নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার দাদা

১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:১৯

আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা হলো খুব সকালে । ঘুমঘুম চোখে বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটার স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম মাত্র সাড়ে পাঁচটা বাজে । এতো সকালে ডেকে তোলার কারণটা আমাকে ঘর থেকে বের হয়ে জিজ্ঞেস করতে হলো না; উঠোনে তখন বাড়ির সবাই দাড়িয়ে ; তারাই আমাকে বললেন দাদাকে নিয়ে ঢাকা যেতে হবে । বারডেম হাসপাতাল । সাথে যাবেন মেজো কাকু আর বড় ফুপি ।



অস্বীকার করবো না, আমি মনে মনে একটু বিরক্তই হয়েছিলাম । দাদা অসুস্থ জানি , কিন্তু এতো সাত সকালে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর অসুস্থ তো নন । কোন মতে ব্রাশটা সেরে মুখ গোঁজ করে খুঁজে পেতে সিএনজি নিয়ে আসলাম । এতো সকালেও যা রাস্তায় গাড়ি থাকতে পারে আমার ধারণায় ছিলো না ।



বাসায় সিএনজি আনার পর বুঝতে পারলাম বাড়ির আবহাওয়া একটু বেশীই গুমোট হয়ে আছে । সবার মুখ চিন্তার ছাপ । এবার আমার মনটাও একটু কেমন যেন করে উঠলো । দাদা কি একরাতে এতোটাই অসুস্থ হয়ে গেছেন ?



তার ঘরে গেলাম । ওখানে আরও অদ্ভুত অবস্থা । দাদী খাটের একপাশে ছাই মুখ করে চুপ করে বসে আছেন , মা আলমিরার একটা কোনা ধরে দাড়ানো ; তার চেহারায় ভয়ের চিহ্ন স্পষ্ট । হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন দাদাও । কি আশ্চর্য ! দাদু ভয় পেতে পারেন ! আমাদের পুরো গাজী বাড়ি তো বটেই , সারা মহল্লা যার ভয়ে তটস্থ থাকে , তিনিও কোন কারণে ভয় পেতে পান !!



মেজো কাকু সিএনজির সামনে বসলেন , ড্রাইভারের সাথে । পেছনে আমি আর ফুপি দাদাকে মাঝে রেখে দুজন দুপাশে । দাদা ওঠতেই চান নি , বললেন যে যেতে চান না । বাসায় থাকলেই ঠিক হয়ে যাবেন । আমরা সে কথা শুনলাম না । তাকে বহু বুঝিয়ে - সুঝিয়ে রাজী করিয়ে গাড়িতে তুলেছিলাম ।



জানি অর্থহীন , তবুও আমার কাছে এখন কেন যেন মনে হয় এই কাজটা করা আমাদের ঠিক হয় নি । পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের অধিকার আছে শেষবারের মতো তার প্রতিটা প্রিয় মানুষের মুখ দেখতে দেখতে , তাদের মাঝে থেকে চোখ বোঁজার ।



দাদা মারা গিয়েছিলেন হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তাতেই । তখন আমি তার ডান হাতটা শক্ত করে ধরে বসা । তিনি মাঝে মাঝে টুকটাক কথা বলছেন , আমি আর ফুপিও তাড়াতাড়ি হাসপাতাল পৌঁছবার তাড়ায় রাস্তায় চোখ রেখে তাতে সায় দিচ্ছি । হঠাত্‍ আমিই খেয়াল করলাম তিনি চুপ করে গেছেন । আমার হাতের মুঁঠোয় তার হাতটাও আর নড়ছে না ।



হৃত্‍পিন্ডটা ধ্বক্ করে উঠলো । ঝুঁকে পড়ে তার বুকের উপর কান পাতি । কোন সাড়াশব্দ নেই , নিশ্চুপ , নিথর । সত্যটা কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগলো । পৃথিবীতে আসার বেলায় আমাদের কতো আয়োজন , আর চলে যাওয়াটা এমন এক মুহূর্তের ব্যাপার ! জন্মের পর থেকে যে মানুষটাকে দেখে এসেছি আমাদের পুরো পরিবারটাকে ছায়া দিয়ে রেখেছেন , আজ তার বুকের ভেতরের ছোট্র একটা মাংসপিন্ড নিঃস্পন্দ হয়ে গেছে মানেই তিনি আর নেই ! বাঁ পাশে মাথাটা কাত হয়ে আছে যে মানুষটার , আমি যার হাতটা শক্ত করে এখনো ধরি আছি তিনি আর আমাদের মাঝে নেই !



