![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।
কাঁচকলাকে সবসময়ই আমার মনে হয়েছে আরেকজনকে দেখানোর জিনিস । বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের একপাশে ছোট্ট একটা ভ্যানে করে দোকান সাজিয়ে বসা স্বাস্থ্যবান, হাসিখুশি চেহারার মামা আস্ত এক কাঁচকলাকে সুনিপুন দক্ষতায় প্রায় আলোর গতিতে ছুরি দিয়ে ছুলে ধনিয়া পাতা, চিনি, কাঁচা মরিচ সহ আরও নানান উপাদান একসাথে হামান দিস্তায় ছেঁচে যে তালগোল পাকানো বস্তু পলিথিনে করে হাতে ধরিয়ে দিলেন তা অল্প একটু মুখে দিয়েই আগের ধারণাটা বদলাতে হয় । কাঁচকলার ভর্তা হয়, এবং তা অবিকল ও'হেনরির লেখা গল্পের আমেজের । আমার আরেক হাতে আবার তখন ছিলো আধ খাওয়া মাচো আইসক্রিম । ইগলু কোম্পানির এক বড়সড় হাসিখুশি পেঙ্গুইনের ছবিওয়ালা মোড়কে মোড়া ভালো মানের সে আইসক্রিম আর কাঁচকলার স্বাদ দুই মিলিয়ে মুখের ভেতর প্রাচ্য এবং প্রাতীচ্যর মিশ্র স্বাদ তৈরি করে আর করোটির ভেতর জন্ম দেয় ' আজ নাহয় বাসায় আর নাই ফিরি ' - ধরনের বিবাগী কোন অনুভূতি ।
এরমধ্যেই হঠাৎ কম্পন । না না ... হৃদয়ে নয় মোটেও, প্যান্টের পকেটে রাখা মুঠোফোনটাতে । দুই হাতে দুই খাবার। এমন মুহূর্তে ইথারে ডাক পাঠিয়ে কেউ আমাকে তথৈবচ অবস্থায় ফেলে দেয় এবং ফলস্বরুপ বিড়ালের ভাগ্যে শিঁকে ছেড়ার মতোই একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা এক পথশিশুর কপালে আমার আধ খাওয়া আইসক্রিমটা জুঁটে যায়। নিজের এঁটো করা খাবার আরেকজনকে খেতে দিতে আমার একটুও বাঁধে না, বরং আমি ভ্রু কুঁচকে মনে মনে দ্রুত বেগে হিসেব কষি এই অসময়ের দূরের ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্যে কতখানি Opportunity cost তথা সুযোগ ব্যয় বহন করলাম । হিসেবে আমি বেশ ভালো । দেখা গেলো অংকটা খুব একটা কম না ।
ফোনটা কানে ঠেকাই ।
অথচ না ঠেকালেও পারতাম বা চেষ্টা করেও ঠেকাতে ব্যর্থ হতে পারতাম । বাংলালিংক কোম্পানির অপরিচিত নম্বার থেকে অজানা কেউ একজনের পাঠানো ডাকটা মোবাইলটাকে ত্রিশ সেকেন্ড কম্পিত করে আমি প্রতিউত্তর করতে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে ফুরিয়ে যেতে পারতো । ফোনটা ধরার সময় আমার হৃযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারতো, ভূমিকম্পে পায়ের নিচের ভূপৃষ্ঠ ফাঁকা হয়ে গিয়ে বিরাট এক গহ্বর আমাকে তার মধ্যে টেনে নিতে পারতো । কিংবা এসবের কিছুই না, মুঠোফোনটাই আর সজাগ থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আমাকে আর্থিক সমস্যার সাগরে ভাসিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে পারতো চিরতরে ।
কিন্তু বাস্তবে এসবের কিছুই ঘটে না ... অথচ Murph's Law যদি আমরা মেনে নেই, যা বহুল প্রচলিত এবং প্রতিষ্ঠিত বলে মেনে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ, তাহলে আমরা জানি যা ঘটা সম্ভব তা ঘটবেই । অবশ্য Murph সাহেব বিশাল এক ফাঁকা রেখে গেছেন তার থিওরিতে । তিনি বস্তুজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মাত্রা " সময় "- কে উপেক্ষা করেছেন পুরোপুরি ..... সে যাই হোক, ফোনটা কানে ঠেকানোর পর আমি শান্তি বর্ষিত করার আশীর্বাদ ছাড়াই একটু বিরক্ত ও অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞাস করি কে? ওপাশ থেকে শব্দ পাওয়া যায় না। আমি আবারও ব্যস্ততার স্বরে জিজ্ঞাস করি আমাকে ডাক পাঠানো মানুষটার পরিচয় - অবেলায় আমার খোঁজ করার কারণ । এবার ওপাশের নীরবতা ভাঙ্গে, কিন্তু কোন স্পষ্ট কন্ঠস্বর ভেসে আসার বদলে ভেসে আসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ । যুগপৎ অবাক এবং বিরক্ত হই । কি বলবো কথা খুঁজে পাই না ।
