![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।
অস্পষ্টার আড়ালে বিশেষত্ব জাহিরের চেষ্টা নয়, শব্দের গাঁথুনিতে কিছু বাক্য তীব্রভাবে প্রকাশ করুক অনুভূতি । জীবনান্দের মতো কল্পনাশক্তি সবার থাকে না বলে রোগীর বেডের পাশের ঝুড়িতে রাখা কমলালেবু হওয়ার সাধ সকলের জাগে না, দারুচিনি দ্বীপের ভেতর বা ফেনিল সিংহল সমুদ্রও সাধারণের আয়ত্বের বহু বাইরে । ভালো থাকার জন্যে মানুষের কেবল বনলতা সেনেরই প্রয়োজন নেই; প্রয়োজন অর্থ, খ্যাতি, সাফল্য, তৃপ্তির ।
আমার সর্বোচ্চ ইচ্ছা করে ঈগল হতে, যে ঈগল ক্ষমতা রাখে মেঘ ছুঁয়ে উড়তে, কখনো বা বজ্রের মতো মাটিতে নেমে আসতে ..... নয়তো ফিনিক্স হতে - যে নিজের ছাইভস্ম থেকে পুনরায় জেগে উঠে স্থির সংকল্পের ডানা মেলে সূর্যের পানে । কমলা লেবু হয়ে আমার কি কাজ? কটকটে হলুদ টেনিস বলের মতো কমলালেবুর বুকে মানুষ যেভাবে নির্দয়ের মতো নখ বসায়, দাঁতে আর ঠোঁটের ফাঁকে রেখে শুষে নেয় সকল রস - গন্ধ, তাতে আমার মনে পড়ে যায় বিস্মৃত দিনের স্মৃতি । যে স্মৃতি নাম না জানা কোন এক পাখি ও স্বচ্ছ সরোবরের রঙিন কোন এক মাছের মধ্যেকার অদ্ভুত ভালোবাসা আর পাশবিকতার গল্প । তবে ওসব কথা থাক .... আজ বরং জীবননান্দকে নিয়েই থাকি, যিনি... কি যেন.. কমলালেবু হতে চেয়েছিলেন পরজন্মে । মাঝেমাঝে ইচ্ছা হয় এক ঝাঁকা কমলালেবু নিয়ে বসে সেখান থেকে জীবনান্দকে খুঁজে বের করি । তারপর খোসা ছাড়িয়ে একটা একটা করে জীবনান্দের অঙ্গরুপী কোয়াগুলো আলাদা আলাদা করে পুলিশ অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী পাকড়াও করলে বা পাকড়াও করার পর অস্ত্র ধরিয়ে যেভাবে চক্রাকারে ফুলের মতো বুলেট সাজিয়ে দৈনিকে হাসিমুখে ছবি ছাপায়, সেভাবে সাজিয়ে প্রশ্ন করি - কেমন লাগছে এখন কবি সাহেব? সুরঞ্জনা, বনলতা, সুজাতাদের পোঁকা মাথায় ঢুকিয়ে যুবকদের আপনি যন্ত্রনা দিয়ে যাচ্ছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম .... এখন পারলে আসুক আপনার কোথাকার কোন বনলতা সেন । দেখি সে আপনাকে কিভাবে দুদন্ড শান্তি দিয়ে যায় ।
যত্তসব .....
আদানীং ভালো লাগে ইংরেজ কবি বায়রন কে, যাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছিলো ইংল্যান্ডের শতশত অভিজাত পিতলের মূর্তিরা । একটা পা খোঁড়া ছিলো তার । ষোল বছর বয়সে তীব্রভাবে ভালোবাসলেন এক মেয়েকে যে তাকে পরিহাস করে ফিরিয়ে দিলে শারীরিক বিকলাঙ্গতার জন্যে । বায়রনের হৃৎপিন্ডটা বুঝি অদৃশ্য কোন ধারালো ছুরি দিয়ে ফালিফালি হয়ে গিয়েছিলো সেদিন, সারাজীবন আর সে ক্ষত মুছে যায় নি.... খোঁড়া পায়েই সেদিন উন্মত্তের মতো অস্থিরতা বুকে নিয়ে দৌড়ে চলে গেলেন নিজের গ্রাম ছেড়ে বহুদূর। সেই অস্থিরতা তাকে তাড়া করে ফিরলো সারাজীবন; উদ্দাম, বল্গাহীন, অথচ সন্ন্যাসীর মতো নিস্পৃহ এক জীবন কাটিয়ে নিজেকে একই সাথে প্রতিষ্ঠিত করলেন কালজয়ী মহামানব এবং দুশ্চরিত্র লম্পট হিসেবে । যখন বিখ্যাত কেউ ছিলেন না তখন নিজে তীব্রতম ভাবে ভালোবেসেও ভালোবাসার মতো কাউকে কাছে পান নি । তীব্র হতাশায় নিজের যুগোত্তীর্ণ কাব্য Manfred এ লিখলেন ছোট্ট এক আকুতি -
" My pang shall find a voice ..... আমার তীব্র বিষাদ একদিন নিশ্চয়ই ভাষা পাবে । "
