![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।
আচ্ছা, পরীক্ষা ছিলো বা চলছে শুনলেই মানুষ কেন জিজ্ঞাস করে পরীক্ষা কেমন হলো? আমার বয়সী মানুষের পরীক্ষা কেমন হইলোটা আবার কি? হইলো.... দিলাম ; এটাই তো যথেষ্ট ।
ছোট্ট একটা হিসাব দেই ।
প্লে, নার্সারি এসব পড়ি নি । ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত স্কুলে সাবজেক্ট ছিলো যতদূর মনে পড়ে পাঁচটা করে । বছরে পরীক্ষা হতো তিন সাময়িকে ভাগ করে । তারমানে পাঁচ বছরে মোট বিষয় ছিলো ২৫ টা ।
১+ ( ২৫*৩ ) = ৭৬ টা পরীক্ষা
সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত মোট বিষয় প্রতি বছর বারোটা করে । পরীক্ষার ফ্রিকোয়েন্সি নাইন পর্যন্ত তিনবার করেই, টেনে ওঠার পর টেস্ট, প্রিটেস্ট, বোর্ড পরীক্ষা সহ পাঁচবার ।
তাহলে,
( ১২*৪*৩ ) + ( ১২ * ৫ ) = ২০৪ টা পরীক্ষা
উঠলাম কলেজে । নটর ডেম কলেজ, বাংলাদেশের প্রধাণ পরীক্ষা শিল্পী প্রতিষ্ঠান । এখানে প্রতি সপ্তাহে দুইটা করে পরীক্ষা হতো, আর বছরে অর্ধ বার্ষিকী এবং ফাইনাল পরীক্ষা তো ছিলোই । এক বছরে সপ্তাহ থাকে মোট ৫৩ টা, সরকারি ছুটি হরতাল সব মিলিয়ে যদি ৩০ সপ্তাহও ক্লাস হয় তাহলে এখানে প্রতি বছর ৬০ টা পরীক্ষা । কলেজ জীবনে সাবজেক্ট ছিলো দুই বছরে ছয়টা ছয়টা করে বারোটা । আছে বোর্ড পরীক্ষা ।
৬০ + ( ৬*২ ) + ৬০ + (৬*২ ) + ১২ = ১৫৬ টা পরীক্ষা
স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত একাডেমিক পরীক্ষা গেলো ( ৭৬ + ২০৪ +১৫৬) = ৩৩৫ টা । এর সাথে এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি-র সময় ব্যাচে দেয়া তিন সেট করে মডেল টেস্টের হিসাব আনুন। ওখানে পরীক্ষা ৭২টা ।
( ৩৩৫ + ৭২ ) = ৪০৭
এর পর ইউনিভার্সিটি কোচিং । এখানে পরীক্ষা প্রতি সপ্তাহে এবং শেষের দিকে একটানা পনের দিন । আর এডমিশন টেস্ট তো আছেই বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে । আমি মোট আটটা পরীক্ষা দিয়েছিলাম ঢাঃবিঃ, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মিলিয়ে ।
এই স্টেজে পরীক্ষার সংখ্যা একটু কমিয়েই ধরি অংকটা রাউন্ড ফিগারে নিতে ।
( ৪০৭ + ৩৩ ) = ৪৪০ টি পরীক্ষা মাত্র
শুরু হলো ইউনিভার্সিটি জীবন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট, বিভীষিকার আরেক নাম, দুনিয়ায় হাবিয়া দোজখের পাইলট প্রজেক্ট ।
চার বছরের বিবিএ লাইফে মোট কোর্স ছিলো ৩৮ টা । ছয় মাস করে সেমিস্টার, প্রতি সেমিস্টারে তিন বার করে পরীক্ষা ।
( ৩৮ * ৩ ) = ১১৪ টা পরীক্ষা ।
শুধু পরীক্ষার কথাই আনলাম। এছাড়া ক্লাস টেস্ট, এসাইনমেন্ট, অন্তহীন প্রেজেন্টেশন, রিপোর্ট সাবমিশন, ভাইবা, ইন্টার্নশিপ না হয় হিসাবের বাইরেই থাকলো ।
এখন চলছে এমবিএ। দুই সেমিস্টারে মোট কোর্স দশটা । পরীক্ষা বিবিএ-র নিয়মেই । প্রতিতি সেমিস্টার তিন রাউন্ড। আমি প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল দিলাম । অর্থ্যাৎ মোট পনেরটা পরীক্ষা গেলো । তারমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পর্যন্ত মোট পরীক্ষা দেয়া হয়েছে ১২৯ টা ।
