নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুপি এবং জঙ্গী

২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:১৩

টুপি এবং জঙ্গী



প্রেস ক্লাবের সামনে বৃষ্টির মধ্যে একসাথে তিন - তিনটা মানব বন্ধন হচ্ছে । তিনটার মধ্যে দুই মানব বন্ধনের ইস্যু এক - সরকারের সাম্প্রতিক সময়ে নেয়া সম্প্রচার নীতিমালা প্রনয়নের উদ্যোগের বিরুদ্ধে ; একদলের ব্যানারে লেখা যে জাতীয় সাংবাদিক ফোরাম জাতীয় কিছু, আরেকদলের ব্যানারে লেখা ( এখানে সবমিলিয়ে মানুষ সংখ্যা বারো - তেরো জন, ব্যানার একটু পরপর এক কোনা দিয়ে লুজ হয়ে ঝুলে যাচ্ছে এবং কোন অজানা কারণে তাদের প্রত্যেকের মুখভাব অত্যন্ত বিমর্ষ) জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরাম, অর্থ্যাৎ বিএনপির অঙ্গ সংগঠন । এজন্যেই এরা ঐ টপিকেই তাদের পাশে ব্যানার নিয়ে দাড়ানো অন্য বড় মানব বন্ধনটাতে ঢোকার সাহস করে নি ।



আমার মনোযোগ আকর্ষন করলো তৃতীয় দলটা । শতভাগ গ্রাম্য শ-খানেক মানুষ, যাদের পড়নে পুরানো লুঙ্গী, তেল চিটচিটে হতে হতে আসল রং বদলে যাওয়া শার্ট এবং একেবারেই নিম্নমানের শাড়ি বা কালো অতি পুরাতন বোরকা । পুরুষদের মধ্যে দেখলাম অর্ধেকেরও বেশীর দাড়ি আছে । ব্যানারের সাইজ রুগ্ন। এরা প্রেসক্লাবের সামনে এসে ভীত মুখে দাড়িয়ে আছে কারণ সরকার একটা ব্রিজ বানাতে গিয়ে তাদের জমি Acquire করেছে, কিন্তু তারা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায় নি । প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিদিন দশ - বারোটা করে মানব বন্ধন থাকে, যেখানে মানববন্ধনে অংশ নেয়া মানব - মানবীর সংখ্যা এবং আশেপাশের দাড়ানো পুলিশ ও তাদের ছবি তুলতে আসা সাংবাদিকের সংখ্যা অনেকসময়ই দেখা যায় সমান ( বা বেশী)। বাংলাদেশে মানব বন্ধন করে কখনো কিছু হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবুও মানুষ এখানে আসে এবং সেসব দলে পরিপাটি বেশ ভূষার বা স্যুটেট বুটেট সিটিজেনই সংখ্যায় অধিক। এই গরীব, সম্ভবত নিতান্তই অশিক্ষিত মানুষগুলো রাজধানীর মাঝখানে ব্যানার নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে পুলিশের আশেপাশে দাড়িয়ে থাকার সাহস কোথায় পেলো সেটাই রহস্য!



বৃষ্টি, বাতাস, বেশী রোদ কিছু একটা হলেই ঢাকার রাস্তায় গিট্টু লেগে যায়। এখানেও কিছুটা লেগে গেছে। গাড়ির জটে জ্যামে রিকশায় বসে আমি কিছুটা অস্থির হয়ে যাচ্ছি। ইউনিভার্সিটিতে এমন এক স্যারের ক্লাস যিনি পাঁচ মিনিট দেরী করলেই আর ক্লাসে ঢুকতে দেবেন না। অথচ জ্যাম ছোটার কোন নাম নেই ।



হঠাৎ শুনি পাশে গাড়িতে বসে আমার সমবয়সী দুই ছেলে বেশ জোরে জোরে কথা বলছে । কোলে বইয়ের ব্যাগ দেখা যাচ্ছে। তাদের আচার আচরন যথেষ্ট এগ্রেসিভ । কিছু কথা কানে এলো। একজন হাত নেড়ে তৃতীয় মানববন্ধনটার দিকে ইংগিত করে উষ্মা প্রকাশ করছে - " এই সব জঙ্গীরা প্রকাশ্যে দল বেঁধে কিছু করার সাহস পায় কিভাবে? পুলিশ কি ঘাস কাটে? এদের ধরে জেলে পুড়লেই তো দেশ ঠিক হয়ে যায়। "



