নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই পাগলের ভালোবাসাটুকু নিও ..

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৯

ভাগ্য গননার জন্যে কেবল টাকা দিয়ে সামনে বসলেই হবে না, জ্যোতিষী আরমান শাহ্ জানালেন নিজের নামটাও পাখিকে শোনানো জরুরী । পাখির সংখ্যা দুটি । একজন অত্যন্ত কর্মঠ, কাঠি সামনে ধরলেই টুপ করে তাতে ঠোঁট কামড়ে ঝুলে পড়ে খামের মধ্যে থেকে সৌখিন ভাগ্যান্বেষীর ভাগ্য বাতলে দেয়; অন্যজন নিতান্তই কর্মবিমুখ, তাকে কাঠি দিয়ে খোঁচাখুচি করেও খামের উপর নামানো যায় না । পাখি দুটোর একটারও ডানা বাঁধা বা পায়ে শিকল নেই, তবুও তারা উড়ে যাচ্ছে না । হয় তারা উড়তেই ভুলে গেছে, নয়তো আকাশের চেয়েও বেশী ভালোবেসে ফেলেছে কণ্ঠার হাড় প্রকট ভাবে ঠেলে বেরিয়ে আসা, হালকা পাতলা গড়ন আর উদাসীন চেহারার আধ ময়লা তিল পড়া সাদা শার্ট পরিহিত মনিবকে ।

মোট খামের সংখ্যা তেত্রিশ । তিন খুব চমৎকার একটা সংখ্যা । তিনে জন্ম, মৃত্যু, পরকাল । তেইশকে তিন দিয়ে ভাগ দিলেই আসে পাই-য়ের মান, যা অনেকের মতেই ঈশ্বরের ভাষা, তার অসীমতার গানিতিক প্রকাশ । আবার এই তিনেই আমি, তুমি এবং সে - অর্থ্যাৎ আমরা । অবশ্য তিনের পিঠে আরও একটা তিন বসিয়ে যে সংখ্যা তেত্রিশ, তার একটা বিশেষত্বই আমার মনে আসে - পরীক্ষায় পাশের নম্বার । ক্লাস ফোরের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় গনিতে পেয়েছিলাম বত্রিশ, তেত্রিশের আরাধ্যতা তখনই বুঝেছিলাম পুরোপুরি ।

একটু কৌতুহল এবং উদ্বেগ নিয়েই তাই অপেক্ষা করি ভাগ্য গননার পরীক্ষায় পাশ করবো কিনা । কর্মঠ জন টুপ করে একটু লাফ দিয়ে খামের সারির উপর নামে, দুলকি চালে হাঁটতে হাঁটতে একদম শেষ প্রান্তে চলে গিয়ে একটা খামে সে ঠোঁকর দিয়ে দেখিয়ে দেয় কোন খামে আমার ভাগ্য । আরমান শাহ্ খামটা খুলে আমার হাতে তুলে দেন ..... " অর্থ ভাগ্য শুভ । জীবনে অনেক উপার্জন করিবেন এবং মুক্ত হস্তে ব্যয় করিবেন " ।

যাহ্! .... এতো শতভাগ কমার্শিয়াল ভবিষ্যৎ । সুখের কথা নেই, মন - প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসা যায় এমন কোন সঙ্গী প্রাপ্তির কথা নেই, নেই কোন বিষাদের কথাও । ভবিষ্যৎ জীবন কেবল অর্থময় হয়ে অর্থহীন হয়ে গেলে তো সমস্যা ।

আরমান শাহ্ এক হাতে পুরষ্কার স্বরুপ পাখির মুখে তুলে দেন কয়েকটি শস্য দানা আর অন্য হাত পেতে আদায় করে নেন দশ টাকা .... আমার চেয়ে অর্থভাগ্য তার ভালো হওয়াটাই জরুরী ।