কিছু বিহ্বল মুহূর্ত কেটে যায় ।
তারপর আমি মুঠোফোনটা কান থেকে নামিয়ে রাখি এবং মনোনিবেশ করি হাতের খাদ্যবস্তুর দিকে । একটু হৃদয়হীন কাজ হয়ে গেলো বোধহয় । আমার সম্ভবত খুব কোমল গলায় ওপাশের চিনতে না পারা মানুষটাকে শান্ত হতে বলা উচিত ছিলো, শোনানো উচিত ছিলো চমৎকার চমৎকার কিছু সান্ত্বনা বানী। তাকে তো আমি চাইলেই চমৎকার কোন দু'লাইনের উর্দূ শায়রি শোনাতে পারতাম, বিষন্নতা কাটাতে প্রিয় গায়ক অঞ্জন দত্ত - জন ডেনভারের নির্দিষ্ট কোন গান শোনার পরামর্শ দিতে পারতাম, কিংবা গলায় আবেগ ঢেলে মৃদু স্বরে শোনাতে পারতাম কাহলিল জিবরানের লিখে যাওয়া সেই লাইনটা - " বিস্মৃতি স্বাধীনতার ", কাজেই ভুলে গিয়ে স্বাধীন হয়ে যাও ; অথবা - " ঈশ্বরের প্রথম ভাবনার প্রকাশ ছিলো একজন দেবদূত । ঈশ্বরের প্রথম শুদ্ধ উচ্চারন ছিলো একজন মানুষ । ", - যার হাসার নিয়ম সবাইকে নিয়ে, কিন্তু কাদঁতে হবে একা । আমাকে শুনিয়ে কাঁদার কিছু নেই । আমি নিজেই আকন্ঠ পানির সমুদ্রে ডুবে থাকা তৃষ্ণার্ত গ্রিক পুরাণের অভিশপ্ত টেনটেলাস, কারও ঠোঁটে চুমু খেয়ে তার শাপমোচন ঘটানো আমার পক্ষে সম্ভব নয় ।
কিন্তু কিছুই শেষ পর্যন্ত বলা হয় না । কারণ আমি তাকে চিনতে পারি নি, তার পরিচয় আমার কাছে ঠেকে চৈনিক অক্ষরের মতো দুর্বোধ্য । স্মৃতি হাতড়ে সম্ভাব্য একটা তালিকা তৈরি করতে চেষ্টা করি, যার ম্যালথাসের বলা যাওয়া জনসংখ্যা তত্ত্বের মতো জ্যামিতিক ক্রমবর্ধমানতার হার দেখে আমি থমকে যাই, যেতেই হয় । চুলোয় যাক সব ..... পুরোনো স্মৃতির খাতা হাতড়ানো অবসরপ্রাপ্ত কেরানীর কাজ । ও পথ আমি আর মড়াবো না কিছুতেই । স্মৃতির খাতা নির্ঘাত এক প্যান্ডোরার বাক্স যা একবার খুলে ফেললে পশ্চিমের আকাশে অস্তগামী সূর্যের অনুপম মেঘের কারুকার্যের এ বিকালটা অস্পষ্ট বিষন্নতায় তলিয়ে যাবে পুরোপুরি । বহু কষ্টে বিশ্ব - চরাচর ভাসিয়ে নেওয়ার মতো শক্তিশালী জলোচ্ছ্বাস আমি যে নিঃস্পৃহতার বাঁধ দিয়ে থামিয়ে রেখেছি, তার বুকে আবার কোদাল চালানোর মতো বোকা আমি নই । আমার এ প্যান্ডোরার বাক্স বন্ধই থাকুক চিরকাল ।
যাই হোক , সব চিন্তা পরে । আগে হাতের কাঁচ কলার ভর্তা খাওয়া শেষ হোক ।
১৬ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:২৯
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: বিরক্ত হয়ে মন্তব্য মুছে দিলাম সেজন্যেই ।
২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:২৮
মেধাহীন মেধাবী বলেছেন: বাহহ,,
৩| ১৬ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:০২
সুমন কর বলেছেন: একদম ভিন্ন রকম লেখা। আমার কাছে ধোঁয়াটে লাগল। হাহাহাহা.........
৪| ২১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪২
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো।
৫| ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৩৯
দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: ভাল লাগল কথা মালা । ্ ্ ্ ্ । আর পেলাম ভাল একটা রেসিপি ।ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:২৭
মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্ বলেছেন: অর্ণক লেখা বোঝার ক্ষমতা অনেকেরই দেখি নাই। এইখানে ফালতু কমেন্ট না করে তাদের আনন্দ পাওয়ার জন্য রসময় গুপ্তের কয়েকটা লাইন ইনবক্স করে দিতে পারিস পড়ে খুশী হবে।