আমি ঘাড় ঘুরিয়ে মানববন্ধনটার দিকে তাকালাম। বয়স্ক লোকগুলো ভিজে চুপসে যাচ্ছেন। এক মহিলা তার সাথের সাত - আট বছরের ছেলের মাথায় পুরোনো বিবর্ণ হয়ে যাওয়া একটা ছাতা ধরে নিজে বৃষ্টিতে ভিজছেন ।



শুধু নিজেদেন ধর্মীয় বেশভূষার কারণেই এরা জঙ্গী হয়ে গেছে আমাদের অনেকের কাছে । কত সংকীর্ণ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী! কতোটা বিভক্তি আমাদের মনে! আমাদের নতুন প্রজন্ম নিয়ে অনেকে অনেক আশার কথা শোনান, কিন্তু আমার মনে হয় না এই অনুকরণপ্রিয়, অন্তঃসারশূণ্য আধুনিক প্রজন্ম এতোটা প্রশংসার দাবী রাখে । এদের ব্রেন ইতোমধ্যেই ওয়াশড হয়ে গেছে এদের অনেকের রক্তে দেশের প্রতি মমতার চেয়ে বেশী তীব্রভাবে মিশে গেছে দল, বিভেদের সূত্র । এই বিভেদেন সুর দিনদিন বাড়বে বই কমবে না।



একমনে ভাবলাম ছেলেগুলোকে কিছু বলি। আবার মনে হলো কি লাভ বলে? বাংলাদেশে কে শোনে কারও কথা?



ক্লাসে স্যারই লেট করে আসলেন এবং এক স্টুডেন্টের আচরনে ক্ষুব্ধ হয়ে সম্ভবত শতবারের মতো কোন শিক্ষকের মুখে বলতে শুনলাম যে একটা জেনারেশনই বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে ।



স্যারকে ইচ্ছা হচ্ছিলো হাত তুলে বলি - " ভুল বললেন স্যার। একটা জেনারেশন বেয়াদব না, মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে । কারণ রিপোর্ট, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, পরীক্ষার কারণে আপনারা নতুন প্রজন্মকে সঠিক রাস্তায় ভাবাতে পারছেন না । পারছেন না আমাদের বাবা- মায়েরাও। এইসব উঠতি শিক্ষিতরা হয়তো অনেক রোজগার করবে, কিন্তু কখনো পরিপূর্ন মানুষ হবে কিনা সন্দেহ আছে । "



বলা হলো না । আমার দেশে কেউ কারো কথা শোনে না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৫৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: শুধু নিজেদেন ধর্মীয় বেশভূষার কারণেই এরা জঙ্গী হয়ে গেছে আমাদের অনেকের কাছে । কত সংকীর্ণ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী! কতোটা বিভক্তি আমাদের মনে! আমাদের নতুন প্রজন্ম নিয়ে অনেকে অনেক আশার কথা শোনান, কিন্তু আমার মনে হয় না এই অনুকরণপ্রিয়, অন্তঃসারশূণ্য আধুনিক প্রজন্ম এতোটা প্রশংসার দাবী রাখে । এদের ব্রেন ইতোমধ্যেই ওয়াশড হয়ে গেছে এদের অনেকের রক্তে দেশের প্রতি মমতার চেয়ে বেশী তীব্রভাবে মিশে গেছে দল, বিভেদের সূত্র ....

+++

ইচ্ছা হচ্ছিলো হাত তুলে বলি - " ভুল বললেন স্যার। একটা জেনারেশন বেয়াদব না, মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে । কারণ রিপোর্ট, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, পরীক্ষার কারণে আপনারা নতুন প্রজন্মকে সঠিক রাস্তায় ভাবাতে পারছেন না । পারছেন না আমাদের বাবা- মায়েরাও। এইসব উঠতি শিক্ষিতরা হয়তো অনেক রোজগার করবে, কিন্তু কখনো পরিপূর্ন মানুষ হবে কিনা সন্দেহ আছে
++++++++++

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৪৪

নেবুলাস বলেছেন: বাস্তব কথা।

৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৪৭

আজমান আন্দালিব বলেছেন: আমার দেশে কেউ কারো কথা শোনে না।

৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:২৯

নিউজ২৪ বলেছেন: শতভাগ একমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.