দূরে ফেলে দিতেন পানির । মাকসুদ আর আমি অল্পদিনেই সাঁতার কাটতে শিখে গিয়েছিলাম মাছের মতো । সায়মন শিখলো বহু কষ্টে অনেক পানি খেয়ে । মিশাল বোধহয় এখনো তেমন ভালো সাঁতার পারে না । পানিতে একবার নামলে সেখানে ডুবাডুবি, রেসলিং, অন্য বাড়ির সমবয়সী পিচ্ছিদের সাথে মারামারি জাতীয় সব জরুরি কাজ সেরে চোখ টমোটোর মতো লাল করে কোনদিন এক - দেড় ঘন্টার আগে উঠেছি বলে মনে পরে না । মাঝেমাঝে চুপিচুপি কাউকে কিছু না বলে চলে যেতাম শীতলক্ষ্যায় সাঁতার কাটতে কিংবা অন্য এলাকার বিশাল খেলার মাঠে । নিষিদ্ধ কোন কাজ করছি এমন উত্তেজনায় একেকজনের বুক একেবারে ধুকধুক করতো । ঝড় হতো, সবাই মুহূর্তের মধ্যে এক দৌড়ে আম গাছ তলায় । তারপর ধাক্কা ধাক্কি করে আম কুড়ানো ।
বিদেশ থেকে মিশালদের বাসায় ভিসিআর আসলো । তখন খুব সম্ভবত আমি,মাকসুদ পড়ি ক্লাস টু -তে ,শুভ থ্রি আর সায়মন ফোরে আর মিশাল স্কুলে ভর্তি হয় নি । সবাই মিলে হৈ হৈ রৈ রৈ করে মুভি দেখতে বসে গেলাম । হাতের কাছে যেই ক্যাসেট পাওয়া গেলো সেটাই দিলাম চালিয়ে । ছবি চলার পর দেখা গেলো মুভিটার নাম টাইটানিক । প্রথম ত্রিশ - চল্লিশ মিনিট ভালোই কাটলো । বিশাল বড় জাহাজ, নায়িকা স্কুলের যে কোন মেয়ের চেয়ে সুন্দরী, নায়ক আমাদের মতোই ছন্নছাড়া । কিন্তু তারপর যে ভয়ংকর কান্ড-কীর্তি শুরু হলো তা দেখে আমরা যারা টুকটাক ভগ্নাংশ কিছু মিছু বুঝি তারা একেবারে ঝিম মেরে গেলাম । মিশাল অতো কিছু বুঝলো না । সে নায়ক নায়িকার একটু পরপর চলে আসা উষ্ণ দৃশ্য দেখে একসময় বিরক্ত হয়ে বলে ফেললো - "এরা একটু পর পর জোড়া লাইগা যায় কেন? খালিদ ভাই এদের আলাদা হইতে কও তো ।" ........ আফসোস! মিশালের জানতে চাওয়া ঐ কেনর জবাব পনের - ষোল বছর পর আজও আমি বের করতে পারি নি ।
" জোলাবাত্তি " নামের পিকনিক টাইপ একটা ব্যাপার প্রায়ই করতাম আমরা । নিজেরা নিজেরা ঘর থেকে চাল, ডাল, আলু, মসলা, ডিম, হাড়ি পাতিল জোগাড় করে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে চুলা বানিয়ে গাছের শুকনা পাতা, ডাল দিয়ে রান্না করে খাওয়া দাওয়া । রান্নার দায়িত্ব ছিলো বাসার বড় মেয়েদের ( মনা আপা, তানিয়া আপা, রাফি ফুপি), ছোট মেয়েদের কাজ ছিলো চুলার চারপাশে বসে থাকা । আর সবকিছু জোগাড় করে দেওয়ায় পর আমাদের দায়িত্ব ছিলো একটু পরপর হাড়ির ঢাকনা তুলে চেক করে আসা বা মাঝেমাঝে আধসিদ্ধ খাবারই খেয়ে ফেলা । এখন কত ভালো ভালো রেস্টুরেন্টেই তো খাওয়া পরে, কিন্তু কই ঐ আধসিদ্ধ চুরি করে খাওয়া খাবারের ধারে কাছেও তো কোনটা যেতে পারছে না ।
সময় কিন্তু থেমে থাকলো না । আমরাও বড় হয়ে যেতে লাগলাম আস্তে আস্তে । বদলাতে থাকলাম পাঁচজনই । রাস্তায় রাস্তায় টোকাই সেজে ম্যাচের খালি বাক্স কুড়ানোটা অর্থহীন হয়ে গেলো, কারণ ততদিনে আমরা জেনে গেছি একটা ম্যাচের দাম একটাকা, পকেটের দশটাকা দিয়ে দশটা ম্যাচ কেনা যায়; রাস্তার ময়লা আবর্জনা ঘাটার দরকার নেই । সায়মন, মাকসুদ এলাকার অন্য ছেলেদের সাথে মিশে গেলো । শুভদের পরিবারে নানা অশান্তি । মিশাল ব্যস্ত হয়ে গেলো ভিডিও গেমস,সাইকেল নিয়ে । আমার এক্সিডেন্টে হাত ভেঙ্গে যাওয়ায় খেলাধুলা নিষিদ্ধ হয়ে গেলো, পরিচয় হলো বইয়ের জগতের সাথে । সুস্থ হওয়ার পরও যেন আলাদাই রয়ে গেলাম বাইরের পৃথিবী থেকে । আমার ঘরেই তখন সারা পৃথিবী । সবার মধ্যে থেকেও একটু আলাদা, একা থাকার বদঅভ্যাসটা আমার ছোটবেলা থেকেই ছিলো । এবার