মৃত্যু কি এতোই সহজে মেনে নেওয়ার মতো ব্যাপার ?



দাদা যে মারা গেছেন তা গাড়ির ভেতরের আমরা সবাই বুঝেছিলাম । তবুও হাসপাতাল গেলাম । তার নিথর হয়ে যাওয়া দেহটাকে যখন দুইজন মানুষ ধরাধরি করে একটা স্ট্রেচারে করে ভেতরে নিয়ে গেলো তখনই আমার মনে নিশ্চিত বিশ্বাস ছিলো যে একটু পরই ডাক্তার এসে বলবেন দাদার হৃত্‍পিন্ড সাময়িকভাবে থেমে গিয়েছিলো , এখন আবার সচল হয়েছে । হাসপাতালে সপ্তাহখানেক অবজারভেশনে রাখতে হবে । তারপর বাসায় নিয়ে যেতে পারবো । . . . . . এমনটা হওয়া কি খুব বেশী অলৌকিক ছিলো ? মোটেও না । এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে , তবে আমাদের বেলায় ঘটলো না ।



এম্বুলেন্স ভাড়া করে রওনা হলাম । ঘন্টা খানেক আগেও যে মানুষটা আমার নাম ধরে ডেকেছেন , যার হাতের আঙ্গুলগুলো আমার হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নড়েচড়ে বেড়িয়েছে , তাকে এখন শুইয়ে রাখা হয়েছে এম্বুলেন্সের মাঝে , একটা সাদা কাপড়ে আপাদমস্তক ঢেকে । ফুঁপি কাঁদতে কাঁদতে দোয়া পড়ছেন , হাসপাতাল থেকে পরিচিত আরেকজন সাথে এসেছিলেন- কাঁদছেন তিনিও । কাকুর মুখ পাথরের মতো শক্ত করে বাসায় মৃত্যুর খবরটা জানাতে গিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন । আমি কাঁদি নি , আমার কান্না আসে নি ।



আমি কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম । দাদা চমত্‍কার গান গাইতেন । তার মুখে একটা গানের কিছু লাইন বহুবার শুনেছি । ওই লাইনগুলোই আমার মাথায় বাজতে থাকলো , অবিরাম . . . .



" দিন গেলো মোর সন্ধ্যা হলো

পাড়ের তরী নাই ,

পার করো আমারে দয়াল অসাড় দুনিয়ায় ।

এই যে দুনিয়া ভাইরে সব অকারণ

নির্বিচারী লীলা খেলা , আখেরে মরন । "



দাদা নেই চার বছর হতে চললো ; সেই সকালটার দিনটা আসার আর কেবল আজকের দিনটাই বাকি । . . . . যাকে ছাড়া একটা দিনও কল্পনা করা যায় নি , তাকে ছাড়াই চলে গেলো কতগুলো দিন । এমনও দিন আসবে যেদিন আমাকে ছাড়াও সবার দিব্যি চলে যাবে । সময় পেরোতে পেরোতে গিয়ে একসময় গিয়ে সবার মনে হবে খালিদ নামের কেউ বুঝি কখনো ছিলোই না । সে হোক , কিন্তু আমার মৃত্যু যেন আমার প্রিয়মানুষগুলোর সামনে হয় । দাদাকে বলার সুযোগ পাই নি , কিন্তু মৃত্যুর আগে অন্তত যেন বাকি সবাইকে আমি বলে যেতে পারি- জীবনে কখনোই তোমাদের প্রতি আমি ভালোবাসা প্রকাশ করি নি সত্য , কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাদের সবাইকে আমি আজীবন নীরবে ভালোবাসেছি . . . .অনেক অনেক বেশী ।



আল্লাহ আমার দাদাকে বেহেশত নসীব করুন , ভালো রাখুন । আমিন ।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২২

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
আমার দাদাও হসপিটালে নেয়ার সময় মারা গেছেন।

১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৩৮

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: আল্লাহ তাকে বেহেশত নসীব করুন । ভালো রাখুন । আমিন ।

২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৪৮

শায়মা বলেছেন: দাদা শান্তিতে থাকুক। ভালো থাকুক না ফেরার দেশে।

৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০৮

মামুন রশিদ বলেছেন: আপনার দাদার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি ।

৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:০৫

সংগ্রামী বালক বলেছেন: আল্লাহ আপনার দাদার আত্মাকে শান্তিতে রাখুক।

৫| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৩৮

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ।

৬| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:২৩

তুষার মানব বলেছেন: শায়মা বলেছেন: দাদা শান্তিতে থাকুক। ভালো থাকুক না ফেরার দেশে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.