আবার এই বায়রনই যখন নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরনে আলোকিত করে দিলেন সমগ্র অষ্টাদশ শতাব্দী, তখন দলে দলে অসূর্যস্পর্শারা এসে হুমড়ি খেয়ে পড়লো তার পায়ে । সুপুরুষ, দীব্যকান্তি এ কবির একটু সান্নিধ্য পাওয়ার জন্যে শতশত মাইল পথ পাড়ি দিয়ে রমনীরা ছুটে আসতো, অথচ ততদিনে নারীদের শ্রদ্ধা করতে তিনি ভুলে গেছেন । যেদিন ইংল্যান্ড ত্যাগ করার জন্যে জাহাজে চেপে বসলেন, বন্দর ভরে গিয়েছিলো ঝি-চাকরের পোশাকে ছদ্মবেশে আসা ইংল্যান্ডের অভিজাত রমনীদের উপস্থিতিতে । তারা কবিকে এক নজর দেখতে চান কেবল! ভালোবাসার সে মহামারী রুপ দেখে বায়রন কি সেদিন অট্টহাস্য করে উঠেন নি? তার অট্টহাস্য কি চীনের মহাপ্রাচীরে প্রতিধ্বনিত হয়ে সমগ্র সাত সাগরের জলে ঢেউ তোলে নি? নাকি ছোট্ট এক দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলেন, যে সুক্ষ্ণ তপ্ত তরঙ্গ জলোচ্ছ্বাসের মতো চারপাশে প্লাবন বইয়ে বলে যায় - দেখো, ভালো মতো দেখো তোমাদের মানবদেবীদের রূপ! কিভাবে এরা ভালোবাসে মানুষকে নয়, মানুষের খ্যাতি আর সাফল্যকে । দেখো কতোটা কুৎসিত, কদর্যতা, আত্নকেন্দ্রীকতা আর স্বার্থপরতায় ডুবে আছে এদের হিসেবী অস্তিত্ব! আর তোমরা এদের নিয়েই কিনা যুগে যুগে রচনা করেছো শিল্প, সাহিত্য ..... এদের নিয়েই!
শেষ পর্যন্ত বায়রনের বিষাদ কি ভাষা খুঁজে পেয়েছিলো? সম্ভবত না । নইলে অপরিনত বয়সের মৃত্যু শয্যায় তিনি অস্ফুটস্বরে - " এ পৃথিবীতে আমি আমার প্রিয় অনেক কিছু রেখে গেলাম " বলে চোখ বুজতেন না ।
বায়রনদের কিছু অনুভূতির প্রকাশ বোধকরি চিরকাল অব্যক্তই রয়ে যায় । কারণ যখন তারা মন প্রাণ উজাড় করে বলতে চান, তখন শ্রোতা থাকে না আর যখন জমে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার মতো শ্রোতার ভীড়, ততদিনে শব্দরা হারিয়ে গেছে । এ হতাশার প্রতিশোধ তারা নেন নিজের উপর, অন্যের উপর । ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ।
অন্যায়?
হবে হয়তো বা .....
২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৪১
নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: কি অসাধারণ লিখেন আপনি!
সুরঞ্জনা নামী স্বামী’র দামী পার্টি এটেন্ড করেন, ভীষণ ব্যস্ত!
বনলতা সেন এখন রাঁধেন, দুদন্ড শান্তি দেয়ার ফুরসৎ তিনি কোথায় পাবেন?
আর সুজাতা তো, বিদেশে ভ্যাকেশন কাটান।
তারা কেউ-ই প্রেমিক কবিদের ভুলে যাননি। স্বামীর সহচার্যে সমাজের মঞ্চে নিখুঁত অভিনয় করে চলেছেন মাত্র।
আপনার লর্ড বায়রনের উপর কিন্তু আমার ভীষণ রাগ জমেছে………… দেখা হলে বলে দিয়েন তো, “ এসে যেন রাগ ভাঙ্গিয়ে যায়”। আমি তো বেশিদিন রাগ করে থাকতে পারিনা। কী মুশকিলে পড়া গেল, বলুন তো!
২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:০৯
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: মন্তব্যর প্রথম লাইনটা আমার জন্য অনেক মূল্যবান একটি সঞ্চয়
শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ্ - এর একটা শের আছে যা আমার খুব প্রিয় ; " অর্ধেক জীবন গেলো আকাঙ্ক্ষায় আর বাকি অর্ধেক প্রতীক্ষায় " । কবিদের প্রেমে বিমুগ্ধ সুজাতা, সুরঞ্জনা , বনলতাদের জন্য শেরটা হয়তো একটু অন্যভাবে বলা যায় " অর্ধেক জীবন গেলো আকাঙ্ক্ষায় আর বাকি অর্ধেক অভিনয়ে " ।
চুপিচুপি একটা কথা বলি ... আমিও কিন্তু বায়রনের মতো ষোল বছর বয়সেই প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম
!! অতলান্তিক প্রেম
..... আমার বায়রন প্রীতির এটাও অন্যতম প্রধান কারণ
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:২২
হাসান মাহবুব বলেছেন: হু।