নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঞ্জাবী নাপিত

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫০

যেই ছেলে বলে – “ আমি কাউকে বিশ্বাস করি না “, শতভাগ নিশ্চিত থাকতে পারেন সে মিথ্যা বলছে । সাপকেও নিজের বউ – প্রেমিকার চেয়ে বেশী বিশ্বাস করা মানসিকতার ছেলেও অপরিচিত একজন মানুষ কে অসম্ভব রকম বিশ্বাস করে । নাপিত ।

আমার অত্যন্ত হাসিখুশি ও অসম্ভব প্রিয় ছোট দাদা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন । অনেকের মতো ৫০০ টাকায় সার্টিফিকেট কিনে হওয়া মুক্তিযোদ্ধা নন, ইন্ডিয়া থেকে ট্রেনিং নিয়ে দিনের পর দিন সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা । তিনি মাঝেমাঝে যুদ্ধের সময়কার নানান গল্প করতেন । তার মুখে একটা গল্প শুনে আমি পরপর কয়েকরাত ঘুমাতে পারি নি, এখনও মনে হলে গলায় অস্বস্তি লাগে ।

আদমজী মিলের কল্যাণে নারায়ণগঞ্জে তখন বহু পাকিস্তানী ছিল । এ এলাকায় তখন সবচেয়ে বেশী দেখা যেত পাঞ্জাবীদের । যুদ্ধ শুরুর কয়েকমাস পরের কথা । তারা সদ্য ট্রেনিং নিয়ে এলাকায় ফিরেছেন, অপারেশনে বেশ কিছু পাকিস্তানি আর্মি আর পাঞ্জাবী মেরে এলাকায় তটস্থ অবস্থা নিয়ে এসেছেন । মিলিটারিদের টহল আর সাধারণ বাংলাদেশীদের উপর অত্যাচার দুইই বেড়ে গেছে । একদিন দাদারা কয়েকজন পাশের এলাকার এক সেলুনে বসে আছেন । সেলুনে এক পাঞ্জাবী ঢুকল । ঢুকেই সেলুন থাকা বাঙালিদের শুরু করলো গালি । ওই পাঞ্জাবীকে দাদারা আগেই চিনতেন , মিলিটারির সাথে এর ভালো পরিচয় সম্ভবত ইনফরমার । গালাগালি শেষ করে ওই লোক সেলুনের চেয়ারে বসলো শেভ করাতে ।

চোখের ইশারায় নাপিত সহ অন্যরা সেলুন থেকে বের হয়ে গেলো । দাদা নাপিত সেজে শেভ করে দেওয়া শুরু করলেন । শেভের সময় সব ছেলেই বোধহয় একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় । চেয়ারে বসা ওই পাঞ্জাবীরও তেমনই এক মুহূর্তে দাদার বন্ধু পেছন থেকে লাফ দিয়ে উঠে গামছা দিয়ে তাকে চেয়ারে শক্ত করে প্যাঁচিয়ে ধরল এবং দাদা সাথে সাথে প্রচণ্ড শক্তিতে গলায় ক্ষুর চালিয়ে দিলেন ।

একবার ... দুই বার ... তিনবার ...

.... যতক্ষণ পর্যন্ত না কণ্ঠনালী পুরোপুরি চিড়ে ফাঁক হয়ে যায় ততবার ।

এরপরের বর্ণনা আর বেশী না দেওয়াই ভালো ।

রুটি খাওয়া লম্বা - চওড়া পাকিস্তানীরা এমনিতেই বেশ বলশালী হয় । গলায় ক্ষুর বসানোর পর ওই পাঞ্জাবীর ঝটকায় লোহার চেয়ার নাকি ভেঙ্গে গিয়েছিল । পুরো দোকান মাখামাখি হয়ে গিয়েছিল রক্তে ।

সন্ত্রাসী আর হিরোদের মধ্যে সীমারেখা টানতে বলা হয় প্রায়শই হিরোরা শত্রুনাশ ( খুন ) করেন ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার স্বার্থে, আর সন্ত্রাসীদেরদের হত্যার পেছনে ওমন কোন মহৎ উদ্দেশ্য থাকে না । এই সীমারেখা খুব অস্পষ্ট এবং আপেক্ষিক । দাদা মারা গিয়েছেন বেশ ক’বছর । দাফনের সময় গার্ড অব অনার সহ নানা রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা .... আর বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হতো প্রতিজন মুক্তিযোদ্ধা কে ধরে ধরে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে ফাঁসি দেওয়া হতো । রাজাকাররা হতেন জাতীয় বীর ।