.......... হিসাববিজ্ঞানের ভাষায় বললে, এখন জের টানি ।
( ৪৪০ + ১২৯ ) = ৫৫৯ টা পরীক্ষা মাত্র ।
এখানে হিসাব কমিয়ে কমিয়ে ধরা হয়েছে । একদম নিখুঁতভাবে ধরলে সংখ্যাটা আরও বহু বেড়ে যাবে ।
এখন আপনারাই বলেন, যেই মানুষ জীবনে এই পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৫৯ টা পরীক্ষা দিয়ে ফেলছে, তার কাছে কি পরীক্ষা কেমন হইছে সেটা জানতে চাওয়ার কোন মানে আছে? >_< .. সে যে এখনো পরীক্ষার হলে যায়, এটাই কি অনেক বেশী না!? -_- .... আমি, আমার সহপাঠী এবং সিনিয়র যারা এখনও নিরলসভাবে পরীক্ষা দিয়ে চলেছেন, দিয়েই চলেছেন - তাদের তো সরকারের থেকে বিশেষ ভাতা পাওয়া উচিত । বয়স্ক ভাতার মতো পরীক্ষার্থী ভাতা ।
বেঁচে থাকলে সামনে আছে চাকরি, বিয়ে, ক্যারিয়ার সহ আরও নানান পরীক্ষার ননস্টপ আসা - যাওয়া ।
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে একটু আলোচনায় বসা দরকার। সংবিধানে বহু সংশোধনী তো তারা আনলেন। এতোবারই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে যে বাংলাদেশের সংবিধান পৃথিবীর সবচেয়ে বেশীবার সংশোধিত সংবিধান। প্রধানমন্ত্রী কে অনুরোধ করা দরকার আরেকটা সংশোধনী আনতে । পরীক্ষা কেমন হয়েছে, কেমন আছি- এসব জিজ্ঞাস করা যাবে না। এসব প্রশ্ন করা আইনত দন্ডনীয় এবং অজামিনযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে, যার নূন্যতম শাস্তি দশ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা -_-
এতো পরীক্ষা যে দিলাম, দিয়ে ফলাফলটা কি? একাডেমিক পড়া পড়ে মানুষ হলাম কতটুকু? বই পড়ে আদৌ কি এমন শিখলাম যা জীবনে কাজে লাগানো যাবে? তেমন কিছুই না । এখনকার পড়াশুনা ভালো কর্মী তৈরি করতে পারে, ভালো মানুষ তৈরিতে এর কোন ভূমিকা নেই, ফিন্যান্সের ভাষায় বললে " একজন ভালো মানুষ গড়ায় চলমান পড়াশুনার ধারার Net Present Value (NPV) zero ". আমার মধ্যে যদি ভালো একটা গুনও থেকে থাকে তার কৃতিত্ব আমার পরিবার, কিছু একান্ত কাছের মানুষ এবং অতি নগন্য সংখ্যক কিছু শিক্ষক - শিক্ষিকারই কেবল । অর্থহীন, দুর্বোধ্য, অপ্রাসঙ্গিক, বাস্তবের সাথে সাযুজ্যবিহীন পুঁথিগত বিদ্যা পরীক্ষা শেষ হবার পর পুঁথি বন্ধ করার পরপর মাথা থেকেও অদৃশ্য হয়ে গেছে নিয়মিতভাবে ।
......... এতো পরীক্ষা গেলো, অথচ আসল পরীক্ষাই এখনো বাকি । ওটা হবে মরার পর, আখিরাতে, সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা । পরীক্ষক আল্লাহ্ ।
মইরা গিয়াও পরীক্ষার হাত থেইকা রেহাই নাই ।
২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০১
ঢাকাবাসী বলেছেন: মজার পোস্ট!
৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৯
ডি মুন বলেছেন: যেই মানুষ জীবনে এই পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৫৯ টা পরীক্ষা দিয়ে ফেলছে, তার কাছে কি পরীক্ষা কেমন হইছে সেটা জানতে চাওয়ার কোন মানে আছে? সে যে এখনো পরীক্ষার হলে যায়, এটাই কি অনেক বেশী না!?
--- হা হা হা একদম ঠিক বলেছেন
+++
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩১
হাসান মাহবুব বলেছেন: আফসোস!