গিয়েছিলাম সেগুন বাগিচার শিল্পকলা একাডেমিতে, জলের গান শুনতে । ভেবেছিলাম লোকে লোকারণ্য হবে চারপাশ, বসারই জায়গা পাবো না । দেখা গেলো জায়গা আছে ... মানুষের ভীড় আশাব্যঞ্জক নয় । উপস্থিত অধিকাংশ মানুষই বয়সে তরুন, মধ্যবিত্ত, অগোছালো চেহারার । অবশ্য কড়া মেকাপের কয়েকজন ত্রিশোর্ধ্ব মানুষ চোখে পড়লো, যারা প্রসাধনীর আড়ালে নিজের বয়স ঢাকতে গিয়ে তা আরও করুন ভাবে ফুটিয়েই তুলেছেন কেবল । একটু পর সুন্দর করে সাজানো ছোট্ট মঞ্চ থেকে ভেসে আসে গান । কথাগুলো অদ্ভুত সুন্দর ।

" তোমার জন্য আকাশ ভরা তারা
আমায় না হয় খোঁপার ফুলটি দিও
বাউল মনের আকুল করা সুরে...
এই পাগলের ভালোবাসা টুকু নিও "

গায়ক খুব দরদ দিয়ে গেয়ে চলেন, আমি মোহাবিষ্ট হয়ে শুনে যায় । শুনতে শুনতে হঠাৎ বহুদিন পর তোমার কথা খুব বেশী মনে পড়ে গেলো লিলিয়ান । অথচ এতোকাল পর ইদানীং আমি বুঝতে পারি কাছে থাকার যোগ্য নয় এমন মানুষদেরই আকুল হয়ে কাছে টানতে চেয়েছি আজীবন । আর আমাকে যারা ভালোবেসেছে পরিশুদ্ধ আবেগে, তাদের নির্দয়ের মতো ঠেলে সরিয়ে রেখেছি দূরে । ভালোবাসা তো পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবাণ অনুভূতি, এর এমন অপচয় করাটা নিজের প্রতি, সবার প্রতি খুব বড় ধরণের অন্যায় করা নয়? তুমিই বলো ।

পরের গানটার কিছু কথা আরও আপন লাগে । বাজে বুকের খুব গভীরে গিয়ে কোথাও যেন ।

" পালাই বহু দূরে,
ক্লান্ত ভবঘুরে,
ফিরবো ঘরে কোথায় এমন ঘর? "

আসলেই তো, ঘর কোথায়? চার দেয়ালে ঘেরা ছোট্ট যে কুঠুরিতে কাটে আমার দিন রাত্রি একে তো কখনো আমার ঘরের মতো আপন মনে হয় না । এ আমার থাকার জায়গা, আশ্রয় নয় । আমি আমার রক্তে যাযাবর জীবনের প্রতি নেশার আকুলতা টের পাই । মনে হয় আমার জীবন কাটবে ছন্নছাড়ার মতো । হয়তো চলে যাবো বহু দূরের কোন দেশে, যেখানে তুষার পরে বৃষ্টির মতো । কর্মব্যস্ততা সেরে পড়ন্ত বিকেলগুলোতে গায়ে কালো একটা ওভারকোট চাপিয়ে হেঁটে বেড়াবো তুষারের উপর, চুলের উপর জমবে শুভ্র বরফ কুঁচি ... কখনো বা গিয়ে বসবো বিশাল জলরাশির কিনার ঘেঁষে থাকা কাঠের বেঞ্চিতে । নিজের বিশাল একটা বাড়ি হবে, যার একটা ঘর জুড়ে থাকব। বই । ঘরে দক্ষিনমুখটা আমি ঢেকে দেবো কাঁচে ..... সারা বাড়ি জুড়ে কখনো বাজবে মৃদু জল তরঙ্গের শব্দ, কখনো বেহালা - অর্গ্যান, কখনো বা বিথোফেন । মাথার উপর ছাউনি ছাড়া সুন্দর একটা গাড়ি কিনবো, ইচ্ছে হলে তা চালাতে চালাতে হারিয়ে যাবো কোন পাহাড়ি রাম্তায় । উথাল - পাথাল হাওয়ার শব্দকে ছাপিয়ে জন ডেনভার তখন আমাকে গান শোনাবেন - ' Country road take me home, To the place I belong ... '

