![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।
মাস্টার দা সূর্যসেন হলের রিডিং রুমে পড়তে গেলে বারান্দার থামে একটা লাইন চোখে পড়তো । কালো মার্কার বা কাঠ কয়লা দিয়ে একটু মেয়েলী ধরণের গোটাগোটা হরফে সাদা চুনের উপর লেখা - " রাসেল বিসিএস দেবে " ।
খুব বৈশিষ্ট্যহীন একটা লাইন, কিন্তু একটু চিন্তা করলে এ লাইনটাই যেন বিশাল বড় কোন গল্প নিয়ে হাজির হয় ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টরা, বিশেষত কলা ভবনের শিক্ষার্থীরা, বিসিএস এর জন্য এক কথায় " অমানুষিক " পরিশ্রম করে । ক্যাম্পাসের হাকিম চত্বরে একটু সকাল সকাল গেলে দেখা যায় লাইব্রেরি বন্ধ গেইটের সামনে ত্রিশ - চল্লিশ জন মানুষ তীর্থের কাকের মতো চেহারায় জটলা পাকাচ্ছে; যেন বন্ধ গেইটের ওপাশে মিলাদ পড়ানো হচ্ছে, একটু পরই মিলাদ শেষ করে কেউ এসে জিলাপি দিয়ে যাবে । এরা আসলে বিসিএস পরীক্ষার্থী, সকাল সকাল চলে এসেছে লাইব্রেরির নিরিবিলি পরিবেশে একটা সিট দখল করতে । এরা সেই যে সকাল সাড়ে সাতটা - আটটা বাজে পড়তে ভেতরে ঢুকবে বের হবে দিনের আলো মেলাবার পর । সারাদিন একটানা পড়াশোনা, মাঝে উঠে খুব জরুরি ক্লাসগুলো করা এবং খাওয়া - দাওয়া সহ অন্যান্য কাজ । যারা মাস্টার্স দিয়ে ফেলেছে তারা বোধহয় পারলে খাওয়াটাও ভেতরেই সারে । একেকজন পড়েন দিনে দশ থেকে পনের ঘন্টা ।
হলগুলোতে থাকার অবস্থা ব্যাখ্যাতীত করুন । হলের একটা সিট পেতে এবং টিকিয়ে রাখতে আপনাকে রাস্তায় নেমে বিএনপি-র আমলে দিতে হবে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ আর আওয়ামী লীগের আমলে জয় বাংলা স্লোগান । ডিপার্টমেন্টের ক্লাস কোন জরুরি ব্যাপার না, সিট বাঁচাতে চাইলে আগে জাতীয়তাবাদ অথবা স্বাধীনতার চেতনাকে উদ্ধার করা আবশ্যক । না গেলে হল থেকে বের করে দেয়া, রড দিয়ে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানো, শিবির বানিয়ে দেওয়া সহ যে কোন ঘটনা ঘটতে পারে । সবচেয়ে অমানবিক কষ্ট করে প্রথম আর দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা । রুমে জায়গা পাওয়া বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার, পেলেও পাখির বাসার মতো এক রুমে চার থেকে আটজনের থাকতে হয় যা কিভাবে সম্ভব আমি জানি না । অসংখ্য শিক্ষার্থী সে রুমেও জায়গা পায় না, তাদের জন্যে গনরুম বলে একটা ব্যাপার আছে । অন্ধকারাচ্ছন্ন বড় একটা রুমে মেঝেতে জাজিম পেতে সাড় দিয়ে শ'খানেক শিক্ষার্থী থাকে, পড়ে, ঘুমায় । আর সব থাক, রুমের ভেতরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো অক্সিজেন কিভাবে থাকে সেটাই রহস্য ..... অনেকের কপাল আরও খারাপ । গনরুমেও জায়গা না থাকলে ঘুমাতে হয় খোলা বারান্দায়, শীত - বর্ষা - গ্রীষ্ম কোন বিবেচ্য বিষয় না । বারান্দায় বহুবার আমি দেখেছি কোন ছাত্র গুটিসুটি মেরে মাদুরে শুয়ে আছে আর তার প্রায় গা ঘেষে কুকুর - বেড়াল ঘুমুচ্ছে বা প্রবল বেগে গা চুলকাচ্ছে । খাবারের ব্যাপারে কিছু বললাম না । ওদিকে গেলে আপনি হয়তো আজ রাতের খাবারটা আর খেতে পারবেন না । মনে অপরাধবোধ চলে আসবে ।
হলের রিডিংরুমে সবসময়ই থাকে পিন পতন নিরবতা । হলের স্টুডেন্টরা পড়ছে - কেউ ডিপার্টমেন্টের পড়া, আর কেউবা কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, বাংলাদেশ সংবিধান, ওরাকল, অ্যাসিওরেন্স, MP3 গাইড সহ বিসিএস এর জন্যে নানা বই । এদের পড়া দেখে আমার সবসময়ই তপস্যার কথা মনে হয়েছে । প্রতিটা ছেলেই জানে তার দিকে চেয়ে আছে তার পুরো পরিবার, যারা গর্ব করে সবাইকে বলে বেড়ায় তাদের সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । তার পড়া শেষ হলে সংসারে আর কোন অভাব থাকবে না । প্রিয় মানুষদের মনের এ কথাগুলো তারা মুখে না বললেও সন্তানেরা নিজেদের প্রতিটা রক্তবিন্দুতে টের পায় তাকে জীবনে কিছু করতে হবে, তার পরিবারের জন্যে, নিজের জন্যে । বাবা - মা অনেক কষ্ট করেছেন জীবনে, তারা যদি শেষ জীবনে একটু আরাম আয়েশ না করতে পারলেন তাহলে সন্তানের বেঁচে থেকে লাভ কি? তারা পড়ে, পায়ে হেঁটে, বাসের হ্যান্ডেলে ঝুলে পাঁচটা - ছটা টিউশনি করে । নিজের খরচ তো চালায়ই, খেয়ে না খেয়ে বাসায়ও প্রতি মাসে কিছু টাকা পাঠায় ।
