নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তবুও মানুষ বাঁচতে চায়

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:১০

ইউনিভার্সিটির MBA বিল্ডিংটার পেছনের মাঠটাতে পড়ন্ত বিকেলে প্রায়ই বসি । বসলে আমার মায়ের বয়সী একজন মহিলার সাথে দেখা হয় নিয়মিতই । বোধহয় ইউনিভার্সিটি কোয়াটারে থাকেন । আমি তাঁর দিকে বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকাই , তিনি তা বুঝতেও পারেন । কিন্তু সম্ভবত পর্দার ব্যাপারে খুব বেশী আন্তরিক বলে কখনও আমার দিকে চোখ তুলে তাকান না ।

তিনি প্রতি বিকেলে ঘাম ঝড়িয়ে খুব দ্রুত ঘণ্টা খানেক হাঁটেন রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে । স্কার্ফ আর বোরকার সাথে স্কুলের বাচ্চাদের সাদা কেডস অবশ্যই হাস্যকর সমন্বয় । কিন্তু আমার হাসি আসে না, বরং তাঁর ঘর্মাক্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে আর আশেপাশের মানুষের চাউনির সামনে তাঁর অনভ্যস্ততা দেখে বেশ মায়াই লাগে । তাঁর পর্দার ধরন দেখে নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায় তিনি সাধারণত ঘর থেকে পারতপক্ষে বের-ই হন না । এখন বাধ্য হয়ে বের হয়েছেন । হয়তো ডায়বেটিস বা মহিলাদের পঁয়তাল্লিশ পরবর্তী স্বাভাবিক শারীরিক সমস্যায় কাবু হয়েই তাকে সুস্থ থাকার জন্য, আরও কিছুদিন বেশী বেঁচে থাকার জন্য ঘর থেকে বের হতে হয়েছে ।

..... শান্তিনগরের কোয়ান্টামে মাঝেমাঝে রক্ত দিতে যাওয়া হয় । ওখানে গেলে আরেক দৃশ্য । নিয়মিতই দেখি দেবশিশুর মতো ছোট ছোট একজন বা দুইজন বাচ্চা ওয়েটিং রুমের বাবা বা মায়ের ঘাড়ে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে । এদের নিঃস্পৃহ দৃষ্টি বুকের ভেতর কাঁপন ধরিয়ে দেওয়ার মতো । বাচ্চাগুলো ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত ... মাসে মাসে নিয়মিত শরীরে রক্ত নিতে হয় , নাহলে পৃথিবীর আলো হাওয়ায় নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগটা আর থাকবে না ।

.... বছর দুই আগে যাত্রাবাড়ীতে ভয়াবহ এক অ্যাকসিডেন্ট দেখেছিলাম । দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস প্রবীণ এক লোকের শরীরের প্রায় অর্ধেক অংশ প্রায় থেঁতলে দিয়ে চলে গেছে । অদ্ভুতভাবে তখনও লোকটার জ্ঞান পুরোপুরি হারায় নি এবং অবশিষ্ট চেতনার সবটুকু এক করে তিনি বড়বড় চোখে আশেপাশের সবার দিকে তাকিয়ে হিস্টিরিয়াগ্রস্থের মতো বলে চলেছেন - " ভাই আমারে মেডিকালে নিয়া যান ...... ভাই আমারে মেডিকালে নিয়া যান " । এতো রক্ত সহ্য করে তাকে কোলে করে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য রিকশায় তোলার মতো সাহসী মানুষ সেখানে পাওয়া যাচ্ছিল না ।

... নিতান্ত অনিচ্ছায় ঢাকা মেডিক্যালে গিয়েছি এক পরিচিতকে দেখতে । শেষ বিদায় হয়ে যেতে পারে এমন দেখা দেখতে যেতে ভালো লাগে না । সেই পরিচিত বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় জীবনের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে গেছেন । তবুও অবাক হয়ে দেখলাম তড়িঘড়ি করে দেখা করা শেষে ফিরে আসার সময় তিনি তাঁর পালকের মতো হালকা হাতটা কাপাকাপা অবস্থায় আমার হাতে রেখে আবার তাকে কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার পর দেখতে যেতে বললেন । অর্থাৎ তিনি ভেবে রেখেছেন যে তিনি বাসায় ফিরবেন এবং আরও কিছুদিন অবশ্যই বাঁচবেন ।

তাকে বাসায় দেখতে যাওয়ার আর প্রয়োজন পড়ে নি ।

... এক জীবনে দেখা আরেকটু বেঁচে থাকার জন্য মানুষের আকুলতার এমন টুকরো টুকরো আরও বহু ঘটনা বলতে পারি । মানুষ বাঁচতে চায়, সবকিছুর পরেও বাঁচতে । আশা নিয়ে হোক , হতাশা নিয়ে হোক – আরও কিছুদিন বাঁচতে চায় । আবার এই মানুষই কোন কারণ ছাড়া নিজেকে অনেক সময় শেষ করে দেয় । কোন এক নিঃসঙ্গ রাতে সবার চোখে সুখি কেউ এক মুঠো ঘুমের ঔষধ খেয়ে সেই যে ঘুমোতে যায় আর কখনও জাগে না । আবার পরিচিত হাসিখুশি মানুষটাই উঁচু কোন ছাঁদ থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ে মুক্তি খোঁজে বা ধারালো ব্লেড দিয়ে হাতের শিরা কেটে ফেলে অবহেলায় হারিয়ে যায় সবার থেকে । জীবনে অনেকের চেয়ে অনেক বেশী কিছু পেয়েও সবসময় ভয়াবহ শূন্যতায় ভোগা এরা মানুষ হিসেবে সাধারণের কাতারে পড়েন না । এরা হয় অসুস্থ , অথবা খুব বেশী দুর্বোধ্য, কিংবা অসাধারণ ।

দুইদিনের চলমান ভূমিকম্পের আতঙ্কে মানুষ দিশেহারা হয়ে গেছে । এ আতঙ্ক নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে । মনে করিয়ে দেওয়ার মতো – পৃথিবীতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের সুস্থ ভাবে , স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকাটাই আসলে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ।

আল্লাহ্‌ সকলকে নিরাপদ ও ভালো রাখুন । আমিন ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: মন আর্দ্র হলো লেখাটা পড়ে।

২| ০৩ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৩০

আজমান আন্দালিব বলেছেন:
তবুও মানুষ বাঁচতে চায়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.