আমি নিজের ভেতর গুটিয়ে গেলাম পুরোপুরি । বাড়ির বড়রাও আমাদের আলাদা হয়ে যেতে সাহায্য করলেন । চার দাদার মাঝখানে কোন দেয়াল ছাড়া বিশাল খোলা বাড়ি আস্তে আস্তে নানা দেয়ালে বিভক্ত হয়ে গেলো, ক্রিকেট খেলার গাছটা একদিন স্কুল শেষে বাসায় ফিরে দেখলাম মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, পাশের সাড় বাধা সুপারি গাছগুলোও উপড়ানো । উঠলো নতুন নতুন ঘর । সবাই ঢুকে গেলাম বাক্সে, বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগটা আর রইলো না । রঙ্গীন সময়টা আস্তে আস্তে বিবর্ণ হয়ে গেলো ।
এই টুকরো টুকরো হাজারো স্মৃতির সবই পনের-ষোল বছর আগেকার । যদিও নিজের জীবনেরই কথা, কিন্তু আমি ঠিক জানি না পনের-ষোল বছর সময়টা আসলে কত বড় । কারণ চোখ বন্ধ করলে মনে হয় এই তো এক সপ্তাহ আগেই তো যেন এসব হলো । অথচ এই এক সপ্তাহ সময়টার মধ্যে আমরা কতই না বড় হয়ে গেছি! সায়মন জব করছে, মিশালরা আর এ বাসায় থাকে না, আমি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ইউনিভার্সিটির ক্লাস সহ নানা ব্যস্ততা সেরে বাসায় বলতে গেলে কেবল ঘুমুতে আসি, শুভ দেশের বাইরে চলে গেছে বছর খানেক হতে চললো, মাকসুদও গতকাল পা রেখেছে সিঙ্গাপুর । পাঁচজন আজ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন । দেশে যারা আছে তাদের মধ্যে মাঝেসাঝে দেখা হয়ে যায় । ব্যস্ততার জন্য পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ই দুই একটা বাক্য বিনিময় হয় কেবল । এও কি সম্ভব?
এই লেখাটা লেখার ভাবনাটা বোকামি ছিলো । বারবার চোখ দুটো ভিজে উঠছে, লেখাটার মতোই বড্ড বেশী অগোছালো লাগছে ভেতরটা । মনের ভেতর ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ছে হাজার স্মৃতি যার প্রতিটাই আমার কাছে অমূল্য । কোনটা রেখে কোনটা লিখবো আমি? তারচেয়ে বরং আর লেখার দরকার নেই, এখানেই থেমে যাই । স্মৃতিগুলো আমার বুকের ভেতরেই সযত্নে জমা থাকুক আজীবনের জন্যে । রত্নগুলো যখন বুড়ো হয়ে যাবো বের করে ঝাপসা চোখে একা একা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখবো, কাঁদবোও হয়তো দু-এক ফোঁটা ।
" পুরানো সেই দিনের কথা,
ভুলবি কিরে? হায়, ও সে চোখের দেখা, প্রানের কথা,
সে কি ভোলা যায়? "
আহ! আই মিস মাই ওল্ড গুড ডেইজ!!
২| ১০ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: আসলেই ভাই । এখনকার বাচ্চারা কয়েকটা খেলার নামই বোধহয় জানে ; ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন আর নানা গেমস ।
৩| ১০ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:২৬
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: হে হে..... আমরা কম্পিউটারে সবই খেলি @ বড় ভায়েরা
৪| ১০ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৮
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ঐ তো, কম্পিউটারেই ।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:২৫
হাসান মাহবুব বলেছেন: আমার মতে নব্বইয়ের দশকে যারা বেড়ে উঠসে, শ্রেষ্ঠ শৈশব তাদেরই। তখন খেলার মাঠ ছিলো, বাবা-মা পাহাড়সম স্কুলব্যাগ আর কঠোর রুটিন ঘাড়ে চাপায় দিতেন না, নতুন প্রযুক্তি ধীরে ধীরে আসছে সেসবের মজা, নতুন নতুন খেলা আবিস্কার সব মিলায় আমার মনে হয় সেই সময়ের প্রায় সবারই আপনার মত এমন স্মৃতিময় উজ্জ্বল দিন আছে।
অনেক ভালো লাগলো লেখাটা।
লেকিন খেলাটা কখনও খেলি নাই।