নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক রাতের জীবন

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:০৯

মা-র মুখে একটা কথা প্রায়ই শুনি । জীবনকে যদি দেখতে হয়, তবে হাসপাতাল, জেলখানা আর কবরস্থানে যাওয়া উচিত । প্রথম জায়গায় একসাথে জীবনের শুরু ও শেষ, দ্বিতীয় জায়গা পৃথিবীতে জীবনের প্রতীকি উপস্থাপন আর সর্বশেষেরটি অবধারিত গন্তব্য ।

ধানমন্ডির বেশ অভিজাত এক রেস্টুরেন্ট । চারপাশের কাঁটা চামচ আদিখ্যেতার ছড়াছড়ি । আমি এরকম খাবারের জায়গায় ঢুকলে সবসময়ই অস্বস্তিবোধ করি, মনে হয় অপরিচিত ভীন গ্রহে চলে এসেছি । মা আমাকে ছোট বেলা থেকে জীবন বলতে যা শিখিয়েছেন তা এখানে খাটে না। মোলায়েম নিয়ন আলোর নিচে কানে ভেসে আসা সফট মিউজিকের এ জগতে সবাই হয় সুখি মানুষ, অথবা জীবন তাদের কাছে ধরা দিয়েছে ভিন্ন কোন রুপে ।

বিশ্বাস হলো না আমার কথা?

আমরা তিনজন যে টেবিলটাতে বসে আছি, তার ডান পাশে একটু তাকান । মন ভালো করে দেওয়ার মতো সুন্দর একটা দৃশ্য দেখবেন । একজোড়া প্রবীন দম্পতি বসে একসাথে রাতের খাবার খাচ্ছেন । তাদের বয়স ষাটের আশেপাশে, দুজনেরই চুলে পাক ধরেছে, চোখে চশমা, শান্ত সৌম্য চেহারা । আমি তাদের চোখে কোন উদ্বেগ দেখি না । দুলকি চালে ধীরে সুস্থে খেতে খেতে তারা বেশ গল্প করে যান তাদের আমেরিকা প্রবাসী মেয়ের ঘরের নাতি, নাতনীর । ছেলেটার বিয়ে দেবার জন্যে গত সপ্তাহে হোম ইকোনমিক্স কলেজের যে পাত্রীটি তারা দেখে এসেছেন সেই মেয়েটির বংশ, শিক্ষা, গায়ের রং সবই ভালো, কিন্তু উচ্চতা কিছুটা কম। একটু হিল পড়লে অবশ্য বোঝা যাবে না । কিন্তু তারপরও......... হাতের মুঠোয় বন্দী এ মেয়েকে একমাত্র ছেলের বউ কি বানানো যায়? তারা প্রশান্ত মুখে মনের দ্বিধা দ্বন্দ নিয়ে আলোচনা করে চলেন । মুখের হালকা চিন্তার ছোঁয়াটা তাদের মানসিক স্থিরতারই বহিঃপ্রকাশ ।

সিনেমার নায়ক হওয়ার যোগ্য ওয়েটার আমাকে আঁতকে দিয়ে হাতে ভয়াবহ শব্দ করতে থাকা আগুন গরম বিফ সিজলিংয়ের কড়াই নিয়ে হাজির হন । আমরা খাবারে মন দিতে চাই । তখনই হেঁটে পাশ দিয়ে যান এক পঁচিশ-ত্রিশ বছরের রুপবতী, আবেদনময়ী একজন তরুনী.... আমার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় ।

সাড়ে পাঁচ ফুটের মতো হাইট, মুখে গাঢ় মেকাপ, টকটকে লাল লিপস্টিক, মাথার চুল রিবন্ডিং করা । কালো স্বচ্ছ জরজেটের শাড়ির ভেতর দিয়ে হালকা আলোতেও বিদ্যুৎ চমকের মতো ঝকঝকে মেদহীন শরীর দিনের আলোর মতো স্পষ্ট । উর্ধ্বাংশে পরা হাতা কাঁটা ব্লাউজ, যাতে দর্জি সামনে দিয়ে নিটোল বুকের বিভক্তি শুরু হয়ে যাওয়ার পরও ফাঁকা রেখেছেন অনেকখানি । তাকে এক পলক দেখলেই যে কোন পুরুষের মনে কাম জাগতে বাধ্য । আমি নিশ্চিত জানি না, কিন্তু ইন্দ্রীয় বললো ইনি একজন উচ্চ বিত্তের বারবনিতা । সাথের ব্যস্ত ভঙ্গিতে ফোনে কথা বলতে বলতে নিচে নেমে যাওয়া ফরমাল ড্রেসের লোকটা তার এজেন্ট....... স্থির দৃষ্টিতে আপাদমস্তক তার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ আমার সবিৎ ফেরে । ছিঃ! এমন অসভ্যের মতো তাকিয়ে আছি কেন? এমন নোংরামি তো আমি কখনও করি না!