আমার সত্যি সত্যি চোখে পানি চলে আসে যখন দেখি জীবনে স্বপ্ন পূরণর জন্যে জান - প্রাণ দিয়ে কষ্ট করে যাওয়া মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এ মানুষগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য তো দূরে থাক, যতভাবে সম্ভব চেষ্টা করা হয় দাবিয়ে রাখতে । প্রতি পদে পদে বাধা । থাকার জায়গা নেই, খাওয়া - গোসল - ঘুমের ব্যবস্থা নেই । আছে পলিটিক্স । সব বাধা পার হয়ে পরীক্ষার হলে বসার পর আসে সবচেয়ে বড় অসভ্য ধাক্কাটা - " কোটা " । বিসিএস সহ সকল সরকারী চাকরিতে কোটা ৫৬% .... এতোদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কোটা ছিলো, এবার থেকে নাতি - নাতনিদের কোটা দেয়া হয়েছে । কেন তার কোন ব্যাখ্যা কেউ দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেন নি । পৃথিবীর আর কোন সভ্য দেশে এমন অমানবিক নিয়ম আছে বলে আমার জানা নেই । এই শতভাগ অন্যায় নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে আবার সরকার পক্ষ থেকে আসে হুমকি - যারা প্রতিবাদ করেছে তাদের ছবি দেখে দেখে বাদ দেয়া হবে । কি বিচিত্র আমার এ স্বদেশ!
মুক্তিযুদ্ধ আমার কাছে ততদিন পর্যন্তই অবিসংবাদী বিষয় ছিলো যতদিন এর মধ্যে কোটা আসে নি । যে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করতে, সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, তারা কখনো কোটা চান নি, চাইতে পারেন না ।
কিন্তু রাস্তার মোড়ে মোড়ে কাঁটা বিছিয়েও ওইসব পরিশ্রমী স্বপ্নবাজ মানুষদের আটকানো যাবে না, কখনোই যায় নি .... আমার বিশ্বাস রাসেল ভাই বিসিএস দিয়ে আমাদের বিসিএস ক্যাডার রাসেল ভাই ঠিকই হবেন .... রাসেলদের থামানো অসম্ভব । কারণ এরা থামতে জন্মায় নি ।
সবার জন্য শুভ কামনা রইলো জীবনের সামনের চেষ্টাগুলোর জন্য ।
( শিক্ষার্থী , ফাইনান্স বিভাগ , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় )
২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:২৪
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: উত্তর জানতে চাই !
২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:০৭
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: নাতির পর নাতির ছেলে তারপর, তার ছেলে| এর বিহিত করা দরকার
২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:২৫
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: নাতি - নাতনীদের ফেসবুক ফ্রেন্ড কোটাও চলে আসতে পারে ।
৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪৯
সুমন কর বলেছেন: চমৎকার যুক্তি সমৃদ্ধ লেখা। ভালো লাগা রইলো।
( শিক্ষার্থী , ফাইনান্স বিভাগ , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ) -- এটা কি আপনি?
২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:২৯
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ ! .... হ্যাঁ , আমিই । এমবিএ তে আছি ।
৪| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৯
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: কোটা উঠিয়ে দিয়ে আর্থিক ভাতা বা এই জাতীয় কিছু ব্যবস্থা করা যেতে পারতো। কোটার কারনে পরিশ্রম বা মেধায় মূল্যায়ণ না হলে জাতির ভবিষ্যত অন্ধকার।
৫| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৫
আজমান আন্দালিব বলেছেন: কোটা সিস্টেম বিষফোঁড়া। মেধাবীদের জানে মারা।
৬| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৩০
খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনার ফেসবুক আইডি কি???
৭| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০৭
খেয়া ঘাট বলেছেন: খুঁজে পেলাম না
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৩৫
দ্যা ব্যাকডেটেড বলেছেন: কৌটা পদ্ধতির যাতা কলে পিষ্ঠ মোরা, এর থেকে কি আমরা কোনদিনই পরিত্রান পাবো না????????? জানি এর উত্তর সবারই অজানা..........