নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু শৈশব

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৬

আমাদের নারায়ণগঞ্জ ঠিক মফস্বল নয়, আবার শহরও নয় । রাস্তায় গাড়ির ভীড় কম বলে পড়ন্ত বিকেলগুলোতে হাঁটতে ভালোই লাগে । নিজের এলাকা ভুঁইয়াপাড়া থেকে রেল লাইন ধরে কখনও চিত্তরঞ্জন খেলার মাঠ হয়ে নদীর ঘাট, তারপর ট্রলারে করে নদীর ওপারে গিয়ে মিষ্টির দোকান থেকে খবরের কাগজে দশ টাকার গরম জিলাপি কিনে দিগন্ত বিস্তৃত ফুলের বাগানে চলে যাওয়া । আবার কখনও বা চৌধুরীবাড়ি বাজার দিয়ে লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলসের শুনশান নীরব এলাকার রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে মুঘল আমলে নির্মিত হাজীগঞ্জ কেল্লার তিনশ বছর বয়সী নোনা ধরা দেওয়ালে পা ঝুলিয়ে বসা । কেল্লার নিস্তব্ধ বিকেলের বাতাসে কান পাতলে এখনও বুঝি শোনা যায় পায়ের নিচের মাটি কাপিয়ে কামান দাগার শব্দ, নাকে ঠেকে বারুদের গন্ধ ।

এমনই এক বিকেলে রাস্তায় হাঁটছি আপন মনে, নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নেই । হঠাৎ মনে হল কেউ আমাকে খেয়াল করছে এক দৃষ্টিতে । অস্বস্তিকর অনুভূতি । চারপাশে তাকাই একটু, খুঁজি আসলেই কেউ তাকিয়ে আছে কিনা । চোখ আটকে গেলো রাস্তার ওপারে বেতের টুলির উপর ঝুড়িতে নারকেলি, বাদামি নিয়ে বসা এক লোকের দিকে । কুচকুচে কালো তার গায়ের রঙ, শীর্ণ শরীর । কোটরে ঢুকে যাওয়া চোখে তিনি এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে । চোখাচোখি হওয়ার পরও দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন না । কৌতূহল জাগে মনে ।

রাস্তা পার হয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ।

- কিছু বলবেন ?

তিনি একটু হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করেন , - “ ভালো আছো? “ গলায় বহুদিন পর পরিচিত কাউকে খুঁজে পাওয়ার আন্তরিকতার সুর । আমি একটু অবাক হই, ভালো মতো তাকাই তার দিকে । চেহারাটা একটু পরিচিত ঠেকে এবার ।
- আপনি চেনেন আমাকে ?
- চিনি । অনেক বছর পর দেখলাম তোমারে । বড় হইয়া গেছো ।

বিদ্যুৎ চমকের মতো আমার মনে পরে যায় পুরোনো বহু কথা । মানুষটাকে আমি চিনি, প্রাইমারি স্কুলের পড়ার সময় ওনার সাথে দেখা হত । আমার বরাদ্দ ছিল তখন অনিয়মিতভাবে দুই টাকা করে । সেই দুই টাকায় তার থেকে চিনি দিয়ে বানানো বাদামি কিনতাম প্রায়ই । প্রাইমারি স্কুলের পর ক্লাস সিক্সে ভর্তি হই অন্য স্কুলে । তারপর গেলো এস.এস.সি, এইচ.এস.সি, বিবিএ ... এমবিএ-ও প্রায় শেষের পথে । এসবের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে কতগুলো বছর ! অথচ এতদিন পরও আমাকে তার মনে আছে, আমাকে দূর থেকে দেখেই তিনি চিনেছেন ! প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চা আমাকে রাস্তায় দেখলে আমি নিজেই তার থেকে নিজের বর্তমানের রূপান্তরিত এই খালিদকে চিনতে পারবো কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে ।

তার গালভাঙ্গা মুখটার দিকে তাকিয়ে হুট করে আমার এতো বেশী ভালো লাগলো ! মনে হল চারপাশটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে , প্লাবনের মতো ফিরে এসেছে আমার শৈশব .. হারানো শৈশব । মা বা দাদীর পেছনে স্কুলে যাওয়ার আগে ঘুরঘুর করছি দুই টাকার জন্য, তারা আমাকে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছেন না । শেষে বোঝা গেলো আজ আর আঁচলে পুটলি করে গিঁট দিয়ে রাখা জায়গা থেকে আমার জন্য চারকোন হয়ে থাকা দোয়েল পাখির নোট বের হবে না । তখন সবার চোখ এড়িয়ে গুঁটিগুঁটি পায়ে আমি এগিয়ে যাই বাড়ির মাটি দিয়ে লেপা, মাচার উপর থাকা বিশাল ধানের গোলার দিকে । কাঁধের কার্টুনের ছবি থাকা ব্যাগটা নামিয়ে রেখে হামাগুড়ি দিয় ঢুকে পড়ি ধানের গোলার নিচে, অন্ধকার হাতড়ে বের করি মাটির সানকি । দাদী ওটাতে পয়সা জমাতেন । সানকিতে থাকা খুঁচরা পয়সা থেকে অন্ধকারে হাতের আন্দাজে এক টাকার দুইটা কয়েন নিয়ে বের হয়ে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে বাড়ির গেইট দিয়ে ভোঁ দৌড় । তারপর রেল লাইন ধরে এক স্লিপার থেকে আরেক স্লিপারে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যাওয়া, দুই টাকায় কখনও ঐ লোকটার কাছ থেকে বাদামি কেনা, কখনও বা দোকান থেকে করমচা মার্বেল, নয়তো লাঠিম ।