কিন্তু কিছুক্ষন পর আবারও তার সাথে আমার বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হয় । নিস্পলক চাউনি,মনে অস্বস্তি জাগায় । মিনিট দশ পর নিচে একটা টয়োটা ইয়ারিস গাড়ি এসে থামে । উনি হাতের কফিতে চুমুক দেওয়া শেষে উঠে দাড়ান । বিল মিটিয়ে হেঁটে বের হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রেস্টুরেন্টের সবার দৃষ্টি আটকে থাকে তার ইচ্ছাকৃত অবহেলায় বের হতে হতে ধবধবে সাদা পিঠের প্রায় মাঝখানে চলে আসা অন্তর্বাসের চিকন কালো ফিতায় .... প্রবীন লোকটিও তার পঁয়তাল্লিশ পরবর্তী নারীত্বের চিহ্নের অস্তিত্ব শূন্যতায় সময় পার করতে থাকা সঙ্গীনির চোখ এড়িয়ে আড়চোখে তাকান ..... একটু পর তাকে দেখা যায় নিচের কালো গাড়ির মালিকের সামনে দাড়িয়ে কি যেন বলে সামনের সিটে চড়ে বসতে ..... স্যুট গায়ের গাড়ির মালিক গাড়ির দরজা খোলার আগে পাশে দাড়ানো সেই ফরম্যাল ড্রেসের লোকটির দিকে তাকিয়ে কেমন অদ্ভুত এক হাসি হাসেন, এজেন্টও একই হাসি ফেরত দেয় । তারপর গাড়িটা গেইট দিয়ে বের হয়ে হারিয়ে যায় । কোন এক অজানা অদ্ভুত কারণে আমার মন একটু বিষন্ন হয় ।

আচ্ছা, ঐ মেয়েটির কাছে জীবনের অর্থ কি? প্রতিরাতে একবার করে মারা যাওয়া, নাকি প্রতি ভোরে একবার করে বেঁচে ওঠা? আমার জানতে ইচ্ছা হয় ।

..... এক সময় কাঁটা চামচ নিয়ে ধস্তাধস্তি করতে করতে আমাদের খাওয়া ফুরোয় । আবার দেখা হওয়ার আশা প্রকাশ করে একে অপরের থেকে বিদায় নিয়ে যে যার গন্তব্যে রওনা হয়ে যাই ।

হরতাল বলে রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা । সামর্থ্যবান রিকশাওয়ালা খুব অল্প সময়ের মধ্যে রিকশা প্রায় উড়িয়ে নিয়ে আসেন হাই কোর্টের সামনে। এখানে আসলেই আমি খুব মনোযোগ দিয়ে একটা দৃশ্য দেখি। রাস্তার পাশের নাম না জানা গাছটার নিচে একটা ভ্যানের উপর দশ - বার বছরের দুই ভাই বোনের রুটির দোকান । ছোট মেয়েটা যন্ত্রের মতো তুমুল গতিতে এবং সুচারুভাবে একের পর এক রুটি বেলে গরম তাওয়ায় সেঁকে যায় । তার অপ্রাপ্তবয়স্ক হাতের প্রতিটা রুটিই আকার নেয় নিপুন গৃহিণীর হাতের রুটির মতো বৃত্তাকার, ফুলে ওঠে চ্যাপ্টা ফাঁপা বলের মতো । ভাইয়ের দায়িত্ব সামনে দাড়ানো অভুক্ত মানুষদের খাওয়ানো, প্লেট পরিষ্কার করা, টাকার হিসাব রাখা এবং বিক্রি শেষে বোনকে ভ্যানে বসিয়ে তা চালিয়ে বাড়ি ফেরা ।

প্রায়ই ভাবি তাদের দোকান থেকে একদিন একটা রুটি খেতে খেতে কথাচ্ছলে তাদের সাথে কিছু কথা বলবো ; তারা কোথায় থাকে? ঘুমের ঘোরে তারা কি পরীর দেশের ম্বপ্ন দেখে, নাকি দেখে জ্বলন্ত উনুনের আগুন? জীবনে তারা কি হতে চায়?.... সাহস হয় না। জীবন কে খুব কাছ থেকে দেখা মানুষেরা যাদের জীবন নিয়ে গবেষনা করার মতো অফুরন্ত অবসর আছে, সেসব দুঃখবিলাসী নাগরিকদের ঘৃণার চোখে দেখে ।

....... তাই আর সেদিকে পা বাড়াই না । রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দেই । ল্যাম্প পোস্টের বিভ্রম তৈরি করা হলুদ আলোতে আমার কাছে বিশ টাকার নোট আর পঞ্চাশ টাকার নোট একই ঠেকে । রিকশাওয়ালাও আমাকে শুধরায় না । দ্রুত হারিয়ে যায় ।.... আচ্ছা, তার কাছেই বা জীবনের সার্থকতা কি? কাউকে ঠকিয়ে হলেও পকেটে কিছু টাকা বেশি নিয়ে বাড়ি ফেরা?

কে জানে ....... হয়তো জীবনের আসলে কোন অর্থই নেই । তাই অর্থ খুঁজেই সারাজীবন আমরা পার করে দেই, অর্থের দেখা মেলে না। যত ভাবি, ততই জটিলতা বাড়ে - জীবনে, মস্তিষ্কে, মনে। তারচেয়ে বরং জীবনকে নিয়ে বোধহয় না ভাবাই ভালো। এ বোধহয় কোন খেলা, যেখানে জয় - পরাজয়ের সংজ্ঞা অস্পষ্ট এবং খেলোয়ার আমরা সবাই ।

খেলারাম, খেলে যা ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:২৬

নতুন বলেছেন: জীবন :)

২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:৪৪

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন।

পোস্টে প্রথম ভালো লাগা রইল।

৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭

ভূতের কেচ্ছা বলেছেন: :D :D

৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:১১

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লাগলো ।

শুভেচ্ছা ।

৫| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সেইরাম লাগলো জীবন গবেষনা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.