![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।
আশেপাশে ট্রাফিকের কানে তালা ধরিয়ে দেওয়ার মতো প্রচণ্ড শব্দ । এর মধ্যেও কোথা থেকে যেন ভেসে আসা মেয়ে গলার একটা গানের কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি মিনিট খানেক যাবত ।
“ আমায় দিলে শুধু ছলনা ,
ভালো কভু বাসলে না । “
আমার স্বজাতি পুরুষদের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ কোথা থেকে ভেসে আসছে চারদিকে তাকিয়ে খুঁজে পেলাম না । একটু পর বুঝলাম গানটা আসছে আমার সামনে বসা এরোপ্লেনের পাইলটের পকেটের চায়না মোবাইল থেকেই ।
গুলিস্তান থেকে টিএসসি, কলা ভবন । রিকশা ভাড়া সর্বোচ্চ ৪০ টাকা হলেও পুলিশ বক্সের উল্টো পাশে প্রথম জন চাইলেন ৬০ টাকা এবং পরের জন ৭০ টাকা । আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তাদের দুইজনের বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য আন্তরিকাভবে দুঃখ প্রকাশ করে আরেকটু হেঁটে আন্ডারগ্রাউন্ডের সামনে থেকে আরেকজনের প্লেনে উঠে বসলাম । ইনি ভাড়া ৪০ টাকাই চেয়েছিলেন । প্লেন বলছি কারণ রাস্তায় গাড়ি , রিকশা বেশ ভালো থাকলেও তিনি কিভাবে কিভাবে যেন সবগুলোকে বাউলি কাটিয়ে মোটামুটি সুপারসনিক গতিতে রিকশা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন । নাম জানা গেলো সোবহান, বাড়ি বরিশাল । পড়নে লুঙ্গি আর সাদা রঙের হাফ হাতা শার্ট, শ্যামলা গায়ের রঙ, মাথায় একটু কোঁকড়া চুল, সবল শরীর । বয়স সম্ভবত ২৫ – ২৬ ।
জি পি ও- র সামনে এসে সুপারসনিক গতি থামাতে হলো । দেশের জন্য নাওয়া, খাওয়া সব বাদ দিয়ে দিন রাত শ্রম দিয়ে প্রাণপাত করে চলা সচিবদের আখড়ার সামনের রাস্তা ভি আই পি-দের জন্য । চুরি চামারি করে বা ঘুষ খেয়ে যেভাবেই হোক একটা গাড়ি কিনতে পারলে ঐ রাস্তা দিয়ে হাওয়া খেয়ে বেড়ানো যাবে , কিন্তু রিকশা ঢুকতে দেওয়া হয় না । অথচ প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে ঘুরপথে গেলে বেশ অনেকখানি রাস্তা বেশী ঘুরতে হয় ।
সোবহান সাহেব বললেন , “ ভাইজান, টাইট হইয়া বসেন । “
আমি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললাম , “ বসলাম টাইট হইয়া । “
বলা মাত্র রাস্তার ট্রাফিক যেই ঘাড়টা একটু অন্যদিকে ঘুরিয়েছে কি ঘুরায় নি, সোবহান সাহেব হুঁশ করে তার এরোপ্লেন ঢুকিয়ে দিলেন সচিবালয়ের রাস্তায় । প্রায় ফাঁকা রাস্তা হাঁকিয়ে আসার সময় পেছনে ফিরে ট্রাফিককে হাত নেড়ে উল্লাসিত ভাবে টাটাও দেওয়া হল ।
কিন্তু বিপত্তিটা ঘটলো হাই কোর্ট মোড়ে এসে । সিগন্যালে না থেমে সোবহান সাহেব একটু কারিগরি দেখাতে গিয়ে বা দিকের আইলাইনে রিকশা উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা খেলেন । বুকের উপর ব্যাজে “ রফিকুল “ নাম লেখা এক পুলিশ সার্জেন্ট সুনিপুণ দক্ষতায় হাতের স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে চাকা ফুঁটা করে সোবহান সাহেবের পশ্চাৎদেশে একটা ডাণ্ডার বাড়ি বসিয়ে দিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে হেঁটে রাস্তার অন্যদিকে চলে গেলেন ।
এই তুচ্ছ অপমান সোবহান সাহেবের গায়েই লাগলো না । গানটাও চলছেই । গায়িকা তখন হৃদয়বিদারক কণ্ঠে তার সাথে হয়ে যাওয়া ছলনার বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছেন । সামনেই কার্জন হল । ওখানকার ফুটপাতে ফুলের গাছ বিক্রির নার্সারির সাথে রিকশা সারাইয়ের দোকান আছে । ফুটো টায়ার ঠিক করাতে সময় লাগবে ১৫ মিনিট, টাকা লাগবে ২০ টাকা । সোবহান সাহেব পায়ে হেঁটে টেনে নিয়ে গেলেন । হাতে সময় থাকায় আমিও চললাম তার পাশে হাঁটতে হাঁটতে । সবে সাড়ে দশটা বাজে । ক্যাম্পাসে ১২ টার মধ্যে গেলেই হবে ।
