![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।
১.
সারাদিন টিপটিপ বৃষ্টির পর সেদিন বিকেলে হুট করে একটা ঘটনা ঘটে গেলো । ঘটনাটা অস্বাভাবিক রকমের স্বাভাবিক ঘটনা হয়েও অস্বাভাবিক ।
- চা খাবো ।
- কি!? চা খাবা? তুমি!!
- হু .... কড়া লিকারের লেবু চা । লিকারের রঙ, চায়ের স্বাদ হুমায়ুন আহমেদের ছোট গল্পের মতো অসাধারণ হতে হবে ।
- অন্যদিন তো তোমাকে হাতে - পায়ে ধরেও চা খাওয়ানো যায় না । আজ কি হলো? ঘটনা কি??
- কোন ঘটনা নেই । আমার মনে হচ্ছে এতো সুন্দর আবহাওয়ায় রাস্তার পাশের টং দোকানের সামনে দাড়িয়ে বড়সড় কাঁচের গ্লাসে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা না খেলে মানবজন্ম বৃথা!
- তাহলে তো চা খাওয়াটা খুবই দরকার । আমি খাওয়াবো... চলো ।
- অবশ্যই তুমি খাওয়াবে । আমার পকেটে যা টাকা আছে তা দিয়ে বাস ভাড়া দিয়ে বাড়ি পৌছানোর পর বাকি থাকবে আট টাকা। দুই কাপ চায়ের দাম সম্ভবত বারো, আমি খাওয়ালে আজ বাড়ি ফেরা যাবে না ।
- ( চোখ পাকিয়ে ) এতো হিসাব শিখেছো কোথা থেকে তুমি? তোমার কাছে এতো হিসাব কেউ জানতে চাইছে? হাঁটো চুপচাপ ।
অতঃপর রাস্তায় নামে দুজন । বৃষ্টি ভেজা নগরীর ফুটপাত পায়ের নিচে লুব্ধকের ঝকমকিয়ে তাদের স্বাগত জানিয়ে চলে ।
২.
টিপটিপ বৃষ্টি নেমেছে আবার ।
দুজন ঠিক তাদের চাওয়ার মতো একটা ছোট্ট চায়ের দোকানের সামনে রাখা কাঠের নড়বড়ে টুলে বসা । তারা দুইজন আর বৃদ্ধ দোকানদার ছাড়া আর কেউ নেই । সারাদিন বিক্রি - পাতি খুব একটা হয় নি । দোকানদার তাই খুব আগ্রহ নিয়ে গরম পানিতে চায়ের কাপ পরিষ্কার করে লিকার ঢালছে । কেতলিটার হাতল এক পাশ দিয়ে আলগা হয়ে গেছে । বছর দুই আগে এই দোকানটাতে ছেলেটা যখন এসেছিলো একবার তখনও হাতলটা ভাঙ্গাই ছিলো । সে স্মৃতি রোমন্থন করে চলা ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে থাকে সেদিকে । সবিৎ ফেরে পাশের মানুষের গলার স্বর শুনে ।
- কি দেখো এতো মনোযোগ দিয়ে? ওটা চায়ের কেতলি, আমি না। এতো মনোযোগ দিয়ে দেখলে আমাকে দেখা উচিত।
কথাটা শুনে ছেলেটা মুচকি হাসলো একটু । সহজ সরল হাসি । তবে এমন হাসি যা মানুষের মনে খুব দ্রুত নির্ভরশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করার ক্ষমতা রাখে ।
- কেতলির হাতলটা দুই বছর আগেও এমনই ছিলো ।
- এসেছিলে নাকি আগেও এই দোকানে?
- হ্যা ।
সংক্ষিপ্ততম জবাব । মেয়েটা জবাবের পেছনের ইতিহাস শোনার সুযোগ পেলো না, দোকানদার দুজনের হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দেয় । সুঘ্রাণ আসছে বেশ । দুজন চায়ে চুমুক দেয় । নীরবতা । বৃষ্টি আরেকটু জোরে নামে । ছেলেটা সেদিকেই চোখ রেখে মৃদু গলায় প্রশ্ন করে নীরবতা ভাঙ্গে ।
- দুজন মানুষ পাশাপাশি বসে থাকার সবচেয়ে করুন দিকটা কি বলো তো?
- জানি না । কি?
- স্পর্শের দুরুত্বে থেকেও কেউ জানে না তার পাশের মানুষটা কি ভাবছে ।
- কি ভাবছো তুমি?
জবাব পাওয়া যায় না। আবারও মুচকি হেসে প্রসঙ্গ ঘোরায় ছেলেটা ।
- তুমি কি জানো বৃষ্টির সময় টং দোকানে বসে চা খাওয়ার আলাদা নিয়ম আছে? চায়ের কাপে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির পানি নিয়ে নিতে হয় ।
- কার বের করা নিয়ম? হুমায়ুন আহমেদের?
- হা হা হা .... নাহ্, আমারই বের করা ।
বলে সে সত্যি সত্যিই বৃষ্টির মধ্যে হাতে ধরে রাখা কাপ এগিয়ে দেয় । বৃষ্টির ফোঁটা কাপে পড়ছে না, এপাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে । সেও হাতের অবস্থান বদল করে ..... এই প্রথম হিসেবী ছেলেটাকে বেহিসাবী একজন মনে হয় । তাই দেখতে দেখতে কিছুক্ষণ আগে জবাব না পাওয়া প্রশ্নটা আবার করবে কিনা, মেয়েটা ভাবে । না করাই বোধহয় ভালো । ঐ প্রশ্ন আবার করলে হিসেবী মানুষটা বের হয়ে এসে জবাব হয়তো দেবে, কিন্তু এই বেহিসাবি মানুষটাকে দেখতেই বেশী ভালো লাগছে তার ।
৩.