খেয়াল করে দেখি, চোখ ভিজে উঠছে । সামলাই নিজেকে । বাদামির ঝুড়ির পেছনে দাড়িয়ে আমার দিকে বহু পুরানো সুহৃদ তাকিয়ে আছেন মায়ামাখা চোখে । জিজ্ঞেস করেন কোথায় পড়ি এখন, কিসে পড়ি । বললাম । বিবিএ, এমবিএ তিনি বুঝেন না । বলতে হয় বিএ , এমএ । সেই পুরানো দিনের মতো তার থেকে বাদামি কিনি তারপর । আগে টাকা বের হতো হাফ প্যান্টের পকেট থেকে, এখন সদ্য উপহার পাওয়া ঝকঝকে মানিব্যাগ থেকে । আমি বদলিয়েছি কিন্তু তিনি বদলান নি , তিনি আজও ছোট্ট দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দেওয়া শেষে ঝুড়ির মধ্যে রাখা বাদামির স্তূপ থেকে আরেকটু ভেঙ্গে আমাকে বেশী দেন । আমার চোখ আবারও ভিজে ওঠে অযাচিত ভাবে পাওয়া আদরে ।

ইন্দিরা গান্ধীকে এক সাক্ষাৎকারে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল জীবনে তিনি সুখি কিনা? জবাবে তিনি বলেন সুখ তো নিরবিচ্ছিন্ন কোন অনুভূতি নয়, জীবনে ঘটে যাওয়া টুকরো টুকরো ছোট ভালো লাগার স্মৃতিগুলোকে যারা অনুভব করতে পারে তারাই সুখি ... ঘনিয়ে আসা শীতের হিমেল হাওয়ায় রেল লাইনের এক স্লিপার থেকে আরেক স্লিপারে লাফিয়ে বাড়ি ফেরার সময় আমার বুক ভেতরটা ভরে থাকে ভাষায় প্রকাশের অতীত এক ভালো লাগায় , যার জন্ম বুঝি অন্য কোন গ্রহে ।

জীবনে না চাইতেই এতো মানুষের ভালোবাসা আমি পেয়েছি যে কয়েক জীবন চেষ্টা করলেও তাদের ভালোবাসার ঋণ শোধ করতে পারবো না ।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২০

তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: :)

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩০

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: :)

২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৯

ধমনী বলেছেন: পুরানো সেই দিনের কথা
সে কী ভোলা যায়....

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩১

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: Should auld acquaintance be forgot,
And never brought to mind?
Should auld acquaintance be forgot,
And days o’ lang syne!

For auld lang syne, my dear
For auld lang syne,
We’ll tak a cup o’ kindness yet
For auld lang syne!

৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩০

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: জীবনে আমরা শুধুই সুখ পাখির পিছনে দৌড়াই। কিন্তু ছোট্ট ছোট্ট অনেক সুখ আমারা পেয়েও বুঝতে পারি না। অনেক সময় পরে যখন স্মৃতি হাতড়ে বেড়াই তখন সেই সুখ গুলো ধরা পরে।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৪

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: আসলেই তাই .....

৪| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৩১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: স্মৃতিচারণ!
এইটা কোন কোন সময় হাসায় আবার কোন কোন সময় খারাপও লাগায়।
ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৪

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: সেই ভালো লাগা আর খারাপ লাগা নিয়েই জীবন . . . .

৫| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৫৩

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: আপনি ভাগ্যবান।
ছোট ছোট স্মৃতিতে যারা সুখ খুঁজে নিতে পারে, তারাই জীবনকে উপলব্ধি করতে পারে।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৫

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: আসলেই ....

৬| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০১

শামছুল ইসলাম বলেছেন: স্মৃতিচারণ ভাল লেগেছে।

ইন্দিরা গান্ধীর কথা গুলো চমৎকারঃ
//ইন্দিরা গান্ধীকে এক সাক্ষাৎকারে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল জীবনে তিনি সুখি কিনা? জবাবে তিনি বলেন সুখ তো নিরবিচ্ছিন্ন কোন অনুভূতি নয়, জীবনে ঘটে যাওয়া টুকরো টুকরো ছোট ভালো লাগার স্মৃতিগুলোকে যারা অনুভব করতে পারে তারাই সুখি ..//

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৬

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: কথাগুলো আমারও অসম্ভব প্রিয় :)

৭| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: বারবার ফিরে যেতে চাই। কিন্তু ওয়ান ওয়ে টিকেট কেটে ভবিষ্যত জংশনের দিকে এগিয়ে চলেছি ঝাঁকি খেতে খেতে। চেইন টানলেই জরিমানা।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: চেইন টানলেই জরিমানা . . . .

৮| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৪

সুমন কর বলেছেন: আমরা আজ, হাজার চাইলেও হারানো শৈশবে ফিরে যেতে পারবো না........শুধু স্মৃতি হয়েই থাকবে।

ভালো লাগা রইলো।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৮

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন ভাই ।

৯| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৯

আরজু পনি বলেছেন:

এক স্লিপার থেকে আরেক স্লিপারে লাফিয়ে বাড়ি ফেরা...দিলেন তো নস্টালজিক করে !

এক বৃদ্ধ মহিলা তিলের মোয়া নিয়ে আসতো বাসায় চালের বদলে দিত । কেনো যেনো এখনও সেই স্বাদ মুখে লেগে আছে ।
আর রেল লাইনের স্লিপারের উপর কয়েন রেখে দিতাম ট্রেন আসার আগে তারপর সেই কয়েন একেবারে রুটির মতো পাতলা চ্যাপ্টা হয়ে যেতো ...

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৯

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: কয়েনের ব্যাপারটা ট্রাই করে দেখা হবে :P

১০| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:২২

খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনি অদ্ভূত সুন্দর লিখেন। মায়ায় জড়িয়ে গেলাম।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫০

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: :) :) :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.