আবার রাতের শেষ গাড়িতে বাড়ি ফেরার সময় গুনগুনিয়ে জলের গানের গাওয়া প্রথম গানটা গাওয়ার সময় মনে হলো ভালোবাসতে জানার পরও ভালোবাসাহীন জীবন কাটানো তো অনেক বড় অন্যায়! মৃত্যুর আগে অন্তত একবার হলেও গোধূলীর হলুদ আলোয় সাধারণ হয়েও অসাধারণ কারও হাত ধরে সমস্ত হৃদয় দিয়ে বলতে হবে - " এই পাগলের ভালোবাসা টুকু নিও ... "

জীবনকে বোধহয় আমি একমাত্র তার এ উপভোগ্য দ্বৈতস্বত্তার জন্যেই আজও যাপন করি ।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৬

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: এ আমার থাকার জায়গা, আশ্রয় নয় ।

খুব মূল্যবান কথা ভাই, পুরোটাই খুব ভাল লাগল...........

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২৩

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ জাকির ভাই ।

২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:০১

ঢাকাবাসী বলেছেন: বেশ ভাল লাগল্ ।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২৩

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ !

৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:২৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: সুন্দর অনুভূতিময় লেখা।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২৪

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৪| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৭

সুমন কর বলেছেন: আবেগে ভরা লেখা, ভালো লাগল।

হয়তো চলে যাবো বহু দূরের কোন দেশে, যেখানে তুষার পরে বৃষ্টির মতো । কর্মব্যস্ততা সেরে পড়ন্ত বিকেলগুলোতে গায়ে কালো একটা ওভারকোট চাপিয়ে হেঁটে বেড়াবো তুষারের উপর, চুলের উপর জমবে শুভ্র বরফ কুঁচি ... এরপর আরো আছে....

চাওয়া মনে হয়, একটু বেশী হয়ে গেল। !:#P পূরণ হোক আপনার চাওয়া।

ভালো লাগা রইলো।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২৩

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় .... স্বপ্ন ছোট দেখবো কেন??

৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:০৯

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: কেন জানিনা, আপনি কেবলই রাতের শেষ গাড়িতে বাড়ি ফিরেন! আপনার সবগুলো বিষন্ন লেখাতে সেই একই কথা, বাসে বসে লিখছি বা ভাবছি :(
ঠিকই তো বলেছেন, ভালোবাসতে জানার পরও ভালোবাসাহীন জীবন কাটানো বড় অন্যায়!

হয় কি জানেন,মানুষ এখন খানিকটা একে ভালোবাসে আর খানিকটা ওকে। খন্ড খন্ড ভালোবাসা জোড়া দিয়ে ভাবে তিনি কতটা গভীর করে ভালোবাসতে জানেন!
আমি অনেকবার ভেবেছি, কোন যদি ফিরে আসে আমার পাগল প্রেমিক!! তখন.....

অনেকদিন বাদে একটা ভাল লেখা দিলেন। নিয়মিত বিরতিতে লেখা চলুক। রাইটার্স ব্লক থাকলে খুব তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠুন।
জলের গান এর রাহুল আনন্দ কে ধন্যবাদ, গান গুলো এত অর্থবহ করে গাইবার জন্য।
ভালো থাকবেন, অনেক -অনেক..... অনেক

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০০

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: কাল বিকেলের ডাকে যদি তার কোন চিঠি পাই?
অথবা রাতের শেষ ট্রেনে যদি সে নিজেই এসে থাকে?
আজ, এতকাল পরে, যদি তার মনে হয়,
' হোক না দেরি , এখনও তো ফুরোয় নি সময় ' ।

ভালোবাসতে জানার পরও ভালোবাসাহীন জীবন কাটানো আসলেই অনেক বড় অন্যায়! এই অন্যায় করা যাবে না ...... আপনিও অনেক ভালো থাকবেন সব সময় । আপনার মন্তব্য প্রেরণা যোগায় ।

৬| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৩৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চমৎকার লেখা| খুব ভাল লেগেছে

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০০

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ আরণ্যক ।

৭| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৬

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: বেশ লাগলো আপনার স্বপ্নের বর্ননা।ভালো থাকুন। সবটা হয়ত বাড়াবাড়ি তবু বড় বড় স্বপ্নের অধিকাংশই পূরণ হোক।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০১

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: দোয়া করবেন .... শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.