ঝুম বৃষ্টি । রিকশায় করে বাস স্ট্যান্ডের দিকে এগোচ্ছে দুজন । সন্ধ্যা নেমে এসেছে প্রায় ।
- চা কেমন লাগলো? হুমায়ুণ আহমেদের ছোট গল্পের মতো হয়েছে?
- হু হয়েছে.. একদম, পুরোপুরি ।
- কোন গল্পটার মতো?
- একজন ক্রীতদাস ।
- পড়েছি কিনা মনে করতে পারছি না... নামটা পরিচিত অবশ্য ।
- আমার মুখস্থ এ গল্প... শুনবে?
বলে জবাবের অপেক্ষায় না থেকে ছেলেটা গল্প বলা শুরু করে । গল্পটা আসলেই তার মুখস্থ, দাঁড়ি - কমা সহ । বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ে, সাথে দমকা বাতাস । ফাঁকা রাস্তায় হুডতোলা রিকশায় দুজনকে ঢেকে রাখা পলিথিন এদিক ওদিক হয়ে যেয়ে ভিজিয়ে দিতে থাকে দুজনকে । এর মধ্যেই চলে গল্প বলা ।
বলতে বলতে হুট করে ছেলেটার খেয়াল হয় এ গল্পটার পরিণতি তো হৃদয় হাহাকার করে ওঠার মতো বিষন্নতার । তার চোখে পড়ে পাশে বসে কান পেতে গল্প শুনতে থাকা ইন্দ্রাণীর শঙ্খের মতো সুন্দর হাত খুব কাছেই রাখা । ছেলেটার ভাবে ইন্দ্রাণীর হাতটা ধরে সে কি গল্পটার পরিণতি বদলে দিতে পারে? লেখক যা লিখে গেছেন তেমনটা নয়, ভিন্ন কোন পরিণতির?
গল্প বলতে বলতেই ছেলেটা ঝড়ের বেগে ভাবছে । গল্পের পরিণতি কি টানবে সে? বিষন্নতার, নাকি ভালোবাসার? ভালোবাসার পরিনতি কি টানা সম্ভব? সে পারবে? তার মন কি সত্যিই তাই চায়? হুট করে নিজের হাতে চলে আসা এ প্রচন্ড ক্ষমতায় সে শিহরীত হয়, শরীর কাঁপতে থাকে, নিজেকে তার মনে হয় ঈশ্বরের মতো সৃষ্টিশীল কোন একজন... ওদিকে গন্তব্য এগিয়ে আসতে থাকে দ্রুত । হাতে খুব বেশী সময় নেই আর ।
কি হওয়া উচিত গল্পটার সমাপ্তি!
১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ১২:১৪
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: তাও তো ঠিক !
২| ১২ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:১৯
আলী আকবার লিটন বলেছেন: কিছু মিষ্টি শব্দ টুং টাং কানের কাছে বাজতে বাজতে হটাত বন্ধ হয়ে গেলেই ভাল লাগে । বন্ধ হয়ে যাবার পরেও সেই মিষ্টি শব্দের উনুভুতি থাকে বহুক্ষণ । নিয়ে যায় অন্য এক সীমাহীন ভাবনার জগতে ।জিবনের কিছু কিছু ঘটনার সাগসেস্ফুল সমাপ্তি ্করতে নেই। রেশ রেখে দিতে হয়..
ভাল লিখেছে ধন্যবাদ!!
১২ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৭
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও !
৩| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:১৬
সুমন কর বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা। তবে বারবার হুমায়ুন আহমেদের নাম আসাটা ভালো লাগেনি।
সমাপ্তি ঠিকই আছে। ৪+।
১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:২১
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: মাত্র দুইবার তো !
৪| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:২৪
সুমন কর বলেছেন: ছোট গল্পেই ৩ বার।
লাইক কিন্তু দিয়েছি। আমি ইমো দিতে পারিনা।
১৩ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:১৯
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ১৪ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ২:১৫
হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার হয়েছে।
৬| ১৪ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:২৯
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চমৎকার| একজন ক্রতদাস পড়েছি| ওর গল্প ভালোই লাগে| তবে এটা ঠিক, গল্পকারের নিজের জগৎ থাকা উচিৎ| আপনার লেখার জগৎটা কি হুমায়ুন কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে না? গল্প ভাল লেগেছে
১৫ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:১৬
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: মাত্রাতিরিক্ত হুমায়ূন আহমেদ প্রীতির ফল !
৭| ১৪ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩০
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: লেখক,কথক একেকজন ঈশ্বরই বটে| হাতে অপার ক্ষমতা
১৭ ই জুন, ২০১৫ রাত ১০:৩০
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: আসলেই ....
৮| ১৭ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:০৯
তাসজিদ বলেছেন: শেষ পরিনতি ঠিক ক্লিয়ার হল না।
১৭ ই জুন, ২০১৫ রাত ১০:৩০
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: পরিণতি জানা নেই । থাকলে লিখতাম ।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:০৫
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: এইখানেই তো সমাপ্তি। অন্য সমাপ্তির কি দরকার?