মিস্ত্রি চাকা খুলে ফেলার পর দেখলাম মাইকের মতো শব্দ করতে পারা সেই চাইনিজ মোবাইলটা পকেট থেকে বের হল । সোবহান সাহেব নাম্বার টিপলেন । কিন্তু ব্যাল্যান্স নেই । তার মুখটা মুখটা একটু মলিন হয়ে যায় । আমি তখন ফুটপাথে বসা । নাম্বারটা নিয়ে আমার মোবাইল থেকে তার কাঙ্ক্ষিত প্রিয় জনের কাছে ডাক পাঠিয়ে দিয়ে তার হাতে ধরিয়ে দিলাম । ওপাশে সোবহান সাহেবের স্ত্রী ।
“ হ্যালো ... হ হ , আমি । ... এক ভাইয়ের নাম্বার, আমারটাতে টেকা নাই । কাউলকা থেইকা একবারও তো খবর নিলা না বাইচ্চা আছি না মইরা গেছি । ..... ভালো আছো নি ? মা’য় কি করে?? ..... খাইছি সকালে । তুমি ?...... কি ? । না না পরশু আইতে পারমু না । টিকিট পাই নাই । ... পরের শুক্কুরবার । .... হ মনে আছে , কিনমু । .... আরে কইলাম তো কিন্না আনমু , ভুলুম না । রাখি অখন । ভালো থাইক্কো । মোবাইল টেকা ভইরা মিসকল দিও । “
তৃপ্ত চেহারা নিয়ে সোবহান সাহেব মোবাইলটা আমাকে ফিরিয়ে দেন । তারপর কি ভেবে যেন মিটিমিটি হেসে চলেন একা একা । সুখি মানুষের পবিত্র , নির্ভাবনাময় হাসি । সম্ভবত ওপাশের ভাবির আবদারটাই তার হাসির কারণ । কী আবদার আমি জিজ্ঞেস করি না , অভদ্রতা হয়ে যায় । কেবল ফুটপাতে বসে অপলক চোখে তার হাসি দেখতে থাকি । বহুদিন আমি কাউকে এমন পরিশুদ্ধ, জটিলতা মুক্ত হাসি হাসতে দেখি নি, নিজে তো হাসি না অনাদিকাল থেকে । আমার আশেপাশের মানুষগুলোও আমারই মতো , এরা মন খুলে হাসতে ভুলে গেছে । পকেটে রাখার সময় মনে হল আমার মোবাইলটাও আজ বোধহয় অবাক হয়েছে খুব । বহুদিন পর ইথারে তার মধ্যে ভেসে এসেছে এবং ভেসে গেলো এমন কিছু সহজ সরল ভালোবাসা মাখানো মুহূর্ত, যাতে কোন আধুনিক নাগরিক জটিলতা নেই, নেই কান্না, হতাশা , বিষাদ ।
মিস্ত্রি দ্রুত হাতে কাজ করে যায় , সোবহান সাহেব আনন্দিত মুখে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে মিটিমিটি হেসে চলেন , আর আমি তার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে তার হাসি দেখি ।
ঢাকার আকাশে আজ সত্যিই ঝকঝকে নীল রোদ ।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:০৫
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:০৯
শুঁটকি মাছ বলেছেন: পোষ্টটা পড়ার পর কেমন একটা সুখ সুখ অনুভূতি হল। মানুষের সুখ কত সামান্যতেই!!!!
খুব সুন্দর করে লিখেছেন। ভালো থাকুন শহুরে আগন্তুক!
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৪১
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: আপনিও ভালো থাকুন সুখের অনুভূতি নিয়ে
৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৩৫
ইভান রুদ্র বলেছেন: ভালো লাগলো।
২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:০১
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৩৯
জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন: পড়ে ভাল লাগল ৷
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই ।
৫| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫১
হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার একটা লেখা। হিউমারাস এবং মানবিক।
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ হাসান ভাই ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৬
বকুল০৮ বলেছেন: অনেক দিন পর একটি সুখী সুখী গল্প পড়লাম।
ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।