নারায়ণগঞ্জে এখনও একাধিক বিহারি ক্যাম্পে নাকি ১৫ – ২০ হাজার বিহারী আছে । স্বাধীনতার এতো বছর পরও এরা কিন্তু এখনও নিজেদের বাংলাদেশী বলে খুশি মনে পরিচয় দেয় না । অধিকাংশরেই পাকিস্তানে ধনী আত্মীয় – স্বজন আছে , বিষয় – সম্পত্তি আছে । জীবিকার জন্য এরা বাংলাদেশে তেমন সম্মানজনক কিছু করার সুযোগ পায় না, আমরা বাংলাদেশীরাও নানা যৌক্তিক কারণেই এদের পছন্দ করি না । আমি যতদূর জানি বিহারী বলতে আমরা যে পাকিস্তানিদের বুঝি - ওই ধারনাটা ভুল । ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ভারতের বিহার প্রদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলমান পাকিস্তান ভূখণ্ডে চলে এসেছিল । এরাই বিহারি । এরা আমাদের ভূখণ্ডের মানুষ তো নয়ই , সংস্কৃতি - মানসিকতাও আমাদের থেকে আলাদা । এরা কখনোই বাংলাদেশকে নিজেদের ভূখণ্ড মনে করে নি । নিজ ভূখণ্ড ভারত থেকে বিতাড়িত হয়ে এরা বাংলাদেশে আর তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে এসেছে বাধ্য হয়ে । শুরু থেকেই এরা মুসলমান খেতাবধারী পাকিস্তানীদেরকেই সব সময় আপন ভেবেছে । এখনও ভাবে এবং আজও এদের বাংলাদেশী নাগরিকত্বও নেই, আমার জানা মতে ।

যুদ্ধের পরপরই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিহারীদের যার যার দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল .... ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান - বাংলাদেশ - ভারতের মধ্যে হওয়া সিমলা চুক্তির বিহারিদের ফেরত পাঠানোর জন্যই করা যা স্বাক্ষরিত হলেও কখনোই বাস্তবায়িত হয় নি । নেওয়াজ শরীফ , বেনজির ভুট্টো সহ ক্ষমতায় থাকা আগের বহু পাকিস্তান সরকার অসংখ্যবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এদের ফেরত নেওয়ার , কিন্তু বাস্তবে কখনোই তা করে নি । অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিহারিরা পাকিস্তানি মিলিটারিদের যত ভাবে সম্ভব সাহায্য করেলেও পাকিস্তান যুদ্ধের পর এদের ফিরিয়ে নিতে কোন আগ্রহ দেখায় নি ।

বেসরকারি এক হিসাব অনুসারে বাংলাদেশে বর্তমানে ৬ লাখ বিহারি রয়েছে ।

বর্তমানে সেলুনগুলোর অধিকাংশই চালায় এরা । শেভ করতে নাপিতের ক্ষুরের নিচে গলা দিয়ে যখন শুনি দুই নাপিত চোস্ত উর্দুতে বাতচিত করছে – বুকের ভেতর কেমন কেন আতংক লাগে । হয়তো যে নাপিত এখন মুখে যত্ন করে ফোম , ক্রিম লাগিয়ে শেভ করে দিচ্ছে সে ওই পাঞ্জাবীরই ছেলে । সে যদি আমার পরিচয় জানে তাহলে আমাকে কি তার ছাড়া উচিত?

আমি নিজে তার জায়গায় হলে কি ছাড়তাম ??

বা আপনি ??

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪১

হাসান মাহবুব বলেছেন: খাইছে! ভয় পাওয়ায় দিলেন তো :| আপনার ছোটদাদাদার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাই।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২০

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: :)

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫

সুমন কর বলেছেন: বেসরকারি এক হিসাব অনুসারে বাংলাদেশে বর্তমানে ৬ লাখ বিহারি রয়েছে । এতো !!!

হাহাহা.......আমি বাসায় সেভ করি !:#P

ছোট দাদার প্রতি রইলো অনেক সম্মান ও শ্রদ্ধা।

পোস্টে ভালো লাগা।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২০

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন ভাই ।

৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: বিহারীদের খুরের নিচে মাথা দিচ্ছি নিয়মিত ।কতটা ভয়ানক ব্যাপার #:-S

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২০

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: সাবধানে !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.